বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস: ক্যারিবিয়ানে পাখি-বান্ধব স্থান

আমেরিকান রেডস্টার্ট (Setophaga ruticilla) — ২০২৫ সালের বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবসের জন্য নির্বাচিত আটটি প্রজাতির মধ্যে একটি। ছবি: ক্যানভা প্রোর সৌজন্যে

আমেরিকান রেডস্টার্ট (Setophaga ruticilla) — ২০২৫ সালের বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবসের জন্য নির্বাচিত আটটি প্রজাতির মধ্যে একটি। ছবি: ক্যানভা প্রোর সৌজন্যে

এই নিবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল বার্ডস ক্যারিবিয়ান-এ, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে। গ্লোবাল ভয়েসেস এর লেখক এমা লুইস, যিনি একজন উৎসাহী পাখি পর্যবেক্ষক এবং এবং বার্ডস ক্যারিবিয়ান এর সদস্য — তাঁর অতিরিক্ত অবদান সহ সম্পাদিত নিন্মের সংস্করণটি অনুমতি নিয়ে গ্লোবাল ভয়েসেস-এ পুনঃপ্রকাশ করা হচ্ছে।

এবং তারা রওনা হলো! আমেরিকা মহাদেশে অভিবাসনের বিষয় সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, তবে ২০২৫ সালের ১১ অক্টোবর, শনিবার, এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হবে পালকধারী পরিযায়ীরা। বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস (ডাব্লিউএমবিডি) প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় শনিবার লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে উদযাপিত হয়।

প্রতিবছর দুইবার, এই ডানাযুক্ত, নিশাচর যাযাবররা চুপিসারে ও নির্বিঘ্নে দূরপথে যাত্রা করে। শরৎকালে তারা আমেরিকান মহাদেশ পার হয়ে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দিকে উড়ে যায়, আর বসন্তে আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যায়। কোটি কোটি পাখি ঢেউয়ের মতো আসে, যেমনটি বার্ডক্যাস্ট ওয়েবসাইটে লিপিবদ্ধ আছে। ওয়েবসাইটটি গত ৮ অক্টোবর রাতে এক নতুন রেকর্ডের খবর নিশ্চিত করেছে যে এক রাতেই ১২৫ কোটি পাখি পরিযায়ী হয়েছে।

মানুষের যাত্রার মতোই, এই অসাধারণ পরিযায়নও নানা বিপদের মুখোমুখি হয়, তাই পরিযায়ী পাখিদের সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি। যদি তাদের তাড়িয়ে দেওয়ার বদলে আমাদের শহরগুলো তাদের রক্ষা করতে পারত, কেমন হতো? এমন পরিবেশ তৈরি করা কি সম্ভব যেখানে পাখি আর মানুষ দু’জনেই শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে পারে ও উন্নতি লাভ করতে পারে?

২০২৫ সালের বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবসের থিম “শেয়ার্ড স্পেসেস: পাখিবান্ধব শহর ও কমিউনিটি তৈরি” আমাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে প্রকৃতির এই নিয়মিত যাত্রীদের জীবন সংরক্ষণমূলক কাজ ত্বরান্বিত করতে আহ্বান জানাচ্ছে। এই উদ্যোগ আমেরিকার সকল অঞ্চলের মানুষকে একটি যৌথ অঙ্গীকারে একত্রিত করে, যাতে আমরা এই অসাধারণ পরিযায়ী পাখিদের এবং তার সঙ্গে সঙ্গে মানুষদের জন্যও এক উজ্জ্বল এবং টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারি। এই বৈশ্বিক উদ্যোগ এর লক্ষ্য হলো পাখি এবং এর পাশাপাশি মানুষের জন্যও আরও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করা।

যৌথ স্থান, যৌথ সুবিধা

পাখিদের সংরক্ষণের জন্য পাখিবান্ধব সম্প্রদায় গড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলোতে – যেখানে শহর ও গ্রামগুলো প্রায়শঃই বন, জলাভূমি এবং উপকূলীয় পরিবেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলে থাকে। দ্বীপের নগরায়নের সময় স্বাভাবিকভাবেই পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস হয় এবং ঝাঁক থেকে বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি করে, যা তাদের জীবনধারণের জন্য খাবার খুঁজে পাওয়া, পরিবার গড়ার সক্ষমতা এবং শিকারী থেকে নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ার সুযোগকে সরাসরি প্রভাবিত করে।

শহরের বিস্তার পাখিদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর একটি, আর জলবায়ু পরিবর্তন আরও নতুন ধরনের বিপদ সৃষ্টি করছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় এবং তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন সরাসরি উপকূলীয় জলাভূমি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক আবাসস্থলকে বিপন্ন করছে, যেগুলো পাখিদের জীবনধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

বার্ডলাইফ জামাইকা-এর সভাপতি জাস্টিন স্যান্ডার্স বলেন, “পরিযায়ী পাখি এবং জ্যামাইকানদের মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। কিছু জ্যামাইকান সহজেই কিছু পাখিকে চিনতে পারে, যেমন আমেরিকান রেডস্টার্ট (Setophaga ruticilla), যাকে তারা ‘ক্রিসমাস বার্ড’ নামে ডাকে; আবার অন্যরা সম্পূর্ণ বিস্ময় প্রকাশ করে যখন তারা চেস্টনাট-সাইডেড ওয়ার্বলর (Setophaga pensilvanica) দেখে, যা অনেক কম দেখা যায়।”

তিনি মনে করেন, জ্যামাইকানদের মধ্যে এই দূরপাল্লার পরিযায়ী পাখিদের প্রতি ভালোবাসা ক্রমেই বাড়ছে। অনেকের কাছে এই পাখিরা যেন স্থানীয় পাখির মতোই পরিচিত, আর আমাদের বন, নদী ও শহরাঞ্চল তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয় দেয়, যেখানে তারা বিশ্রাম নিতে এবং শক্তি পুনরায় অর্জন করতে পারে যখন শীতকাল এড়াতে তারা বিদেশে উড়ে যায়। তবে স্যান্ডার্স উদ্বিগ্ন যে এই স্থানগুলো ভূমি উজাড়, শহরের বিস্তার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্রমেই চাপের মুখে পড়ছে। তিনি জানান, বার্ডলাইফ জামাইকা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে তারা সমাজের সকল স্তরে মানুষকে আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপের জন্য শিক্ষিত এবং উৎসাহিত করবে, যাতে আমরা এই মিলিত সবুজ জায়গাগুলো উপভোগ করতে পারি এবং আমাদের সকল পালকধারী বন্ধুদের স্বাগত জানাতে পারি।

এজন্যই প্রতিটি সবুজ এলাকা, হোক তা পার্ক, বাড়ির উঠান বা গাছপালা ঘেরা রাস্তা, প্রতিটি দ্বীপের বৃহত্তর পরিবেশগত নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। এই ধরনের মিলিত সবুজ স্থান উভয়ের জন্যই লাভজনক। এগুলো পাখিদের সুরক্ষা দেয় এবং মানুষকে দেয় শীতল ও শান্ত আশ্রয়স্থল, যেখানে তারা বিশ্রাম নিতে পারে এবং মানসিক স্বাস্থ্যও উন্নত হয়। পাখিবান্ধব সম্প্রদায়, যা সবুজ অবকাঠামো যেমন ম্যাংগ্রোভ বন পুনরুদ্ধারশহুরে বন অন্তর্ভুক্ত করে, জলবায়ুর প্রভাব যেমন বন্যাতাপমাত্রা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করতে পারে। এই ধরনের পরিবেশে বিনিয়োগ করে আমরা সবার জন্য আরামদায়ক এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে পারি।

ডাব্লিউএমবিডি দূতদের সঙ্গে পরিচিতি

প্রতিবছর আমেরিকা অঞ্চলের জন্যে পরিবেশ (EFTA) কিছু পাখিকে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবসের দূত হিসেবে নির্বাচন করে। এই বছর মনোনীত আটটি প্রধান প্রজাতির মধ্যে রয়েছে — আমেরিকান রবিন (Turdus migratoriu), পেরেগ্রিন ফ্যালকন (Falco peregrinus), রেড নাট (Calidris canutus), আমেরিকান রেডস্টার্ট (Setophaga ruticilla), জায়ান্ট হামিংবার্ড (Patagona gigas), গ্রেল্যাগ গুজ  (Anser anser), কমন ক্রেন (Grus grus) এবং ইয়েলো-ব্রেস্টেড বান্টিং (Emberiza aureola)। এই সব পাখি আমেরিকার আকাশপথে দেখা যায়, পাশাপাশি ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার আকাশপথেও নজরে পড়ে।

স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি

এ ধরনের পাখিদের স্বাগত জানানোর জন্য পাখিবান্ধব স্থান তৈরি করা কঠিন বা ব্যয়বহুল কিছু নয়। ছোট, দৈনন্দিন পদক্ষেপ, যেমন পাখি বান্ধব কফির বীচি থেকে তৈরি কফি বেছে নেওয়া পাখি সংরক্ষণে সহায়ক হতে পারে—বিশেষ করে যখন বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪৯ শতাংশ পাখি প্রজাতির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড (WWF) এর ২০২৪ সালের রিপোর্টও পাখি সংখ্যা হ্রাসের তথ্য প্রকাশ করেছে, আর সেই বছর বার্ডলাইফ এর প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে যে পরিযায়ী উপকূলীয় পাখির সংখ্যা বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে কমছে

বার্ডস ক্যারিবিয়ান এর নির্বাহী পরিচালক লিসা সোরেনসেন বলেন, “পরিযায়ী পাখিরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি বিপন্ন। জলবায়ু পরিবর্তন, উপকূল উন্নয়ন, দূষণ এবং পর্যটনের চাপ তাদের নির্ভরযোগ্য ক্যারিবিয়ান ক্ষণস্থায়ী বিশ্রামস্থলগুলোকে সংকুচিত করছে। তবে তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করা আমাদের ক্ষমতার মধ্যে। প্রতিটি বাকি থাকা আবাসস্থলই তাদের জন্য জীবনরেখা; আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে, না হলে একদিন এই পরিযায়ন আমাদের উপকূলে আর দেখা যাবে না।”

অন্য কিছু পাখিবান্ধব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে, স্থানীয় গাছ লাগানো, কৃত্রিম আলো কমানো, কীটনাশক ব্যবহার না করা, জানালায় বিশেষ ফিল্ম বা নকশা ব্যবহার করা বা পর্দা টানা এবং প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধ

এদিকে, ক্যারিবিয়ানের শিক্ষকরা বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবসের জন্য নানা ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে, পাখি পর্যবেক্ষণ অভিযান, আবাসস্থল পরিষ্কার, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, স্কুলে উপস্থাপনা, গাছ লাগানো, এমনকি কমিউনিটি ভবনের চারপাশে পাখিদের জন্য পানির পাত্র ও খাবারের ব্যবস্থা করা। এই সব কার্যক্রমের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা পরিযায়ী পাখিদের জীবনধারা, তাদের অভিযোজন কৌশল এবং সেই অসাধারণ যাত্রায় যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হতে হয়, তা জেনে নিতে পারবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .