
চ্যানেলওয়ান টিভির ‘ঘানা কার্ড নিবন্ধন: এনআইএ শরণার্থী পরিচয়পত্র চর্চা ও ইস্যু শুরু করেছে’ ইউটিউব ভিডিও থেকে ঘানা কার্ডধারী একজন ব্যক্তির পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।
আফ্রিকা জুড়ে সরকারগুলি পরিষেবা প্রদান উন্নত, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে দ্রুত ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থা চালু করছে। কেনিয়ার মাইশা নাম্বা থেকে নাইজেরিয়ার জাতীয় পরিচয় নম্বর (এনআইএন) পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও অর্থায়নের জন্যে এসব কর্মসূচি ব্যবহার করলেও আনুমানিক ৫০ কোটি আফ্রিকীয়র এখনো আইনি পরিচয়পত্র নেই।
আফ্রিকীয় ইউনিয়ন (উ) তার ডিজিটাল রূপান্তর কৌশলের (২০২০-২০৩০) একটি মূল উপাদান হিসেবে ডিজিটাল পরিচয়কে স্থান দিয়েছে, যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিটি আফ্রিকীয়কে একটি অনন্য ডিজিটাল পরিচয় প্রদান করা। এসব উদ্যোগের লক্ষ্য অর্থনৈতিক সুযোগ উন্মোচন এবং আফ্রিকা মহাদেশীয় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের (আফসিএফটিএ) অধীনে নিরবচ্ছিন্ন সীমান্ত বাণিজ্যসহ প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি।
এই প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ও বর্জন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গোপনীয়তা আন্তর্জাতিক ও এখনি প্রবেশাধিকারসহ সমালোচকরা দুর্বলভাবে নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থাগুলির সৃষ্ট ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, “শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া আফ্রিকার ডিজিটাল পরিচয় স্বপ্ন নজরদারি দুঃস্বপ্নে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।” ডেটা লঙ্ঘন ও অপর্যাপ্ত আইনি কাঠামো এই কর্মসূচিগুলি নাগরিকদের ক্ষমতায়িত নাকি তাদের নতুন দুর্বলতার মুখোমুখি করে এমন প্রশ্ন উত্থাপন করে।
ডিজিটাল পরিচয়গুলি আকর্ষণের সাথে সাথে বিতর্কও তৈরি করছে: এগুলি আফ্রিকার অগ্রগতির একটি অপরিহার্য হাতিয়ার নাকি গোপনীয়তা ও নাগরিক স্বাধীনতার প্রতি একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি?
আফ্রিকায় ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থার সুবিধা
ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থাগুলি আফ্রিকীয় দেশগুলির জন্যে উল্লেখযোগ্য সুযোগ উপস্থাপন, বৃহত্তর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, উন্নত পরিষেবা সরবরাহ ও শক্তিশালী শাসনের পথ প্রদান করে। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন। ইউএনইসিএ’র অনুমান অনুসারে ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হলে ২০৩০ সালের মধ্যে আফ্রিকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ থেকে ১৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। এই ব্যবস্থাগুলি ব্যাংকিং, ঋণ ও আনুষ্ঠানিক বাজারে প্রবেশাধিকার সক্ষম করে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি করে।
উপরন্তু ডিজিটাল পরিচয় স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সরবরাহ সুগম করে জনসেবা দক্ষতা বৃদ্ধি করে। নাগরিকরা সরকারি পরিষেবাগুলি আরো সহজে পেতে পারে, আমলাতান্ত্রিক বাধা কমে এবং পরিষেবা প্রদানের নির্ভুলতা উন্নত হয়। রুয়ান্ডায় ৯৮ শতাংশেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক জাতীয় পরিচয় ব্যবস্থায় নিবন্ধিত, যা আফ্রিকার সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তিগত পরিচয় ব্যবস্থার একটি হিসেবে ব্যাপকভাবে বিবেচিত। বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করেছে যে শক্তিশালী ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থা অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ উন্নত করা ছাড়া সমাজকল্যাণ কর্মসূচিতে জালিয়াতিও কমায়। রুয়ান্ডার ডিজিটাল পরিচয় উদ্যোগ সমাজকল্যাণ কর্মসূচির আরো ভাল লক্ষ্য নির্ধারণ ও বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া সহজ করেছে।
আফসিএফটিএ’র অধীনে ডিজিটাল পরিচয়গুলি আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য ও শ্রম গতিশীলতা সহজ করে। তারা মহাদেশ জুড়ে ব্যবসা ও ব্যক্তিদের বাণিজ্যে জড়িত হওয়ার একটি নিরাপদ ও যাচাইযোগ্য উপায় প্রদান, বিলম্ব হ্রাস ও অর্থনৈতিক লেনদেনে আস্থা বৃদ্ধি করে।
ডিজিটাল পরিচয়র সাফল্য নির্ভর করে অন্তর্ভুক্তির উপর – যাতে গ্রামীণ সম্প্রদায় ও শরণার্থীরা বাদ না পড়ে।
গোপনীয়তার উদ্বেগ ও ঝুঁকি
অন্যতম প্রধান ঝুঁকি হলো ডেটা নিরাপত্তা, যেখানে কেন্দ্রীভূত ডেটাভিত্তিগুলি সাইবার আক্রমণ ও অননুমোদিত প্রবেশের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত। নাইজেরিয়া ও কেনিয়ার মতো ডিজিটাল পরিচয় কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী দেশগুলি ডেটা লঙ্ঘনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, যা সরকারগুলি কতোটা ভালভাবে সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করতে পারে তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
নিরাপত্তা উদ্বেগের পাশাপাশি সরকারি নজরদারি ও ডেটা অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। এখনি প্রবেশাধিকারের মতো সমর্থক গোষ্ঠীর আশঙ্কা ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থাগুলি নাগরিকদের পর্যবেক্ষণ, ভিন্নমত দমন ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনে ব্যবহৃত হতে পারে। স্পষ্ট ও প্রয়োগযোগ্য ডেটা সুরক্ষা নীতি ছাড়া সনাক্তকরণের উদ্দেশ্যে সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক লাভের জন্যে ব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে।
এছাড়াও অবহিত সম্মতির অভাব একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। ইউরোপীয় উন্নয়ন নীতি ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (ইসিডিপিএম) যেমন পর্যবেক্ষণ করেছে, “আফ্রিকীয় সরকারগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেটা সুরক্ষা এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো শক্তিশালী ডেটা শাসন কাঠামো প্রতিষ্ঠা্র করার আগে বায়োমেট্রিক ডেটাভিত্তি ও ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থা তৈরি করে আসছে।” ফলে এই ব্যবস্থাগুলিতে নথিভুক্ত অনেক ব্যক্তি তাদের ডেটা কীভাবে ব্যবহার বা ভাগাভাগি করা হবে তা পুরোপুরি বুঝতে পারে না।
জনগণের আস্থা ও গ্রহণের চ্যালেঞ্জ
ডিজিটাল পরিচয়র উপর জনগণের আস্থা বাধার সম্মুখীন। আফ্রিকীয় ডিজিটাল অধিকার নেটওয়ার্ক (এডিআরএন) পরিচালিত গবেষণা ইঙ্গিত করে বেশ কয়েকটি আফ্রিকীয় দেশের নাগরিকদের ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থায় তাদের ডেটা কীভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে। গোপনীয়তার অধিকার ও সম্ভাব্য নজরদারি বিশেষ করে ডিজিটাল পরিচয়র সাথে যুক্ত সিম কার্ড নিবন্ধন সম্পর্কে উদ্বেগ নথিভুক্ত করা হয়েছে। এটি নাগরিকদের ডেটা সুরক্ষা ও ডিজিটাল শনাক্তকরণ উদ্যোগে আস্থা তৈরিতে শক্তিশালী আইনি সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
ডিজিটাল সাক্ষরতা আফ্রিকা জুড়ে ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা। অনেক নাগরিক বিশেষ করে গ্রামীণ ও সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের ডিজিটাল মঞ্চগুলিতে কার্যকরভাবে জড়িত হওয়ার প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব রয়েছে। প্রতি বছর ১১ ফেব্রুয়ারি পালিত নিরাপদ ইন্টারনেট দিবসের (এসআইডি) মতো উদ্যোগগুলি অনলাইন গোপনীয়তা, সাইবার নিরাপত্তা ও দায়িত্বশীল ডিজিটাল সম্পৃক্ততা সম্পর্কে আলোচনা প্রচার করে এই ব্যবধান মোচনে সহায়তা করে। এই প্রচেষ্টাগুলি ডিজিটাল যুগে ব্যক্তিদের অধিকার ও দায়িত্ব বুঝতে পারা নিশ্চিত করে।
বিশ্বব্যাংকের একটি ২০২২ সালের প্রতিবেদন আফ্রিকার নিম্ন ডিজিটাল দক্ষতা তুলে ধরে যা অনুসারে অনেক দেশের বৈশ্বিক গড়ের নিচে স্কোর ও ডিজিটাল সাক্ষরতার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। এই ব্যবধানগুলি ডিজিটাল সাক্ষরতা উন্নত করতে ও ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থার সফল গ্রহণ ত্বরান্বিত করার জন্যে সরকারি লক্ষ্যিত হস্তক্ষেপ ও জনশিক্ষার উদ্যোগের জরুরি প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
এছাড়াও প্রবেশাধিকারযোগ্যতার সমস্যাগুলি প্রান্তিক গোষ্ঠীসমূহকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার (ইউএনএইচসিআর) এই সত্যটি তুলে ধরে যে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের প্রায়শই জাতীয় তথ্যে কম প্রতিনিধিত্ব বা অদৃশ্য করা হয়। অন্তর্ভুক্তির এই অভাব অপরিহার্য পরিষেবা ও আইনি স্বীকৃতিতে তাদের প্রবেশাধিকার বাধাগ্রস্ত করতে পারে, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক নাগরিক নিবন্ধন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
উদ্ভাবন ও গোপনীয়তার ভারসাম্য বজায় রাখা
কিছু কিছু দেশে শক্তিশালী ডেটা আইন থাকলেও অন্যদের সংগ্রহ ও সংরক্ষণের স্পষ্ট নীতির অভাবের কারণে ডিজিটাল পরিচয়র জন্যে নিয়ন্ত্রক কাঠামো খণ্ডিত রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) অনুসারে আফ্রিকার অর্ধেকেরও কম দেশে সাধারণ ডেটা সুরক্ষা বিধির (জিডিপিআর) মতো বৈশ্বিক মানসম্পন্ন বিস্তৃত আইনি কাঠামো রয়েছে।
ডিজিটাল রূপান্তর প্রচেষ্টা ত্বরান্বিতের সময় আফ্রিকার উদ্ভাবন ও গোপনীয়তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইউ অনুসারে, সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্যে ডিজিটাল পরিচয় কাঠামোর সমন্বয় সাধন অপরিহার্য। ডিজিটাল পরিচয় গ্রহণে আস্থা তৈরির জন্যে আফ্রিকীয় সরকারগুলিকে স্বচ্ছতা, সাইবার নিরাপত্তা ও আইনি কাঠামো বাড়াতে হবে।
এই ভারসাম্য অর্জনের জন্যে দেশগুলিকে সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগে বিনিয়োগ, স্পষ্ট নিয়ন্ত্রক কাঠামো বাস্তবায়ন এবং জনসচেতনতা প্রচারণা বৃদ্ধি করা দরকার। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিরাপদ ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থা তৈরির জন্যে সরকার, নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা অপরিহার্য।