গারো আদিবাসী সম্প্রদায় ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের বন সংরক্ষক

Photo taken by the author during a meeting with members of the Garo community as part of a social and resource mapping exercise.

সামাজিক ও সম্পদ মানচিত্রায়ন চর্চার অংশ হিসেবে গারো সম্প্রদায়ের সদস্যদের একটি সাক্ষাৎকারের সময় লেখকের তোলা ছবি। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এ উড়িষ্যা-ভিত্তিক ভারতীয় অলাভজনক  ভূমির জন্যে কেন্দ্র – ল্যান্ডস্ট্যাক এবং গুজরাত-ভিত্তিক বাস্তুতান্ত্রিক নিরাপত্তা ফাউন্ডেশন (এফইএস)-এর সহযোগিতায় উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম গারো পাহাড় জেলার তুরা পৌরসভায় গারো সংরক্ষকদের টুলকিট উপস্থাপন কর্মশালা আয়োজন করে। এই উদ্যোগটি ভারত ও নেপাল জুড়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে এমন বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণকারীদের একত্রিত করে একটি সহযোগিতামূলক শিক্ষার স্থান তৈরি করতে পেরেছে।

এই কর্মশালাটির উদ্দেশ্য হলো অংশগ্রহণকারীদের স্থানীয় সংস্থা, ঐতিহ্যবাহী পরিবেশগত জ্ঞান ও যত্নের নীতির নির্দেশনায় সম্প্রদায়গুলি কীভাবে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ পরিচালনা করে তার প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলি প্রদান করা। এই সংরক্ষণ সম্প্রদায়ের কল্যাণে অবদান  ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্রের পরিষেবাগুলির অব্যাহত সরবরাহ নিশ্চিত করে।

এই প্রবন্ধটি মেঘালয়ের আদিবাসী জনগোষ্ঠী গারোরা কীভাবে তাদের মোজাইক ভূ-প্রকৃতি পরিচালনা ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা অন্বেষণ করে। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বন সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণমূলক গ্রামীণ মূল্যায়ন পদ্ধতিযুক্ত একটি গ্রামে সম্পদ, যত্ন ও জ্ঞান মানচিত্রায়ন, ফোকাস গ্রুপ আলোচনা এবং জীববৈচিত্র্য ও জৈববস্তু জরিপের একটি সংরক্ষক মূল্যায়ন টুলকিট মোতায়েন করা হয়েছিল।

গারো জনগোষ্ঠী

নিজেদেরকে আচিক মান্দি বা “পাহাড়ী মানুষ” বলে অভিহিতকারী গারো জনগোষ্ঠী মাটি ও আর্দ্রতা সংরক্ষণের তাৎপর্য বোঝে। ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানে আকৃষ্ট হয়ে তারা মে ও জুলাই মাসের মধ্যে নদীর তীরে সক্রিয়ভাবে বান্দরহুলা বা রামদালু (ডুয়াবাঙ্গা গ্র্যান্ডিফ্লোরা) এবং কাইঞ্জল (বিশোফিয়া জাভানিকা) গাছ রোপণ করে। এই প্রজাতির গভীর-মূল ব্যবস্থা জল ধরে রাখতে ও জমির আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

জীবন-জীবিকার জন্যে সম্প্রদায়টি ঘর নির্মাণের কাঠের মতো বিভিন্ন ধরনের বনজ দ্রব্য এবং আলু, মাশরুম, বাঁশের কান্ড, ভায়াগ্রা তালের কান্ড, সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি ও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধি গাছের মতো কাঠবিহীন বনজ দ্রব্য সংগ্রহ। তবে সম্পদ সংগ্রহ সাবধানতার সাথে পরিচালিত হয়, বৃহত্তর সম্প্রদায় বন এলাকার মধ্যে নির্ধারিত ভূ-খণ্ডের ঐতিহ্যবাহী সীমানার মধ্যে ফসল সংগ্রহ সীমিত থাকে।

গারো উপজাতি ঐতিহ্যগত আদিবাসী জ্ঞান ব্যবস্থা ভিত্তিক কৃষিকাজ করে আসছে, সমতল ভূমি, বসতবাড়ির বাগান, জুম (স্থানান্তরিত চাষ) ক্ষেত্র এবং সামাজিক বনায়ন এলাকায় এগুলি প্রয়োগ করে। তারা মূলত জীবিকা নির্বাহের জন্যে কৃষিবনায়ন চাষের কৌশল গ্রহণ করে। গারো জনগোষ্ঠী মেঘালয়ের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। গারো পাহাড় অঞ্চলে বনভূমির মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ মেঘালয় বন বিভাগ পরিচালনা করে। বাকি এলাকা স্থানীয় সম্প্রদায়ের মালিকানায় পরিচালিত, যার তত্ত্বাবধান গারো পাহাড় স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদ (জিএইচএডিসি) করে।

যত্নের নীতি

সমাজের বনের প্রতি যত্নের অনুভূতি তাদের টেকসই ফসল কাটার অনুশীলন এবং অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে মেগং (দেবকাঞ্চন) গাছের (বাউহিনিয়া প্রজাতি) বার্ষিক প্রস্ফুটন উদযাপনের মেগং উৎসবের মতো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে স্পষ্ট।

গ্রামবাসীরা তাদের ভূ-প্রকৃতি কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্যে ঐতিহ্যবাহী পরিবেশগত জ্ঞানকে সম্প্রদায়-ভিত্তিক সংরক্ষণ প্রচেষ্টার সাথে একীভূত করে। তাদের ত্রি-স্তরীয় ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে কঠোর সুরক্ষা বন পুনর্জন্ম এবং জল সংরক্ষণ নিশ্চিত করা উচ্চভূমি সম্প্রদায় সংরক্ষণ এলাকা, অর্থনৈতিক সুবিধার জন্যে জুম পরবর্তী পতিত জমিকে বৃক্ষরোপণে রূপান্তরিত করা মধ্যভূমি অঞ্চল; এবং পরিবেশগত অখণ্ডতা বজায় রেখে সীমিত জুম ও সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করা নি ম্নভূমি অঞ্চল।

তাদের জলবিভাজিকা সংরক্ষণের দৃষ্টিভঙ্গি উচ্চভূমি বনের সুরক্ষায় স্পষ্ট যা জল পুনরুজ্জীন, মাটির ক্ষয় প্রতিরোধ এবং জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্যে অপরিহার্য। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রতি তাদের নিষ্ঠা সমানভাবে উল্লেখযোগ্য, যার উদাহরণ বান্দারি মৎস্য অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা – একটি সুরক্ষিত এলাকা যা বৈদ্যুতিক মাছের সমৃদ্ধ জনসংখ্যাকে সমর্থন করে।

এই কাঠামোগত ভূ-প্রকৃতি ব্যবস্থাপনা গভীর পরিবেশগত জ্ঞান প্রদর্শন করে, স্থানীয় জীবিকার সাথে সংরক্ষণ লক্ষ্যগুলিকে ভারসাম্যপূর্ণ করে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্বের জন্যে আদিবাসী অভিযোজিত ব্যবস্থাপনা চর্চার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

Photo taken by the author during a forest health assessment in Meghalaya.

মেঘালয়ে বন স্বাস্থ্য মূল্যায়নের সময় লেখকের তোলা ছবি। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ঐতিহ্যবাহী পরিচালন ব্যবস্থা

অন্যান্য গারো গ্রামের মতো দুরা দোবাগ্রেতেও গারো বংশের প্রধান নোকমা ও গ্রাম পরিষদ বা দরবারের নেতৃত্বে একটি ঐতিহ্যবাহী শাসন কাঠামো অনুসরণ করা হয়। নোকমা ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সম্প্রদায়ের নেতৃত্বের, অন্যদিকে দরবার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থার কাজ করে।

দুরা দোবাগ্রে গ্রামবাসীরা বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্যে কিছু নিয়মকানুন বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বছরের বাকি সময় গবাদি পশুদের বাড়িতে রেখে পালন করে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মৌসুমী পশুপালনের অনুমতি। বন সীমানা দখল পর্যবেক্ষণের জন্যে সম্প্রদায়টি বার্ষিক টহলও পরিচালনা করে যাতে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি পরিবারের কমপক্ষে একজনকে যোগ দিতে হয়, নইলে ৫০০ রুপি (প্রায় ৭০০ টাকা) জরিমানা। সমস্ত রেকর্ড ও হালনাগাদ একটি বার্ষিক প্রতিবেদনে নথিভুক্ত করে গ্রাম সভায় পর্যালোচনা করা হয়।

সম্প্রদায়ের একজন অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন:

বন্যপ্রাণী শিকার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও বহিরাগতদের গ্রামের বন থেকে ঝাড়ু-ঘাস সংগ্রহের অনুমতি নেই। চিঙ্গাল ও ইম্বিসি নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ, লঙ্ঘনকারীদের ২০,০০০ রুপি (প্রায় ২৮,২৮৭টাকা) জরিমানা। আইন প্রয়োগে উৎসাহিত করতে সাক্ষীদের জরিমানার অর্ধেক পুরষ্কার, বার্ষিক সাধারণ সভার সময় জরিমানা আদায়। উপরন্তু, কঠোর অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর – বনে ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগালে ৫,০০০ (প্রায় ৭,০৫০ টাকা) জরিমানা এবং উৎসবের মরশুমে বনে বাজি পোড়ানোর উপর বিধিনিষেধ আগে থেকেই কার্যকর।

