
ছবি: নির্বাসন হাবের সৌজন্যে। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।
মিয়ানমারে ২০২১ সালে সংঘটিত অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় আত্মপ্রকাশ করা সাংবাদিক ও মানবাধিকার রক্ষাকারীদের ক্ষমতায়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ নির্বাসন হাব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গ্লোবাল ভয়েসেসের অন্যতম অংশীদার। বিশ্ব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে তাদের প্রকাশিত বিবৃতি করেছে, যার একটি সম্পাদিত সংস্করণ এখানে প্রকাশিত হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি মৌলিক মানবাধিকার একটি মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত সমাজের জন্যে অপরিহার্য হলেও মিয়ানমারের সাংবাদিকরা স্বাধীনতা, শান্তি বা ন্যায়বিচারের প্রতি কোন শ্রদ্ধা না দেখানো সংস্থাগুলির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত। তারা দীর্ঘকাল কয়েক প্রজন্ম ধরে সহিংসতা, দমন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে।
সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি (সিপিজে) অনুসারে, চীন ও ইসরায়েলের পাশাপাশি মিয়ানমার বিশ্বে সাংবাদিকদের সবচেয়ে খারাপ কারাগারের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। ২০২৪ সালের তথ্য অনুসারে, সীমান্তবিহীন প্রতিবেদক (আরএসএফ) সাংবাদিকদের জন্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের চিহ্নিত করে তাদের সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে মিয়ানমারকে ১৭১ তম স্থানে রেখেছে।
মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণভাবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলার জন্যে প্রাণ হারানো, কারারুদ্ধ, বাড়িঘর ধ্বংসপ্রাপ্ত বা নির্বাসনে বাধ্য সাংবাদিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপ্রত্যাশিত ক্ষতি ও বিশাল চ্যালেঞ্জ শিকার করে মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকটের জটিলতার মধ্যেও অনেক সাংবাদিক ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের কণ্ঠস্বর তাদের কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ারের একটি।
গণমাধ্যমের প্রতি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও কর্মসূচি পরিচালক লিন হেট তার মতামত ভাগাভাগি করেছেন:
আমাদের কাছে অবশিষ্ট কয়েকটি অস্ত্রের মধ্যে স্বাধীন গণমাধ্যম একটি। শাসকগোষ্ঠী সত্যকে কবর দেওয়ার চেষ্টা করলে পডকাস্ট, সংবাদপুস্তিকা ও অনলাইন গল্প বলে আমরা সত্যকে জীবিত রাখার চেষ্টা করি। মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর থেকে আমরা সত্যকে কর্তৃত্ববাদী শক্তির জন্যে হুমকি হয়ে উঠতে দেখেছি। এই অন্ধকার সময়ে সাংবাদিকতা একটি পেশা ছাড়াও একটি জীবনরেখা, একটি ঢাল, একটি অস্ত্র এবং প্রতিরোধের একটি প্রতিরূপ। বিশ্ব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় গণতন্ত্রের জন্যে লড়াইয়ে লেখা, কথা বলা ও প্রশ্ন করার স্বাধীনতার লড়াই অন্তর্ভুক্ত।
নির্বাসিত সাংবাদিক এস্থার বলেন:
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দিবসে একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি বলতে চাই আমি সবসময় এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখেছি যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। আমি সর্বদা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে থাকবো, কারণ এটি একটি মৌলিক মানবাধিকার। এই অধিকার ছাড়া মানুষ স্বৈরশাসক ও ক্ষমতাসীনদের নিপীড়নের মুখোমুখি হয়। দুর্ভাগ্যবশত গভীর দুঃখের সাথে আমি বলতে চাই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও সংঘাতময় বর্তমান পরিস্থিতি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির প্রতিনিধিত্ব করছে।
লেওয়াদ্দি এফএম-এর সম্পাদক মা কে জুয়ে আরো বলেছেন:
মিয়ানমারের সাংবাদিক হিসেবে আমরা কয়েক দশক সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পাইনি। এখন আমরা বলতে পারি আমরা আমাদের সবচেয়ে অন্ধকার মুহূর্তে ফিরে যাচ্ছি। যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে থাকা মিয়ানমারে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অভাব জনসাধারণের মারাত্মক ক্ষতি করছে। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। ক্রমবর্ধমান তীব্র বৈশ্বিক সংকট ও সংঘাতের মধ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আগের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করি মিয়ানমারের কারাগারে অন্যায়ভাবে বন্দী আমার সহকর্মী সাংবাদিকদের দ্রুত মুক্তি দেওয়া হবে।
নির্বাসন হাব ২০২১ সাল থেকে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম পেশাজীবীদের নিরাপদে স্বাধীনভাবে কাজ চালিয়ে যেতে সাহায্য করতে নিরাপদ আশ্রয়, জরুরি তহবিল, প্রাসঙ্গিক ফেলোশিপ ও অনুদানের সুযোগ দিয়ে আসছে। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনোসামাজিক সহায়তা ও পেশাদার উন্নয়ন কর্মসূচির মতো প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সম্পদের মাধ্যমে তাদের চাহিদাও সমর্থন করি।
নির্বাসন হাব থেকে মা জি মন্তব্য করেছেন:
৩ মে বিশ্ব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা দিবসে আমরা প্রায়শই চড়া ব্যক্তিগত মূল্য দিয়ে সাহসের সাথে কথা বলা ও প্রকাশের অধিকারের জন্যে লড়াইরত বিশ্বের সকল গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক ও সংবাদ উৎসের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। প্রতিটি নীরব কণ্ঠস্বর গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নির্ভীক সত্যানুসন্ধানকারী প্রতিটি সাংবাদিকের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করি, যা জনসাধারণের শোনা দরকার।
নির্বাসন হাব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতাকে মূল্য দিতে গিয়ে চলমান নিপীড়নের মুখেও গণমাধ্যমের পেশাজীবী, নাগরিক সাংবাদিক ও সংবাদ উৎসের অটল নিষ্ঠাকে গভীরভাবে সম্মান করে। চ্যালেঞ্জ, বাধা ও বিপদ সত্ত্বেও তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি অপরিসীম সাহস ও অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চলেছে।