আমরা গ্লোবাল ভয়েসেস – পাঁচ বছরের অগ্রযাত্রা

রাইজিং ভয়েসেসের এর পরিচালক ডেভিড সাসাকি সুন্দর একটি পর্যালোচনামূলক লেখা লিখেছেন গ্লোবাল ভয়েসেস এর পঞ্চম জন্মদিনের জন্য। পাঁচ বছর আগে এই মাসে, ডেভিড আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া থেকে হাভার্ড পর্যন্ত গিয়েছিলেন বিশ্ব ব্লগিং এর উপরে একদিনের একটি কর্মশালার জন্য। এই কর্মশালাটি ছোট একটা চিন্তাভাবনামূলক আলোচনার চেয়ে বেশী কিছু ছিল না – যার নাম দেয়া হয়েছিল ‘ গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইন।“ যে ওয়েবসাইট আজকে আপনারা পড়ছেন তা একটি ব্লগ হিসেবে শুরু হয় যা এথান জুকারম্যান আর আমি এই কর্মশালার জন্যে তৈরি করি। আমাদের লক্ষ্য, খুব সাধারণ ভাবে বললে ছিল ‘আলোচনার করা’ যে “কিভাবে ব্লগিং আর ব্লগের হাতিয়ার ব্যবহার করা যায় বিভিন্ন দেশের মানুষকে সাহায্য করার জন্য যাতে তারা একে অপরের সাথে আরো অর্থবহ আর সরাসরি কথোপকথনে নিয়োজিত হতে পারেন। কনফারেন্সে দিনের আলোচনা বড় একটা অংশ ছিল ইন্টারনেট ও সমাজ নিয়ে যা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কম্যান সেন্টার ফর ইন্টারনেট এন্ড সোসাইটি ঠিক করেছিল। ওপেন সোসাইটি ইন্সটিটিউট উদার হয়ে আমাদেরকে কিছু তহবিল দিয়েছিল যাতে বিশ্বের বিভিন্ন দিক থেকে ব্লগারদেরকে আনানো সহজ হয়। আমরা ওয়েবে এই অনুষ্ঠান প্রচার করি, আর অন্যরা- ডেভিডের মতো- এমনি এসে পড়েন। ভাগ্যিস।

সেই মিটিং এর পরে আমি একটা প্রতিবেদন লিখেছিলাম সেটা এখানে দেখা যাবেএখানে রয়েছে ইথানের ‘পরের দিন’ এর ব্লগ পোস্ট। আমরা বিশ্বে রাজত্ব করার জন্যে আটঘাট বেধে কোন পরিকল্পনা নিয়ে বের হইনি- বা ছিল না সঠিক কোন প্রকল্পের জন্যে প্রস্তুতি। অংশগ্রহণকারীরা সিদ্ধান্ত নেন একটা উইকি গঠন করার যাতে তথ্য ভাগাভাগি করা যায় আর অনলাইন মিটিং এর জন্য ইন্টারনেট রিলে চ্যাট (আইআরসি) ব্যবহার করার। এছাড়াও সিদ্ধান্ত হয়েছিল কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারীদের এবং তাদের মতো অন্যদের যাদের আমরা ‘ব্রিজ ব্লগার’ (সেতুবন্ধনকারী ব্লগার) বলা শুরু করেছিলাম তাদের ব্লগগুলোর একটি এগ্রেগেটর (লেখাগুলোর সমষ্টি এক পাতায় দেখানো) তৈরির। এর পরে আমরা কোথায় যাবো তা নিশ্চিত জানতাম না।

তবে একটি জিনিষ পরিষ্কার ছিল: বিশ্বব্যাপী একই চিন্তা ভাবনার ব্লগারদের একটা সমালোচক গোষ্ঠী গঠিত হচ্ছিল। সেই ভাবনাটি ভালো বলে মনে হল যে এই মানুষদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করানো (যা জেফ উই বলেছেন) আর তাদের বাড়ন্ত সংখ্যার গোত্রের জন্য একটি অনলাইন প্লাটফর্ম বানানো। কনফারেন্সের পরের সপ্তাহগুলোতে, বেশ কয়েকজন অংশগ্রহণকারী উইকি ব্যবহার করেন এই কমিউনিটির সবার চিন্তা ভাবনায় গড়া মূল্যবোধ গঠনের জন্য। এর ফলশ্রুতিতে গ্লোবাল ভয়েসেস ম্যানিফেস্টো (ঘোষণা) গঠিত হয়। এটা এখানে আবার দেয়া যুক্তিযুক্ত কারণ আজ গ্লোবাল ভয়েসেস যা করে তা এই মূল মূল্যবোধ দ্বারা তাড়িত:

আমরা বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি: কথা বলার এবং কথা শোনার অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট। আমরা বিশ্বাস করি কথোপকথনের টুলগুলো ব্যবহারের সার্বজনীন বাধাহীন অধিকারে।

এই লক্ষ্যে আমরা চাই যারা বলতে চায় তাদের বলার সুযোগ করে দিতে – এবং যারা তা শুনতে চায় তাদের শোনার মাধ্যম ব্যবহার করতে দিতে।

নতুন মাধ্যম ও টুলগুলোকে ধন্যবাদ – তাদের জন্যেই কথোপকথন আর সেইসব লোকের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই যারা প্রকাশনা ও বিতরণের মাধ্যম গুলোর মালিক বা দখলদার; সেইসব সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই যারা চিন্তা ও কথোপকথনে বাধা আরোপ করে।

এখন যে কেউ প্রচার মাধ্যমের শক্তিকে ব্যবহার করতে পারে। যে কেউ তাদের গল্প পৃথিবী জুড়ে লোকের কাছে বলতে পারে। আমরা চাই বিভিন্ন দেশের মানুষের ভিতরকার ব্যবধান গুলো ঘোচাতে সেতুবন্ধন রচনা করতে, যাতে তারা একে অপরকে ভালভাবে বুঝতে পারে। আমরা আরও কার্যকরী ভাবে এবং আরও শক্তি নিয়ে কাজ করতে চাই।

আমরা বিশ্বাস করি সরাসরি যোগাযোগের শক্তিতে। বিশ্বের বিভিন্ন অন্চলের লোকদের মধ্যকার বন্ধন ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক এবং শক্তিশালী। আমরা বিশ্বাস করি সীমা গুলো ভেদ করে কথোপকথন হওয়া ভবিষ্যৎের জন্যে দরকারী। যে ভবিষ্যৎ হবে মুক্ত, ন্যায়পরায়ণ, উন্নয়নশীল এবং স্থিতিশীল – বিশ্বের সব মানুষের জন্যে।

আমরা এককভাবে কথা বলি এবং কাজ করি কিন্তু আমরা আমাদের যৌথ ইচ্ছা এবং লক্ষ্যগুলোকে চিহ্নিত করে এগিয়ে নিতে চাই। আমরা প্রতিজ্ঞা করি একে অপরকে সম্মান করতে, সহায়তা করতে, শিখতে, শেখাতে এবং একে অপরের কথা শুনতে।

আমরা গ্লোবাল ভয়েসেস।

আমাদের এখন বিস্ময়কর একটি বহুজাতিক দল আছে যারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গ্লোবাল ভয়েসেস এর জন্যে দুত হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু গ্লোবাল ভয়েসেসের আত্মা হচ্ছে শত শত স্বেচ্ছাসেবী যারা তাদের কাজ, পড়াশোনা আর পরিবারের দায়িত্ব থেকে সময় বের করেন আর গঠনে সাহায্য করেন একটা আরো উন্মুক্ত আর অংশগ্রহণমূলক বিশ্ব জনগণের কথোপকথনে।

২০০৬ সালের গ্লোবাল ভয়েসেস সামিটে সদস্যবৃন্দ। ছবি জেইস এর সৌজন্যে

গ্লোবাল ভয়েসেস কিভাবে বিস্তার লাভ করল আর কিভাবে কাজ করে এর বিভিন্ন শাখা – যার মধ্যে আছে রাইজিং ভয়েসেস, গ্লোবাল ভয়েসেস এডভোকেসি আর গ্লোবাল ভয়েসেস লিঙ্গুয়া- সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য অনেক জায়গায় পাওয়া যাবে: এই ওয়েবসাইটে এখানে আর প্রায় জিজ্ঞাস্য শাখায়। আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যাপারে সংবাদ এখানে আছে। ২০০৪ সালের পর আমাদের সমাবেশ হয়েছে লন্ডন (২০০৫), দিল্লী (২০০৬) আর বুদাপেস্টে (২০০৮)। ২০১০ সালে আমরা আর একটা সমাবেশের অপেক্ষায় আছি (স্থান আর তারিখ শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে)।

২০০৬ এ ইথান আর আমি নিম্যান রিপোর্টস ম্যাগাজিনের জন্য একটি প্রতিবেদন লিখেছিলাম যেখানে আমরা গ্লোবাল ভয়েসেস আর সাংবাদিকতার মধ্যকার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলাম। ডেভিডের আর একটা দারুন পোস্ট আছে কেন আউটরিচ, এডভোকেসি আর ভাষান্তর প্রয়োজন যার মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য করা যায় কথা বলার, শোনার আর শোনানোর বাধা অতিক্রম করার জন্যে।

বিশ্বের অনেক স্থানের অনেক মানুষ চিন্তিত যে বিশ্ব ইংরেজী-ভাষার প্রধান ধারার মিডিয়া তাদের দেশকে বেশীরভাগ সময়ে অবজ্ঞা করে, বা তাদের দেশ সম্পর্কে কেবলমাত্র খারাপ জিনিষ লেখে, বা তাদেরকে গতানুগতিক ধারায় ফেলার চেষ্টা করে। তারা গ্লোবাল ভয়েসেস কে মূল্যবান প্লাটফর্ম হিসেবে দেখেন যার মাধ্যমে তাদের গল্প শোনাতে পারেন আর তাদের মতামতকে বিশ্বের পাঠক শ্রোতার কাছে পৌঁছানো যায়। অন্যরা হতাশ যে তাদের নিজেদের সংবাদ মিডিয়া বিশ্বের অনেক কিছুর উপরে রিপোর্ট করতে ব্যর্থ হয়, খারাপ ভাবে করে, বা সেটাকে পক্ষপাত মূলক ভাবে করে যেটা তাদের সরকারের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গীকে সমর্থন করে। আর তাই তারা বিশ্বাস করেন যে গ্লোবাল ভয়েসেসের বিষয়কে তাদের স্থানীয় ভাষায় ভাষান্তর করার ফলে তারা বিশ্ব সম্পর্কে তাদের সমাজের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারবেন। অন্যরা বিভিন্ন সমাজকে সাহায্য করার উপরে জোর দেন যারা তাদের গল্প জানানোর জন্য এখনো নতুন প্রযুক্তির সুবিধা পান নি। অন্যরা যোগ দিয়েছেন সেন্সরশীপ আর নিগ্রহের বিরুদ্ধে তাদের একাত্বতা জানানোর জন্য। জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষনার ধারা ১৯ এর সাথে মিল রেখে তারা কেবলমাত্র তাদের বৈশ্বিক অধিকার ব্যবহার করে বাক স্বাধীনতা ও মুক্ত প্রকাশের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

গ্লোবাল ভয়েসেস সমাজ নিজেদেরকে দাবিয়ে রাখতে দেয় নি সেই শেষ না হওয়া বিতর্কে জড়িয়ে যে ব্লগাররা সাংবাদিক কি না, বা সংবাদ ব্যবসার জন্য ইন্টারনেটের ভূমিকা কি। গ্লোবাল ভয়েসেস এমন কোন বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে না যে ইন্টারনেট বিশ্ব গণতন্ত্রায়নের জন্য অন্যতম শক্তি হবে কি হবে না। একটা গোত্র হিসেবে আমরা বেশী আগ্রহী এবং হাতা গুছিয়ে কাজে লেগে পড়তে চাই নির্দিষ্ট একটা সমস্যা নিয়ে: যা হচ্ছে বিশ্ব জনগনের কথোপকথনের বড় অনোকগুলো ফাঁকের মধ্য থেকে কয়েকটি বন্ধ করা। আর গ্লোবাল মিডিয়ার বিশাল বৈষম্য, অসমতা আর অন্যায়ের বিপক্ষে আমরা যা পারি তা করার চেষ্টা করা। যেভাবে আপনি এই কাজকে ব্যাখ্যা করুন, আমরা বিশ্বাস করি যে আমরা যা করি তার মূল্য আছে আর এটা প্রভাব রাখে।

আমরা কৃতজ্ঞ যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আমাদের কাজকে তাদের আর্থিক সাহায্য দানের উপযুক্ত মনে করেছেন। আমরা সংবাদ সংস্থার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছি যারা আমাদের কাজ দেখে থাকেন আর আমাদের খুঁজে বের করেন কারণ- আমরা যা করি তা যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন- বিশ্ব সম্পর্কে তথ্য আর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়ার বেলায় আমাদের সমাজ মূল্যবান সূত্র। এই কারনে আমাদের প্রথম তিন বছরে রয়টার্স গুরুত্বপূর্ণ আর দরকারী সমর্থন দিয়েছে, আর এই কারনে অনেক সংবাদ সংস্থা আমাদের সম্পাদকদের সাথে কাজ করে আর আমাদের স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে যোগাযোগ করে সাক্ষাৎকারের জন্য। যদিও আমরা বলতে পারি না যে আমরা গ্লোবাল মিডিয়াকে পুরোপুরি পাল্টিয়ে দিয়েছি, আমরা বিশ্বাস করি যে বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টিতে আমরা বেশ কিছু গল্প তুলে ধরেছি যেটা অন্য সময় লক্ষ্য করা হত না, আর অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংবাদে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছি। এটাই পুরো আয়োজনকে যোগ্য করে তুলেছে।

আরো যা উৎসাহ ব্যঞ্জক তা হল গ্লোবাল ভয়েসেস যেভাবে আমাদের সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবী আর বিস্তৃত গোত্রের সদস্যদের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। আমরা একটি সংযোগস্থলে পরিণত হয়েছি যার মাধ্যমে বিস্ময়কর একদল প্রতিভাধর, স্পষ্টবাদী আর খেয়াল করে এমন মানুষ তাদের পরিতৃপ্তি, বিশ্বে পরিচিতি আর তাদের সমাজের সমর্থন পান। এখানে ক্লিক করুন জানার জন্য যে কিভাবে রাইজিং ভয়েসেস বিভিন্ন ধরনের কণ্ঠকে তুলে ধরেছে জাতীয় আর বিশ্ব আলাপচারিতায়, আর ব্যক্তি আর যে সমাজে তারা সংযুক্ত তার উপরে এটি কি প্রভাব ফেলেছে। আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা কি বিস্ময়কর তা বোঝার জন্য এখানে পোস্ট করা কিছু ব্লগার প্রোফাইল পড়ুন আর শুনুন।

বিশ্বের বিভিন্ন ব্লগিং কমিউনিটির উপরে গ্লোবাল ভয়েসেসের প্রভাব আছে যদিও তাদের সাথে আমাদের কোন আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই – তাদের কিছু ব্লগ পোস্টের সাথে লিঙ্ক করে মাঝে মাঝে কিছু ভাষান্তর করা ছাড়া। একটি উদাহরণ: এথান সম্প্রতি ব্যাখ্যা করেছেন তরুণ কিরগিজ ব্লগার বেক্তুর ইস্কেন্দারের সাথে একটা দৃষ্টান্ত মূলক কথোপকথনকে যা ব্যাখ্যা করছে আমাদের কিছু কাজ মধ্য এশিয়াতে কি প্রভাব রেখেছে।

আর একটু গণতান্ত্রিক, উন্মুক্ত আর অংশগ্রহণমূলক বিশ্ব মিডিয়া পরিবেশ থেকে কি পাওয়া যাবে তা পরিষ্কার না। ২০০৪ সালের মিটিং এ ইরানী ব্লগার হোসেন দেরাকশান আশা প্রকাশ করেন যে অনলাইন নাগরিক মিডিয়ার বিস্তৃতি সমাজকে আরো গণতান্ত্রিক করে তুলবে আর সরকারের পক্ষে যুদ্ধকে যুক্তিযুক্ত করা কঠিন হবে। ইন্টারনেটে তিনি ‘হোডার’ নামে পরিচিত, এবং এখন এক বছরের উপরে আহমাদিনেজাদের সরকার দ্বারা আটক অবস্থায় আছেন, আর এটা এখনও পরিষ্কার না যে ইরানী আর পশ্চিমাদের মধ্যে বিস্তৃত যোগাযোগ সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটা বিষয় হবে কি যে আমেরিকা ইরানে আক্রমণ করবে কিনা। ইভগেনি মোরোজোভের মতো লেখক তর্ক করেন যে ইন্টারনেট গণতন্ত্রায়নের শক্তি সেই সম্পর্কে সময়ের আগে উৎসাহ সহকারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা। কারণ স্বৈরাচারী শাষকরা জেনে যাচ্ছেন কিভাবে ইন্টারনেটকে ব্যবহার করা যায় তাদের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে বিক্ষোভকে দমন করার ক্ষেত্রে- আর অনেক দেশে ইন্টারনেট স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী, ভুল তথ্য আর ঘৃণা দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। অন্যদের মধ্যে ক্লে শার্কি আর প্যাট্রিক মায়ার তর্ক করেন যে এখনো আশার কারণ আছে। আর অন্যরা বলেন যে বিশ্বের বেশীরভাগ মানুষের আরো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা আছে- যেমন বেঁচে থাকা- আর অন্যান্য সব কাজ, গ্লোবাল ভয়েসেসসহ, তাদের কাছে মূল্যহীন।

পাঁচ বছর আগে ওরি ওকোল্লহ (যিনি পরে সফল নাগরিক রিপোর্টিং প্লাটফর্ম উশাহিদি গঠন করেন) এই বিতর্কে সামঞ্জস্য আছে এমন কিছু মন্তব্য করেন তর্কের খাতিরে উল্লেখযোগ্য। এইভাবে সেই সময়ে তার কথা আমি রিপোর্ট করেছিলাম:

কেনিয়ার ব্লগার ওরি ওকোল্লহ কিছু দিনের মধ্যে ব্লগিং এর মাধ্যমে আফ্রিকার পরিবর্তন আশা করেন না। আফ্রিকার অনেক সমস্যার মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইড পার হয়ে আসা সব থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ। তারপরেও তিনি মনে করেন ব্লগিং গুরুত্বপূর্ণ -যদিও পরিবর্তনশীল হবে না- স্বল্প সংখ্যক আফ্রিকান যারা ব্লগ করেন তাদের জন্য। “ তরুণদের জন্য, আমাদের কথা শোনা হয় না, আফ্রিকায় রাজনীতিতে বা অন্য স্থানে আমাদের স্থান নেই নিজেদের প্রকাশের জন্য,” ওকোল্লহ বলেছেন। “আমি মনে করি এটা তরুণদের জন্য একটা ফোরাম হবে যেখানে তারা নিজেদের স্থান তৈরি করতে পারবে। আমার মনে হয় না এটা রাজনীতিতে পরিবর্তন আনবে বা কোন নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে কিন্তু আমি মনে করি এটা কোন সমাজকে এমনভাবে লালন করতে পারে যা আগে কখনো হয় নি।“

অনলাইন নাগরিক মিডিয়া নতুন ধরনের সমাজকে লালন করছে স্থানীয়, জাতীয় আর বিশ্ব পর্যায়ে। গ্লোবাল ভয়েসেস আলগা একটা সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে ওরির কেনিয়ার ব্লগিং সমাজ আর বিশ্বের অন্যান্য ব্লগারদের মধ্যে যাদের একই ধরনের মত রয়েছে।

একদিকে গ্লোবাল ভয়েসেস যেমন চেষ্টা করে ঐতিহ্যবাহী সংবাদ মিডিয়া দ্বারা পরিবেশিত সংবাদকে প্রভাবিত করতে- যার বেশীরভাগ বিশেষ কোন জাতি বা অঞ্চলের জন্য -আমরা বিশ্ব কথোপকথনের জন্য একটা প্লাটফর্ম গঠন করছি, আর এটা ঘিরে বিশ্ব নাগরিকের একটা গোত্র। আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করছি আমাদের মানবিকতা থেকে পালাবার জন্য না, বরং এটা প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা বিশ্বাস করি ব্যক্তির পছন্দ ও কাজে পার্থক্য হয়। ইন্টারনেট শেষ পর্যন্ত বেশী ক্ষমতা পাবে কি না যা এখন দেখা যাচ্ছে তা নির্ভর করে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করি কিনা তার উপরে। এই দিকে একটা ছোট প্রচেষ্টা মাত্র একটা বহু-সাংস্কৃতিক, বহু- ভাষার গোত্র গঠন করা যা নির্দিষ্ট কয়েকটা প্রকল্পেই মনোনিবেশ করবে যার আওতায় থাকবে মানবিক মূল্যবোধের কিছু বিষয়।

এটি গ্লোবাল ভয়েসেস অনলাইনের জন্যে ২০০৯-১০ সালের তহবিল যোগাড়ের আহ্বান জানিয়ে ধারাবাহিক পোস্টের প্রথমটি। যদি আপনি আমাদের কাজকে সমর্থন করতে চান, অনুগ্রহ করে আমাদের দানের পাতায় যান। ধন্যবাদ!
Exit mobile version