কেন হংকংবাসীরা তাদের প্রধান নির্বাহী সি ওয়াই লেয়ুং-কে ‘৬৮৯’ বলে ডাকে?

Hong Kong Chief Executive Leung Chun Ying was endorsed by 689 votes in the election committee in 2012. Photo from HKFP.

হংকং- এর প্রধান নির্বাহী লেয়ুং চুন ইয়াং ২০১২ সালে নির্বাচন কমিটির ৬৯৮ ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছবি এইচকেএফপি থেকে নেওয়া।

এই পোস্টটি লিখেছে হংরং, আর মূল লেখাটি ১৭ জানুয়ারি, ২০১৬ তারিখে হংকং ফ্রি প্রেসে প্রকাশিত হয়েছে, নীচের এই সংস্করণটি অংশীদারীত্বের চুক্তির অধীনে প্রকাশ করা হয়েছে।

অনেক হংকংবাসী জানে “৬৮৯” নামক সংখ্যাটি হচ্ছে তাদের শহরের সর্বোচ্চ নেতা, প্রধান নির্বাহী সি ওয়াই লেয়ুং-এর ডাক নাম।

২০১২ সালে লেয়ুং নির্বাচক কমিটির ৬৮৯ জন ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়–যারা সামাজের বিভিন্ন অংশের নির্বাচিত প্রতিনিধি,আর কেবল তাদেরই প্রধান নির্বাহী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। ২০১৭ সালে প্রধান নির্বাহী নির্বাচনের এই প্রক্রিয়া পাল্টে যাবে, তখন হংকং-এর সকল নাগরিক এতে ভোট দিতে পারবে, তবে তখনও প্রার্থী নির্বাচনের বিষয়টি থাকবে নির্বাচক কমিটির হাতে।

কিছুদিন আগে তাইওয়ানে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাসি ইয়িং ওয়েন ৬৮ লক্ষ ৯০ হাজার ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এই সংখ্যাটিও অনেক বেশী যাদুকরী।

২০১৪ সালে সংবাদ সংস্থা এপিএফ একটি ইনফোগ্রাফিক টুইট করেছে যা এই জটিল পদ্ধতিটি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা প্রদান করেছে:

কেন তারা লেয়ুং চুন ইয়াংকে ‘৬৮৯’ বলে ডাকে? এই ইনফোগ্রাফিক তুলে ধরছে কেন বিক্ষোভকারীরা হংকং-এর এই নেতাকে এই নামে অভিহিত করে।

সংসদে লেয়ুংকে প্রায়শ ভাষার কারিকুরি দিয়ে জর্জরিত করা হয়-ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতা-বিশেষ করে দুষ্ট হিসেবে সবচেয়ে আলোচিত ওয়াং ইয়ুক মান-যে তাঁকে এই নাম্বারটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে মজা পান। সংসদীয় সভায় প্রধান নির্বাহীকে সমালোচনা করে তিনি যে ভাষণ দিয়েছিলেন নিচে তা তুলে ধরা হল:

২২ অক্টোবরে ২০১৫ তারিখে সংসদ অধিবেশনে লেয়ুং-এর পরিচালনা নীতির উপর চলা প্রশ্নোত্তর পর্বে এই কথাগুলো বলা হয়েছে। ওয়াং-এর প্রথম ৩০ সেকেন্ডের ভাষণটি ছিল অনেকটা এ রকমঃ

তিন বছর আগে, আমি এই ব্যক্তিটি সম্বন্ধে বর্ণনা করার সময় ৬৮৯ অক্ষরটি ব্যবহার করেছি, যার গ্রহণযোগ্যতার অভাব রয়েছে। যে এক মিথ্যুক এবং তার চরিত্র খুব নিচু মানের। এই লোকটার কোন যোগ্যতা নেই যে সে হংকংকে পরিচালনা করতে পারে। তিন বছর পরে আমি, তার কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে সে প্রমাণ করেছে যে আমি সঠিক ছিলাম এবং নিশ্চিত ছিলাম…।

তিনি তার ভাষণ শেষ করেন একটি প্রশ্ন দিয়ে, “৬৮৯, আপনি কখন মারা যাবেন”।

একই সাথে এই সংখ্যাটিকে প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে:

এই প্রতিবাদ বিক্ষোভের ব্যানারে লেখা আছে,“৬৮৯, যত তাড়াতাড়ি পার, ক্ষমতা ছাড়”। ছবিএইচকেএফ পি।

এবং ২০১৪ সালে গণতন্ত্র-পন্থী “অকুপাই” নামক বিক্ষোভে এই সংখ্যাটি বিশেষ ভাবে জনপ্রিয় ছিলঃ

রাতের বেলা চলা বাসের নাম্বারঃ গন্তব্য নরক। ছবিঃ এইচকেএফপি

জানুয়ারি ২০১৫-এ ক্রীড়াবিদদের জন্য জুতা প্রস্তুত কারক কোম্পানি পুমা তার ফেসবুক পাতা থেকে একজন দৌড়বীদের ছবি সম্বলিত বিজ্ঞাপন অপসারণ করে ফেলে, যে ছবিকে চিহ্নিত করার জন্য ডি৭৬৮৯ নামক ট্যাগ প্রদান করা হয়েছিল। এটি অপসারণের কারণ, এর বিরুদ্ধে সরকার-পন্থী নেট নাগরিকেরা অভিযোগ করেছিল। ডি৭ শব্দটিকে ক্যান্টনিজ অর্থে খারাপ এবং ছবিটির নীচে অজস্র মন্তব্য করা হয়, যেমন ডি৭কে সমর্থন করুন [গোল্লায় যাক], অথবা “৬৮৯” অথবা “এ্যাডমিন, ঠিক জায়গায় আঘাত করেছ”।

