বিবেক জাহাজ আক্রান্ত: সাহায্য, নীরবতা ও অনাহারের গল্প

ড্রোন হামলার পর গাজা স্বাধীনতা ফ্লোটিলার জাহাজের সামনের অংশে মারাত্মক কাঠামোগত ক্ষতি দৃশ্যমান। উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া ছবিসৃজনি সাধারণ একইরকম ভাগাভাগি ৪.০

স্বাধীনতা ফ্লোটিলা (ক্ষুদ্র জাহাজবহর) জোট পরিচালিত মানবিক ত্রাণ জাহাজ বিবেক মাল্টার কাছে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ২ মে, ২০২৫ ভোরে ড্রোন হামলার শিকার হয়। এই হামলায় উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়, আগুন লেগে যায় এবং জাহাজটি অকেজো হয়ে যায়, যা তিউনিসিয়া থেকে গাজায় প্রয়োজনীয় সরবরাহ পাঠিয়ে ইসরায়েলী অবরোধের প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিল।

গোষ্ঠীটি সামাজিক গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি ভাগাভাগি করেছে:

সদ্য সংবাদ: মাল্টার সময় ০০:২৩, #স্বাধীনতাফ্লোটিলার একটি জাহাজ ড্রোন হামলার শিকার হয়। জাহাজের সামনের অংশ দুবার লক্ষ্যবস্তু হওয়ায় আগুন লেগে জাহাজের হাল ভেঙে যায়। জাহাজটি বর্তমানে #মাল্টা’র কাছাকাছি আন্তর্জাতিক জলসীমায় আছে। একটি #এসওএস বিপদ সংকেত পাঠানো হয়েছে।

পালাউ পতাকায় নিবন্ধিত জাহাজটি খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ ও জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থানবার্গসহ ৩০ জন বিশ্ব শান্তি কর্মীকে গাজায় নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল।

“এটি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার উপেক্ষার আরেকটি উদাহরণ। এধরনের একটি মানবিক মিশনে আক্রমণ করা সন্ত্রাসবাদের কাজ,” সামাজিক গণমাধ্যমে থানবার্গ বলেছেন। স্বাধীনতা ফ্লোটিলা মাল্টা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবকদের জাহাজে পৌঁছতে ও মেরামতসহ আহত চারজনের চিকিৎসার জন্যে ডকে ভেড়াতে বাধা দেওয়ার অভিযোগও করেছে।

“আমরা বর্তমানে গাজায় একটি সরাসরি প্রদর্শিত গণহত্যা দেখছি, যেখানে ২০ লক্ষ মানুষকে ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে রাখা হচ্ছে,” থানবার্গ আরো বলেন

অভিযোগ অস্বীকার করে মাল্টা জাহাজের নাবিকদের সরকারি পরিদর্শন ও সহায়তার অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কথা বলেছে। জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী রবার্ট আবেলা বলেছেন মাল্টা শুধু মানবিক হিসেবে যাচাইয়ের পরে মেরামতের সুবিধা দিতে ইচ্ছুক।

এটাই প্রথমবার নয়

ঘটনাটি গাজাগামী সাহায্য জাহাজে পূর্ববর্তী ইসরায়েলি হামলার প্রতিধ্বনি, যার মধ্যে ২০১০ সালে ইসরায়েলি কমান্ডোরা মাভি মারমারাকে বাধা দেয়, যেখানে নয়জন নিহত ও আরো অনেকে আহত হয়, যাদের একজন পরে আঘাতজনিত কারণে মারা যায়।

জাহাজটি ছিলঅবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা পরিবহনকারী একটি ফ্লোটিলার অংশ। “এর একটি বড় গল্প হলো, এই বহরে গাজার জনগণের কাছে শিশু ইনকিউবেটর ও ওষুধের মতো জিনিসপত্র পৌঁছে দিতে ৪০টি ভিন্ন দেশের ৬০০ জনেরও বেশি মানবিক কর্মী, রাজনীতিবিদ ও ডাক্তার একত্রিত হয়েছিল,” বেঁচে যাওয়া একজন স্মরণ করেন

হামলার তদন্তের জন্যে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন জানতে পেরেছে নিহতদের ছয়জনকে খুব দ্রুত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তে জানা গেছে দুই থেকে ১৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব থেকে পাঁচজনের মাথায় গুলি করা হয়েছে।

বিবেকের উপর হামলার ঘটনাটি নিয়ে মূলত আন্তর্জাতিক ও আরবরা নীরব রয়েছে। তুরস্ক এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এতে তার নাগরিকদের উপস্থিতি উল্লেখ করে জবাবদিহিতা দাবির প্রতিশ্রুতি দিলেও আন্তর্জাতিক জলসীমার সীমান্তে সংঘটিত আক্রমণ সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক দেশ নীরব ছিল।

পদ্ধতিগত অনাহার

বিবেক জাহাজে হামলায় গাজায় মানবিক সংকট আরো খারাপ হয়ে ওঠাকে জাতিসংঘের মহাসচিব “ভয়াবহ ও সর্বনাশ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ইউনিসেফ দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে সতর্ক করে জানিয়েছে “বছরের শুরু থেকে ৯ হাজারেরও বেশি শিশুকে তীব্র অপুষ্টির চিকিৎসার জন্যে ভর্তি করা হয়েছে।”

ইউরো-ভূমধ্যসাগরীয় মানবাধিকার পর্যবেক্ষক জানিয়েছে “অপুষ্টি বা চিকিৎসা সেবার অভাবে কয়েক ডজন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সর্বশেষ পশ্চিম গাজা শহরের আল-রান্তিসি হাসপাতালে চার মাস বয়সী এক শিশু জেনেন সালেহ আল-স্কাফি গুরুতর অপুষ্টিতে মারা গেছে।”

সংস্থাটি চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের রাষ্ট্রগুলিকে সাধারণ অনুচ্ছেদ ১ এর অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণ ও “গাজায় সংঘটিত গণহত্যা বন্ধের জন্যে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের” আহ্বান জানিয়েছে।

ইসরায়েলি অবরোধের ফলে হাজার হাজার গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ বহনকারী ট্রাক মিশরের সীমান্তে আটকে পড়ায় ২ মে পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৭ জন ফিলিস্তিনি দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছে।

বিবেক জাহাজে আক্রমণ ক্রমাগত অনাহার এবং পরবর্তী আন্তর্জাতিক নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখতে ও বর্ণিত “আধুনিক ইতিহাসে পদ্ধতিগত অনাহারের নিকৃষ্ট অভিযান” বন্ধ করতে ব্যর্থতার ক্রমবর্ধমান অভিযোগকে আরো স্পষ্ট করেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .