‘পেরিংগাতান দারুরাত': ইন্দোনেশিয়ায় দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে যুব-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ

Emergency Warning protest in Indonesia

ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধি পর্ষদের বাইরে বিক্ষোভকারীরা। এবিসি (অস্ট্রেলিয়া) সংবাদের ইউটিউব চ্যানেলের “নির্বাচন আইন পরিবর্ত্নের জন্যে ইন্দোনেশিয়ার জাভাতে বিক্ষোভ শুরু| বিশ্ব” ভিডিওর পর্দাছবি৷ ন্যায্য ব্যবহার।

হাজার হাজার তরুণ বিক্ষোভকারী সারা দেশের অন্তত ১৬টি শহরে সমাবেশ করলে ইন্দোনেশিয়ার সাংসদরা আঞ্চলিক নির্বাচনী আইন সংক্রান্ত দুটি প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়।

গত ২০ আগস্ট সাংবিধানিক আদালত দুটি গুরুত্বপূর্ণ রায় জারি করেছে: প্রথমত, এটি আসন্ন নভেম্বরের আঞ্চলিক নির্বাচনে প্রতিযোগিতা আরো বিস্তৃত করতে দলগুলির জন্যে প্রার্থী মনোনয়নে বয়সসীমা কমিয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় কর্মকর্তারা প্রার্থীতা নিবন্ধনের সময় প্রার্থীদের বয়স অন্তত ৩০ বছরের বাধ্যবাধকতা স্পষ্ট করেছে।

প্রতিনিধি পর্ষদে ক্ষমতাসীন জোটের সদস্যরা আদালতের রায় বাতিল করে ২১ আগস্ট সংশোধনী পাসের অভিপ্রায় ঘোষণা করে। বিশেষত নিবন্ধনের আগেই নাম ঘোষণার সময় মনোনীত প্রার্থীদের ন্যূনতম বয়স প্রযোজ্য করার প্রস্তাব প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতে পারা দলের সংখ্যা সীমাবদ্ধ করবে। সাংসদদের প্রস্তাবটি সহকারী প্রশাসক হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুমতি পাওয়া জোকো উইদোদো (জোকোউই) এর ২৯ বছর বয়সী ছেলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রার্থীতায় বাধা দেবে।

পরিকল্পিত সংশোধনীর খবর দ্রুত জনরোষ বিশেষ করে ছাত্র ও তরুণ কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। তারা অক্টোবরে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া বিদায়ী রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো (জোকোউই)কে স্থানীয় রাজনীতিতে তার প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর জন্যে শেষ মুহূর্তের প্রচেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত করেছে।

জোকোউইর পরিবারকে সুবিধা দিতে নিয়ম সংশোধন এটিই প্রথম নয়। তার বড় ছেলে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে উপ-রাষ্ট্রপতি প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যে নির্বাচনে প্রার্থীদের ন্যূনতম বয়স ৪০ থেকে ৩৫-এ নামিয়ে আনা হয়।

দেশজুড়ে ২২ আগস্ট ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা রাজধানী জাকার্তায় প্রতিনিধি পর্ষদের প্রবেশপথে ঢুকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

“আমরা একটি নির্দিষ্ট দলের রাজনৈতিক রাজবংশ ও গণতন্ত্রের অবক্ষয় প্রত্যাখ্যান করি,” বিক্ষোভের জনপ্রিয় বার্তার প্রতিধ্বনি করে যোগ্যকার্তায় শিক্ষার্থী কর্মী আরগা লুৎফি বলেন৷

বিক্ষোভের সময় দুটি হ্যাশট্যাগ: #কাওয়াল_পুতুসানএমকে (সাংবিধানিক আদালতের রায় বাঁচান) ও #পেরিংগাতান_দারুরাত (জরুরি সতর্কতা) চাউর হয়। শেষোক্তটি জাতীয় প্রতীকের একটি পর্দা বিশিষ্ট পরিস্থিতির জরুরিতার প্রতীক নীল পটভূমিতে সামাজিক গণমাধ্যমে পোস্ট করা হয়।

এর সাথের ভিডিও ক্লিপটি একটি জরুরি সতর্কতা: “সনাক্ত ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্রের স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের সরকারের অস্বাভাবিক কার্যকলাপ সম্পর্কে বেসামরিক নাগরিকদের জন্যে জরুরি সতর্কতা” ঘোষণা করে।

জরুরি আইকনটি কেন অনেককে নাড়া দিয়েছে সাবেক দুর্নীতি নির্মূল কমিশনের সভাপতি আব্রাহাম সামাদ ব্যাখ্যা করেছেন। “দেশের গণতন্ত্র সত্যিই জরুরি অবস্থার মধ্যে রয়েছে। আমরা পর্ষদে একটি সাংবিধানিক ডাকাতি প্রত্যক্ষ করছি।“

বিক্ষোভকারীদের আটকাতে সরকার সহিংস পুলিশী লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। রাজধানীতে শিশুসহ তিন শতাধিককে গ্রেপ্তার করে। বিক্ষোভ কভার করতে গিয়েঅন্তত ১১ সাংবাদিক আহত হয়েছে

সংবাদ ওয়েবসাইট Tempo.Co এর একটি সম্পাদকীয় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সহিংসতা ব্যবহারের নিন্দা করেছে

গত দুই সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভের সময় পুলিশ কর্মকর্তাদের বর্বরতা জোকো উইদোদা প্রশাসনের আসল চেহারা প্রদর্শন করেছে। জনসমর্থন ছাড়াই সৃষ্ট সমালোচনা উপেক্ষা করতে অভ্যস্ত সরকার পাত্তা দিচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে। আর গণ-বিক্ষোভের মাধ্যমে সমালোচনা প্রকাশিত হলে সরকার তার দ্রুত জবাব দেয়।

বৈশ্বিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি আরো বলেছে “সংসদের নির্বাচনী আইনে কারচুপির প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের উপর নৃশংস দমন-পীড়ন শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের স্পষ্ট অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।”

সাংসদরা ২৩ আগস্ট প্রস্তাবিত সংশোধনী বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে

গবেষণা সংস্থা টেঙ্গারা স্ট্র্যাটেজিক্স লিখেছে বিক্ষোভটি জোকোউইর প্রথম বড় রাজনৈতিক পরাজয়

অধ্যায়টি দেখায় জোকোউই আর আগের মতো অজেয় নন।

এটি আরো দেখায় পর্ষদে নয়টি দলের মধ্যে আটটি তার জোট সরকারের সদস্য হলেও তা আর পুরোপুরি তার নিয়ন্ত্রণে নেই। আগে তিনি যে আইন চাইতেন তাই পেতেন।

গবেষক ইকা নিংটিয়াস ও নুরিয়ান্তি জাল্লি অনলাইন ও যুব-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের তাৎপর্য তুলে ধরেছেন

কথিত জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও জোকোউইর শাসনামলের দশকটি নাগরিক স্বাধীনতা হ্রাস, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং তার নিজ আত্মীয়দের সরকারি পদে বসানোর সময় ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন বা অবরোধের আইন ও অন্যান্য আইনি সরঞ্জামের ব্যবহারে চিহ্নিত।

“পেরিংগাতান দারুরাত” আন্দোলন ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্তকে উপস্থাপন করে, যা পরিবারের মধ্যে জোকোউইর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রচেষ্টা নিয়ে জনগণের ক্রমবর্ধমান হতাশায় সৃষ্ট দ্রুত গণবিক্ষোভ সংগঠনে সামাজিক গণমাধ্যমর শক্তি প্রদর্শন করে।

কংগ্রেসে  প্রত্যাহারের পরেও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। শিক্ষার্থীরা ২৮ আগস্ট জোকোউই প্রশাসনের অধীনে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির নিন্দা জানাতে যোগ্যকার্তার সরকারি অতিথি ভবনের বাইরে বিক্ষোভ করেছে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .