আল জাজিরা ইংরেজিতে প্রকাশিত “‘ব্যালট বাক্স বিপ্লব’: লেবাননে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে” ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।

আবেদ কাতায়ার এই নিবন্ধটি ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে এসএমইএক্স-এ প্রকাশিত হয়। একটি বিষয়বস্তু ভাগাভাগি চুক্তির অংশ হিসেবে গ্লোবাল ভয়েসেসে এর একটি সম্পাদিত সংস্করণ পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে।

লেবাননে ৪ থেকে ২৫ মে’র মধ্যে নয় বছরের মধ্যে প্রথম পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে দেশটির নাগরিক মান অধিদপ্তর (ডিজিসিএস)  ১ মার্চ, ২০২৫ সালের মধ্যে ভোটারদের অনলাইন ভোটার তালিকায় তাদের ব্যক্তিগত তথ্য নিশ্চিত করতে উৎসাহিত করার জন্যে একটি প্রচারণা শুরু করেছে।

লেবাননের পৌর ও সংসদীয় নির্বাচনী আইনের অধীনে সঠিক শনাক্তকরণ নিশ্চিত করতে এই তালিকাগুলিতে ভোটারদের পূর্ণ নাম, পিতামাতার নাম, নিবন্ধন নম্বর, লিঙ্গ, জন্ম তারিখ ও সম্প্রদায় প্রকাশ্যে প্রদর্শন করতে হবে। ভোটাররা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার করে অনলাইনে তাদের রেকর্ড পরীক্ষা করতে পারবে।

অনলাইনে ভোটার তালিকা ও ব্যক্তিগত বিবরণ প্রকাশ করলে সাম্প্রতিক লেবাননের যুদ্ধে ইসরায়েলি পেজার আক্রমণ বা হুমকিমূলক ফোন কল ও ডিজিটাল যুদ্ধের অন্যান্য উদাহরণ যেমন দেখা গেছে তেমন যেকেউ এই তথ্যে প্রবেশ ও অপব্যবহার করতে পারে। ব্যবহারকারীরা ভোটারের শাসন এলাকা, গ্রাম, পাড়া, লিঙ্গ, সম্প্রদায় ও নাগরিক নিবন্ধন নম্বর নির্বাচন করে একই বিভাগে সমস্ত ভোটার দেখতে পারাটাও উদ্বেগজনক।

কেউ এই বিবরণে প্রবেশ করলে মঞ্চটি আপনার তথ্য এবং একই বা অনুরূপ নাগরিক রেকর্ডসহ অন্যান্য আত্মীয়দেরগুলিও দেখাবে। হেরফের করার সম্ভাবনার কারণে এটি গোপনীয়তার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে, যা নির্দিষ্ট অঞ্চলে আত্মীয়দের বা ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ এবং অবৈধ কার্যকলাপকে সক্রিয় করতে পারে। এটি লক্ষ্যবস্তু আক্রমণ, হয়রানি ও বৈষম্যসহ ব্যক্তিগত তথ্য নষ্টের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতে পারে।

গত যুদ্ধের সময় ডেটার অপব্যবহার ও ব্যক্তিগত রেকর্ডের ডিজিটালকরণের পর থেকে লেবাননের ডেটা ফাঁস, নাগরিকদের ডেটা লঙ্ঘন ও হেরফের থেকে রক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। লেবাননে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির মধ্যে দূতাবাস থেকে ভোটারদের ডেটা, স্কুল থেকে ডেটা ফাঁস এবং গাড়ির নিবন্ধন রেকর্ডের বারবার ফাঁসের মতো ঘটনাগুলি দেশের দুর্বল সাইবার নিরাপত্তার দৃশ্যপটকে তুলে ধরে।

এছাড়াও সরকারি সংস্থাগুলি ব্যবহারকারীর ডেটার পর্যাপ্ত সুরক্ষা ও আইনি কাঠামোর দুর্বলতা প্রদর্শন করেছে। বৈদ্যুতিন লেনদেন ও ব্যক্তিগত ডেটা আইন অপর্যাপ্ত এবং ব্যক্তিগত ডেটার পর্যাপ্ত সুরক্ষা প্রদানে ব্যর্থ।

ই-লেনদেন আইনের পঞ্চম অধ্যায়ে ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই আইনটি শুধু ব্যক্তিগত ডেটা প্রক্রিয়াকরণের আগে ডেটা প্রক্রিয়াকরণকারীদের অর্থনীতি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বাধ্য করলেও সরকারি কর্তৃপক্ষকে এই প্রয়োজনীয়তা থেকে অব্যাহতি দেয় (ধারা ৯৪)। উপরন্তু, আইনটি এই “বিজ্ঞপ্তি”কে অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করে তা অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের বিবেচনার উপর ছেড়ে দেয়।

অন্যদিকে ২০১৯ সাল থেকে একটি সাইবার নিরাপত্তা কৌশল বিদ্যমান থাকলেও বাস্তবায়িত হয়নি এবং সেটা পুরানো।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) থেকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রাপ্ত ডিজিসিএস মঞ্চের কোনো গোপনীয়তা নীতি ও পরিষেবা শর্ত নেই। এই বাদ পড়ার ফলে ব্যবহারকারীরা তাদের সম্পর্কে কী তথ্য, কীভাবে সংগ্রহ এবং কোথায় সংরক্ষণ করে তথ্য সুরক্ষার কী ব্যবস্থা বাস্তবায়িত ও লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয় তা বুঝতে পারে না।

এসএমইএক্স ডিজিসিএস মহাব্যাবস্থাপক ইলিয়াস খুরির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া পায়নি।

আন্তর্জাতিক চর্চা

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশ ভোটার তথ্যের সরকারি তালিকাভুক্তির অনুমতি দিলেও ফ্রান্স ও জার্মানির মতো অন্যান্য দেশ তা দেয় না।

ফ্রান্সে তথ্য সুরক্ষা আইন  অনুসারে একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা জাতীয় তথ্য প্রযুক্তি ও নাগরিক স্বাধীনতা কমিশন (সিএনআইএল) ব্যক্তিগত তথ্য তত্ত্বাবধান করে থাকে। এই আইন “পেশাদারদের সম্মতি অর্জনে সহায়তা করে এবং ব্যক্তিদের তাদের তথ্য পরিচালনা এবং তাদের অধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা দেয়।” এটি ব্যক্তিদের ভোটার তথ্যসহ ব্যক্তিগত তথ্যের যেকোনো প্রক্রিয়াকরণের একটি বৈধ ভিত্তি ও তাদের তথ্যে প্রবেশ, সংশোধন ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে আপত্তি জানানোর অধিকার প্রদান নিশ্চিত করে।

জার্মানিতে কেন্দ্রীয় ডেটা সুরক্ষা আইন ব্যক্তিগত তথ্য পরিচালনার জন্যে জিডিপিআর-এর পরিপূরককঠোর নির্দেশনা দেয়। এই আইনটি শুধু অনুমোদিত কর্মীদের ভোটার তথ্যে প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করে।

অনলাইন ভোটার যাচাইকরণের উদাহরণ হিসেবে আমরা ফ্রান্সকে ধরে নিলে ফরাসি নাগরিকরা সরকারি ওয়েবসাইট পরিষেবা-সরকারি.এফআর-এর মাধ্যমে অনলাইনে তাদের ভোটার নিবন্ধনের অবস্থা পরীক্ষা করতে পারবে। এই পরিষেবাটি নিবন্ধিত পৌরসভা, ভোটকেন্দ্রের অবস্থান, জাতীয় ভোটার নম্বর ও বিদ্যমান প্রক্সি সম্পর্কে তথ্য দেয়। অনলাইন এই পরিষেবা ব্যবহারের জন্যে আপনাকে ফ্রান্সকানেক্ট অথবা পরিষেবা-সরকারি.এফআর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রমাণীকরণ করতে হবে, যা ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা নিশ্চিত করবে। ফ্রান্সকানেক্ট সরকারি পরিষেবাগুলিতে নিরাপদ প্রমাণীকরণের জন্যে নিযুক্ত একটি ডিজিটাল পরিচয় মঞ্চ।

পরিষেবা-সরকারি.এফআর ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষিত রাখতে বিভিন্ন ডেটা সুরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে। ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য ও নথি প্রবেশাধিকারযোগ্য গোপনীয় স্মৃতি স্থানে স্পেসে নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়। মঞ্চটি “ন্যূনতম ডেটা” নীতি অনুসরণ করে, অ্যাকাউন্ট পরিচালনা ও প্রশাসনিক পদ্ধতির মতো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে শুধু প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে। এছাড়াও ব্যক্তিগত তথ্যের প্রবেশাধিকার অনুমোদিত কর্মীদের জন্যে সীমাবদ্ধ এবং জবাবদিহিতা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্যে অনুসরণ করা হয়।

যেসব সংস্কার দরকার

বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজ সংগঠন লেবাননে ভোটারদের গোপনীয়তা জোরদারে আইনি সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে। তারা ভোটার তালিকায় প্রকাশিত ব্যক্তিগত তথ্যের পরিমাণ সীমিত করতে নির্বাচনী আইন সংশোধনের সুপারিশ করে জনগণের জন্যে শুধু প্রয়োজনীয় শনাক্তকরণ তথ্য উন্মুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে।

বৈদ্যুতিন লেনদেন ও ব্যক্তিগত তথ্য আইনের পঞ্চম অধ্যায়কে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্যে নিবেদিত একটি স্বতন্ত্র আইন দিয়ে প্রতিস্থাপন করার প্রস্তাবও এসেছে। আইনজীবীদের যুক্তি ব্যক্তিগত তথ্যের জন্যে শক্তিশালী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই একটি নতুন, ব্যাপক আইনি কাঠামো প্রয়োগ করা দরকার।

ভোটার তথ্য পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের উন্নত ডেটা সুরক্ষা চর্চার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী প্রযুক্তিগত সুরক্ষা, ডেটা সুরক্ষা প্রোটোকলের কঠোরভাবে মেনে চলা এবং ব্যক্তিগত তথ্য পরিচালনায় উন্নত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।

এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যতে লঙ্ঘন রোধ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির সংবেদনশীল তথ্যের নিরাপদ পরিচালনা নিশ্চিত করতে লেবাননের বৃহত্তর সাইবার নিরাপত্তা অবকাঠামো শক্তিশালী করার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে।