ব্রাজিলের এক্স (পূর্বের টুইটার) পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার যা জানা দরকার

এখন ব্রাজিলে এক্সে (আগের টুইটার) প্রবেশের চেষ্টা করলে শুধু পৃষ্ঠার পর্দাছবি দেখা যায়। ন্যায্য ব্যবহার।

সম্পাদক: ব্রাজিলের পাঠকদের কাছে উপস্থাপনের জন্যে আমরা এক্সে এম্বেড পোস্টের পরিবর্তে লিঙ্ক ও উদ্ধৃতি বেছে নিয়েছি।

আপনি ব্রাজিলের এক্স ব্যবহারকারী হলে ঘড়ির কাঁটা ২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্টে চলে গেলে, আপনার টাইমলাইনে সম্ভবত লোড হতে সমস্যা শুরু হবে, পাঠানো ও পাওয়া বার্তাগুলি সরাসরি হালনাগাদ হবে না। পরের দিন কিছু লোক সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চটি ব্যবহার করতে পারলেও তাদের ইন্টারনেট প্রদানকারীর উপর নির্ভর করে বা তারা ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল কিনা।

সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ থেকে এক্স নেমে গেছে। অ্যাপে কয়েক ঘন্টা পুরানো পোস্টসহ একটি টাইমলাইনে আপনি বার্তা পড়বেন “পোস্ট লোড হচ্ছে না। আবার চেষ্টা করুন।” ব্রাজিলের এখন মঞ্চটিতে ঢুকতে মূলত ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করতে হবে, যার জন্যে আপনার জরিমানা হতে পারে।

মঞ্চের মালিক ধনকুবের ইলন মাস্ক এবং ব্রাজিলের ভুয়া খবর ও ডিজিটাল সৈনিক অনুসন্ধানে নিয়োজিত সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি, আলেকজান্দার ডি মোরেসের মধ্যে দ্বন্দ্বের সর্বশেষ অধ্যায় থেকে এসব জানা গেছে।

এক্স ব্রাজিলের গণতন্ত্রের প্রতি হুমকির জন্যে তদন্তাধীন লোকদের অ্যাকাউন্ট অবরোধ ও দেশে একজন আইনী প্রতিনিধি রাখার আইনি আদেশ মানতে অস্বীকার করার পরে মোরেস রাষ্ট্রীয় সীমায় মঞ্চটি স্থগিতের আদেশ দেন। বিচারক এক্সের অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএসে অবরোধ করে তাদের অনলাইন স্টোর থেকে সরিয়ে নিতে এনাটেল (ব্রাজিলের জাতীয় টেলিযোগাযোগ সংস্থা) এবং অ্যাপল ও গুগলকে আদেশ জারি করেছে।

সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন:

Lamentavelmente, as condutas ilícitas foram reiteradas na presente investigação, tornando-se patente o descumprimento de diversas ordens judiciais pela X Brasil, bem como a dolosa intenção de eximir-se da responsabilidade pelo cumprimento das ordens judiciais expedidas, com o desaparecimento de seus representantes legais no Brasil para fins de intimação e, posteriormente, com a citada mensagem sobre o possível encerramento da empresa brasileira.

দুঃখজনকভাবে বর্তমান তদন্তে অবৈধ আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। আদালতে উপস্থিত হয়ে জারি করা বিচারিক বিভিন্ন আদেশ পূরণের জবাবদিহিতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার অপচেষ্টায় আইনি প্রতিনিধিদের সরিয়ে দিয়ে বেশ কয়েকটি আইনি আদেশ অমান্য করে এবং পরবর্তীতে ব্রাজিলে কোম্পানির সম্ভাব্য বন্ধের বিষয়ে উদ্ধৃত বার্তা পাঠিয়ে ব্রাজিলের এক্স তার পেটেন্টকে অ-সম্মত করেছে।

এক্সের নিজস্ব বৈশ্বিক সম্পর্কিত অ্যাকাউ্ন্টে পোস্ট করা অন্য একটি টুইটের জবাবে মোরেসের সিদ্ধান্তটি সর্বোচ্চ আদালতের এক্স অ্যাকাউন্টেও প্রকাশিত হয়। মঞ্চটির দাবি তারা একজন সিনেটর ও একটি ১৬ বছর বয়সী মেয়ের অ্যাকাউন্ট অবরোধ না করায় আদেশটি এসেছে।

এক্স লোকদের নাম উল্লেখ না করলেও অস্বীকৃত সিদ্ধান্তটি মঞ্চটি সিনেটর মার্কোস দো ভ্যাল (সাবেক রাষ্ট্রপতি জেইর বলসোনারোর একই দলের) এবং তদন্তাধীন অন্যান্য ব্যক্তিদের স্থগিতের কথা উল্লেখ রয়েছেএক্সের পোস্ট অনুসারে: 

আমরা মোটেই বলছি না যে অন্যান্য দেশে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাক স্বাধীনতা আইন রয়েছে। এখানে ঝুঁকিপূর্ণ মৌলিক সমস্যা হলো বিচারক ডি মোরেস দাবি করেছেন আমরা ব্রাজিলের আইন ভঙ্গ করেছি। আমরা অবশ্যই তা করবো না।

সামনের দিনগুলিতে আমরা স্বচ্ছতার স্বার্থে বিচারক ডি মোরেসের সকল অবৈধ দাবি ও আদালতের প্রাসঙ্গিক নথি প্রকাশ করবো।

অন্যান্য সামাজিক গণমাধ্যম ও প্রযুক্তি মঞ্চের মতো আমরা গোপনে অবৈধ আদেশ মেনে চলবো না।

ব্রাজিল ও সারাবিশ্বে ব্যবহারকারীদের কাছে এক্স আপনার বাকস্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তারা “আলেকজান্ডার নথি” নামে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ডি মোরেসের দুর্নীতির গোপনীয় তথ্য প্রকাশের দাবি করেছে। এছাড়াও, ব্রাজিলীয় সংবাদমাধ্যম উল্লেখ করেছে এখন বাকস্বাধীনতা রক্ষকের পতাকা ওড়ালেও মাস্ক ভারতের মতো অন্যান্য দেশে একইরকম আদেশ মেনে চলেন।

এই ২ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ আদালতের প্রথম বিভাগের অন্য চার বিচারপতি মোরেসের আদেশের পক্ষে সর্বসম্মতিক্রমে এক্সকে স্থগিত করার জন্যে ভোট দিয়েছে। বিচারপতিরা জাতীয় সার্বভৌমত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তাদের একজন ফ্লাভিও ডিনো বলেছেন: “অর্থনৈতিক শক্তি ও একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের আকার এখতিয়ারের কোনো অদ্ভুত অনাক্রম্যতা তৈরি করে না।”

স্বাধীন মতপ্রকাশ বনাম আইন মেনে চলা

বিগত কয়েকদিনে টুইটার থেকে একরকম সরে গিয়ে ব্রাজিলীয়রা মূলত টুইটারের প্রস্তুতকারক জ্যাক ডরসির সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চ ব্লুস্কাইয়ের দিকে ছুটে চলেছে। ফোলহা ডি এস পাওলো পত্রিকা অনুসারে, এক সপ্তাহে মঞ্চটি ২০ লক্ষ  নতুন ব্যবহারকারী উদযাপন করলেও দেশে এর কোনো আইনী প্রতিনিধি নেই।

পরিস্থিতিটি একটি ধাঁধা তৈরি করেছে। একদিকে আদর্শ থেকে অনেক দূরে গিয়ে একটি জনপ্রিয় সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চের নির্বাসন; অন্যদিকে  একটি দেশের বিচার বিভাগের একটি চ্যালেঞ্জপূর্ণ তদন্তের মাধ্যমে একটি বিদেশী কোম্পানির স্থানীয় আইন অনুসরণ নিশ্চিত করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা যা তার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। এই ভারসাম্য আপস করা কঠিন।

সংবাদ সংস্থা ইউওএল প্রকাশিত একটি নিবন্ধ অনুসারে, বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণ করে দেখেছে ব্রাজিলীয় ব্যবহারকারীদের জন্যে প্রতিটি ইন্টারনেট কোম্পানির দেশে একজন আইনী প্রতিনিধির প্রয়োজন নেই। তাদের একজন, ফ্রান্সিসকো ব্রিটো ক্রুজ বলেছেন:

O que o Moraes decidiu é que a empresa precisava responder às ordens. E para isso, ele precisava ter para quem mandar a ordem, então, na intimação que ele mandou para o X, ele colocou uma sanção (que instituísse representante) de acordo com o Marco Civil.

মোরেস কোম্পানির কাছ থেকে আদেশের উত্তর আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যার জন্যে সেই আদেশগুলি তাকে পাঠানোর জন্যে কাউকে দরকার। তাই এক্সের কাছে পাঠানো সমনে তিনি মার্কো সিভিল [দা ইন্টারনেট (ইন্টারনেটের জন্যে ব্রাজিলীয় নাগরিক অধিকার ফ্রেমওয়ার্ক)] অনুসারে (প্রতিনিধি ঘোষণার জন্যে) একটি অনুমোদন দিয়েছেন।

সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অমান্যের জন্যে এক্স থেকে পাওনা জরিমানা পরিশোধের নিশ্চয়তা দানের প্রচেষ্টা হিসেবে মোরেস স্টারলিঙ্কের ব্রাজিলীয় অ্যাকাউন্টগুলি অবরোধেরও রায় দেন, যার শেয়ার মালিকানা মাস্কের।

মাস্ক এটি একটি ভিন্ন কোম্পানি দাবি করে অভিযোগ করলেও ব্রাজিলের শাখা অফিস বন্ধ করার সিদ্ধান্তে বিস্মিত এক্সের ছাঁটাইকৃত কর্মচারীরা বলেছে কোম্পানি তাদের স্টারলিঙ্ক অবরোধের কারণে তাদের সকল বকেয়া পরিশোধ করতে না পারার কথা বলেছে, সংবাদ সংস্থা জি১-এর প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।

মাস্কের যুক্তি

ব্রাজিলে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জাইর বলসোনারোর (পার্তিন্দো লিবারেল বা পিএল) অনুসারী রাজনীতিবিদ ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ বলে পরিচিত বলসোনারিস্তাদের সাথে যুক্ত থেকে মাস্ক নিজেই ডি মোরেসের নেতৃত্বে অনুসন্ধানে তদন্তকারীদের একজন।

দেশে মঞ্চ স্থগিতাদেশের পরে মাস্ক কেন্দ্রীয় সাংসদ নিকোলাস ফেরেইরার (একই দলে বলসোনারোর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন) সমর্থন অর্জন করায় একটি পোস্টে ফেরেইরার উত্তর দিয়েছিলেন: “আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।

ব্রাজিলীয় সিনেটর নিকোলাস ফেরেইরার এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ইলন মাস্ককে সমর্থনকারী পোস্টের পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।

ইলন মাস্কের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ব্রাজিলীয় সিনেটর নিকোলাস ফেরেইরার সমর্থনকারী পোস্টের পর্দাছবি। ফেরেরার পোস্টে লেখা “যথেষ্ট। এমনকি আমি নিজে হলেও র‍্যাডিকালাইজ করতে যাচ্ছি।” তার পোস্টের ছবিতে শিরোনামটি লেখা হয়েছে “নিকোলাস মোরেস এক্স স্থগিত করার পরে জাতীয় কংগ্রেসকে পঙ্গু করার প্রস্তাব দিয়েছেন।” লিডিতে লেখা বিচারক সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে র‍্যাডিকালাইজ করার জন্যে ৫০ হাজার ব্রাজিলীয় লিরা [প্রায় ১০.৫২ লক্ষ টাকা] জরিমানা নির্ধারণের পরে “নিকোলাস ফেরেইরা আলেকজান্ডার ডি মোরেসের বিরুদ্ধে “একাট্টা” করার কথা বলেছিলেন।” ন্যায্য ব্যবহার।

এখনকার পুরো উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে অনেক ডানপন্থী প্রোফাইল ব্রাজিলের সরকারকে একনায়কতন্ত্র অভিহিত করলেও আইনি বিষয় ও মঞ্চটি নিয়ে রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার (ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিটি’র), কোনো বক্তব্য বা ভূমিকা নেই।

তবুও লুলা গত সপ্তাহে প্যারাইবা রাজ্যের একটি স্থানীয় রেডিও সাক্ষাৎকারে মামলার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন:

Ele tem que respeitar a decisão da Suprema Corte Brasileira. Se quiser bem, se não quiser, paciência. Se não for assim, esse país nunca será soberano, esse país não é um país que tem uma sociedade com complexo de vira-lata. Porque o cara americano gritou e a gente fica com medo. Não! Esse cara tem que aceitar as regras desse país.”

তাকে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান করতে হবে। সে যদি চায়, ঠিক আছে; আর যদি সে না করে তাহলে এই দেশ কখনোই সার্বভৌম হবে না। এই দেশ কোনো রাস্তার কুকুরের মানসিক জটিলতার সমাজ নয়। আমাদের দেখে কোনো মার্কিন নাগরিক চিৎকার করলেও আমরা ভয় পাই না। না! এই লোককে এদেশের নিয়ম মানতে হবে।

কিছু বিশেষজ্ঞ বিশেষ করে এক্সে মঞ্চে থাকার উপযোগী তথাকথিত স্ট্যান টুইটার অ্যাকাউন্টগুলির মতো ব্রাজিলীয় শ্রোতা হারানোর প্রভাব বিশ্লেষণ করছেন। যুক্তরাজ্যের গবেষক আলোনসো গুরমেন্ডি পোস্ট করেছেন:

আমি মনে করি গণমাধ্যমের জন্যে ব্রাজিল কী বিশাল শক্তি তা বৈশ্বিক উত্তর এখনো পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেনি। ইউটিউব করা ব্রাজিলের একটি ১০০ কোটি ডলারের শিল্প। মুখের প্রচারের জন্যে অনেক মার্কিন প্রদর্শনীর সত্যি সত্যিই ব্রাজিলীয় ভক্তদের প্রয়োজন হয়। কিছু বিখ্যাত মিম কিন্তু ব্রাজিলীয়

মাস্ক নিজেই এক ধরনের প্রতিরোধ হিসেবে তার মঞ্চ ছেড়ে না যেতে ভিপিএন ব্যবহার করতে ব্রাজিলীয়দের উৎসাহিত করছেন

তবে মোরেসের সিদ্ধান্ত অনুসারে ব্যবহারকারীরা মঞ্চটিতে বিচরণ চালিয়ে যেতে বা এর মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখতে ভিপিএন বা অন্য প্রযুক্তিগত অজুহাত ব্যবহার করলে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার ব্রাজিলীয় লিরা [প্রায় ১০.৫২ লক্ষ টাকা] জরিমানা করা হতে পারে। ব্রাজিলীয় আইনজীবি সমিতি (অর্দেম দোজ্যাজভোগাদোস দো ব্রাসিল, ওএবি) সর্বোচ্চ আদালতে জরিমানা পর্যালোচনা করে ভিপিএনের ব্যবহার উল্লেখ করা উদ্ধৃতাংশ ব্যাখ্যা করতে বলেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .