সৌদি আরবে ফিফা নির্মাণকাজে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীরা প্রাণ হারাচ্ছে

Migrant Construction Workers in the GCC. Image via Flickr by ILO Asia-Pacific. CC BY-ND 2.0.

জিসিসিতে অভিবাসী নির্মাণ শ্রমিক। ছবি ফ্লিকারের মাধ্যমে আইএলও এশিয়া-প্রশান্তমহাসাগর। সৃজনি সাধারণ অপরিবর্তনযোগ্য ২.০

মূলত নেপালি টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের এই সম্পাদিত সংস্করণটি বিষয়বস্তু অংশীদারী চুক্তির আওতায় গ্লোবাল ভয়েসেসে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে।

শত সহস্র কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরের জন্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৩-১৬ মে সৌদি আরব সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা মানবাধিকার পর্যবেক্ষক (এইচআরডব্লিউ) দেশটিতে অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর উপর ১৪ মে, ২০২৫ একটি তদন্ত প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে শত শত অভিবাসী নির্মাণস্থলে পড়ে যাওয়া, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, এমনকি মাথা কেটে ফেলার মতো ভয়াবহ কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য কর্ম-দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে।

এইচআরডব্লিউ অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কার্যকর সরকারি নীতি ও পদ্ধতির অভাবের কথা উল্লেখ করেছে। পদ্ধতি আগে থেকেই বিদ্যমান হলেও একইধরনের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত পরিচালনা করতে ব্যর্থ সৌদি কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সময়মতো ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করেনি।

সৌদি আইন অনুসারে ৫০ বা তার বেশি কর্মী থাকা নিয়োগকর্তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন, প্রশিক্ষণ পরিচালনা, কর্মক্ষেত্রের ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং সুরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাধ্য।

তবে এইচআরডব্লিউ’র তদন্তে দেখা গেছে ব্যাপকভাবে নির্যাতন ও বিপজ্জনক কর্মপরিবেশ বিদ্যমান। প্রচণ্ড গরমের কারণে অসুস্থতা আনুষ্ঠানিকভাবে পেশাগত রোগ হিসেবে স্বীকৃত হলেও তাপজনিত আঘাত ও মৃত্যুরোধী সুরক্ষা এখনো অপ্রতুল।

দীর্ঘ ও ভারী বলে বর্ণিত প্রক্রিয়াটিতে ক্ষতিপূরণ পেতে পরিবারগুলি প্রায়শঃই লড়াই করে।

আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশন (ফিফা) ২০৩৪ বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট আয়োজনের অধিকার প্রদানের পর থেকে সৌদি সরকার এটি পরিচালনার জন্যে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প চালু করেছে। এধরনের মেগা প্রকল্পের সাথে পেশাগত মৃত্যু ও আঘাতের ঝুঁকি বৃদ্ধির ফলে প্রতিযোগিতাটির গুরুতর মানবিক মূল্যের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

“সৌদি আরবে অভিবাসী শ্রমিকদের হত্যার ভয়াবহ কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা ২০৩৪ পুরুষদের বিশ্বকাপ ও অন্যান্য সৌদি বৃহৎ-প্রকল্পে ফিফার অংশীদার হতে ইচ্ছুক ব্যবসা, ফুটবল ভক্ত ও ক্রীড়া সংস্থাগুলির জন্যে একটি বড় হুমকি হতে পারে,” এইচআরডব্লিউ’র মাইকেল পেজ উল্লেখ করেছেন।

গোষ্ঠীটি সৌদি কর্তৃপক্ষ, ফিফা ও সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তাদের জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জোর দিয়ে সকল অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতে বলেছে।

এইচআরডব্লিউ’র অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু গবেষণা থেকে জানা গেছে সরকারিভাবে বেশিরভাগকেই “প্রাকৃতিক কারণ” বলা হয়েছে।

শুধু ২০২৩ সালেই রিয়াদে ভারতীয় দূতাবাসের রেকর্ডে ১,৪২০ জন ভারতীয় অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর ৭৪ শতাংশকে এমন চিহ্নিত করা হয়। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ৮৮৭ জন বাংলাদেশি মৃত্যুর মধ্যে ৮০ শতাংশ এবং ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে রেকর্ড করা ৮৭০ জন নেপালি অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর মধ্যে ৬৮ শতাংশ ক্ষেত্রে “প্রাকৃতিক কারণ” উল্লেখ করা হয়।

দুটি ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীরা পরিবারগুলিকে জানিয়েছে তাদের সহকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গেছে। একটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এবং অন্যটি লিফট দুর্ঘটনায়। অথচ পরিবারগুলিকে বলা হয় তারা ঘুমন্ত অবস্থায় মারা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় সহকর্মীদের মৃত্যু দেখার পরপরই কাজ শুরু করতে বাধ্য হওয়ার কথাও জানিয়েছে। যন্ত্রপাতি দুর্ঘটনার পর বন্ধুর মৃতদেহ সরিয়ে নেওয়া একজন কর্মী পরের দিন কোনো শোক ছুটি বা মানসিক সহায়তা ছাড়াই কাজে ফিরে আসে।

সৌদি আরবের সামাজিক বীমার সাধারণ সংস্থা (জিওএসআই) কর্মক্ষেত্রে আঘাত ও মৃত্যুর বাধ্যতামূলক কভারেজ প্রদান করলেও এইচআরডব্লিউ’র মতে তাদের নীতি ও চর্চার মধ্যে ফারাক রয়েছে।

এমনকি মৃত্যুকে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মক্ষেত্রে সম্পর্কিত হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হলেও অভিবাসী শ্রমিকদের পরিবারগুলি ক্ষতিপূরণ পেতে প্রায়শই দীর্ঘসূত্রিতা  ও  আমলাতান্ত্রিক বাধার সম্মুখীন হয়।

স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর কথা স্মরণ করে একজন নেপালি বিধবা তার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছেন:

আমি কোম্পানির কাছে বীমার অর্থের জন্যে বারবার অনুরোধ করলেও তারা বলেছে তাদের নিয়মে জীবন বীমা পলিসি নেই, রয়েছে কেবল দুর্ঘটনাজনিত বীমা।

তিনি তার স্বামীর মৃত্যুর তদন্ত অসম্পূর্ণ সন্দেহ করলেও একই পরিস্থিতির অনেকের মতো কোম্পানির দাবিকে চ্যালেঞ্জ করা বা স্পষ্টতার জন্যে তার সৌদি আরবে ভ্রমণের সামর্থ ছিল না।

অনেক শোকাহত বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় পরিবারের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের প্রতিকার নিশ্চিতের বোঝা প্রায়শই তাদের নিজ সরকার দ্বা পরিচালিত কল্যাণমূলক কর্মসূচির উপর বর্তায়।

সাধারণত অভিবাসী কল্যাণ তহবিলের মাধ্যমে অর্থায়নকৃত এসকল প্রকল্প সীমিত ত্রাণ প্রদান করে এবং বৈধ শ্রম পারমিট ছাড়া তাদের কাছে প্রায়শই যাওয়ায়ি যায় না। এধরনের সহায়তার পরিধি ও উদারতাও পাঠানো দেশ অনুসারে ভিন্নতর।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .