কোরিয়াঃ জনসমক্ষে চুমু দেয়া

জনসমক্ষে চুমু দেয়া একটি বড় ইস্যুতে পরিনত হয়ে ভবিষ্যতে আরও বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারে।

মেট্রো স্টেশনে দুজন কিশোর কিশোরীকে চুমু খেতে দেখে ইয়োসিন্নাই নামক একজন বয়স্ক লোক তাদেরকে প্রথমে গালাগালি করে তারপর মারধর করে, এ অপরাধের কারনে তার এখন বিচার হবে। সে এর আগে সিগারেট খাওয়ার জন্যেও আর একজনকে মেরেছিল।

আপনি জনসমক্ষে কিশোর কিশোরীদের ভালোবাসার উন্মুক্ত প্রকাশ, সিগারেট খাওয়া আর মদ্যপান সম্বন্ধে কি ভাবেন? আমরা মনে হয় আমরা একটি কঠিন পৃথিবীতে বাস করছি।

এই ঘটনার পর একজন ব্লগার লিখেছেন যে তিনি এই ব্যাপারে অধিকাংশ কোরিয়াবাসীর মতামত সম্বন্ধে কি মনে করেন:

একজন ৬০ বছরের লোক দুই প্রেমিককে মেরেছে কারন তারা প্রকাশ্যে চুমু খেয়েছিল। যেহেতু আমি ওখানে ছিলাম না তাই আমি কারো সমালোচনা করবো না। কিন্তু অন্যদের মতামত দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। তাদের বয়স হয়তো ২০-৩০ বছর, যার ফলে বোঝা যায় যে প্রাপ্তবয়স্করা কি চিন্তা করছে। কিন্তু তাদের মন্তব্য পড়ে আমার খুবই রাগ হয়েছে। তারা বলেছে যে ওই দুইজন কে ঠিক মতো মারার জন্য তাকে পুরস্কৃত করা উচিত। তারা সব সময় বলে আজ কালের বাচ্চারা… এটা তো বাবা-মার দোষ যে তারা এমন শিক্ষা পেয়েছে। এমন কথাও এখন বলে হচ্ছে যে ইন্টারনেটের জন্য বাচ্চারা অশিষ্ট হয়ে উঠছে। কিন্তু এরা নিজেরাই কম্পিউটার কিনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এইসব প্রাপ্তবয়স্ক আর সরকার কি করেছে?

বাচ্চারা বড়দের তৈরি করা পরিবেশে বড় হয়। জন্মের সময় তারা যতই ভালো থাকুক খারাপ পরিবেশ তাদেরকে খারাপ করে। আমি বাচ্চাদের দোষ দেইনা। তারা খারাপ পরিবেশে বড় হওয়ার শিকার। আর ভালোবাসার প্রকাশকে কেন সমালোচনা করা হচ্ছে?

লোকে বলে বাচ্চারা খারাপ, কিন্তু স্কুল টিচারদের দোষ আরো বেশি…প্রথমে স্কুলে শাস্তি দেয়া বন্ধ করতে হবে, কারন আজকাল বাচ্চারা তত খারাপ না। যদিও বড় চুল আর অন্য কিছুর জন্য তাদেরকে খুব ভালো দেখায় না কিন্তু ছাত্ররা আসলে পরিস্থিতির শিকার। খুব বেশি খারাপ ছাত্র নেই আর বাকিরাও বাজে শিক্ষা ব্যবস্থার শিকার। বাচ্চারা বড়দের অনুকরন করে এবং তাদের কাছ থেকে শিখে বড় হয়। আগে বাচ্চারা তাদের উগ্র দিকটি লুকিয়ে রাখত কিন্তু এখন বাচ্চারা প্রকাশ করে আর বড়দের অনুকরন করে। এই ঘটনাই ওই দুইজন ভুল করেছে, কিন্তু আমার লজ্জা লাগে ওই লোকেদের জন্য যারা কোন কিছু না জেনে তাদের দোষ দেয়।

মনে হচ্ছে ওই ঘটনা কিশোর কিশোরি আর বড়দের মধ্যে একটি সংঘাতের জন্ম দিয়েছে:

