ইকুয়েডরের সাথে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব মেক্সিকোর কাজে লেগেছে

আগে কিটোতে মেক্সিকীয় দূতাবাসে আশ্রয়প্রার্থী এবং বর্তমানে কথিত দুর্নীতির অভিযোগে ইকুয়েডরে কারাবন্দী ইকুয়েডর প্রজাতন্ত্রের প্রাক্তন উপ-রাষ্ট্রপতি হোর্হে গ্লাস। মেলিসা ভিদা সংশোধিত ফ্লিকার/ইকুয়েডর জাতীয় পর্ষদের ছবি। সৃজনী সাধারণ একইরকম ভাগাভাগি ২.০

ইকুয়েডরীয় বাহিনী ৪ এপ্রিল, ২০২৪ রাতে আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অধিকার ও বাধ্যবাধকতা নিয়ন্ত্রণকারী ভিয়েনা আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রথা লঙ্ঘন করে কিটোতে মেক্সিকীয় দূতাবাসে অভিযান চালায়। তারা দূতাবাসের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বলপ্রয়োগ করে ইকুয়েডর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ব্রাজিলীয় কোম্পানি ওদেব্রেখট দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ইকুয়েডরের সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি হোর্হে গ্লাসকে গ্রেপ্তার করে। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি রাফায়েল কোরেয়ার কুখ্যাত প্রশাসনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্বও ছিলেন।

ইকুয়েডরের রাষ্ট্রপতি দানিয়েল নোবোয়ার কাছে তার আটকের একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। নোবোয়ার আশা এটি হয়তো নিরাপত্তা নীতিতে তার দৃঢ় হাত প্রদর্শন এবং বামপন্থী ঘাঁটি বর্তমানে ইকুয়েডরীয় কংগ্রেসের নেতৃস্থানীয় শক্তি কোরেইসমোর মনোবলে আঘাত করবে।

মেক্সিকোর সাথে ছোট একটি কূটনৈতিক বিরোধে সত্যিকারের হারানোর মতো বেশি কিছু না থাকায় জাতির উদ্দেশ্যে প্রথম ভাষণে নোবোয়া মেক্সিকোর সাথে কূটনৈতিক বিরোধের কথা উল্লেখ করেননি। মধ্য-ডানপন্থী দানিয়েল নোবোয়ার জন্যে ইকুয়েডর ও মেক্সিকোর মধ্যে প্রায় অস্তিত্বহীন বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দানিয়েল নোবোয়া ৯ জুলাই দুই দেশের মধ্যে অসম বাণিজ্য বিনিময়ের উল্লেখ করে “মেক্সিকোকে তার নিকৃষ্টতম অংশীদারদের একজন” অভিহিত করেন।

গ্লাস মেক্সিকীয় দূতাবাসে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আসার পর থেকে মেক্সিকোর সাথে ইকুয়েডরের সম্পর্কের মধ্যে অচলাবস্থা দেখা দেয়। ইকুয়েডরের দুর্নীতির অভিযোগ স্বত্ত্বেও রাজনৈতিক শিকার মনে করে মেক্সিকো গ্লাসকে বের করে দিতে চায়নি। গ্লাস ইকুয়েডরের শহর গুয়াকিলের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কারাগারে তিন মাস ধরে বন্দি রয়েছেন। ইকুয়েডরের আদালত কারাগারে থাকার সময় কর্তৃপক্ষ তার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ৮ জুলাই  “হেবিয়াস কর্পাস” এর ভিত্তিতে গ্লাসের মুক্তি অস্বীকার করেছে

মেক্সিকো প্রগতিশীলদের নেতৃত্ব দিচ্ছে

এই মুহুর্তে লাতিন আমেরিকা দুটি আদর্শিক মেরুতে বিভক্ত: সামাজিক প্রগতিবাদের সাধারণ ধারণাগুলি ভাগাভাগি করা এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলির মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী মেক্সিকীয় লোপেজ ওব্রাডোর ও তার বর্তমান উত্তরসূরি ক্লাউডিয়া শিনবাউম, ব্রাজিলের লুলা দা সিলভা, কলম্বিয়ার গুস্তাভো পেত্রো এবং চিলির গ্যাব্রিয়েল বোরিকের মতো নেতাদের একটি ফ্রন্ট।

অন্যদিকে ইকুয়েডর ও আর্জেন্টিনার নির্বাচনী ফলাফলেঐক্যবদ্ধ না হলেও নীতিতে বিক্ষিপ্ত ও একতরফা হলেও শক্ত হাতে জাতীয় নিরাপত্তা নীতি ও বিদেশী বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়া একটি উদার ডানপন্থী ফ্রন্ট এসেছে। এখানে আমরা লাতিন আমেরিকার সংশয়বাদের ধারণা প্রচার করে আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রকল্পের পরিবর্তে বিনিয়োগ প্রচেষ্টার পেছনে ছোটা আর্জেন্টিনার হাভিয়ের মিলি, সালভাদোরের নাইব বুকেলে এবং দানিয়েল নোবোয়ার মতো ব্যক্তিদের খুঁজে পাই যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলির সাথে সম্পর্ক জোরদারের নীতি ফিরিয়ে এনেছে।

তবে মেক্সিকোতে লোপেজ ওব্রাডোর (সাধারণত এএমএলও নামে পরিচিত) এর আমলে দেশপ্রেমের আখ্যান ছিল। এএমএলও আর্জেন্টিনার আলবার্তো ফার্নান্দেজের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা, পেরুর প্রাক্তন বামপন্থী রাষ্ট্রপতি পেদ্রো কাস্তিলোর পরিবারকে সুরক্ষা, বলিভিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেসকে ২০১৯ সালে আশ্রয় দান এবং তার চিলি ও কলম্বীয় সমকক্ষ যথাক্রমে গ্যাব্রিয়েল বোরিক ও গুস্তাভো পেত্রোর সাথে দেখা করে এই অঞ্চলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। এই পছন্দগুলির মাধ্যমে এএমএলও ভেনিজুয়েলা ও নিকারাগুয়া সরকারের খারাপভাবে চিত্রিত লাতিন আমেরিকান বামদের অবস্থানকে শক্তিশালী করেন।

মেক্সিকো আমেরিকার রাষ্ট্রসমূহের সংগঠনের (ওএএস) পরিবর্তে গঠিত লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় রাষ্ট্রসমূহের সম্প্রদায়ের (সিইএলএসি) সাথে বৈঠকের প্রস্তাব করে লাতিন আমেরিকার কণ্ঠস্বর হয়ে উঠার ক্ষমতা অনুভব করেছে। এএমএলও’র দৃষ্টিতে ওএএস ২০১৯ সালে বলিভিয়ার রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। বিনিয়োগ ফেরতের আশায় মেক্সিকো এই অঞ্চলের সাথে সম্পর্ক জোরদার করেছে।

রাষ্ট্রপতি পেত্রো দূতাবাস বিপর্যয়ের মধ্যে মেক্সিকোকে রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ার এবং নিকারাগুয়া ও ভেনিজুয়েলা ইকুয়েডরের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার সময় এধরনের পুরস্কারটি এসেছে। ইকুয়েডরকে আঞ্চলিক পর্যায়ে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ব্রাজিল, উরুগুয়ে, কিউবা ও মধ্য আমেরিকার বেশিরভাগ অংশ (এল সালভাদর বাদে) মেক্সিকোর প্রতিরক্ষায় এসেছে।

যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নরওয়ে, চীন, এমনকি রাশিয়া মেক্সিকোর পক্ষাবলম্বন করলে দুর্বলভাবে হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা মেক্সিকোর পক্ষেই ছিল। এই অঞ্চলে অভ্যন্তরীণভাবে এএমএলও’র অবস্থান শক্তিশালী ও মজবুত হয়। তবে এসময় ইকুয়েডরে নোবোয়ার সাথে আইনসভায় এজেন্ডা পাস করার জন্যে তার একটি অপরিহার্য মিত্র কোরেয়ার দলের সাথে একটি রাজনৈতিক চুক্তি ভেস্তে যায়।

তবে কোনো রাজনৈতিক শরণার্থীকে জোরপূর্বক কূটনৈতিক মিশন থেকে সরিয়ে দিয়ে ভিয়েনা চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘনটি এমনকি ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের জন্যেও একটি দ্বিধা তৈরি করেছে। ঘটনাটি এতোটাই বিশৃঙ্খলাজনক যে এএমএলও’র ভাষায় “দখলদার” পেরুর রাষ্ট্রপতি দিনা বলুয়ার্তে এবং এমনকি এএমএলও’র সাথে তাকে অপমানকারী আর্জেন্টিনার হাভিয়ের মিলি পর্যন্ত মেক্সিকোর দিকে ঝুঁকে পড়েছে।

এর ফলে নোবোয়া ইকুয়েডরীয় সংসদে সমর্থন হারালে এবং তার প্রতি আন্তর্জাতিক বিদ্বেষ সৃষ্টি হলেও শাপে বর হিসেবে তিনি ২৯ এপ্রিলের গণভোটে একটি দুর্দান্ত বিজয় অর্জন করেন, যেখানে জনগণ তার প্রস্তাবের এগারোটির মধ্যে নয়টিই গ্রহণ করে। শেষ পর্যন্ত, তার নিরাপত্তা এজেন্ডা তার জয় নিশ্চিত করেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .