আফ্রিকার প্রাকৃতিক সপ্ত আশ্চর্য নির্বাচনের জন্য ভোট

আফ্রিকার প্রাকৃতিক সপ্ত আশ্চর্য নির্বাচনের উদ্দেশ্য নাগরিকদের ভোট দেওয়ার জন্য এক বার্ষিক প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করা হয়েছে, বর্তমানে যার ভোট প্রদান চলছে। সেভেন ন্যাচারাল ওয়ান্ডার নামের বৈশ্বিক এক মাঠ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে এবং এই মুহূর্তে আফ্রিকা মহাদেশের ১২টি এলাকা এতে অন্তর্ভুক্ত।

তালিকায় যে সমস্ত এলাকা এবার জায়গা করে নিয়েছে এবং যে সমস্ত এলাকা জায়গা করে নিতে পারেনি, তাদের সম্বন্ধে জানুন।

ওকাভাঙ্গো বদ্বীপ, বাৎসোয়ানা

ওকাভাঙ্গো বদ্বীপে জলহস্তীর গোসল,ওকাভাঙ্গো বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্থল বদ্বীপ, ছবি জনের, উইকিপিডিয়া থেকে সিসি লাইসেন্স–এর দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে।

ওকাভাঙ্গো বদ্বীপ এলাকা হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম স্থল বদ্বীপ এলাকা, ওকাভাঙ্গো নদীর উপত্যকায় বৃষ্টির পানিতে এই বদ্বীপের সৃষ্টি হয়। নামিবিয়ার সরকার এখানে একটি জলবিদ্যুৎ স্টেশন তৈরি করার কথা চিন্তা করছে যা কিনা ওকাভাঙ্গো নদীর জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করবে, কিন্তু পরিবেশবাদীদের শঙ্কা এই যে, প্রকল্পটি বদ্বীপ এলাকার বেশীরভাগ জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী বিনষ্ট করবে।

লোহিত সাগরের নীচের শৈলশিরা, মিশর, সুদান এবং ইরিত্রিয়া

লোহিত সাগর হচ্ছে ভারত মহাসাগরের পানির দ্বারা সৃষ্টি একটি অংশ, যা কিনা আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশের মাঝে অবস্থিত। এর নিচে যে শৈলশিরা রয়েছে তা মিশর, সুদান এবং ইরিত্রিয়ার ১,২৪০ মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং এই এলাকায় প্রায় ১,১০০ প্রজাতির মাছের আবাস ।

লোহিত সাগরের আনিথা গোল্ডফিশ, ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স-এর, পাবলিক ডোমেইন-থেকে নেওয়া।

মাউন্ট কেনিয়া, কেনিয়া

মাউন্ট কেনিয়ার দেওয়াল, ছবি রাদু ভাটকু-এর (সিসি বাই -৩.০)

মাউন্ট কেনিয়া হচ্ছে কেনিয়ার সর্বোচ্চ এবং কিলিমানজারোর পর আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতমালা। হাজার বছর ধরে এই পর্বতমালা তার শিখরে বরফের টুপি পড়ে আছে। মাউন্ট কেনিয়ার প্রতিবেশ ব্যবস্থা ২০ লক্ষের বেশী মানুষের কাছে সরাসরি পানি পৌঁছে দিচ্ছে।

বাওবাবস এভিনিউ,মাদাগাস্কার

বাওবাবস এভিনিউ, মারোনডাভা, মাদাগাস্কার-এর স্থানীয় জনতা। ছবি উইকিমিডিয়া কমন্সের (সিসি বাই –এসএ -৩.০) ।

দি এভিনিউ অফ দি বাওবাসো (বাওবাব নামক বৃক্ষের সড়ক) পশ্চিম মাদাগাস্কারের মেনাবে এলাকার মারোন্দাবা এবং বেলোনি-ই ত্রিশিরিবিহিনি নামক এলাকার মাঝামাঝিতে অবস্থিত। এটি হচ্ছে বাওবাব গাছের এক এলাকা, যার মধ্যে কয়েকটা ৮০০ বছরের পুরোনো, সেগুলো প্রায় ৩০ মিটার উচ্চতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং এই বিশেষ প্রজাতির গাছ মাদাগাস্কারের এখন বিপন্ন প্রায়। এই এলাকা সম্প্রতি সংবাদে উঠে আসে কারণ এই এলাকায় দবানাল ছড়িয়ে পড়ে যা কিনা বিশাল গাছের পাশে সদ্য রোপণ করা চারা পুড়িয়ে ফেলে

 বেমারাহা স্টোন ফরেস্ট, মাদাগাস্কার

মাদাগাস্কারের তাসিনিগাই দে বেমারাহা স্ট্রিক নেচার (রুক্ষ) সংরক্ষিত এলাকা। ছবি উইকিপিডিয়ার (সিসি বাই -৩.০)

তাসিনিগাই দে বেমারাহা এটি প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত এলাকা, যা মাদাগাস্কারের মেলাইকা অঞ্চলের পশ্চিম উপকূলের কাছে অবস্থিত। এই প্রাকৃতিক পাথুরে উদ্যান ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের এক সংরক্ষিত এলাকা। আর এই স্টোন ফরেস্ট-এর প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে লাইমস্টোন নামে পরিচিত পাথরের ছুঁচালো পাথরসমূহ যা কিনা ভুপৃষ্ঠের অভ্যন্তরের পানি এবং বায়ুর সংঘর্ষের সৃষ্টি ক্ষয়ের কারণে তৈরি হয়েছে।

জুমা রক, নাইজেরিয়া

আবুজার কাছে জুমা রক নামের পাথর। ছবি ফ্লিকারের জেফ আত্তাওয়াই-এর (সিসি বাই-২.০)

জুমা রক হচ্ছে ৭২৫ মিটার উঁচু একটা মনোলিথ পাথর, যা কিনা নাইজেরিয়ায় আবুজার রাস্তার পাশে অবস্থিত। এর অপর নাম আবুজার প্রবেশ পথ, মূলত আবুজায় যাবার পথ এখান থেক শুরু।

ফার্নেস পিক, রিইউনিয়ন আইল্যান্ড।

এপ্রিল ২০০৭-এ চূড়ায় উদগিরণ, ছবি ফ্লিকাররে জাতিক-এর (সিসি বাই এনসি-এসএ)

লো পতি দে লা ফরনিসে ( আগ্নেয় চূড়া) একটি মুখগহ্বর ঢাকা আগ্নেয়গিরি যা কিনা ভারত মহাসাগরের রিইউনিয়ন দ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত।

আলড্রাব্রা এ্যাটোল, (প্রবাল প্রাচীর) সিশেলিস

আলডাব্রা আইল্যান্ড, সিশেলিস, ছবি ফ্লিকারের জন শ-এর (সিসি-বাই -২.0)।

আলডাব্রা হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোরাল প্রবাল প্রাচীর এবং সিশেলিসের দ্বীপের অংশ। আলডাব্রা হচ্ছে পুরোপুরি মানব হস্তক্ষেপমুক্ত এবং বিশ্বের অতিকায় কচ্ছপদের সর্ববৃহৎ বসতি।

মাউন্ট কিলিমানজারো, তানজানিয়া 

কিলিমানজারোয়-এর কিবো, ছবি ক্রিস ৭৩-এর (সিসি-এনসি-বাই)

কিলিমানজারো হচ্ছে আফ্রিকার সর্বোচ্চ এবং মুক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বের সর্বোচ্চ পাহাড়, যার উচ্চতা ৫৮৯৫ মিটার। বর্তমানে কিলিমাজারোর বরফের স্তর ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে এবং এর ক্রমশ পাতলা হয়ে যাওয়া, বিশ্বের মধ্য-নিম্ন দ্রাঘিমাংশের গ্লেসিয়ার–এর সঙ্কোচন-এর মত ঘটনা। বর্তমানে যে হারে বরফ গলছে, সেই অনুপাতে গলতে থাকলে ২০২২ থেকে ২০৩৩ সালের মধ্যে কোন এক সময়ে কিলিমানজারো পুরোপুরি বরফমুক্ত হয়ে পড়বে।

নাগারোনাগারো ক্রাটার, তানজানিয়া

নাগারোনাগোরো ক্রার্টার এক তরুণ সিংহ শিকারে ব্যস্ত। উইকিমিডিয়ার ছবি তুলেছে ব্রোকেন ইনাগ্লোরি (সিসি বাই ৩.০)

নাগোরোনাগোরো ক্রাটার বিশ্বের বৃহৎ, অভগ্ন এবং উন্মোচিত হয়নি এমন এক আগ্নেয় গর্ত, যা কিনা তানজানিয়ার উচ্চভুমি আরুশার পশ্চিমে অবস্থিত। এই ক্রাটার বা আগ্নেয় গর্ত পূর্ব আফ্রিকার বনভূমির প্রায় সকল প্রজাতির আবাসভুমি, এক হিসেব অনুসারে এই এলাকার মধ্যে প্রায় ২৫,০০০ জন্তু বাস করে।

সেরেঙ্গাতি মাইগ্রেশন, তানজেনিয়া

ওয়াইল্ডবিস্ট নামক প্রাণী নদী পার হচ্ছে, ছবি স্টিফান সোয়ানিপোল-এর উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া। (সিসি বাই -৩.০)

সেরেঙ্গেতি অভিবাসন হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম এবং সর্ববৃহৎ স্থল বন্য জন্তুর অভিবাসন। প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তানজানিয়ার দক্ষিণ সেরাঙ্গাতির নাগোরোনাগোরো এলাকা থেকে বিশাল আকারে বন্যপ্রাণীর এক অভিবাসন যাত্রা শুরু হয়। যখন এই বিশেষ সময় শুরু হয় তখন ১২ লক্ষ বন্য প্রানীর মধ্যে থেকে ৭৫০,০০০টি জেব্রা এই অভিবাসনে অংশ নেয়।

সাহারা মরুভুমি

উত্তর-পূর্ব চাদের এনাদির গুয়েলতা দা’আর্চের উট, ছবি উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া (সিসি-বাই-২.০)

সাহারা মরুভূমি হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মরুভূমি। এই মরুভূমি, আলজেরিয়া, চাদ, মিশর, লিবিয়া, মালি মৌরিতানিয়া, মরোক্কো, নাইজার, পশ্চিম সাহারা, সুদান, এবং তিউনিশিয়ার খানিকটা অংশ জুড়ে ছড়িয়ে আছে। সাহারার দক্ষিণ সীমান্তে জুড়ে কম বৃষ্টিপাতে টিকে থাকতে পারে এমন তৃণভূমি ছড়িয়ে আছে, যাকে বলা হয় সাহেল।

ব্লাগারদের পরামর্শ

এই সংক্ষিপ্ত তালিকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেশ কিছু প্রাকৃতিক বিস্ময় বাদ পড়ে গেছে। কাজে কয়েকজন ব্লগার তাদের নিজস্ব ব্লগের মাধ্যমে এই বিষয়ে নিজেদের পরামর্শ প্রদান করেছেন। এই বিষয়ে খানিকটা বিতর্ক ছিল যে কয়েকটি দেশের প্রাকৃতিক আশ্চর্যের নাম বেশ কয়েবার তুলে ধরা হয়ছে। অন্যদিকে যোগ্যতা সম্পন্ন কয়েকটি এলাকার নাম সেখানে আদৌও উল্লেখ করা হয়নি।

ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত, জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে

জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে সীমান্তে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত ইতোমধ্যে বিশ্বের সেরা সাত প্রাকৃতিক বিস্ময়ের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে।

ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের ধারে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি এক পুকুরে সাতার কাঁটা, লিভিংস্টোন আইল্যান্ড দিয়ে যেখানে যাওয়া যায়। ছবি উইকিমিডিয়া কমন্সের, ইয়ান রেসটাল তা পাবলিক ডোমেইনে প্রকাশ করেছে।

ব্লাইদে রিভার ক্যানিয়ান (নদীর গিরিখাত) দক্ষিণ আফ্রিকা

ব্লাইদ নদীর গিরিখাত যা কিনা মাপুমালাঙ্গা এবং ড্রাকেন্সবার্গ এসক্রাপমেন্ট-এর উত্তর পূর্বে দিকে গঠিত হয়েছে। এটা ১৬ মাইল (২৬ কিলোমিটার) দীর্ঘ এবং গড়ে প্রায় ২,৫০০ ফুট (৭৬২ মিটার) গভীর। এই গিরিখাতের বেশীর এলাকা পাথুরে (স্যান্ডস্টোন নামক পাথর দিয়ে তৈরি)।

ব্লাইদে নদীর গিরিখাতের সেই অংশ যেখান দিয়ে পানি পড়ে (তার ক্রন্দন-শীল চেহারা)। ছবি উইকিপিডিয়ার পটোসিয়ো-এর (সিসি-বাই-৩.০)।

নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাদ পড়ে গেছে এমন যে কোন সাইটের নাম নীচের মন্তব্য বিভাগে যোগ করতে কোন ধরনের অস্বস্থি বোধ করবেন না।

Exit mobile version