গিনি: সামরিক শাসন বেসামরিক শাসন ফিরে আসাকে বিলম্বিত করছে

গিনির ক্ষমতা দখলের সময় সামরিক জান্তা সৈন্যরা, সেপ্টেম্বর, ২০২১। সিজিটিএন ফ্রাঁসোয়া ইউটিউব চ্যানেল “গিনির জিএফএস প্রধান লেফটেন্যান্ট-কর্নেল মামাদি দুম্বুইয়ার একটি বক্তৃতা“র ভিডিওর পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।

গিনি প্রজাতন্ত্রে সামরিক কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক অন্তর্বর্তীকাল বাড়ানোর অভিপ্রায় ঘোষণায় ২০২৫ সালের আগে বেসামরিক শাসনে ফিরে আসা অসম্ভাব্য বলে মনে হচ্ছে।

সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে থেকে গিনির শাসক সামরিক জান্তার নেতা কর্নেল মামাদি দোম্বুইয়া ২০২২ সালের এপ্রিলের গোড়ার দিকে বেসামরিক শাসনে ফিরে আসার কথা বিবেচনা করার আগে ৩৯ মাসের অন্তর্বর্তী মেয়াদ ঘোষণা করেন। তিনি ১১ মে, ২০২২ তারিখে এই সিদ্ধান্তটিকে ৩৬ মাসের অন্তর্বর্তী মেয়াদে সংশোধন করে তিন বছরে ক্ষমতা হস্তান্তরের অনুমতি দিলেও পশ্চিম আফ্রিকীয় রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের (ইকোওয়াস) হুমকির মুখে তিনি পরবর্তীতে দুই বছরের অন্তর্বর্তী মেয়াদের সিদ্ধান্ত নেন। সেই ব্যবস্থার অনুসারে সামরিক শাসনকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

গিনির বিরোধীদলীয়রা এই অন্তর্বর্তী মেয়াদ শেষ হওয়ার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করলেও সামরিক কর্তৃপক্ষ এই সময়সীমা সম্মানের কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। পরিবর্তে তারা ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সংগঠনগুলোর নির্বাচনী নিবন্ধন প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দেয়। এই পদক্ষেপটি ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বরে অভ্যুত্থানের পরে পশ্চিম আফ্রিকীয় রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতির বিরোধী।

পেশাদার রাজনৈতিক উন্নয়ন ওয়েবসাইট আফ্রিকা ইন্টেলিজেন্সের একটি প্রকাশনার উপর ভিত্তি করে ২০২৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রেডিও ফ্রান্স আন্তর্জাতিকের (আরএফ) একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে কর্নেল মামাদি দুম্বুইয়া পশ্চিমা অংশীদারদের সাথে এই অন্তর্বর্তী মেয়াদটি আনুষ্ঠানিক সময়সীমা ডিসেম্বর ২০২৪ এর বাইরে বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এই বিষয়ে, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ অন্তর্বর্তীকালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত আমাদু ওরি বাহ আরো আলোচনা করেছেন:

Il y a beaucoup de contingences. Dans un contexte où nous accusons une fragilité sur le plan économique, sur le plan financier, nous devons travailler à une stabilisation, à une décrispation politique pour avoir la possibilité d'examiner et de faire les étapes du chronogramme dans une relative sérénité. L'objectif, c'est de finir cela et je pense que 2025 est une bonne période pour couronner l'ensemble du processus.

অপ্রত্যাশিত অনেক পরিস্থিতি রয়েছে। অর্থনৈতিক ও আর্থিক অস্থিতিশীলতার সময় আরো স্থির পদ্ধতিতে সময়সূচী পর্যালোচনা ও বাস্তবায়ন করার জন্যে আমাদের অবশ্যই রাজনৈতিক উত্তেজনাকে স্থিতিশীল ও সহজ করার জন্যে কাজ করতে হবে। লক্ষ্য হলো এই অন্তর্বর্তীকালটি সম্পূর্ণ করা, এবং আমি মনে করি ২০২৫ সাল পুরো প্রক্রিয়াটি বন্ধ করার সেরা সময়।

