দামাস্কাস শহর থেকে প্রায় ৮৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত দেইর আত্তিয়াহ শহরের বাসিন্দারা শহরের একটি পাহাড়ে স্থাপিত সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদের মূর্তি ভেঙে ফেলেছে। এটি সিরিয়ায় শাসক গোষ্ঠীর পাঁচ দশকের শাসনামলে স্থাপিত হাফেজ আল-আসাদের সবচেয়ে বড় মূর্তিগুলোর মধ্যে একটি।
২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর সকালে, আসাদ শাসনামলের পতন এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পরে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায় কালামুন পর্বতমালায় অবস্থিত শহরের বাসিন্দারা “মূর্তি পর্বত” নামে পরিচিত পাহাড়ের দিকে যাচ্ছে মূর্তি ভাঙতে ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে।
কেন দেইর আতিয়া?
মোহাম্মদ দীব দাবুল (আবু সালিম নামে পরিচিত) হাফেজ আল-আসাদের ক্ষমতায় আরোহণের কেন্দ্রীয় এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ১৯৬০-এর দশকের শেষ থেকে প্রয়াত সিরিয়ার রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং অফিস সচিব হিসেবে কাজ করেছিলেন।
দাবুল ১৯৩৫ সালে সিরিয়ার দেইর আতিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এই শহরটি তার শৈশব ও প্রাথমিক জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি হাফেজ আল-আসাদের অফিসের পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন, যখন আসাদ ১৯৭০ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নূরউদ্দিন আল-আতাসির বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান সফল করে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে সাময়িকভাবে আসীন হয়।
বাথ পার্টি এবং সিরিয়ার সরকারের মধ্যে দাবুলের জোরালো ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। আসাদের অন্যতম প্রাথমিক ও বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে তিনি একটি অস্থির রাজনৈতিক সময়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা দৃঢ় করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
দাবুলের নেতৃত্বে গোপনে এমন বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক হুমকির বিরুদ্ধে শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করেছিল। হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর তার পুত্র বাশার আল-আসাদ ক্ষমতায় আসেন। বাশারের শাসনামলেও দাবুল প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ চালিয়ে যান। তার অভিজ্ঞতা তরুণ আসাদকে শাসনব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিলতাগুলো পরিচালনায় সহায়তা করেছিল।
২০২১ সালে আবু সালিম দাবুলের মৃত্যু সিরিয়ার রাজনৈতিক অভিজাতদের জন্য এক যুগের সমাপ্তি চিহ্নিত করে। অনেকের কাছে তিনি ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক, যিনি একটি অস্থির অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছিলেন। তবে অন্যদের কাছে তিনি কর্তৃত্ববাদ এবং ভিন্নমত দমনের প্রতীক ছিলেন। এটি উল্লেখযোগ্য যে তার পুত্র সালিম দাবুল আমেরিকার আরোপিত সিজার অ্যাক্টের আওতায় নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ীদের একজন।
শাসনের পতনের প্রতীক
২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরনো শাসনের একাধিক প্রতীক ধ্বংসের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিরিয়ার বৃহত্তম একটি মূর্তির ধ্বংস। প্রথম দুই সপ্তাহে হাফেজ আল-আসাদের সমাধি তার নিজ শহর কারদাহায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি মূর্তি ভেঙে ফেলা হয় টারতুসে, যা একটি আলাওয়ি সংখ্যাগরিষ্ঠ উপকূলীয় শহর; দামেস্কের শহরতলি জারামানায়; এবং হামার স্থানীয় চত্বরে।
দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রয়াত সিরিয়ার রাষ্ট্রপতির একটি মূর্তি ভেঙে ফেলে। তারা মূর্তিটি রাস্তায় টেনে নিয়ে যায় এবং এটি ধ্বংস করার মাধ্যমে পুরনো শাসনের বিরুদ্ধে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করে।
একনায়কতন্ত্রের অস্ত্র

আলেপ্পোতে হাফেজ আল-আসাদের মূর্তি, ক্রোকোডাইল।, CC BY 3.0, via উইকিমিডিয়া কমন্স
স্বৈরশাসক এবং কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা প্রায়ই ক্ষমতার প্রদর্শন, বৈধতা প্রতিষ্ঠা এবং সমাজের ওপর তাদের আধিপত্য সুদৃঢ় করার জন্য অসংখ্য মূর্তি এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে থাকে।
সের্গেই গুরিয়েভ এবং ড্যানিয়েল ট্রেইসম্যানের মতে, আধুনিক স্বৈরশাসকেরা সাধারণত সহযোগিতা, সেন্সরশিপ, প্রোপাগান্ডা এবং দমন নীতির মাধ্যমে টিকে থাকে। এই মূর্তিগুলোর নেতার ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে কাজ করে। নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনে এগুলোর উপস্থিতি একটি ব্যক্তিপূজার পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং নেতার কর্তৃত্বের ধারাবাহিক স্মারক হিসেবে কাজ করে।