
মিজিমা সংবাদ ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের পর জান্তাদের দমন-পীড়ন এড়াতে একটি প্রত্যন্ত সম্প্রদায়ে কার্যক্রম শুরু করে। মিজিমা টিভি ইউটিউব চ্যানেলে “মিজিমা মায়ানমারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করে” ভিডিওর পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।
মিজিমা সংবাদের গল্পটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্যে মিয়ানমারের জনগণের সংগ্রামের ইতিহাস বর্ণনায় স্বাধীন গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রমাণ দেয়।
ভারতে মিয়ানমারের শরণার্থীদের ১৯৯৮ সালে মিজিমা সংবাদ প্রতিষ্ঠা যা কয়েক দশকের সামরিক শাসনে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের সম্প্রদায়গুলির পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক ও স্বাধীন প্রতিবেদন প্রদান করে। সরকার গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে যাত্রা শুরু করলে ২০১২ সালে মিজিমা সংবাদ মিয়ানমারে প্রথম নির্বাসিত সংবাদমাধ্যম হিসেবে অফিস স্থাপন করে। মিজিমা সংবাদ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংবাদকক্ষ স্থাপন করে তাদের কার্যক্রম স্থানান্তরে বাধ্য হয়।
মিজিমা সংবাদ সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের চার বছর পর দমন-পীড়ন, বিধিনিষেধ, ইন্টারনেট বন্ধ ও আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও মিয়ানমারের ভেতর-বাইরে কর্মরত কর্মীদের নিয়ে স্বাধীন মিডিয়া হিসেবে গল্প প্রকাশ ও সম্প্রচার চালু রেখেছে।
গ্লোবাল ভয়েসেস জুমে মিজিমা সংবাদের প্রতিষ্ঠাতা সোয়ে মিন্টের সাক্ষাৎকার নিয়েছে যাতে তিনি পাঠক ও বৈশ্বিক দর্শকদের মিয়ানমারে কী ঘটছে সে সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য জানাতে অভ্যুত্থানের আগে ও পরে তাদের করা পরিবর্তনগুলি ভাগাভাগি করেছেন। স্পষ্টতা ও সংক্ষিপ্ততার জন্যে উদ্ধৃতিগুলি সম্পাদনা করা হয়েছে।
সোয়ে মিন্ট বলেছেন অভ্যুত্থানের পূর্বাভাস পেয়ে মিজিমা সংবাদ সেনাবাহিনী আবার ক্ষমতা দখল করলেও তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করতে ও প্রস্তুতি নিতে পেরেছিলো।
সামরিক অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে আমরা কী করবো? আমাদের কাছে দুটি বিকল্প আছে। [প্রথমত], সামরিক শাসন যেমন চেয়েছিল [তেমন] আমরা আমাদের কাজ বন্ধ করে দিতে পারি। দ্বিতীয় বিকল্প হলো কাজ চালিয়ে যাওয়া। দুটোরই নিজ পরিণতি রয়েছে। আমরা [কিছু বর্মী গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মতো] আমাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে পারলেও আমরা শুরু থেকেই [আমাদের অবস্থান নিয়ে] খুব স্পষ্ট বলে আমরা চালিয়ে যাওয়ার জন্যে নিজেদের প্রস্তুত রাখবো।
মিজিমা সংবাদ স্যাটেলাইটে সরে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে কার্যক্রম স্থানান্তরের কাজ দ্রুত সমন্বয় করেছে।
চালিয়ে যেতে হলে আমাদের একটি বিকল্প সম্প্রচার ব্যবস্থা থাকতে হবে। সরকার আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দিলেও, আমরা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চালিয়ে যেতে পারবো।
আরেকটি সমন্বয় হলো আমাদের কার্যক্রম স্থানান্তর করা। ইয়াঙ্গুনে আমাদের প্রধান কার্যালয় ও মান্দালয়ের অফিসে বেশি দিন টিকতে পারবো না বুঝতে পেরে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তর করি এবং আমরা বহু বছর ধরে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে আসা সংখ্যালঘুদের নিয়ন্ত্রিত মুক্ত এলাকাগুলি বেছে নিই। অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ পরে আমরা ইতোমধ্যে কারেন রাজ্যে একটি অস্থায়ী সদর দপ্তর স্থাপন করেছি। অভ্যুত্থান সত্ত্বেও আমাদের সম্প্রচারে কোনদিনও ব্যাঘাত ঘটেনি।
Since day 1 of Feb 1 #Myanmar #militarycoup local media like @MizzimaNews never wavered, providing news coverage. Mizzima continues to do so from undisclosed locations in makeshift “newsrooms”. It's 1 of 5 media where #military raided its office & banned #WhatsHappeningInMyanmar pic.twitter.com/IdQp8m90S7
— May Wong (@MayWongCNA) April 28, 2021
#মিয়ানমারে ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ #সামরিকঅভ্যুত্থানের ১ম দিন থেকে @মিজিমাসংবাদের মতো স্থানীয় সংবাদমাধ্যম কখনো দ্বিধাগ্রস্ত না হয়ে সংবাদ প্রচার করে আসছে। মিজিমা অপ্রকাশিত স্থানের অস্থায়ী “সংবাদকক্ষ” থেকে সেটা করে চলেছে। এটি ৫টি গণমাধ্যমের একটি যাদের অফিসে #সামরিক অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে #মিয়ানমারেকীহচ্ছে
সোয়ে মিন্ট উল্লেখ করেছেন কাজ চালিয়ে যেতে পরবর্তীকালে জান্তার হাতে গ্রেপ্তার ও রাজস্ব ক্ষতির কারণে তাদের কঠোর ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। মিজিমা সংবাদের গণমাধ্যম সুরক্ষা সম্পর্কিত একটি বিশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালের অভ্যুত্থান থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃত বিভিন্ন গণমাধ্যম সংস্থার ২০৯ জন সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের প্রায় ৫৫ জন বর্তমানে আটক বা জেলে আছে।
আমাদের অনেক লোক পদত্যাগ করলেও নতুন নিযুক্ত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের উপর নির্ভর করতে হয়েছে। প্রবাসি কিছু সমর্থকরাও সমর্থন জানিয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত সম্পদ ছিল না। অভ্যুত্থানের পরে [হারিয়ে ফেলা] টিভি বিজ্ঞাপনের তহবিলের উপর নির্ভরশীলতার কারণে চালিয়ে যেতে আমাদের সমন্বয় করতে হয়েছে।
সোয়ে মিন্ট বলেছেন, ফেসবুকে আরো বেশি সমর্থক ও ইউটিউব গ্রাহক তৈরি করতে পারায় মিজিমা সংবাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প ফলপ্রসূ হয়। তিনি বিগত চার বছরে তাদের আরো কঠোর পরিশ্রম ও উদ্ভাবন করতে অনুপ্রাণিত করা দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন।
মিজিমা সংবাদের জন্যে নিরাপত্তাই প্রধান চ্যালেঞ্জ কারণ কর্মরত বা যারা আমাদের কাজ করার জন্যে পরিচিত, জান্তা তাদের শাস্তি দেবে, গ্রেপ্তার করবে ও কারাদণ্ড দেবে।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো আর্থিক। অভ্যুত্থানের পর আমরা আমাদের সকল রাজস্ব হারিয়ে ফেলি। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় উৎসাহব্যঞ্জক আন্তর্জাতিক সমর্থন সত্ত্বেও তার উৎস সীমিত ছিল। আমরা ২০২৩ সালের পর আমাদের তহবিলের উৎসগুলিকে বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা করেছি। এটিও বেশ বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ আমাদের একই সময়ে অনেক কিছু করতে হয়।
মিজিমা সংবাদকে দীর্ঘস্থায়ী ইন্টারনেট বন্ধ ও জান্তা আরোপিত অন্যান্য তথ্য বিধিনিষেধের সাথেও লড়াই করতে হয়। এর কর্মীদের গৃহীত একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো ইন্টারনেট পেতে আন্তর্জাতিক সিম কার্ডের ব্যবহার। ইন্টারনেট প্রাপ্তিসহ এর বিষয়বস্তু দর্শকদের কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে মাঝে মাঝে মিজিমা সংবাদ এফএম রেডিও সিগন্যালের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
সামাজিক গণমাধ্যম ছাড়াও লোকেরা [আমাদের বিষয়বস্তু] কীভাবে গ্রহণ করবে সেটাও আমাদের ভাবতে হয় বলে আমরা রেডিও ও টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠান করছি। আমরা বিভিন্ন জায়গায় এফএম স্টেশনও স্থাপন করি যাতে ইন্টারনেট সংযোগহীন ব্যক্তিরাও গল্প শুনতে ও সংবাদ শুনতে পারে।

থাইল্যান্ডের ব্যাংককে মিজিমা সংবাদের কাজের প্রচার। সোয়ে মিন্টের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া ছবি, অনুমতিসহ ব্যবহৃত।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে এবং নির্দিষ্ট এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও গল্প সম্প্রচার নিশ্চিত করতে মিজিমা সংবাদের বেশ কয়েকটি সংবাদকক্ষ রয়েছে।
আমাদের একটি কার্যকরী সংবাদকক্ষের জন্যে আমরা প্রতিদিন একটি নয় বরং দুই থেকে তিনটি সংবাদকক্ষ ব্যবহার করি। নিরাপত্তার কারণে, একদল কর্মী এক দলে থাকে, যারা নিরাপদ তারা অন্য দলে থাকে এবং তারা পরস্পরকে চেনে না।
সোয়ে মিন্ট আত্মবিশ্বাসী মিজিমা সংবাদ গণতন্ত্রের জন্যে মিয়ানমারের জনগণের সংগ্রাম নথিভুক্তকরণে তার ভূমিকা অব্যাহত রাখবে এবং তার তরুণ অবদানকারীরা এই মিশনটি এগিয়ে নেবে।
মিজিমা সংবাদ দু’টি কাজ করে আসছে: স্বাধীন গণমাধ্যম হিসেবে মিয়ানমার সম্পর্কে প্রতিবেদন করে তার পেশাদার কাজ পরিচালনার পাশাপাশি এর আরেকটি প্রধান লক্ষ্য হলো জাতি গঠনে এর অবদান। আমরা বিভিন্ন অংশীজনের সাথে কাজ করি। আমরা সেনাবাহিনীর সাথে কাজ না করা দেশের একমাত্র সংস্থা।
ইতোমধ্যে একটি নতুন প্রজন্ম এই কাজ করছে। অত্যন্ত বুদ্ধিমান, পরিশ্রমী ও মিজিমা সংবাদের লক্ষ্য পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারা এই লক্ষ্যটি অব্যাহত রেখেছে।
এই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে মিজিমা সংবাদের কাজ সম্পর্কে আরো জানুন।