আফগানিস্তানে প্রথম কম্পিউটার অ্যানিমেটেড সিনেমা

দীর্ঘ তিন দশকের যুদ্ধ আর ধ্বংসপাতের ইতিহাস পিছনে ফেলে আফগানিস্তান আধুনিক প্রযুক্তি আর মিডিয়া ব্যবহার করে দেশটির পুনর্নিমাণ করছে। আর নতুন প্রজন্মও বেড়ে উঠছে নতুন স্বপ্নকে সাথে নিয়ে। দেশটির প্রথম থ্রিডি কম্পিউটার অ্যানিমেটেড স্বপ্লদৈর্ঘ্য ছবি ‌’বাজ-ই-চিনি’ (ছাগল) হাজারাগি ভাষায় নির্মিত হয়েছে। হাজারাগি হলো আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের ফারসিভাষী হাজারা জনগোষ্ঠীর একটি উপভাষা।

সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে একটি লোক গল্প অবলম্বনে, যেখানে ধূর্ত নেকড়ে ছাগল ও তার তিন বাচ্চার সাথে প্রতারণা করে। আর সিনেমার লোকেশন বেছে নেয়া হয়েছে মধ্য আফগানিস্তানের বামিয়ান প্রদেশকে। ২০০১ সালে তালেবান কর্তৃক ষোড়শ শতাব্দীর বৌদ্ধ মন্দির ভাঙ্গার কথা মনে রেখেই এই জায়গাটি বেছে নেয়া হয়েছে।

‌’বাজ-ই-চিনি’ পরিচালনা করেছেন হাজারা সম্প্রদায়ের গ্রাফিক্স ডিজাইনার আব্বাস আলী। তার জন্ম আফগানিস্তানে। তবে তালেবানরা দেশটি দখল করে নিলে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান। তিনি পাকিস্তানে রিফিউজি হিসেবে যান। এখানেই তিনি অ্যানিমেশন নিয়ে লেখাপড়া করেন। সেখানেই সিনেমা বানানোর উদ্যোগ নেন। আফগানিস্তানে তালেবানদের পতন হলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এবং ‌’বাজ-ই-চিনি’র নির্মাণ শেষ করেন।

অ্যানিমেশন সিনেমার প্রতি আগ্রহ নিয়ে আব্বাস আলী বলেন [ফারসি ভাষায়]:

از زمانی که کودک بودم عشق عجیبی به فلم های کارتونی داشتم که از تلویزیون پخش می شد. بسیار وقت ها از مکتب می گریختم تا برنامه کارتونی دلخواهم را در تلویزیون تماشا کنم و گاهی به خاطر این کار لت هم می خوردم. این علاقه باعث شد که از بسیار   خردسالی به طراحی و نقاشی شروع کنم و در نهایت به مدرسه هنر راه بیابم

ছোটবেলায় টেলিভিশনে যেসব কার্টুন দেখানো হতো, আমি সেগুলোর ভীষণ ভক্ত ছিলাম। টিভিতে পছন্দের কার্টুন দেখার জন্য আমি প্রায় স্কুল থেকে পালিয়ে যেতাম। এজন্য কিছু কিছু সময়ে বেতের বাড়িও খেয়েছি। এই আগ্রহ-ই আমাকে ছবি আঁকার দিকে নিয়ে যায়। পরে আমি ছবি আঁকার স্কুলে (গ্রাফিক্স ডিজাইন ইনস্টিটিউড) ভর্তি হই।

‘বাজ-ই-চিনি’: অফিসিয়াল সিনেমা পোস্টার

সম্প্রতি ন্যাটোচ্যানেল.টিভির সাথে একটি সাক্ষাত্কারে পরিচালক বলেন, ‌’শান্তির বাণী’ পৌঁছে দিতে এবং তালেবানদের ‘আফগান সংস্কৃতি মুছে’ ফেলার অপচেষ্টা রোধ করতেই ‘বাজ-ই-চিনি’ সিনেমা বানানো হয়েছে।

‘বাজ-ই-চিনি’ প্রথমে অবৈধ ভাবে ডিভিডি এবং ভিডিও ক্যাসেটে পাওয়া যেত। বাময়ানের একটি গুহায় সর্বপ্রথম এর একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

বামিয়ানের বাচ্চারা একটি পর্বতের গুহায় স্ক্রিনে ‘বাজ-ই-চিনি’ দেখছে। তাহিরা বকশি’র (রিপাবলিক অব সাইলেন্স) ছবি অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

দ্য রিপাবলিক অব সাইলেন্সে আলি কিরিমি [ফারসি ভাষায়] লিখেছেন:

اهمیت این فلم در اینجاست که نشان می دهد هنرمندان افغان به مرحله یی رسیده اند که می توانند کودکان کشور را با قصه های افغانی سرگرم کنند. بدون شک، پس از سال ها تماشای «تام و جری» آمریکایی، دیدن «بز چینی» بامیانی برای هر طفل افغان تجربه ی لذت بخشی است که هیچ گاه فراموش نخواهند کرد.

‘বাজ-ই-চিনি’ সিনেমা দেখিয়ে দিল, আফগানিস্তানের শিল্পীরা দেশের কার্টুন দিয়েই বাচ্চাদের আনন্দ দিতে পারে। কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই বলে দেয়া যায়, আমেরিকার ‘টম অ্যান্ড জেরি’ দেখার পরেও বামিয়ান প্রদেশের তৈরি ‘বাজ- ই-চিনি’ দেখে দারুণ আনন্দ পাবে। এই মজার অভিজ্ঞতা তারা কখনোই ভুলবে না।

মুহম্মদ আমিন ওয়াহিদি নামের একজন ব্লগার এবং ‘ডিডিনাও সিনেমা প্রডাকশন আফগানিস্তান’-এর প্রতিষ্ঠাতা লিখেছেন:

২০০৪ সালেও আফগানিস্তানে অ্যানিমেটর ছিলেন, যারা স্বল্পদৈর্ঘ্য অ্যানিমেশন তৈরি করতেন, যদিও ‘বাজ-ই-চিনি’র মান এবং গ্রাফিক্স স্টাইল পিক্সারের পণ্যগুলোর সাথে তুলনা করা যায়।

আলেসজান্দ্রো পাভন নামের আফগানিস্তান ভিত্তিক একজন ভিডিও সাংবাদিক তার টুইটারে সিনেমা নিয়ে মন্তব্য করেছেন:

এটা কি #পিক্সারের নতুন সিনেমা? না, এটা আফগানিস্তানের প্রথম থ্রিডি অ্যানিমেশন সিনেমা #‘বাজ-ই-চিনি’

‘বাজ-ই-চিনি’ সিনেমাটি ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। সেখানে অনেক মন্তব্য এসেছে। ইফতেখারচানগেজি বলেন:

দারুণ গ্রাফিক্স- এটি হলিউডি থ্রিডি সিনেমার মতো পেশাদারভাবেই করা হয়েছে। এ ধরনের পেশাদারি কাজের জন্য ধন্যবাদ। এ ধরনের আরো পেশাদারি কাজ দেখার আশায় রইলাম।

Exit mobile version