সমস্যাটির মুল কারন হল উগ্র মনোভাব। রাস্তায় ভালোবাসার প্রকাশ কি এতই অদ্ভুত যে একজন অচেনা লোক আপনাকে তার জন্য মারতে পারে? তাহলে এটাকে বেআইনি বলতে হবে। এই লোক কি আগে রাস্তায় সিগারেট খাওয়ার জন্য ছাত্রদের মারে নি? ছাত্রদের সিগারেট খেতে মানা করার কথা বোঝা যায়… কিন্তু ভালোবাসার ক্ষেত্রে এই লোক যা করেছে তা ভুল। আমার বয়স এখন ৩০ বছর আর এর মধ্যে অনেক ৪০-৫০ বছর বয়সী লোক দেখেছি যাদের আচরন উগ্র, আবার অনেক ২০-৩০ বছরের লোককে দেখেছি যারা ভদ্র। সম্প্রতি আমার মনে হয়েছে যে অনেক ৪০-৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে কোন নীতি নেই।

আর একটি মতামতঃ

তুমি ছাত্র হতে পারো কিন্তু অশ্রদ্ধা প্রকাশ ও সংঘাত ঠিক না। আপনারা কি রিপোর্টটি পড়েছেন? ওটা অনুযায়ী লোকটি যখন ওদেরকে তিরষ্কার করেছিল তখন ওরা তার উপর ক্ষেপে যায়। আমার মনে হয়না কেউ কোন কিশোর কিশোরীকে সিগারেট হাতে দেখলে তাকে মারতে ছুটবে। সাধারনত তাদেরকে বকা দেয়া হয় আর তারা এর বিরোধীতা করলে তখন মারা হয়… হয়তো বা ১০ বছর পরে কিশোর কিশোরী যারা রাস্তায় যৌন সংসর্গে আসবে তারা কোন প্রবীন লোক তাদেরকে বকলে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।

এই ঘটনার ব্যাপারে একজন ব্লগার জনমতের জরিপ দেখিয়েছেন শারীরিক সংসর্গের ব্যাপারে:

ইন্টারনেটে জনসমক্ষে ভালোবাসার প্রকাশের যে সব ছবি দেয়া হয় তা দেখলে আমার অস্বস্তি লাগে। আমি এটা বুঝি যে দুইজন ভালোবাসে কিন্তু জনসমক্ষে এই ধরনের আচরন করা ঠিক না। আশ্চর্যজনকভাবে ১০ জনের মধ্যে ৪ জন কলেজ ছাত্র বলেছে যে জনসমক্ষে হাল্কা চুমুর মতো অভিজ্ঞতা তাদের আছে। সূচকে শারীরিক সম্পর্কের হার: হাল্কা চুমু ৪৩.৮%, হাত ধরা আর জড়িয়ে ধরা ৩০.৬%, আর গভীর ফ্রেঞ্চ স্টাইল চুমু ১১.২ %। মাত্র ১১.৪% বলেছে যে তারা জনসমক্ষে কখনও এমন করেনি।

আমাদের সমাজ এখন উদার হয়েছে। যখন তারা রাস্তায় এমন দৃশ্য দেখে তখন ৪৪.৬% বলে যে ভালোবাসার প্রকাশকে সুন্দর লাগে। ১৯.৩% বলেছে যে অন্যদের ব্যক্তিগত জিনিসে তাদের মাথা ব্যাথা নেই আর ১৫% বলেছে যে অন্য কোথাও এমন করা ভালো। বাকীরা এমন বলেছে যে ‘এটা অস্বস্তিকর’, ‘দুনিয়াটা ঝামেলাপূর্ণ’, ‘তাদের বাবা মা কি জানে?’, ‘হিংসা লাগছে'।

খোলামেলাভাবে মেশা ভালো, কিন্তু ভালোবাসার অতিরিক্ত প্রকাশ ভ্রুকুটি তৈরি করে। আমার মনে হয় ছেলে মেয়েরা মিলিত হবার সময় এই ব্যাপারটা খেয়াল করবে। কতোটা শারীরিক সম্পর্ক করতে দেয়া যায় সে ব্যাপারে মতামত জানতে গিয়ে দেখা গেল ৫৭.১% ছাত্ররা শারীরিক সম্পর্কের কথা বলেছে আর ৪৯.৯% ছাত্রীরা গোপনে চুমু খাওয়া কথা বলেছে।

- হেইজিন কিম

Exit mobile version