পড়ুন: গিনির বিষাক্ত গণমাধ্যম দৃশ্যপট সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে

গিনির বিক্ষোভ

দেশের বিরোধীদলের সদস্যরা শুধু বসে বসে এই সর্বশেষ ক্ষমতা দখল দেখতে চায় না। ভাইটাল ফোর্সেস অব গিনি (এফজিভি) নামে পরিচিত কিছু বিরোধী ও সুশীল সমাজের ক্রিয়াশীলদের একটি জোট ২০২৪ সালের এপ্রিলে জান্তার পদক্ষেপের নিন্দা করে:

(…)Après plus de deux ans de transition, la Guinée ne dispose toujours pas de projet de constitution, ni de code électoral, ni d'organe de gestion des élections, ni de fichier (électoral)

(…) দুই বছরেরও বেশি সময় অন্তর্বর্তীকালের পর গিনির এখনো কোনো খসড়া সংবিধান, নির্বাচনী বিধি, নির্বাচন পরিচালনা ব্যবস্থা বা নির্বাচনী নিবন্ধন নেই।

সংবিধানের নিরাপত্তার জন্যে জাতীয় ফ্রন্ট (এফএনডিসি) ২০২৪ সালের মে মাসে গিনির নাগরিকদের একটি জোট ধারাবাহিক বিক্ষোভ ও সমাবেশের মাধ্যমে জান্তার প্রতি তাদের বিরোধিতা প্রকাশ করে। এফএনডিসি কর্মকাণ্ডের প্রধান ইব্রাহিমা দায়ালো দুঃখ প্রকাশ করেছেন:

Monsieur Bah Oury s’inscrit très malheureusement dans la continuité des acteurs qui ont grippé cette transition. L’unilatéralisme dans les prises de décision, le mépris et l’arrogance dans le discourt des autorités le rejet et l’exclusion des acteurs socio-politique important pour la vie de la Nation et pour la réussite de cette transition. Je le dis ici et au nom du FNDC que nous nous opposerons fermement à toute idée du glissement ou de prolongation de la transition par tous les moyens légaux (…)

দুর্ভাগ্যবশত মি. বাহ ওরি এই স্থানান্তর অবরোধকারীদের একজন। তার সিদ্ধান্ত গ্রহণে একতরফাভাব, জনসাধারণের আলোচনার প্রতি অবজ্ঞা ও অহংকারসহ এই জাতির কার্যকারিতা ও উত্তরণের সাফল্যের জন্যে প্রয়োজনীয় সামাজিক-রাজনৈতিক ক্রিয়াশীলদের প্রত্যাখ্যান ও বর্জন ছিল। এফএনডিসির পক্ষ থেকে আমি বলতে চাই আমরা দৃঢ়ভাবে সকল আইনি উপায় ব্যবহার করে এই অন্তর্বর্তীকালের কোনো পরিবর্তন বা বৃদ্ধির বিরোধিতা করবো (…)

গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ফ্রান্স২৪ ২০২৪ সালের জুনের গোড়ার দিকে দেশটির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী (২০০৪-২০০৬) এবং গিনির গণতান্ত্রিক শক্তি ইউনিয়নের নেতা সেলু দালেইন দায়ালোর সাক্ষাৎকার নেয়। দায়ালো তার বিবৃতিতে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে স্বৈরশাসন বর্ণনা করে উল্লেখ করেছেন সামরিক বাহিনী যতদিন সম্ভব ক্ষমতায় থাকতে চায়। এখানে ফ্রান্স২৪ এর সাথে এই সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও রয়েছে:

বিরোধী নেতার মতে, গিনিবাসী সেনাবাহিনীর আচরণে অবিশ্বাস্যভাবে হতাশ বলে প্রতিশ্রুতিগুলিকে জান্তার সম্মান নিশ্চিত করার জন্যে পদক্ষেপ নিতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

একটি নির্ভরযোগ্য নির্বাচনী নিবন্ধন প্রতিষ্ঠার আগে সরকার জোর দিয়ে কিছুই না করার কথা বলেছে। টিভি৫মঁদের একটি নিবন্ধে শাসকগোষ্ঠীর প্রধানমন্ত্রী আমাদু ওরি বাহ বলেছেন:

Après le référendum, tout le reste pourra se faire de manière concertée, parce que les conditionnalités les plus difficiles seront à partir de ce moment-là derrière nous.

গণভোটের পর সবকিছু সমন্বয় করা যাবে। ততদিনে আমরা সব অসুবিধা পিছনে ফেলে আসবো।

গণমাধ্যমের উপর বিধিনিষেধ সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহারের উদাহরণ। পরবর্তীতে আমাদু ওরি বাহ কিছু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।

অভ্যন্তরীণ কোন্দল

সামরিক শাসকগোষ্ঠীও কিছু অভ্যন্তরীণ বিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে। গত ১৫ জুন, ২০২৪ তারিখে একটি সামরিক আদালতের বিচার গিনি প্রজাতন্ত্রের প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা ও চিফ অফ স্টাফ সাদিবা কৌলিবালিকে বরখাস্ত করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। গত ৪ জুন, ২০২৪ তারিখে গ্রেপ্তারের পর কৌলিবালির বিরুদ্ধে কিউবায় গিনি দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স থেকে পদত্যাগ ও অবৈধভাবে অস্ত্র রাখার অভিযোগ আনা হয়। খবরে বলা হয়েছে কর্নেল সাদিবা কৌলিবলি হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যান। গিনির রাজধানী কোনাক্রিতে প্রথম দৃষ্টান্তের সামরিক আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটরের দপ্তরের জারি করা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সামরিক প্রসিকিউটর কর্নেল আলি কামারা প্রাক্তন কর্নেলের মৃত্যুকে ঘিরে পরিস্থিতি সম্পর্কে আরো বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। সংবাদ ওয়েবসাইট আনাদোলুর একটি নিবন্ধে তিনি জানিয়েছেন:

Il résulte des conclusions du rapport d’autopsie établi à cet effet que le décès pourrait être imputable à un psycho-traumatisme important et un stress prolongé qui sont à l’origine d’une arythmie cardiaque majeure ayant entraîné une défibrillation et un arrêt cardiaque.

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের উপসংহারে মৃত্যুটির জন্যে যথেষ্ট মানসিক আঘাত ও দীর্ঘস্থায়ী চাপ দায়ী হতে পারে, যার ফলে হৃদপিণ্ডের বড় ধরনের অ্যারিথমিয়া হয় যা ডিফাইব্রিলেশন ও কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের দিকে পরিচালিত করে।

কিছু কিছু গিনিবাসী নিহতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেসিগুইরি (দেশের উত্তরের একটি শহর) থেকে গিনির একজন নাগরিক বুরলায়ে কন্ডে গিনির সংবাদপত্র রিভালেতিউর২২৪-কে বলেছেন:

Nous avons appris avec pincement de cœur la disparition tragique et surprenante du général Sadiba Koulibaly. Comme la mort est inévitable, c’est Dieu seul qui connaît les conditions dans lesquelles il est mort, nous on ne peut rien, dire tôt ou tard on connaîtra la vérité, il était un militaire républicain, que Dieu l’accueil dans son paradis.

অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা জেনারেল সাদিবা কৌলিবলির মর্মান্তিক ও অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর কথা জানতে পারি। মৃত্যু অনিবার্য বলে তিনি কোন পরিস্থিতিতে মারা গেছেন তা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন। আমরা কিছুই করতে পারি না, তবে আমরা আগে বা পরে সত্য জানবো। তিনি ছিলেন প্রজাতন্ত্রের সৈনিক। ঈশ্বর যেন তাকে স্বর্গবাসী করেন।

এই মৃত্যু সামরিক বাহিনীর প্রতি মামাদি বুম্বুইয়া শাসকগোষ্ঠীর অবিশ্বাস নির্দেশ করতে পারে। গিনির রাজনৈতিক ভবিষ্যত বেসামরিক শাসনে ফিরে আসার জন্যে নির্বাচন না হওয়াতে আটকে রয়েছে।

পড়ুন: গিনির সঙ্গীত: রাজনৈতিক প্রকল্প জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়

 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .