নির্বাসনে ২০১৮ সালে যেতে বাধ্য হলেও ভিন্নমতাবলম্বী ব্লগার নগুয়েন এনগোক নু কুইন ভিয়েতনামের সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের বিষয়ে লেখা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মি নাম বা “‘মাশরুমের মা” নামে বেশি পরিচিত তিনি পরিবেশ দূষণ ও পুলিশি নির্যাতনের পোস্টের জন্যে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাকে ২০১৬ সালের অক্টোবরে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২০১৭ সালের জুনে দশ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার আগে আট মাসের নির্জন কারাবাসের শিকার হন। দুই বছর সাত দিন কারাবাসের পর তাকে দ্রুত দেশত্যাগের শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত একজন ব্লগার মাশরুম মা ভিয়েতনামী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা দাবি করে আসছেন।
তিনি ২০১৭ সালের আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার ও ২০১৮ সালের আন্তর্জাতিক প্রেস স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরষ্কার জিতেছেন।
গ্লোবাল ভয়েসেস ইমেলের মাধ্যমে তার নির্বাসিত জীবন, সক্রিয় কর্মী ও লেখক হিসেবে তার চ্যালেঞ্জ এবং ভিয়েতনাম ও চীনের সাথে জড়িত আন্তর্জাতিক নির্যাতনের সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে।
মং প্যালাতিনো (এমপি): আপনি কেন “‘মাশরুমের মা” ছদ্মনাম বেছে নিয়েছেন?
নগুয়েন নোক নু কুইন (এনএনকিউ): প্রথম ২০০৬ সালে ব্লগ শুরুর সময় আমি ‘‘মাশরুমের মা’ (মে নাম) নামটি বেছে নিয়েছিলাম। ‘‘মাশরুমের মা’ বলতে কেবল বাড়িতে ‘মাশরুম’ ডাকনামের একটি ছোট মেয়ের মা হওয়া বোঝাতো। আমি আমার মেয়ের জন্যে এক ধরনের ডায়েরি হিসেবে ব্লগটি শুরু করি। আশা করেছিলাম একদিন সে আমার চিন্তাভাবনা ও আমার গর্ভাবস্থার গল্প পড়তে পারবে। এভাবেই সবকিছু শুরু হয়।
তারপর একদিন হাসপাতালে আমার চেকআপের জন্যে অপেক্ষার সময়, আমি একজন নার্সকে একজন জাতিগত সংখ্যালঘু নারীর উপর চিৎকার করতে দেখলাম। আমি তার সাথে কেন এতো অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে জানতে চাইলে কর্মীরা আমাকেও তিরস্কার করে। সেই মুহূর্তটি সবকিছু বদলে দেয়। গর্ভাবস্থার কোমল প্রতিফলন দিয়ে শুরু হওয়া আমার ব্যক্তিগত ডায়েরিটি আগে কখনো খেয়াল না করা সামাজিক অবিচার ও মানবাধিকার বিষয়ে আমার লেখার একটি জায়গা হয়ে উঠলো। একজন মায়ের গল্প একজন নাগরিকের কণ্ঠে পরিবর্তিত হলো।
এমপি: নির্বাসন আপনার জীবন ও একজন লেখক হিসেবে আপনার লেখাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে?
এনএনএনকিউ: নির্বাসন একাধারে একটি মুক্তি ও একটি ক্ষত। এটি আমাকে গ্রেপ্তার বা পর্যবেক্ষণের ক্রমাগত ভয় থেকে মুক্তি দিলেও আমাকে আমার মাতৃভূমি, আমার পরিবার ও আমার মাতৃভাষা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। কারাবাসের তাৎক্ষণিক হুমকির মধ্যে বসবাস না করায় একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে নির্বাসন আপনার কণ্ঠস্বরকে তীক্ষ্ণ করে তুললেও আপনার শ্রোতারা এখনো দেশে ভয়ের মধ্যেই আছে করে বলে তা খুব চ্যালেঞ্জপূর্ণ।
আমি এখন যা কিছু লিখি তা পিছনে পড়ে থাকাদের বোঝা বহন করে। (আগে) আমি একজন মা ও একজন নাগরিক হিসেবে লিখলেও এখন আমি অন্যায়ের সাক্ষী এবং ভিয়েতনামের ভেতরে ও বাইরের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে লিখছি।
এমপি: নির্বাসিত লেখক ও সক্রিয় কর্মী হিসেবে আপনি কোন কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?
এনএনএনকিউ: বিচ্ছিন্নতা হলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের একটি। যাদের গল্প বলতে চাই তাদের থেকে দূরে থাকার অর্থ হলো আমি ডিজিটাল যোগাযোগের উপর অনেক বেশি নির্ভর করি, যা প্রায়শই সীমিত বা নজরদারিতে থাকে। এছাড়াও আবেগগত এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম যন্ত্রের বিপরীতে কেবল ক্ষুদ্র একটি কণ্ঠস্বর হওয়ার বাস্তবতা।
একজন নির্বাসিত কর্মী হিসেবে প্রতিনিয়ত আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করি: আমি কি যথেষ্ট করছি? আমি কি অন্যদের কণ্ঠস্বরকে আরো জোরদার করছি — নাকি অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদের ঢেকে রাখছি? সেই ভারসাম্য একটি ধারাবাহিক সংগ্রাম।
ভিন্নমত দমনে ভিয়েতনামে কর্মীদের জরিমানা, কারাদণ্ড ও মামলার হুমকির প্রেক্ষাপটে নির্বাসন সরকারের সবচেয়ে কার্যকর একটি কৌশল হলেও আমি তাদের ভুল প্রমাণ করেছি: তারা আমাকে দেশ থেকে তাড়ালেও আমার কণ্ঠস্বরকে নীরব করতে পারেনি।
এমপি: আপনি সম্প্রতি ভিয়েতনাম ও চীন সম্পর্কিত আন্তঃজাতিক দমন-পীড়ন সম্পর্কে লিখেছেন। স্থানীয় কর্মী ও লেখকদের উপর এর প্রভাব কী?
এনএনএনকিউ: তিব্বতী আধ্যাত্মিক নেতা তুলকু হাংকার দোরজি ও ভিয়েতনামী সন্ন্যাসী মিন তুকে লক্ষ্য করে পরিচালিত সমন্বিত দমন একটি সাবধানতার সংকেত যা ভিয়েতনাম ও চীনের মতো কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার সীমান্তে নিজ এলাকায় ভিন্নমত দমন দেশের বাইরে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রসারণ দেখাচ্ছে।
এর অর্থ হলো এমনকি নির্বাসনের পরেও স্থানীয় কর্মী ও লেখকদের মত প্রকাশের নিরাপদ স্থান সঙ্কুচিত হচ্ছে। এটি আন্তঃজাতিক সংহতির জরুরি প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে। হো চি মিন সিটিতে একজন তিব্বতী সন্ন্যাসীর সাথে সংঘটিত ঘটনা ব্যাংককের একজন ভিয়েতনামী ব্লগারের সাথে সংঘটিত ঘটনা থেকে আলাদা নয়।
আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্ষীয়মান মানবাধিকারের মূল্যবোধের একটি বিশ্বে আমি সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এখনো পরস্পরের পাশে দাঁড়াতে ও সমর্থন জোগাতে ইচ্ছুক সম্প্রদায়ের সাথে ছোট ও টেকসই একটি সংযোগ স্থাপন করতে চাইছি। লড়াইটি সহজ না হলেও এই লড়াইটি আমরা পরিত্যাগ করতে পারি না।