পুমার নিজে থেকে সরিয়ে নেওয়া ছবি । ছবি এইচকেএফপি-এর

এরপর থেকে নেট নাগরিকেরা সারা হংকং জুড়ে এই নাম্বারটি খুজে বের করার আনন্দ গ্রহন করছেন, একই সাথে “৬৮৯” সংখ্যা সংক্রান্ত শিল্পকর্ম এবং বিদ্রুপাত্মক কাজ তৈরি করেছে।

নীচে উদ্দীপক এক ভিডিও গেম তুলে ধরা হয়েছে যা তৈরি করেছে রোনি চাও। তিনি একজন ব্যাঙ্গাত্মক রাজনৈতিক ভিডিওর নির্মাতা। তিনি প্রদর্শন করেছেন কি ভাবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি শক্তি অর্জন (কমিউনিস্ট প্রতীক তুলে ধরে) করছে। চিনের এক বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও হংকং মূল চীনা ভূখণ্ডের চেয়ে অনেক বেশী স্বায়াত্বশাসন ভোগ করে,কিন্তু তারপরে হংকং-এ চীনের প্রভাব তবুও অসীম:

নেট নাগরিকেরা একই সাথে খেয়াল করেছে যে ৬+৮+৭ সংখ্যার যোগফল ২৩, এই ২৩ নাম্বার সংখ্যা একই আইনের মূল ধারা, যা স্থানীয় সংসদে চীনের জাতীয় নিরাপত্তা আইনটিকে উল্লেখ করা হয়। এই সংক্রান্ত এক খসড়া আইন তৈরি করা হয়েছিল, যে আইনে চীনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বক্তৃতা এবং অনেক এনজিওর এ্যাডভোকেসির কর্মকাণ্ডকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে ২০০৩ সালের বিক্ষোভের পর এই আইন প্রত্যাহার করা হয়। হংকং সরকার এখনো এই আইন সংশোধনের সাংবিধান প্রক্রিয়া শুরু করেনি এবং জনগণ শঙ্কা করছেন যে প্রধান নির্বাহী “৬৮৯” যদি ২০১৭ সালে পুনরায় নির্বাচিত হয়, তাহলে সে পুনরায় এই আইন চালুর প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ছবি। এইচকেএফপি-এর মাধ্যমে পাওয়া।

বে, লেয়ুং একমাত্র চীনা নেতা নয়, যে এ রকম সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে। তাইওয়ানের বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মা ওয়াইং জেয়ু ২০০৮ সালে ৬৮ লক্ষ, ৯০ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিল, আর এটি তার ডাক নাম হয়ে গিয়েছিল। গত সপ্তাহে তাইওয়ানের সদ্য বিজয়ী রাষ্ট্রপতি সাই ইং ওয়েনও নির্বাচনে ৬০ লক্ষ ৯০ হাজার ভোট ভোট পেয়েছেন। “৬৮৯” কিংবা “৬.৮৯ মিলিয়ন” [৬৮ লক্ষ ৯০ হাজার] এই দুটি সংখ্যার মাঝে দৃশ্যমান পার্থক্য যে রকমটা দেখাচ্ছে:

৬৮৯ এবং ৬৯ লক্ষ ৮০ হাজার এর মধ্য পার্থক্য। ছবি এইচএফকেপি–এর।

বিষয়টি পরিষ্কার নয় যে এটা তার ডাকনামে পরিণত হয়েছে কিনা,যদিও ঘটনাক্রমে ঘটে যাওয়া এই বিষয়টি হংকং বাসীদের চোখ এড়িয়ে যায়নি-তবে এই ঘটনায় মিঃ ও মিসেস হংকং-পিপল আরেকটি চরিত্র সৃষ্টিতে উৎসাহিত হয়েছে:

যখন সি ইং ওয়েন (মিস ইংলিশ যেহেতু তার নামের প্রথম অংশের মানে চীনা ভাষায় ইংরেজি বুঝায়) একটি পরিমাপ যন্ত্রে জনাব ৬৮৯-এর সাথে দাঁড়িয়েছে যে কিনা প্রায় অদৃশ্য হবার দশা।

গাণিতিক ভাবে ৬৮৯ হচ্ছে এক যাদুকরী সংখ্যা, ফাইন্ডদিফ্যাক্টর.কমের ব্যাখ্যা অনুসারে এটি একটি স্ট্রোবোগ্রামাটিক সংখ্যা যার মানে এটিকে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে পড়া যায়।

এইচকেএফপি-এর মাধ্যমে পাওয়া ফাইন্ডদিফ্যাক্টর.কমের ছবি।

একই সাথে এটি পরপর তিনটি মৌলক সংখ্যা ২২৭,২২৯,২৩৩-এর যোগফল এবং এটি ৮৩ থেকে ১০৯ এর মধ্যে যতগুলো প্রাইম নাম্বার রয়েছে তাদের যোগফল।

তবে হংকংবাসীদের ক্ষেত্রে ৬৮৯ সংখ্যাটি হচ্ছে সবসময় অনিবার্য ভাবে নগরের সবচেয়ে অজনপ্রিয় নেতার সাথে যুক্ত।

Exit mobile version