
অলঙ্করণ: গ্লোবাল ভয়েসেস
এই গল্পটি গ্লোবাল ভয়েসেসের নাগরিক গণমাধ্যম মানমন্দিরের সংবাদপুস্তিকা আন্ডারটোনসের অংশ। আন্ডারটোনসের গ্রাহক হোন।
জনপ্রিয়তাবাদী নেতাদের প্রশংসা এই আন্দোলনের একটি সংজ্ঞায়িত বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে, যেখানে এদের জাতীয় বা সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ব্যক্তিত্ব নয় বরং পরিত্রাণ ও নবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া ত্রাতা প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়।
“জনপ্রিয়তাবাদ” জার্নালে প্রকাশিত “মোদির ভারতে রাজনৈতিক দেবায়ণ ও ধর্মীয় জনপ্রিয়তাবাদ” নামের প্রবন্ধে ফিজা বাসুদেব লিখেছেন, তুরস্ক, হাঙ্গেরি, ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের নেতারা তাদের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি শক্তিশালী করতে ধর্মকে ব্যবহার করেছে। তারা ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহিরাগত প্রভাবের বিরুদ্ধে বিশ্বাস-ভিত্তিক মূল্যবোধের সুরক্ষক, এমনকি আধা-ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবেও নিজেদের উপস্থাপন করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তাই করেছেন।
হিন্দুত্ব সংজ্ঞায়িত ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এজেন্ডা হিন্দু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের উপর জোর দেওয়া একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ। বিজেপি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার মূল হিন্দু ভোটার ভিত্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি ও উদ্যোগের উপর যথেষ্ট জোর দিয়েছে। বাসুদেব ব্যাখ্যা করেন ” আধুনিক মিডিয়া প্রযুক্তির সাথে মিলিত হয়ে ধর্মীয় মূর্তির ব্যবহার মোদিকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রচলিত সীমানা পেরিয়ে কর্তৃত্বেবাদী রূপ পরিগ্রহে সক্ষম করে তাকে জাতির আধ্যাত্মিক ও নৈতিক মর্মের অভিভাবক হিসেবে স্থান দিয়েছে।”
বিশেষ করে যোগী আদিত্যনাথ নামে পরিচিত সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের নেতা হিন্দু সন্ন্যাসী অজয় সিং বিষ্টের নেতৃত্বে “বুলডোজার ন্যায়বিচার” উদ্যোগ নামে বিজেপির হিন্দু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ “রক্ষা”র চেষ্টা মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য উস্কে দেওয়ায় অভিযুক্ত হয়েছে। তার অধীনে কর্তৃপক্ষ বিচারিক প্রক্রিয়ায় মামলা বা বিরোধ নিষ্পত্তির আগেই অভিযুক্ত প্রধানত মুসলমানদের বাড়ি ভেঙে ফেলার জন্যে বুলডোজার মোতায়েন করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবেচনায় মুসলমান সম্পত্তি ধ্বংসের প্রচলিত নীতিটি “আন্তর্জাতিক আইনে জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও স্বেচ্ছাচারী যৌথ শাস্তি।”
ভারতীয়তা হিন্দুত্বের সমান বোঝানো এই লড়াইয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতির ধর্মীয় মূল্যবোধের রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জনে সাহায্য করা নীতির একটি ২০১৪ সালের জুন মাসে জল নিষ্কাশনের মাধ্যমে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী ব্যবস্থাপনার অংশ ও হিন্দুধর্মে অপরিসীম ধর্মীয় তাৎপর্যপূর্ণ গঙ্গা নদী সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবনের জন্যে চালু করা নমামি গঙ্গে কর্মসূচি।
আখ্যান: বিজেপিই ভারতের নদী রক্ষাকারী একমাত্র দল
এই আখ্যানমূলক কাঠামোতে বিজেপির রাজনীতিবিদ ও সমর্থকরা নিজেদের হিন্দুদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বজায় রাখতে পারার জন্যে ভারতের নদী সুরক্ষায় কর্মরত একমাত্র দল হিসেবে বিশ্বাস প্রচার করছে।
২০২৪ সালের শেষ ও ২০২৫ সালের গোড়ার দিকে দুটি উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় উৎসব ভারতীয় নদী দূষণ নিয়ে পুনরায় উদ্বেগ জাগিয়ে তোলে।
দিল্লিতে ২০২৪ সালের নভেম্বরে চার দিনের ছট পূজার সময় ভক্তরা বিষাক্ত ফেনায় ঢাকা যমুনা নদীতে স্নান করতে গেলে নিরাপত্তার উদ্বেগ দেখা দেয়। পরে আম আদমি পার্টির (এএপি) নেতা ও দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই ঘটনাটিকে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন হরিয়ানা সরকারের সাথে যুক্ত করেন। কেজরিওয়াল হরিয়ানা সরকারকে ইচ্ছাকৃতভাবে দিল্লিতে প্রবেশকারী যমুনা নদীর জলে বিষ মেশানোয় অভিযুক্ত করায় হরিয়ানা সরকার একটি ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করে এবং নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগের প্রমাণ দাবি করে।
