কপ২৯ এর আগে আজারবাইজান সমালোচকদের পরিষ্কার করেছে

ছবি: আরজু গেবুলায়েভা

আজারবাইজানি সরকার ১১-২২ নভেম্বর বাকুতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বের বৃহত্তম বার্ষিক আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলন কপ২৯ আয়োজনের প্রস্তুতি নিলেও তাদের প্রস্তুতি ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুসারে সবুজ অর্থনীতিকে সমর্থন করার পরিকল্পনা বা বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সীমাবদ্ধ করার বিষয়ে নয়। রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভ হয়তো স্পষ্ট করে দিতে পারতেন দেশটির জীবাশ্ম জ্বালানি বিনিয়োগ ও উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার কোন পরিকল্পনা নেই। পরিবর্তে, কপ২৯-এর আগে, আজারবাইজানীয় কর্তৃপক্ষ শাসনের সমালোচনাকারী অবশিষ্ট স্বাধীন কণ্ঠকে আক্রমণ করছে, মিথ্যা অভিযোগে অনেক কর্মী, রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদদের গ্রেপ্তার করেছে। আজারবাইজানের নিম্নমানের নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক ইতিহাস রয়েছে এবং রাষ্ট্রপতি আলিয়েভ সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে নিপীড়নকে ন্যায্য দাবি করেছেন

নিপীড়নের অতি সাম্প্রতিক তরঙ্গের মধ্যে রয়েছে চেক প্রজাতন্ত্রের চার্লস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করা তরুণ বিদ্বান বাহরুজ সামাদভকে গ্রেপ্তার। সামাদভকে ২১ আগস্ট, বাকুতে আটক করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পরিষেবাতে নিয়ে যাওয়া হয়। দু’দিন পর বাকুর একটি আদালত রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে সামাদভকে চার মাসের বিচার-পূর্ব আটকের নির্দেশ দেয়। সামাদভের বিরুদ্ধে হোয়াটসঅ্যাপে আর্মেনীয় নাগরিকদের সাথে যোগাযোগ করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে। সামাদভ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সামাদভ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিকআঞ্চলিক গণমাধ্যমর জন্যে আজারবাইজানের উপর মতামতের একটি ধারাবাহিক লিখেছেন। তিনি ২০২০ সালে দ্বিতীয় কারাবাখ যুদ্ধের তীব্র বিরোধিতাকারী শান্তি কর্মী সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকায় অন্যান্যদের সাথে তাকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়।

গ্লোবাল ভয়েসেসের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে নিরাপত্তা উদ্বেগের জন্যে বেনামে থাকা সামাদভের একজন বন্ধু বলেছেন তার লেখার কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি তার নিবন্ধে আজারবাইজানের অগণতান্ত্রিক শাসনের কঠোর সমালোচনা করছেন। তিনি কারাবাখের মানবাধিকার ও আর্মেনীয়দের অধিকার লঙ্ঘন রুখে দাঁড়ানো কয়েকজনের মধ্যে অন্যতম। বাহরুজ তার নিবন্ধ ও সামাজিক গণমাধ্যম কার্যকলাপের কারণে কয়েকবার হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। তার মতামতের কারণে রাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন।

পুলিশ সামাদভ ছাড়াও ২০২৪ সালের জুলাইয়ে জাতিগত সংখ্যালঘ গবেষক ও বেলারুশের বাসিন্দা আরেক তরুণ গবেষক ইলগার আবিলভকে গ্রেপ্তার করে বিচার-পূর্ব চার মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে। আবিলভের বিরুদ্ধে বিদেশী ক্রিয়াশীলদের আদেশে রাষ্ট্র বিরোধী আহ্বান এবং জাতীয়, জাতিগত, সামাজিক বা ধর্মীয় বিদ্বেষ ও শত্রুতার উস্কানিসহ রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে।

বাহরুজ সামাদভের গ্রেপ্তারের পরপরই আরেক শান্তিকর্মী সামাদ শিখিকে দেশত্যাগে বাধা দিয়ে বিমানবন্দরে আটক করে সামাদভের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া তদন্তে সাক্ষী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সর্বশেষ পড়াশোনার জন্যে দেশত্যাগ করা স্বাধীন গবেষক ক্যাভিড আগাকে বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে।

আগস্টের শেষের দিকে আজারবাইজান মূলত শান্তির জন্যে উদ্বিগ্ন তরুণ বিদ্বান ও সামাজিক গণমাধ্যম কণ্ঠের উপর একটি নতুন শুদ্ধি কার্যকর করেছে। তারা কোনো প্রকল্প, কর্মসূচি বা সংস্থার অনুশীলনকারী নয়, তারা শিক্ষার্থী + স্বাধীন + সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির ফ্রিল্যান্সার।

ককেশাস অঞ্চল ও আজারবাইজানে কর্মরত তরুণ বিদ্বানদের একটি দল এই দমনাভিযানের নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতিতে বলেছে, “নির্বিচারে একাডেমিক সম্প্রদায়ের সদস্যদের গ্রেপ্তার ও আটক আজারবাইজানের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির সাথে বেমানান ও এটি দেশের সুনামের উপর গভীর কলঙ্ক।”

গত গ্রীষ্মে ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক পিএইচডি ছাত্র ফাজিল গাসিমভকে জাল মুদ্রা তৈরিতে অভিযুক্ত ও প্রাক-বিচার আটকে দন্ডিত করে তুরস্ক থেকে আজারবাইজানে নির্বাসিত করা হয়। প্রবীণ রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও দুর্নীতি বিশেষজ্ঞ গুবাদ ইবাদোগ্লুর বিরুদ্ধে শুরু করা আরেকটি তদন্তের জন্যে গাসিমভকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মামলার শুনানির সময় ৩০ আগস্ট গাসিমভ কীভাবে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন ও ইবাদোগ্লুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়েছিল বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। তিনি আরো বলেন, বেআইনি ও অন্যায় গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে অনশন করলেও ১১ জুন থেকে তার সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। “আমি ১১ জুন থেকে অনশনে থাকায় আমার গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হয়েছে। ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারছি না। তবুও পিঠের পিছনে আমার হাত বেঁধে একটি ছোট অন্ধকার কক্ষে আমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখা হচ্ছে। এটা মানসিক সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক দমন,” গাসিমভ বলেন

জনগণের উদ্বেগ বাড়িয়ে গত বছর জুড়ে রাষ্ট্র দমন-পীড়ন জোরদার করে অসংখ্য সাংবাদিক, রাজনীতিবিদকর্মীদের গ্রেপ্তার করে বন্দী তালিকা দীর্ঘতর করছে বলে মনে হচ্ছে।

এপ্রিলে পুলিশ রাজনৈতিক কর্মী, প্রাক্তন রাজনৈতিক বন্দী এবং স্থানীয় গণতন্ত্রপন্থী বেসরকারি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণতন্ত্র পাঠ কেন্দ্র (ইএমডিসি)-এর প্রধান আনার মাম্মাদলিকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ গণতন্ত্রপন্থী কর্মী ও আজারবাইজানি আইনপ্রণেতাদের বক্তব্য নথিভুক্তকারী ওয়েবসাইট meclis.info-এর প্রতিষ্ঠাতা ইমরান আলিয়েভকেও গ্রেপ্তার করেছে। উভয়কেই বানোয়াট চোরাচালানে অভিযুক্ত করে বিচারের আগে বেশ কয়েকবার মেয়াদ বাড়িয়ে আটকে রাখা হয়।

গ্লোবাল ভয়েসেসের বিষয়বস্তু অংশীদার আবজাস মিডিয়া টিমের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের আগস্টে অতিরিক্ত অভিযোগ আনা হয়। এতে আটক সাংবাদিকদের বারো বছরের জেল হতে পারে।

“এটি কেবল আরেকটি নিয়মিত দমন নয়। শাসকগোষ্ঠীর কর্তৃত্ববাদী থাবার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহসী কারো উপর এটি একটি পরিকল্পিত আক্রমণ,” নারীবাদী শান্তি জোটের একটি প্রবন্ধ পড়ুন

সরকার এর আগে ব্যাপক দমনাভিযান চালিয়ে নিয়মিত সরকারের সমালোচকদের গ্রেপ্তার করে আসছে। এটি বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে আগাম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছে। কপ২৯-এর আগে সাম্প্রতিক নাগরিক মতবিরোধের মুছে ফেলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার অবস্থানকে মসৃণ করার এই প্রচেষ্টাটি ১ সেপ্টেম্বরে নির্ধারিত আগাম সংসদীয় নির্বাচনের আগে সমালোচকদের স্তব্ধ করার একটি মিশনও বটে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .