অলঙ্করণ: গ্লোবাল ভয়েসেস

এই গল্পটি গ্লোবাল ভয়েসেসের নাগরিক গণমাধ্যম মানমন্দিরের সংবাদপুস্তিকা আন্ডারটোনসের অংশ। আন্ডারটোনসের গ্রাহক হোন।

জাতিসংঘের (ইউএন) নেতারা ২০১৫ সালে টেকসই উন্নয়নের জন্যে ২০৩০ এজেন্ডার অধীনে চুক্তির অংশ হিসেবে এমন একটি বিশ্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেখানে “গণতন্ত্র, সুশাসন ও আইনের শাসনের সাথে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে একটি সক্রিয় পরিবেশ, টেকসই উন্নয়নের জন্যে অপরিহার্য, যাতে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূল অন্তর্ভূক্ত।” ২০৩০ এজেন্ডা ২০০৫ বিশ্ব শীর্ষ সম্মেলনে ইতোমধ্যে গৃহীত এবং সহস্রাব্দ ঘোষণাপত্রে বর্ণিত প্রতিশ্রুতিমালা পুনর্ব্যক্ত করেছে।

জাতিসংঘের ২০৩০ এজেন্ডা চালু হওয়ার এক দশক পরেও নির্ধারিত লক্ষ্যগুলি এখনো অর্জন সুদূর পরাহত মনে হলেও দেশগুলির দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার বাধাগুলি কী? কারণের তালিকা অফুরন্ত হলেও জনপ্রিয়তাবাদের বৈশ্বিক উত্থানের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিটি “অবিচ্ছিন্নভাবে বিভেদ সৃষ্টিকারী”, “ষড়যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল” এবং “সকল বিরোধী দলকে অপরাধী করে তোলে”, সুশাসন এবং গণতন্ত্রের বহুত্ববাদীতাকে ক্ষুন্ন করার অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে হচ্ছে।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত একটি জার্নাল “সরকার ও বিরোধী দল”-এ যেমন শিক্ষাবিদ কেনেথ এম. রবার্টস ব্যাখ্যা করেছেন, “মেরুকরণ জনপ্রিয়তাবাদের সবচেয়ে ধারাবাহিক প্রভাব হতে পারে”, কারণ এটি “প্রতিষ্ঠানবিরোধী রাজনৈতিক সীমান্ত তৈরি করে, নতুন নীতি বা ইস্যুর মাত্রাকে রাজনীতিকরণ এবং গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক ও পদ্ধতিগত মানদণ্ডকে চ্যালেঞ্জ করে।”

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপরিহার্য উপাদান হিসেবে “প্রাতিষ্ঠানিক এবং পদ্ধতিগত মানদণ্ড”-এর অংশ “ক্ষমতা বিভাজন” ও “বিচারিক স্বাধীনতা”র যেসব নীতিমালাকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে রবার্টস তাদের জনপ্রিয়তাবাদের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বর্ণনা: বিচার বিভাগের সদস্যরা সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করছে

এই বর্ণনামূলক কাঠামোটির বিশ্বাস অনুসারে বিচারকরা এবং কখনো কখনো পুরো বিচার বিভাগ একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা ঘরাণার পক্ষে রায় প্রদান ও কাজ করে।

এই বর্ণনামূলক কাঠামোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া রাজনীতিবিদ ও জনগোষ্ঠী নিজেদেরকে গণতন্ত্রের পুরোধা মনে করে, বিচার বিভাগের সমালোচনাকে তাদের দেশে আরো ন্যায়সঙ্গত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ হিসেবে উপস্থাপন করে। স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে তারা আইনের শাসন প্রয়োগ করে বিরোধ নিষ্পত্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেশের আইনকে বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তের পিছনের মানদণ্ড স্বীকার করে না।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ২০২৪ প্রচারণার সময় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সহযোগীরা তার প্রথম রাষ্ট্রপতি মেয়াদে তার বিরুদ্ধে করা অপরাধমূলক তদন্তকে তার বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুন্নের ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা হিসেবে চিত্রিত করে বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নিপীড়নের অভিযোগ তোলে। একইভাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প বারবার তার দেশের আইনি কাঠামোর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ  নীতিমালা বাস্তবায়ন রুখে দেওয়া বিচারকদের রায়গুলি প্রশ্নবিদ্ধ, কখনো কখনো উপেক্ষাও করেছেন।

সম্প্রতি ৩১ মার্চ, ২০২৫ ফ্রান্সের অতি-ডানপন্থী শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ মেরিন লে পঁ ইউরোপীয় সংসদের তহবিল আত্মসাতের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। আদালত তাকে চার বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ বছরের জন্যে কোনো সরকারি পদে থাকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার ফলে শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তাকে ২০২৭ সালের রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। লে পঁ ও তার সমর্থকরা এটিকে আসন্ন নির্বাচন ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে একটি রাজনীতি অনুপ্রাণিত “অযৌক্তিক নিপীড়ন” প্রতিপন্ন করে তার রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীতাকে দুর্বল করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে উপস্থাপন করেছে।

কীভাবে এই আখ্যানটি ইতালি, ব্রাজিল এবং স্পেনেও ভাগাভাগি হচ্ছে, পড়ুন