কয়েক মাস পরে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে উত্তর প্রদেশের একটি তীর্থস্থানে হিন্দু উৎসব – মহা কুম্ভ মেলা উদযাপনের সময় ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (সিপিসিবি) যমুনা নদীতে কলিফর্মের মাত্রা বৃদ্ধির কথা জানায়। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে তারা গঙ্গা, যমুনা ও পৌরাণিক সরস্বতী নদীর পবিত্র মিলনস্থল ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান না করার পরামর্শ দেয়।
দিল্লি মহাকুম্ভমেলা উদযাপনের সময় ২০২৫ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারণার মাঝামাঝি থাকায় সেখানে বিজেপি জয়লাভে সক্ষম হয়। অনেকটা যোগী আদিত্যনাথের মন্তব্যের কারণে প্রচারণার সময় রাজনৈতিক বিতর্ক তীব্রতর হয়। দিল্লিতে বিজেপির একটি সমাবেশে আদিত্যনাথ এএপি ও তার মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাদের অবৈধ বসতি স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ করায় উভয় দলই নির্বাচনের সময় অভিবাসী সংখ্যালঘুদের অপরাধী করে তোলে। যমুনা নদীকে এএপি “দূষিত নালা”তে পরিণত করেছে দাবি করে একে “পাপ” হিসেবে বর্ণনা করে তিনি ত্রিবেণী সঙ্গমে এএপি নেতা কেজরিওয়ালকে মহাকুম্ভমেলার সময়ের মতো করে যমুনায় স্নানের চ্যালেঞ্জ করেন।
অনলাইনে বিজেপি যেভাবে এই আখ্যানটি দাবি করেছে
ক্ষমতাসীন বিজেপি দলের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট ২০২৫ সালের বিশ্ব জল দিবসে এই এক্স পোস্ট অ্যানিমেটেড প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রার্থনাপূর্ণ ভঙ্গিতে গঙ্গা নদী থেকে উঠে আসা দেখিয়ে সরকার নমামি গঙ্গে পুনরুদ্ধার প্রকল্পে ৪ লক্ষ কোটি রুপি (প্রায় ৫.৭ লক্ষ কোটি টাকা) বরাদ্দের দাবি করেছে।
হিন্দু ধর্মে পবিত্র গঙ্গা নদীতে স্নান খুব পবিত্র ও আধ্যাত্মিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বিবেচনার কারণে গঙ্গা নদী থেকে উঠে আসা প্রধানমন্ত্রী মোদি পরোক্ষভাবে নমামি গঙ্গে কর্মসূচিকে হিন্দু ধর্মীয় রীতিনীতি সংরক্ষণের সাথে যুক্ত করেছেন।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে কর্মসূচিটির জন্যে বরাদ্দকৃত তহবিল প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেশিরভাগ বছরেই অপ্রয়োজনীয়ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
এটি ১৫৩ মন্তব্য, ৮৭২ পুনঃপোস্ট, ২.৫ হাজার পছন্দ, ১৬ বুকমার্ক ও ২১টি উদ্ধৃতি পোস্ট পেয়েছে। সাফল্য প্রচারের সময় গঙ্গার জলের মানের চলমান সংকটময় অবস্থা স্বীকারে ব্যর্থ প্রকল্পটি পাঠকদের বিভ্রান্ত করায় এটি আমাদের নাগরিক প্রভাব মানে -১ স্থান পেয়েছে।
অনলাইনে বিজেপি সমর্থকরা যেভাবে এই আখ্যানটি ভাগাভাগি করেছে
এই পোস্টে লেখক বিজেপির নেতৃত্বে দিল্লির যমুনা নদীর পরিষ্কার উদযাপন করে একটি নদীতে চলমান বার্জের একটি ভিডিও ভাগাভাগি করেছেন। তিনি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্যে বিজেপির দ্রুত প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন।
২০২৫ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে প্রাক্তন সংসদ সদস্য রমেশ বিধুরী ও দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনার মতো ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্যরা এই আইটেমের সাথে যুক্ত বিশাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রচেষ্টার সূচনা হিসেবে বর্ণিত ভিডিওটি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ভাগাভাগি করে। নতুন সরকার গঠনের সময় ভিডিওটি প্রকাশকালে আম আদমি পার্টির (এএপি) আতিশী মারলেনা তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। টুইটের লেখকের মতে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণের আগে কাজ শুরু করতে পারা বিজেপির দক্ষতা প্রদর্শন করে।
লেখকের ভাব থেকে বোঝা যায় বিরোধীদলীয় অন্যান্য সরকার নদী পরিষ্কারে ব্যর্থ হয়েছে।
ভিডিওটির সময় দিল্লি সরকারের অবস্থানকে প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ না করে বিজেপির মেরুকরণমূলক বক্তৃতার প্রতিলিপি তৈরি করে এই উদ্যোগের পিছনে কোন কর্তৃপক্ষ থাকা স্পষ্ট করতে ব্যর্থতার ফলে পাঠকরা বিভ্রান্ত হচ্ছে বলে এই আইটেমটি ১৯৮ মন্তব্য, ১.৬ হাজার পুনঃটুইট, ৮.২ হাজার পছন্দ, ৬৫ বুকমার্ক ও ১.৬৮ লক্ষেরও বেশি ভিউ পেয়েছে। আমাদের নাগরিক প্রভাব মানে এটি -১ স্থান পেয়েছে।