
পল চেম্বারস নারেসুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাথে যুক্ত। এপি-র ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।
মার্কিন শিক্ষাবিদ পল ওয়েসলি চেম্বারস থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্র অবমাননা ও দেশের সাইবার অপরাধ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকার কর্মীরা তাকে অভিযুক্তির ব্যাপক নিন্দা করে সমালোচনামূলক মতামত দমনে ক্রমাগত আইনি অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে।
তিন দশক ধরে থাইল্যান্ডে বসবাসরত চেম্বারস নারেসুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অনুষদ সদস্য যেখানে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেসামরিক-সামরিক সম্পর্ক নিয়ে পড়ান। রাজতন্ত্রকে অসম্মানের যেকোনো কাজকে অপরাধ গণ্য করা ফৌজদারি আইনের ১১২ ধারা (লেস ম্যাজেস্তে বা রাজ-অবমাননা বিরোধী আইন) লঙ্ঘনের অভিযোগে ৮ এপ্রিল তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। সিঙ্গাপুরের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় পাঠ ইনস্টিটিউট পৃষ্ঠপোষিত থাই সামরিক বাহিনীর উপর একটি ওয়েবিনারে একটি প্রচারণা পোস্টের অভিযোগে তাকে সাইবার অপরাধ আইনের আওতায়ও অভিযুক্ত করা হয়।
চেম্বারস তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রাথমিকভাবে জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে আপিলের পর তাকে মুক্তি দেওয়ার কথা থাকলেও অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তার ভিসা বাতিল করেছে। শেষে ৬ লক্ষ থাই বাত (প্রায় ২২ লক্ষ টাকা) জামিনের পর তাকে মুক্তি দিয়েছে। থাইল্যান্ডের ১১২ ধারা আইনের সংস্কার নিয়ে কাজ করা একটি দল ১১২পর্যবেক্ষকের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে তার ভাই তার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন।
পল ১৫ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে জামিনে থাকলেও তার পায়ে ইলেকট্রনিক গোড়ালি মনিটর লাগানো ছিল। তার পাসপোর্ট ও কাজের ভিসা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। থাই পুলিশ তার বাড়ি ও ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম তল্লাশি করে রাজ-অবমানার এই মিথ্যে অভিযোগে তাকে আরো দোষী সাব্যস্ত করতে আরো অতিরিক্ত তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
মানবাধিকারেরর জন্যে থাই আইনজীবীরা (টিএলএইচআর) জানিয়েছে ২০২০ সাল থেকে ৩১২টি মামলায় প্রায় ২৭৯ জনকে ১১২ ধারার অধীনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। চেম্বারস এই আইনে অভিযুক্ত প্রথম বিদেশী।
থাই সেনাবাহিনী ২০১৪ সালে ক্ষমতা দখল করে সরকারে তার প্রভাব নিশ্চিত করতে একটি সংবিধান প্রণয়ন করেছে। গণতান্ত্রিক সংস্কার ও বেসামরিক শাসন পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়ে যুব-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের উত্থান মোকাবেলায় ২০২০ সালে ১১২ ধারার ব্যবহার তীব্রতর করে। ২০২৩ সালের নির্বাচনে সামরিক-সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হলেও নতুন সরকার গঠনকারী দলগুলি তাদের ধারা ১১২ পর্যালোচনা শুরু করার প্রচারণার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।
চেম্বার্সের কিছু উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে “রক্ষীবাহিনীর রাজ্য: থাইল্যান্ডে সামরিক উত্থানের ইতিহাস” এবং “খাকি রাজধানী: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক অর্থনীতি।”
টিএলএইচআর-এর আশঙ্কা চেম্বার্সের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা “থাই সামরিক বাহিনী সম্পর্কিত জন-আলোচনা ও শিক্ষাগত গবেষণায় একটি শীতল প্রভাব ফেলবে।”
জনগণ ও শিক্ষাবিদদের অবশ্যই ফৌজদারি মামলার হুমকি ছাড়াই গণ-সমস্যা সম্পর্কে তথ্য পাঠ ও উপস্থাপন করতে পারতে হবে। জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে দমনের জন্যে আইনের ব্যবহার অব্যাহত থাকলে কখনোই একটি গণতান্ত্রিক সমাজ বাস্তবায়িত হবে না।
এটি আরো বলেছে “জামিনের শর্তাবলী তার স্বাধীনতা ও পেশাগত জীবনের উপর অপ্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ তৈরি করে।”
এশীয় পাঠের সমিতি চেম্বারের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছে।
ড. চেম্বারস এই দুটি আইন লঙ্ঘনে অভিযুক্ত একমাত্র শিক্ষাবিদ যিনি বিচার-পূর্ব আটক ও জামিন প্রত্যাখ্যানের মুখোমুখি হতে পারেন। মামলা ও তার গ্রেপ্তার শিক্ষাগত স্বাধীনতার জন্যে একটি গুরুতর হুমকি ও থাইল্যান্ডের চিন্তাভাবনা ও মত প্রকাশের পরিবেশের উপর তাৎক্ষণিক ও শীতল প্রভাব ফেলে।
জাপানের কানসাই গাইদাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নের সহযোগী অধ্যাপক মার্ক এস. কোগান সামরিক বাহিনীর স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা ও শিক্ষাগত স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
…এটি তাকে ভয় দেখানো এবং এই প্রক্রিয়ায় থাইল্যান্ডে কাজ করার অধিকার অস্বীকার করার সমান। তার সম্ভাব্য নির্বাসন থাই সেনাবাহিনীর একটি স্পষ্ট বিজয় হলেও তা দেশে কর্মরত যেকোনো বিদেশী শিক্ষাবিদের জন্যে একটি চরম আঘাত। চেম্বারসকে নীরব করার পর পরবর্তী শিকার কে?
তার কাজ শিক্ষাবিদ, বিশ্লেষক ও সাংবাদিকদের জন্যে অপরিহার্য। তাকে শ্রেণীকক্ষ ও তার ডেস্কে ফিরে আসতে হবে।
তিনি সহকর্মী শিক্ষাবিদদের চেম্বারসকে সমর্থনের একটি আবেদনও শুরু করেছেন:
এই আবেদনে স্বাক্ষর করে আশা করি আমরা সহকর্মী ড. চেম্বারসের নাম পরিচ্ছন্ন করা ছাড়াও সরকারগুলিকে (থাইল্যান্ডসহ) একটি বার্তা পাঠাতে পারবো যে শিক্ষাগত স্বাধীনতাকে লক্ষ্যবস্তু বা নীরব করার আইনি অপব্যবহার সহ্য করা হবে না এবং এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।
আবেদনকারীরা বলেছেন তারা “শিক্ষাগত স্বাধীনতা সীমাবদ্ধকারী দেশগুলিতে আয়োজিত শিক্ষাগত সমিতির সম্মেলনে যোগ দেবেন না বা তাতে সদস্যপদ নয়ায়ন করবেন না।”
মানবাধিকার পর্যবেক্ষক (এইচআরডব্লিউ) ১১২ ধারা পর্যালোচনা ও সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা শুরু করার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান অসুবিধার কথা উল্লেখ করেছে।
বেশি বেশি করে লেসে ম্যাজেস্তে আইনের ব্যবহার করে পুলিশ, অভিসংশক, বিচারক ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষ রাজতন্ত্রের প্রতি আনুগত্যহীনতার অভিযোগ আনার ভয় দেখিয়ে লেসে ম্যাজেস্তে অভিযোগের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা আরো কঠিন করে তুলেছে।
ইংরেজি ভাষার থাই প্রকাশনা খাওসোদ ইংলিশের জ্যেষ্ঠ স্টাফ লেখক প্রভিত রোজানাফ্রুক থাই রাজতন্ত্র বিষয়ে আত্ম-নজরদারি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
একটি গণতান্ত্রিক অথবা সুস্থ সমাজে রাজা বা প্রধানমন্ত্রী আরো শক্তিশালী কিনা প্রশ্নবিদ্ধ করা একটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক আলোচনার অংশ মাত্র। থাইল্যান্ডে এধরনের প্রশ্ন উল্লেখকে নিষিদ্ধ করার অর্থ থাইল্যান্ডে ইতোমধ্যে তৈরি ভয়ের পরিবেশ ও আত্ম-নজরদারির সংস্কৃতির অযৌক্তিক স্তরকে আরো প্রসারিত করা।
এদিকে থাইল্যান্ডের সংসদীয় নিন্মকক্ষ ২৪ এপ্রিল চেম্বার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরকারী সামরিক কর্মকর্তাদের তলব করার পরিকল্পনা করছে।