থাই আদালতের প্রধান বিরোধীদল বিলুপ্তি গণতন্ত্রের প্রতি একটি আঘাতে

MFP campaign

মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির একটি নির্বাচনী প্রচার সমাবেশ, ২০২৩। রামেশে৯৯৯ এর ছবি। সূত্র: উইকিপিডিয়া। সৃজনী সাধারণ একইরকম ভাগাভাগি ৪.০

থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত একটি রায়ে থাইল্যান্ডের রাজার সমালোচনাকে বেআইনি করা রাষ্ট্রদ্রোহমূলক রাজকীয় মানহানি আইন সংশোধন প্রচেষ্টার প্রচারণার জন্যে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি (এমএফপি) ভেঙ্গে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে

গণতান্ত্রিক সংস্কার অনুসরণকারী একটি মঞ্চ অনুসারে ২০২৩ সালের নির্বাচনে এমএফপি সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়েছে। তাদের প্রতিশ্রুতিগুলির মধ্যে একটি হলো তৎকালীন সামরিক-সমর্থিত সরকার ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার আইনগুলি পর্যালোচনা। এমএফপি তরুণ ভোটার ও সক্রিয়ভাবে বেসামরিক শাসন পুনরুদ্ধার ও রাজতন্ত্রের অসম্মানকে অপরাধী করা ফৌজদারি আইনের ১১২ ধারা সংশোধনের প্রচারণা চালানো রাজনৈতিক কর্মীদের সমর্থন পেয়েছিল। জনপ্রিয় ভোটে জয়ী হয়েও সিনেটের সামরিক-নিযুক্ত সদস্যদের বিরোধিতার কারণে এমএফপি সরকার গঠন করতে পারেনি

আদালতের রায়ের একটি উদ্ধৃতি অনুসারে রাজতন্ত্র আইন সংস্কারের জন্যে চাপ দেওয়া রাজনৈতিক কর্মীদের সমর্থন করায় এমএফপি সদস্যরা দেশের সবচেয়ে সম্মানিত প্রতিষ্ঠানের জন্যে হুমকিস্বরূপ।

এটি প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা ক্ষুন্ন, নির্বাচনে জয়ী হতে ভোট লাভের আশায় প্রতিষ্ঠানের সুবিধা গ্রহণ করে এবং প্রতিষ্ঠানটিকে জনগণের প্রতিপক্ষে পরিণত করতে চায়।

তবে এমএফপি নেতা চৈতাওয়াত তুলাথন তাদের দলের রাজতন্ত্রকে আক্রমণের ষড়যন্ত্রের কথা অস্বীকার করে সতর্ক করেছেন এই রায় রাজনৈতিক বিতর্ক সমাধানের একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সাংবিধানিক আদালতের আজকের রায় আমাদের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাজাকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে অন্য ধরনের শাসকে পরিণত করার দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি তৈরী করেছে। এটি আমরা মনে করি গুরুত্বপূর্ণ এই প্রভাবটি মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির বিলুপ্তির চেয়ে আরো মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

এমএফপি’র প্রাক্তন প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী পিতা লাইজানোয়েনরাত একটি সংবাদ সম্মেলনে জোর দিয়ে বলেছেন “প্রধান হিসেবে রাজাসহ একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা রক্ষা করতে রাষ্ট্রকে সমাজের বিভিন্ন মতামতের সাথে সঙ্গতি বিধান করতে হবে।”

থাইল্যান্ডের ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৮টি ছাত্র সংগঠন এমএফপি’র বিলুপ্তির নিন্দা জানিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে

সাংবিধানিক আদালতের সংবিধান ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষাকারী একটি সংস্থা হওয়া উচিত। পরিবর্তে, সংস্থাটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সম্প্রসারিত করে জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করছে।

ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলিও এই রায়ের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। লেখক লিন সাসিনপং তুলে ধরেছেন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কীভাবে দেশের অর্থনীতিকে ব্যাহত করতে পারে।

সরকারে ঘন ঘন পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট অপ্রত্যাশিত ব্যবসায়িক পরিবেশ থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতা ঐতিহাসিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে  এবং রাজনৈতিক বিক্ষোভগুলি পর্যটনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে পঙ্গু করে দিয়েছে। এই ধরনের অস্থিতিশীলতা বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে ক্ষুন্ন এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ব্যাহত করার ফলে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও কার্যকর নীতি বাস্তবায়ন কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

প্রবীণ সাংবাদিক প্রবিত রোজানাফ্রুক “থাই-মার্কা গণতন্ত্র“-এর অযৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন:

…একটি গণতান্ত্রিক সমাজে নির্বাচনে জনগণের রায়ের পরে সবাই রাষ্ট্রের রাজনৈতিক গতিপথ নিয়ে যেকোনো মতবিরোধ নিরসনে নতুন করে ভোট দিয়ে নিজেদের অধিকার প্রয়োগের জন্যে চার বছর অপেক্ষা করার কথা ভাবে। এখানে থাইল্যান্ডে সেটা হয় না। ভোটাররা দুর্বৃত্ত সামরিক কর্তাদের দ্বারা বা সাংবিধানিক আদালতের রায়ে বঞ্চিত বোধ করতে পারে এবং রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা করতে ভোটারদের আরো অনেক কিছু করতে হবে। এটাই আজকের থাই-মার্কা “গণতন্ত্র।”

এমএফপি’কে বিলুপ্ত করার পাশাপাশি আদালতের রায় কার্যকরভাবে ১১ জন এমএফপি কর্মকর্তাকে পরবর্তী দশ বছরের জন্যে নির্বাচনী রাজনীতি থেকেও নিষিদ্ধ করেছে। ব্যাংকক পোস্ট একটি সম্পাদকীয় লিখেছে আদর্শবাদী তরুণ নেতাদের “সরিয়ে দিয়ে” ২০১৪ সালের অভ্যুত্থানকারীরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।

আপনি তাদের সমর্থন করুন বা না করুন, এই তরুণ এবং আদর্শবাদী রাজনীতিবিদরা ভবিষ্যতের একটি নতুন রাজনৈতিক সম্পদ। ঐতিহ্যকে চ্যালেঞ্জ করা তরুণ রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হলে দীর্ঘমেয়াদে থাই গণতন্ত্রের কী হবে?

…. চুক্তি ভঙ্গ করে বারবার গণতন্ত্রকে ছিন্নভিন্ন করা অভ্যুত্থানকারীরা রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়নি — বরং প্রকৃতপক্ষে বিকশিত হয়েছে — রাজতন্ত্রের জন্যে হুমকি বিবেচিত কট্টর অবস্থানের জন্যে প্রগতিশীল দলগুলিকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পিপলস পার্টির লোগো। উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া ছবি। পাবলিক ডোমেন

মনে হয় আদালতের এরকম রায় প্রত্যাশিত ছিল বলেই এমএফপি’র অনেক সদস্য দ্রুতই পিপল’স পার্টি নামে একটি নতুন দল প্রতিষ্ঠা করেছে। এর নতুন লোগোতে তিনটি লাইন দিয়ে তৈরি জনগণকে শাসকদের উপরে রাখা একটি উল্টানো কমলা পিরামিড রয়েছে। তিনটি লাইন স্বাধীনতা, সমতা এবং সংহতির প্রতিনিধিত্ব করে। এমপি এবং এমএফপির প্রাক্তন মুখপাত্র পারিত ওয়াচারসিন্ধু গণমাধ্যমকে বলেছেন বিরোধীদের উপর রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন সত্ত্বেও নতুন দলটি বিলুপ্ত দলের পক্ষে সমর্থন চালিয়ে যাবে।

কিছু লোক রায়টির অর্থ [রাজকীয় মানহানি আইন] সংশোধনের কথোপকথনের সম্পূর্ণ অবসান ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলেও আমি বলছি এটা তা নয়। এখনো এই সমস্যার একটি কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করার সুযোগ রয়েছে এবং আমি মনে করি অতীতে এই সমস্যা সম্পর্কে কথা সকল পক্ষের কাছে এই প্রশ্নটি উত্থাপন করা উচিত।

এমএফপির আগে সাংবিধানিক আদালত ২০১৯ সালে (থাই রাকসা চার্ট পার্টি) এবং ২০২০ সালে (ভবিষ্যত ফরোয়ার্ড পার্টি) বিরোধীদল ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। প্রতিবার একটি বিরোধী দল ভাঙ্গার পরে লোগোতে কিছুটা পরিবর্তন করে এর সংগঠকরা একটি নতুন ব্যানারে পুনঃসংগঠিত হয়েছে। লোগো নবায়ন করে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষের একটি নতুন বিরোধী দলের এই উত্থান প্রথিতযশা শিল্পী স্টেফের একটি কার্টুনে চিত্রিত হয়েছে।

#ফ্রাখপ্রাচোন নতুন কমলা দল

আদালতের রায়টিতে বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ডে গণতন্ত্রের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রতিক্রিয়ায় থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে “নির্বাচিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা” অনুসরণ করে দেশের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করার এই রায়টি হস্তক্ষেপের বিষয় হওয়া উচিত নয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .