
মালয়েশিয়ায় অবস্থিত মেলাকা ইসলামিক সেন্টার ছবি তুলেছেন চংকিয়ান. উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে। সৃজনী সাধারণ লাইসেন্স বাই-এসএ ৪.০
মালয়েশিয়ায় মুফতিদের (মুসলিম আইনী বিশেষজ্ঞ) বেশি ক্ষমতা প্রদান করে একটি আইনের প্রস্তাবনা করা হয়েছে যা দেশটিতে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে ব্যপক আলোচনা শুরু হয়েছে যে মালয়েশিয়ায় ধর্মীয় বৈচিত্র্য এবং ধর্মনিরপেক্ষ শাসনের উপর এটি সম্ভবত গুরুতর প্রভাব ফেলবে।
মুফতি (ফেডারেল অঞ্চল) বিল ২০২৪ এর সমর্থকদের ভাষ্য মতে বিলটির উদ্দেশ্য হলো “ইসলামী শাসনব্যবস্থাকে সুগম করা” এবং “ইসলামী আইনে অভিন্নতার” প্রসার করা। কিন্তু সমালোচকরা সতর্ক করছেন যে যদি বিলটি পাস হয়ে যায় সেক্ষেত্রে, মুফতিদের ফতোয়া সমস্ত আদালতে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে যা মুসলমান এবং অমুসলিম উভয়কেই প্রভাবিত করবে। এছাড়াও ধারনা করা হচ্ছে এটি ফেডারেল অঞ্চল ফতোয়া কমিটিকে “জাতীয় স্বার্থ” বিষয়ে ফতোয়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেবে, এমনকি সংসদের সম্মতি ছাড়াই।
মালয়েশিয়ানদের সংখ্যাগরিষ্ঠই হচ্ছে মুসলমান, ৬৩.৫ শতাংশ, বাকি জনসাধারণেরা বৌদ্ধ, সনাতনি এবং খ্রিষ্টান ধর্মের অন্তর্ভুক্ত। এই সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলির অনেকেই বিলটির বিরোধিতা করেছেন এই আশংঙ্কায় যে তারা তাদের অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হবেন।
একটি অনলাইন আবেদনে ইতিমধ্যে প্রায় ৬,০০০ হাজার জনের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়েছে যেটি বিল পাস বিরোধিতার সারসংক্ষেপ।
- শিল্প, সংস্কৃতি এবং দৈনন্দিন জীবনের ফতোয়া সকলের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক হবে;
- একাধিক ধর্মের সমাজ হওয়ায়, ফতোয়া প্রতিটি মালয়েশিয়ান নাগরিকদের কে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করবে, যেমন পোষাক পরিধানের নিয়ম;
- সংসদের পর্যালোচনাকে অপসারন, অর্থাৎ অসাংবিধানিক, এবং যা সাংবিধানিক অধিকারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, কিছু ধর্মীয় কট্টরপন্থীরা সরকারকে ইসলামিক আইন প্রয়োগ করার জন্য চাপ দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন মাদানী সরকার, গোঁড়া ইসলামিক দল থেকে সহায়তা একত্রে করে বিলটি প্রচার করার চেষ্টা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কিন্তু গত তিন মাসে বিলটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আরও জোরালো হয়েছে। এক দল শিল্পীরা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে বিলটি সকল মালয়েশিয়ানদের জীবনে একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
…বিলটি একটি জলজ্যান্ত মাকাল ফল, এটি দেখতে শুনতে সরল এবং ফেডারেল অঞ্চলের সকল রাজ্যের শরিয়াহ আইনের সাথে একাত্ব পোষণে আকর্ষনীয় মনে হলেও, এটি কিন্তু একটি ভিন্ন মাত্রার ক্ষমতাকে আবির্ভুত করায় যেটা সংসদের অবমূল্যায়ন করে প্রস্তাবিত নতুন মুযাকারাহ কমিটির মাধ্যমে এবং সর্বোপরি এটি সকল মালয়েশিয়ান নাগরিকদের শিল্প, সংস্কৃতি এবং দৈনন্দিন জীবনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে।
বর্তমানে, যদি কোনো অমুসলিম মালয়েশিয়ান সংস্কৃতি সম্পৃক্ত কোনো কিছু পালন করে যেটি মুসলমানদের জন্য নিষেধ, সেক্ষেত্রে অমুসলিম ব্যক্তিটি ধার্মীয় অনুভূতির অবমাননা করার ভিত্তিতে ২৯৮/২৯৮এ ধারায় অভিযুক্ত হবেন।
মালয়েশিয়ায় একটি মুসলিম নারী অধিকার গোষ্ঠী সিস্টার্স ইন ইসলাম, এই বিল প্রণয়নের পর উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন কারন তারা ভাবছেন যে দীর্ঘমেয়াদে এই বিল ধর্ম নিয়ে যে কোন বিতর্ককে দমন করবে।
নিয়ন্ত্রণমূলক ফতোয়া থেকে উদ্ভব নীতিমালা অমুসলিম জনগোষ্ঠী কে কোণঠাসা আর আধ্যাতিকতায় নিরুৎসাহ এবং ধর্মীয় আলোচনায় বাধার সম্মুখীন করতে পারে।
এটি মালয়েশিয়াকে তার মধ্যমপন্থী, বহুসাংস্কৃতিকর গণতান্ত্রিক দেশ থেকে সরিয়ে একটি এমন রাস্ট্রের দিকে ঠেলে দেবে যেখানে অনির্বাচিত কর্মকর্তারা অনিয়ন্ত্রিত ধর্মীয় শাসন ফলাবে।
সরকারের উচিত সাংবিধানিক নীতিমালাকে বজায় রাখা, সমৃদ্ধশীল ইসলামিক রীতি-রেওয়াজ কে সংরক্ষণ করা এবং জাতির গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে রক্ষণাবেক্ষণ করা।
আলিরেন সংবাদ ওয়েবসাইটের একজন লেখক, আজরুল মোহাম্মদ খালিব, ভাবছেন মুসলমানদের এই বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান করা উচিত।
আমাদের আরও বোঝার দরকার যে শুধুমাত্র একজন মানুষ মুসলমান হওয়ায় যে সে বিলটির পক্ষে থাকবে এমনটা নয়। আমি নিজেও এই বিলের পক্ষে নই।
ধর্মীয় কর্মকর্তা এবং কর্মচারী কে আমরা আলাদা না করে আমাদের উচিত তার বিপরীত দিকে অগ্রসর হওয়া যেমনঃ কিছু প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা ও সততা বৃদ্ধি করা যাতে করে বিশ্বাস এবং আস্থার সম্প্রসারণ ঘটানো যায়।
প্রতিষ্ঠানের আদেশ-নিষেধের উপর পর্যালোচনা করা যায় তা নিশ্চিত করা, প্রয়োজনে, সুধুমাত্র জনগণ নয় প্রতিষ্ঠানকেও সুরক্ষার আস্থা নিশ্চিত করা হবে। তবে এই বিলটি সম্পুর্ন বিপরীতমুখী পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
মালয়েশিয়ার বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, সনাতনি, শিখ এবং তাওবাদ ধর্মের পরামর্শক পরিষদ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে যেন “বিলটির একটি পুনঃমুল্যায়ন করা হয়, এবং গুরুত্বারোপ করা হয় মালয়েশিয়ার সাংবিধানিক কাঠামোকে ঝুঁকিমুক্ত করার এবং সকল নাগরিকের অধিকার রক্ষার করার”। পরিষদ আইন-প্রণেতাদের প্রচার করতে বলেছেন “সর্বব্যাপি শাসন ব্যবস্থা যেটি মালয়েশিয়ার বহুধর্মীয় এবং বহুসাংস্কৃতিক পরিচয়কে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে।”
দেশটির সুশীল সমাজের বেশ কয়েকটি দল মিলে সংসদের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন যেখানে আইন-প্রণেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যেন তারা বিলটির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে যাবার আগে জনগণের মতকে প্রাধান্য দেয়।
বিল বিরুদ্ধের সমালোচনার জবাবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী যে বিষয়টি চিহ্নিত করেছেন সেটা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এ বিষয়ে স্পষ্ট জবাব ও সন্দেহ দূরীভূত করবেন। সেইসাথে কর্তৃপক্ষ যে বিষয়ে বেশি জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন সেটা হলো বিলটি সুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং এই আইনের মুল, প্রধান বিষয়বস্তু হচ্ছে মুফতিদের কাজের সাথে রাস্ট্রের এখতিয়ার বা আইনগত-অধিকার কে চিহ্নিত করা।