বিতর্কিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের এক মাস আগে তিউনিসিয়া ফরাসিভাষী ম্যাগাজিন যন_আফ্রিক (তরুণ আফ্রিকা) এর সেপ্টেম্বর সংখ্যা নিষিদ্ধ করেছে। পদক্ষেপটি জয়নাল আবিদিন বেন আলীর একনায়কত্বের দিনগুলিতে নিযুক্ত কর্তৃত্ববাদী চর্চার একটি স্পষ্ট চিহ্ন যা পত্রিকাটিকে ২৩ বছরের শাসনামলের দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদনের জন্য একইভাবে নিষিদ্ধ করেছিল।
আফ্রিকীয় ও আরবিভাষী দেশগুলির গভীরভাবে কভারের জন্য সুপরিচিত প্রকাশনা তরুণ_আফ্রিকা দীর্ঘদিন ভিন্নমত অসহিষ্ণু সরকারগুলির বিধিনিষেধের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে৷ রাষ্ট্রপতি কাইস সাইদের অধীনে সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা স্বাধীন সাংবাদিকতা দমন ও সমালোচনামূলক কণ্ঠকে নীরব করার পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাগুলির প্রতিফলন।
সাঈদ ২০২১ সালে তার স্ব-অভ্যুত্থানের পর থেকে ক্রমবর্ধমানভাবে ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করে স্বাধীন গণমাধ্যম, বিরোধী ব্যক্তিত্ব ও যেকোনো ধরনের ভিন্নমত দমন করেছে। এই দমনাভিযান বড় করে কর্তৃত্ববাদে ফিরে আসার অংশ যা ২০১১ সালে বেন আলীর পতন ঘটানো তিউনিসীয়দের বিপ্লবোত্তর অর্জিত স্বাধীনতা্র অনেকগুলিকে নস্যাৎ করে। আসন্ন নির্বাচন থেকে প্রধান বিরোধী প্রার্থীদের বাদ দেওয়াসহ বর্তমান রাজনৈতিক আবহাওয়া তিউনিসীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের একটি অন্ধকার চিত্র এঁকেছে।
তরুণ আফ্রিকা
বশির বেন ইয়াহমেদ ও অন্যান্য তিউনিসীয় বুদ্ধিজীবীদের ১৯৬০ সালে তিউনিসে প্রতিষ্ঠিত তরুণ_আফ্রিকা আরবি-ভাষী দেশগুলির রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক সমস্যা কভার করা ফরাসি-ভাষী বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত প্রকাশনার অন্যতম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কয়েক দশক ধরে সাহসী ও সমালোচনামূলক সাংবাদিকতায় খ্যাতি অর্জনকারী পত্রিকাটি প্রায়শই গোটা অঞ্চলের কর্তৃত্ববাদী শাসনের ক্রোধের শিকার হয়েছে।
সর্বশেষ এই নিষেধাজ্ঞাটি তরুণ_আফ্রিকার প্রধান গল্প রাষ্ট্রপতি কাইস সাইদের অধীনে তিউনিসিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদ ও ২০১১ সালের বিপ্লবোত্তর গণতান্ত্রিক অর্জনের অবনমন প্রকাশক “লিপ্যাখ প্রেসিদেন্ত” (উত্তেজিত রাষ্ট্রপতি) এর সাথে যুক্ত।
নারীবাদী সাংবাদিক মনিয়া বেন হামাদি এক্সে নিষিদ্ধ কভারটি ভাগাভাগি করে বলেছেন:
Censure en #Tunisie : le nouveau numéro de @jeune_afrique a été interdit à la vente à cause d'une enquête sur Kais Saied. https://t.co/MBlfPJLK0D pic.twitter.com/wnk7YXT134
— Monia Ben Hamadi (@MoniaBH) September 4, 2024
তিউনিসিয়ায় নিষেধাজ্ঞা: তরুণ_আফ্রিকার সর্বশেষ সংখ্যাটি কাইস সাইদ সম্পর্কিত তদন্তের কারণে বিক্রয় নিষিদ্ধ হয়েছে।
বিপ্লব ব্যর্থকরণ
তরুণ_আফ্রিকা নিষিদ্ধকরণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি ২০১১ সালের বিপ্লবে তিউনিসীয়দের লড়াই করে অর্জিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও স্বাধীনতা পরিকল্পিতভাবে ভেস্তে দেওয়া সাইদের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদের একটি বৃহত্তর নকশার অংশ। তিনি ২০২১ সালের জুলাই মাসে অভূতপূর্ব ক্ষমতা দখলের পর সংসদ ভেঙে দিয়ে ফরমানের মাধ্যমে শাসনে সাইদ বিরোধী ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের উপর দমন-পীড়ন শুরু করেন। তিনি স্বাধীন বিচারকদের বরখাস্ত, নিজ এজেন্ডা অনুসারে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও তার সরকারের সমালোচনাকারী সকলকে লক্ষ্যবস্তু করা নিয়ন্ত্রণমূলক গণমাধ্যম আইন প্রয়োগ করেছেন।
অ্যামনেস্টি আন্তর্জাতিকের তিউনিসিয়া গবেষণা ও প্রচারণা পরামর্শক ফিদা হাম্মামি এক্সে লিখেছেন:
المؤامرات وستانسنا بيهم، البرقيات المستندة على الخيال الضيق متاع اصحابها وفييالنا بيها اما منع عدد من مجلة انو يدخل للبلاد هاذي جديدة! تعدينا لمرحلة الصنصرة الفجة
كان @jeune_afrique تأكد الي صار لازم ردة فعل قوية، كان تتعدى هناني بناني ماتكون كان البداية #تونس pic.twitter.com/qhgDTBGECL— فداء الهمامي Fida Hammami (@FidaaHammami) September 4, 2024
আমরা ষড়যন্ত্রে অভ্যস্ত ও পরিচিত হয়ে উঠেছি। আমরা টেলিগ্রামের লেখকদের সংকীর্ণ কল্পনাতেও খুব অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবুও কোনো পত্রিকার দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাটি নতুন! আমরা নির্লজ্জ নিষেধাজ্ঞার পর্যায়ে চলে এসেছি। @তরুণ_আফ্রিকা কি ঘটেছে নিশ্চিত করলে তার অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া হবে। আর এটি শান্তভাবে পাস হলে তা হবে কেবল শুরু। #তিউনিসিয়া
হাম্মামির বাবা মানবাধিকার আইনজীবী আয়াশি হাম্মামি নারীবাদী আইনজীবী বুশরা বেলহাজ হামিদা, বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নেজিব শেবি ও নুরদ্দীন ভ্রিরিসহ নিজে ২০২৩ সালে অ্যামনেস্টির মতে “ষড়যন্ত্রের ভিত্তিহীন অভিযোগে” একটি ফৌজদারি তদন্তের শিকার হন।
অন্ধকার ভবিষ্যৎ
তিউনিসিয়ায় ৬ অক্টোবর, ২০২৪ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন গণতন্ত্রের ভবিষ্যত ক্রমশ অন্ধকার দেখাচ্ছে। একসময় কথিত আরব বসন্তের একমাত্র সাফল্যের গল্প হিসেবে পরিচিত দেশটি এখন বিপ্লবে উৎখাত করতে চাওয়া সেই শাসনব্যবস্থায় ফিরে আসার ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে। প্রবলভাবে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতির পক্ষাবলম্বনের জন্যে তির্যক বলে সমালোচিত নির্বাচনী প্রক্রিয়াটি শুধু সত্যিকারের চ্যালেঞ্জে খুব দুর্বল দুটি প্রতিযোগীকে ছেড়ে দিয়ে বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী প্রার্থীদের গ্রেপ্তার বা অযোগ্য ঘোষণা করেছে। তিউনিসিয়া তার গণতান্ত্রিক পথ পুনরুদ্ধার করবে নাকি কর্তৃত্ববাদের পথেই চলতে থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।