আর কত মানুষ পোড়াবে? – বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার সাধারণ মানুষ

গত কয়েকদিন ধরে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিরোধীদলের ডাকা অবরোধের শেষ দিনে শাহবাগে দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া পেট্রোল বোমায় একটি বাসের ১৮ জন আহত হয়েছেন। ইতোমধ্যে আহতদের মধ্যে ১০ বছরের একটি বাচ্চাসহ তিনজন মারা গেছেন। আহত বাকী ১৬জনের অবস্থা বেশ আশংকাজনক।

আগামী ৫ জানুয়ারি ২০১৪-এ বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে তফসিল ঘোষণা করেছে। কিন্তু প্রধান বিরোধীদল বিএনপি তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে। এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। আর এই আন্দোলনে কারণে প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপি'র বেশ কিছু নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে বেশ কয়েকজন কর্মীও।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা বলতে বিরোধী দল এমন একটি সরকার ব্যবস্থা চাচ্ছে, যেখানে কিছু অনির্বাচিত ব্যক্তি দুইটি নির্বাচিত সরকারের মধ্যবর্তী সময়কালে দেশের শাসনকাজ পরিচালনা করবেন। তাদের প্রধান কাজ হবে নির্বাচন পরিচালনা করা। তবে বাংলাদেশের সংবিধানে এমন সরকার ব্যবস্থার বিধান নেই। তবে সরকারি দল আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নিয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করেছে।

বিরোধীদলের হরতাল ও অবরোধ কোন কোন সময় সহিংস হয়ে উঠছে। পিকেটাররা কোন কোন সময় যাত্রীবোঝাই বাসে পেট্রোল বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে অথবা ট্রেন লাইনচ্যুত করছে যার ফলে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ের সহিংস প্রতিবাদ ও পুলিশের গুলিতে ৫০ জনের বেশী মারা গেছেন এবং ২০০০ এরও বেশী লোক আহত হয়েছে। বেশ কয়েকজন বিরোধী দলীয় নেতাকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ও বেশ কয়েকজন কর্মী আহত বা নিহত হয়েছেন।

এর আগে বিরোধী জোটের হরতাল কর্মসূচীর সময়ে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন কিশোর মনির, সুমী, মন্টু পাল, আসাদ গাজী, নাসিমা বেগম, আবুল কাশেমসহ আরো অনেকে।

শাহবাগে বাসে পেট্রোল বোমায় আক্রান্ত ১৮ জনের একজন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে তার চিকিত্সা চলছে। ছবি তুলেছেন নাভিদ ইশতিয়াক। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (২৮/১১/২০১৩)

বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচীতে সাধারণ মানুষ কীভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন তার একটি খণ্ডচিত্র পাওয়া যাবে প্রথম আলো’র একটি প্রতিবেদনে:

শুক্রবার ভোররাত। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক। যানজটে স্থবির পাঁচ শতাধিক গাড়ি। স্থানে স্থানে ককটেল, ইটপাথর নিয়ে নির্বিচার হামলা। নারকীয় তাণ্ডব। নারী-শিশু-বৃদ্ধ—কারও রেহাই নেই। আহত শতাধিক যাত্রী।

শুক্রবার ভোররাত। ফেনীর দাগন-ভূঞায় নৈশকোচে হামলা। যাত্রীদের মারধর। টাকাপয়সা, মালামাল লুট। পেট্রল ঢেলে বাসে আগুন।

শুক্রবার রাত একটা। রাজশাহী-নওগাঁ সড়কের দেওয়ানপাড়া। ধানবোঝাই চারটি ট্রাকে আগুন। আগুন ওষুধের গাড়িতেও।

বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের হঠাৎ ৭২ ঘণ্টা অবরোধের খণ্ডচিত্র এটি। অবরোধের আগপাছ বিবেচনায় নেই। হামলা যেন অনিবার্য।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, কুমিল্লা, চাঁদপুর—অবরোধের ডাক দেওয়ার আগে রাস্তায় নামা যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাকের ওপর হামলে পড়ার একই চিত্র সবখানে। অপ্রস্তুত মানুষের ওপর পরিকল্পিত হামলা। মহা সড়ক জুড়ে এক অবিশ্বাস্য রাজনৈতিক বর্বরতা।

এটা একদিনে চিত্র। বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচীর সময় এ ধরনের ঘটনা প্রায় ঘটছে। ১ জানুয়ারি ২০১৩ থেকে এ পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন আরো অন্তত ৩৪৮ জন। বাস ট্রেনসহ যানবাহনে আগুন এবং ককটেল বিস্ফোরণে বহু মানুষ দগ্ধ হয়েছেন।

সাধারণ মানুষের ওপর রাজনৈতিক বর্বরতা এবং পুড়িয়ে মারা নিয়ে সারাদেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এভাবে মানুষের মৃত্যুর মিছিল দেখে আমার ব্লগে ব্লগার ফাতেমা জোহরা লিখেছেন:

মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে আমাদের দেশে।একটার পর একটা নিরীহ মানুষ যুক্ত হচ্ছে সেই মৃত্যুর মিছিলে। মাঝে মাঝে মনেহয় এই বুঝি আমিও যুক্ত হলাম সেই মিছিলে, এই বুঝি আমার স্কুল পড়ুয়া ভাইটা সেই মিছিলে হেঁটে যাচ্ছে।যতক্ষণ পর্যন্ত ভাইটা না ফেরে ততক্ষণ পর্যন্ত কান পেতে রাখি দরজায়, অপেক্ষায় থাকি কখন ও এসে বলবে- আপু, দরজা খোলো।আর অস্থির হয়ে ভাবতে থাকি ঠিক মতো ফিরবে তো ভাইটা! নাকি মনিরের মতো….আবার, হঠাৎ বাবার ফোন আসলে মনেহয়- বাবাই তো! নাকি অন্য কেউ বাবার মিছিলে যাবার খবর দিতে ফোন করল! কিন্তু যখন ফোনটা ধরে শুনতে পাই-“হ্যালো মামুনি” তখন মনটা শান্ত হয় এই ভেবে- নাহ, বাবা ভালোই আছে। কিন্তু তারপরও এক অসহ্য আতঙ্ক নিয়ে কাটাতে হয় সারাদিন,বাবা সুস্থভাবে বাড়ি ফিরবে তো!

জামাত-শিবিরের সহিংস প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ধানমন্ডির বাসে আগুন দেবার চিত্র. ছবি তুলেছেন শেখ হাসান আলী। সর্বস্বত্ব ডেমোটিক্স (১/১২/২০১৩)

বাম রাজনৈতিক নেতা এবং অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহম্মদ মানুষের জীবনের মূল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন:

[…] দেশে জমিদারী নিয়ে রক্তারক্তি চলছে। চলছে নানা নিষ্ঠুর খেলা। প্রতিদিন মানুষ মরছে, পুড়ছে! বেশিরভাগ মানুষ শুধু বেঁচে থাকার তাগিদেই বের হয়েছিলেন রাস্তায়। কতজন পঙ্গু হচ্ছেন তার হিসাবও পাওয়া যাবে না। এতো তুচ্ছ মানুষের জীবন! এতো উচ্চ লাটসাহেবদের খাই!!

ফেসবুক ব্যবহারকারী শরিফুল হাসান রাজনৈতিক দলগুলোকে কামড়াকামড়ি বন্ধ করে জনগণকে শান্তিতে থাকতে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন:

ঘেন্না হচ্ছে তাদের প্রতি যারা জনগনের নাম ভাঙ্গিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার কিংবা টিকে থাকার নোংরা রাজনীতি করেন। ঘেন্না তাদের প্রতি যারা নিজ দেশের মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারেন। ঘেন্না তাদের প্রতি যারা আমার এই দেশটাকে অশান্তির আগুনে পোড়াচ্ছে। মাননীয় দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের কাছে আকুতি আপনারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নিজেরা কামড়াকামড়ি করেন, কিন্তু সাধারণ জনগনকে দয়া করে মুক্তি দিন। আমরা একটু শান্তিতে থাকতে চাই।

মৃত্যুর ঝুঁকি অফিসগামী মানুষকে কেমন আতংকগ্রস্ত করে তুলেছে সে কথা লিখেছেন সরদার ফারুক:

মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও অফিসে যেতে হয়। আজ সকালে বাসে উঠে সহযাত্রীদের দেখছিলাম। কারো মুখে কোনো কথা নেই, কী এক আশঙ্কায় জানালাপথে তাকিয়ে আছে। নিজেকে প্রিজনভ্যানের এক ফাঁসির আসামী বলে মনে হচ্ছিলো।

ব্লগার আরিফ জেবতিকও রাস্তায় বের হয়ে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার আশংকার কথা লিখেছেন:

বউয়ের কাজ ঢাকা ভার্সিটিতে, আমি যাব ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নির্বাচন দেখতে। একই রাস্তায় এরকম পড়লে একটু সময় এডজাস্ট করে দুজনে একসঙ্গেই যাই। আজকে সকালেও ওভাবেই রেডি হচ্ছিলাম।

বের হওয়ার ঠিক আগে বিছানায় ঘুমন্ত বাচ্চাটাকে দেখলাম। আমি বললাম, ‘তুমি আলাদা যাও, আমি আলাদা যাই।’ এই দাহকালে দুজনেই একসঙ্গে শিককাবাব হয়ে গেলে চলবে না। আলাদা আলাদা গেলে অন্তত একজন টিকে থাকতে পারবে আগামী প্রজন্মের জন্য।

ব্লগার লীনা ফেরদৌস অভিযোগ করেছেন, রাজনীতিবিদরা মানুষের মৃত্যুর পাহাড় ডিঙিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে:

আর কত মানুষ পূড়লে সফল হবে এই অবরোধ…আর কত মানুষ মরলে জেগে উঠবে মনূষত্য বোধ…
এভাবে ধুকে ধুকে মরার চেয়ে আসেন সবাই একসাথে পুড়ে মরি…আমাদের চিতায় তারা সিংহাসন সাজাক…

কত মানুষ পুড়ে গেলে এই মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হবে তা টুইটারে জানতে চেয়েছেন ফাল্গুনি মিতু:

আরটি @mashamiah: কত মানুষ আগুনে পুড়লে তারা তৃপ্ত হবে? এটা বন্ধ করার জন্য তাদের আর কতো রক্ত চাই?

সাধারণ মানুষ মেরে কার লাভ হচ্ছে সে প্রশ্ন তুলেছেন দীপন মিত্র (@light_0n):

ব্লগার সোহাইল জাফর (@banglapress) দাবি আদায়ের জন্য সাধারণ মানুষকে না পুড়িয়ে নিজেদের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহুতি দিতে বলেছেন:

বিরোধী দলের নেতারা তাদের রাজনৈতিক বক্তৃতা বিবৃতিতে প্রায়ই বলে থাকেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচী দিচ্ছেন। এই বিষয়টির দিকে আঙুল দেখিয়ে মাহবুবুর আলম সোহাগ (@Mahaburs) টুইট করেছেন:

সাংবাদিক জ ই মামুন (@mamunzi) প্রশ্ন তুলেছেন মানুষ পুড়িয়ে মারা, যানবাহনের ক্ষতি করা গণতান্ত্রিক অধিকার হতে পারে কি না:

৬ বছর বয়সী সীমা। বাসে করে যাচ্ছিল। রাজনৈতিক হিংসার বলি হতে হলো তাকেও। ছবি তুলেছেন মামুনুর রশীদ। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (১৮/১১/২০১৩)

এদিকে একের পর এক সাধারণ মানুষ পুড়ে মারা গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি নিরাপত্তাবাহিনী। এজন্য সরকারকে দায়ী করে সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর লিখেছেন:

বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে,রেল লাইন উপড়ে ফেলে সারা দেশে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে, তাদের ধরতে পারছে না কেন সরকার? মানুষের জানমালের নিরাপত্তাই যদি দিতে না পারে তাহলে সরকারের অস্তিত্ব থাকে কোথায়? সন্ত্রাসীদের ধরতে না পারলে সরকারের উচিত জনগনের কাছে ক্ষমা চেয়ে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া। রাজনীতির নামে এই ধরনের পৈশাচিকতা চলতে দেওয়া যায় না, চলতে দেওয়া উচিত না।

বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। সে মামলায় বিরোধী দলের কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নতুনদেশ ফেসবুকে লিখেছেন:

বিরোধী নেতাদের নামে মামলা নয়, সত্যিকারের নাশকতাকারীদের গ্রেফতার করুন। এটা রাজনীতি করার সময় নয়, রাজনীতির বিষয়ও নয়। সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়।

সুমন কায়সার সাধারণ মানুষকে প্রতিবাদ করার আহবান জানিয়েছেন:

মানুষের তরে কি কেউ নেই ? সবাই কী পশুত্ববরণ করেছে? কোন দল বা প্রতিষ্ঠানের কাছে না। শুধু মানুষের কাছে দাবি জানাচ্ছি রুখে দাঁড়ান। প্রতিরোধ করুন যারা মানুষ পোড়ানোকে রাজনৈতিক কর্মসূচি বলে চালিয়ে দিতে চায়।
আপনার যতটুকু সামার্থ্য তা দিয়ে প্রতিবাদ করুন। যারা আমাদের মা-বাবা-ভাই-বোন বা স্বজনকে পোড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কিছু না কিছু করুন। নিজেকে আর কত লুকিয়ে রাখবেন? আর কিছু না পারেন ওদের বিরুদ্ধে অন্তত ঘৃণার একদলা থুথু ছিটিয়ে দিন। না কি তাও পারবেন না????

বিভিন্ন দল ও সংগঠন ছোটখাট প্রতিবাদ শুরু করেছে নিরীহ জনগণের উপর এই বর্বরতা রোধে। সহিংসতা প্রতিরোধে জনতার ব্যানারে “ক্ষমতার লড়াইয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা বন্ধ করো” নামে একটি ফেইসবুক ইভেন্ট খোলা হয়েছিল যার মাধ্যমে গত ৩রা ডিসেম্বর শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। বিভিন্ন শ্রেণীর ও পেশার মানুষ এতে যোগ দেন।

শাহবাগে প্রতিবাদের পোস্টার। সংশ্লিষ্ট ফেইসবুক পাতার সৌজন্যে।

এদিকে সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার কাছে সংলাপে বসার জন্য চিঠি দিয়েছেন। তাছাড়া তার বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো আগামী ৬ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে বাংলাদেশে আসছেন। এর আগেও তিনি বাংলাদেশে এসে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে সংলাপে বসার তাগিদ দিয়েছিলেন।

Exit mobile version