
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক উন্মুক্ত বিতর্কে হালা আল কারিব। ছবি ফোরাসের। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।
ক্ল্যারিস সিহ ও বিবি আব্রুজিনির লেখা
আফ্রিকার হর্নের নারীরা ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সহিংসতা, বৈষম্য ও পদ্ধতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে অক্লান্ত লড়াই করে আসছে। এই সংগ্রামের অন্যতম প্রধান কণ্ঠস্বর সুদানী কর্মী আফ্রিকার হর্নের নারীদের কৌশলগত উদ্যোগের (এসআইএইচএ) আঞ্চলিক পরিচালক হালা আল-কারিব।
তার কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি গভীর বিশ্বাস: “আমরা কেবল ক্ষমতার কল্পনা নয়, বরং দাবি করছি।”
ফোরাসের আমাদের সাথে হাঁটুন প্রচারণার অংশ হিসেবে আল-কারিব নারী অধিকারের অবস্থা, তাদের মুখোমুখি হওয়া বাধা ও ভবিষ্যৎ গঠনকারী তৃণমূল নারীবাদী আন্দোলনের অপ্রতিরোধ্য শক্তি সম্পর্কে তার অন্তর্দৃষ্টি ভাগাভাগি করেছেন।
সংগ্রাম ও প্রতিরোধে গঠিত একটি জীবন
পদ্ধতিগত নিপীড়নের ইন্ধন জোগানো গভীর বৈষম্য ও জাতিগত বিভাজন দেখা আল-কারিব সুদানে বেড়ে উঠেন। তার চারপাশের নারীদের সহনশীলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে খুব তাড়াতাড়ি তার সক্রিয়তা শুরু হয়:
শুরুতেই আমি নারীদের বিরুদ্ধে, প্রান্তিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে, ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রূপে বিদ্যমান নিপীড়ন সম্পর্কে জেনেছি। আমি আরো শিখেছি বেঁচে থাকতে হলে আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে।
দক্ষিণ সুদান থেকে কানাডা, মিশর থেকে উগান্ডা, আল-কারিবের যাত্রা তাকে সংগ্রামের আন্তঃসংযোগ সম্পর্কে একটি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।
“অড্রে লর্ড বলেছেন, ‘নিপীড়নে কোনো শ্রেণিবিন্যাস নেই।’ আমার সক্রিয়তা এই বিশ্বাসের উপর নিহিত। লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা, জাতিগত বৈষম্য বা অর্থনৈতিক প্রান্তিকীকরণ যাই হোক না কেন, আমাদের লড়াইগুলি পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত।” নাগরিক সমাজ নেটওয়ার্ক ফোরাসের ক্লারিসে সিহের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন।
সঙ্কটে নারী অধিকার: চলমান একটি যুদ্ধ
আফ্রিকার হর্ন নারী অধিকারের সবচেয়ে কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। সুদানের যুদ্ধ বছরের পর বছরের অগ্রগতিকে নস্যাৎ করার ফলে নারীরা অভূতপূর্ব মাত্রার সহিংসতা ও শোষণের ঝুঁকিতে পড়েছে।
একনায়কতন্ত্র উৎখাতে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও সুদানের নারীরা এখন এক নৃশংস প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি। যৌন সহিংসতা, নিপীড়ন ও নারীহত্যার মাত্রা ভয়াবহ,” আল-কারিব ব্যাখ্যা করেন।
একইভাবে ইথিওপিয়ার টাইগ্রেতে সংঘাতের পরে যুদ্ধ-সম্পর্কিত যৌন সহিংসতার শিকার হাজার হাজার নারী ন্যায়বিচারের জন্যে সংগ্রামে বাধ্য হচ্ছে।
“যুদ্ধ নারীদের আন্দোলনগুলিকে ভেঙে দিচ্ছে। প্রচেষ্টাগুলি ভেঙে পড়তে দেখার জন্যেই কেবল আমরা (আন্দোলন) গড়ে তুলি, আবার পুনর্নির্মাণ করি। তবুও নারীরা লেগে রয়েছে, লড়াই করার নতুন উপায় খুঁজে বের করছে।”
সোমালিয়া থেকে উগান্ডা পর্যন্ত এই অঞ্চল জুড়ে নারীরা জোরপূর্বক বিবাহ, শিশুশ্রম ও সামাজিক সুরক্ষার অভাবের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে।
বিশ্বকে বুঝতে হবে লিঙ্গ ন্যায়বিচার শান্তি ও নিরাপত্তা থেকে আলাদা কিছু নয় – এর মূলে এটিই রয়েছে,” আল-কারিব জোর দিয়ে বলেন।
যেকারণে সমাজ-চালিত প্রচারণাই ভবিষ্যৎ
হালা এবং আফ্রিকার হর্নের নারীদের কৌশলগত উদ্যোগকে (এসআইএইচএ) লিঙ্গ ন্যায়বিচারের জন্যে তৃণমূল স্তর থেকে লড়াই শুরু করতে হবে।
প্রকৃত পরিবর্তন কেবল শীর্ষ স্তরেই ঘটে না। এটি ছাত্র সংগঠন, রাস্তার বিক্রেতাদের সমবায়, নারী-নেতৃত্বাধীন স্থানীয় শাসন কাঠামোতেও ঘটে। এখানেই সত্যিকার অর্থে ক্ষমতা পুনর্কল্পিত হয়।
প্রায় ২০০ টিরও বেশি তৃণমূল সংগঠনের সাথে কর্মরত এসআইএইচএ আফ্রিকার হর্ন জুড়ে ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক অধিকার ও সামাজিক সুরক্ষায় নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে নারীদের ক্ষমতায়ন করে।
আল-কারিব নারীবাদী আন্দোলনের রাবিজনীতিকরণ ও স্থানীয় নারীদের কথা না শুনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি থেকে অগ্রাধিকার নির্ধারণের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
“আমরা আমাদের নিজেদের লড়াইয়ের পাতি-ঠিকাদার হতে পারি না। আমাদের বাস্তবতা আমাদেরই, এবং সমাধানগুলিও আমাদেরই নির্ধারণ করতে হবে।”
কর্মকাণ্ডের আহ্বান: পরস্পরকে খুঁজে বের করে লড়াই করা
প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও কী তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে জিজ্ঞেস করা হলে আল-কারিবের স্পষ্ট উত্তর: নারী ভ্রাতৃত্ব।
“আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শক্তি হলো নারীর শক্তি। সবকিছু সত্ত্বেও, আমরা পরস্পরকে সমর্থন করার, সংগঠিত হওয়ার, পুনর্গঠনের উপায় খুঁজে পাই। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”
পদ্ধতিগত বাধায় বিপর্যস্ত তরুণ নারীবাদীদের কাছে তার একটি সহজ বার্তা: “পরস্পরকে খুঁজুন। এভাবেই আন্দোলন গড়ে ওঠে। এভাবেই আমরা জয়ী হই।”
হালা আল-কারিবের কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয়: লিঙ্গ ন্যায়বিচার কোনো বিশেষ অধিকার নয় – এটি আমাদের সকলেরএকটি লড়াই, একটি দায়িত্ব এবং একটি আন্দোলন।
এই নিবন্ধটি #আমাদেরসাথেচলো প্রচারণার অংশ – বিশ্বজুড়ে লিঙ্গ ন্যায়বিচার কর্মীদের গল্প। হালা আল-কারিবের পডকাস্ট পর্বটি এখানে শুনুন।