দুর্ঘটনাক্রমে বনে আগুন লাগলে সমগ্র সম্প্রদায় কলা পাতা ব্যবহার করে আগুন নেভাতে একত্রিত হয়।

স্থানীয় সংরক্ষণের ফলাফল

সম্পদের সাথে জড়িয়ে থাকা আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি তাদের জমিগুলিকে বহুমুখী সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্যে পরিণত করে, যেখানে পার্ক বা অভয়ারণ্যের মতো আনুষ্ঠানিক সুরক্ষিত এলাকার উপর নির্ভর না করে জীববৈচিত্র্য লালন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। মাঠ পরিদর্শনের সময় স্পষ্ট হয়েছে বিস্তৃত সম্পদ ব্যবস্থাপনা চর্চা সমর্থিত বিভিন্ন প্রবেশাধিকার ও শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত এই ভূ-প্রকৃতির স্থায়িত্ব ও পরিবেশগত যত্নকে অগ্রাধিকার দেয়।

গ্রামীণ বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে গিয়ে পরিচর্যা ও হাতে কাটা, জ্বালানি কাঠের জন্যে কাঠ কাটা এবং পর্বতারোহী কাটার মতো কম-ক্ষতিকর ফসল পদ্ধতির মতো সম্প্রদায়-চালিত, নরম-স্পর্শের বনায়ন চর্চার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বনটি গাছের বয়সের স্পষ্ট ক্রমবিন্যাসও দেখায় যেখানে লাইকেন, লিয়ানা, পতিত কাঠ ও প্রাকৃতিক পচন প্রক্রিয়ার ফলে ১-২ ইঞ্চি হিউমাসের স্তর তৈরি হয়। ৯০০ বর্গমিটার বর্গক্ষেত্র অনুশীলনে রেকর্ডকৃত ৪০টি গাছের প্রজাতির মধ্যে ৭৭ শতাংশ গাছ ১০ সেন্টিমিটারের কম ব্যাসের ঝোপের কান্ড ছিল। এই ঐতিহ্যবাহী ঝোপ চর্চা বন পুনর্জন্মে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন, দ্রুত বৃদ্ধি ও স্থিতিস্থাপকতাসহ বহুবর্ষী গাছকে উৎসাহিত করে। এই পদ্ধতিটি দ্রুত পুনরুদ্ধারকে সহজ করায় জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায়।

Photograph by the author: Dr. Pentie Thong from Landstack conducting a forest health assessment.

লেখকের তোলা ছবি: ল্যান্ডস্ট্যাকের ডঃ পেন্টি থং বন স্বাস্থ্য মূল্যায়ন পরিচালনা করছেন। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

আদিবাসী ও উপজাতি গোষ্ঠী জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে মূল্যবান জ্ঞান রাখে। জীববৈচিত্র্য কেবল পরিবেশগত সমস্যা নয় বরং এটি সম্প্রদায়ের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক কাঠামোর সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। আদিবাসী ও স্থানীয় সম্প্রদায় (আইপিএলসি) যে ভূমি ও অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিয়ে টিকিয়ে রেখে সুরক্ষিত ও পুনরুদ্ধার করেছে তা ছাড়া ২০২০-পরবর্তী বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য কাঠামোর উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ও  লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব

একটি সুস্থ, স্থিতিশীল  ও টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে সম্প্রদায়-সংরক্ষিত এলাকা সম্প্রসারণ, পরিবেশগত কৃষিচর্চা উৎসাহিত, জীবিকা বৈচিত্র্যময়, অবক্ষয়িত তৃণভূমি পুনরুদ্ধার, জলাশয় পুনরুজ্জীবিত করা ও আরো অনেক কিছু করতে আরো উদ্যোগের দরকার।

এই প্রতিবেদনটি বিশ্বাস চেপাং ও ডঃ পেন্টি থংয়ের মেঘালয়ের পশ্চিম গারো পাহাড়ে একটি সম্প্রদায় সংরক্ষণ কর্মশালা পরিদর্শনের ভিত্তিতে তৈরি। ড. পেন্টি থং এই প্রতিবেদনটির সহ-লেখক।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .