
আল জাজিরা ইংরেজি ইউটিউব চ্যানেলে ফল্ট লাইন ডকুমেন্টারি “মারাত্মক দারিয়েন বিজনভূমি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন” তথ্যচিত্রে দারিয়েন বিজনভূমি দিয়ে অভিবাসন করা এক নারীর পর্দাছবি| ন্যায্য ব্যবহার।
পানামার পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১ জুলাই, ২০২৪ হোসে রাউল মুলিনো শপথ নিয়েছেন। প্রচারাভিযানে তার প্রতিশ্রুতি অনুসারে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে মুলিনোর প্রথম দাপ্তরিক কাজের একটি হলো লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম অভিবাসন পথ পানামা-কলোম্বিয়া সীমান্তবর্তী একটি ঘন ও দুর্গম জঙ্গল দারিয়েন বিজনভূমির মধ্য দিয়ে অভিবাসন রোধে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর। দীর্ঘ সময় কঠিন ভূপ্রকৃতি ও চরম পরিবেশের কারণে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ অভিবাসীর কাছে দুর্গম বিবেচিত দারিয়েন বিজনভূমি একটি উন্নত জীবনের দিকে একটি কঠিন যাত্রাপথের প্রতিনিধিত্ব করে।
মুলিনোর ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনে অবৈধভাবে পানামায় প্রবেশকারী অভিবাসীদের নির্বাসনের জন্যে পানামার প্রচেষ্টায় মার্কিন সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মার্কিন স্বদেশ নিরাপত্তা মন্ত্রী আলেহান্দ্রো মায়োরকাস পানামা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। এই উদ্যোগের জন্যে প্রাথমিকভাবে ৬০ লক্ষ মার্কিন ডলার (প্রায় ৭১ কোটি টাকা) বরাদ্দ করা হয়।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেছেন:
এধরনের ব্যক্তিদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দিয়ে আমরা এই অঞ্চল ও আমাদের দক্ষিণ সীমান্তে ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসীদের শিকারে পরিণত করা অনিয়মিত অভিবাসন রোধে সাহায্য ও ক্ষতিকর চোরাচালান নেটওয়ার্কের বিকাশ বন্ধ করবো।
দারিয়েন বিজনভূমির মধ্য দিয়ে বেশিরভাগ অভিবাসী পানামার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে যায় বলে এটি এই দেশে দীর্ঘকাল ধরে বিতর্কের বিষয় এবং মধ্য আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণ। ডানপন্থী রিয়ালিজান্ডো মেটাস (লক্ষ্য অর্জন) দলের মুলিনো তার কৌশল এবং প্রতি বছর হাজার হাজার অভিবাসীর পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও দারিয়েন বিজনভূমি “বন্ধ” করার প্রতিশ্রুতিতে প্রচারণা চালিয়েছেন।
দারিয়েন বিজনভূমি পেরুনো অভিবাসীর সংখ্যা ২০১০ ও ২০২০-এর দশকে, দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, ২০২৩ সালে যা পাঁচ লক্ষেরও বেশি৷ এই বৃদ্ধিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত অতিক্রমকারী অনথিভুক্ত অভিবাসীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার সাথে মিলে যায়৷ বাইডেন প্রশাসন ২০২৩ সালে এই প্রবাহ থামাতে অভিবাসীদের সুরক্ষার জন্যে নয় বরং মার্কিন সীমান্তে আগতদের বিতাড়িত করতে – ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবনার মতো পরিকল্পনা পুনরুজ্জীবিত করে – পানামাকে এক কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই প্রথম অন্য দেশের নির্বাসন প্রচেষ্টায় মার্কিন বৈদেশিক সহায়তার অর্থায়ন।
আমেরিকার ইতিহাসে বৃহত্তম শরণার্থী সংকট ভেনিজুয়েলার চলমান শরণার্থী সংকটের ফলে অভিবাসীদের বেশিরভাগ -, প্রায় ৬০ শতাংশ – ভেনিজুয়েলার। ভেনিজুয়েলার সংকটপূর্ব জনসংখ্যার ২০ শতাংশ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, প্রায় ৮০ লক্ষ ভেনিজুয়েলাবাসী নিকোলাস মাদুরোর স্বৈরাচারী শাসনামলে স্থায়ী হয়ে ওঠা প্রবল উচ্চমূল্যস্ফীতি, অনাহার ও অপরাধের কারণে তাদের দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। বেশিরভাগই প্রথম লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে বসতি স্থাপন করেছে, যেখানে তারা আইনি চ্যালেঞ্জ, অর্থনৈতিক অসুবিধা ও দীর্ঘমেয়াদী আত্মীকরণের সীমিত সম্ভাবনার সম্মুখীন হয়েছে। অন্যান্য প্রধান উৎস দেশগুলির মধ্যে রয়েছে হাইতি, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া ও চীন।
অনেকের দৃষ্টিতে দারিয়েন বিজনভূমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সুযোগ ও উন্নত জীবনের একটি আশা দেখায়। তবে মধ্য আমেরিকা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ভেনিজুয়েলার অভিবাসন সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাইডেন – এবং এখন পানামায় মুলিনো – প্রশাসনের জন্যে অভিবাসীদের বিতাড়িত করা একটি কৌশলের ব্যাপার। তবে জটিল বিষয় হলো ভেনিজুয়েলার তেল ও গ্যাস শিল্পের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পরে ভেনিজুয়েলা সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো থেকে নির্বাসিত ভেনিজুয়েলার অভিবাসীদের ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় মুলিনো বলেছেন:
No permitiré que Panamá sea un camino abierto a miles de personas que ingresan ilegalmente a nuestro país aupados por toda una organización internacional relacionada con el narcotráfico y el tráfico de personas.
আমি পানামাকে মাদক চোরাচালান ও মানব পাচারের কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার সমর্থনে অবৈধভাবে আমাদের দেশে প্রবেশকারী হাজার হাজার লোকের একটি খোলা পথ হতে দেবো না।
মুলিনোর মন্ত্রিসভার অন্যরা তার পরিকল্পনায় তাদের সরকারি সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জুন মাসে মুলিনোর জননিরাপত্তা বিষয়ক নতুন মন্ত্রী এবং যথেষ্ট মার্কিন অর্থায়ন পাওয়া পানামার সীমান্ত টহল সংস্থা সেনাফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা ফ্রাঙ্ক আব্রেগো সীমান্ত এলাকার অন্যতম প্রধান সামরিক স্থাপনা মেয়র সালভাদর কর্ডোবা বিমান ঘাঁটি জরিপ করতে পানামার দক্ষিণ দারিয়েন প্রদেশ পরিদর্শন করেছেন।
Hoy realizamos una visita técnica a la base aérea Mayor Salvador Córdoba en Nicanor, provincia de Darién, para una primera jornada de entrega de informes del Servicio Nacional Aeronaval. Sin duda alguna actualizar la flota aérea, marítima y mejorar la infraestructura de… pic.twitter.com/kYFe9nSB4b
— Frank Abrego (@frankabregom) June 19, 2024
আজ আমরা জাতীয় আকাশ-নৌ বাহিনীর প্রতিবেদন পাঠানোর প্রথম দিনে দারিয়েন প্রদেশের নিকানোরে মেজর সালভাদর কর্ডোবা বিমান ঘাঁটিতে একটি প্রায়োগিক পরিদর্শন করেছি। হস্তক্ষেপের পরিকাঠামো উন্নত করতে আকাশ ও সামুদ্রিক নৌবহর হালনাগাদ করা যে একটি চ্যালেঞ্জ তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। আগামী ১ জুলাই থেকে আমরা শুরু করবো। #বাহিনীমর্যাদাপূর্ণকরা
দীর্ঘ সামরিক কর্মজীবনের পর লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের নিপীড়ক রাষ্ট্রনায়কদের প্রশিক্ষণের ইতিহাস সম্বলিত মার্কিন নিরাপত্তা স্কুল বিভাগের আমেরিকা স্কুল নামে বেশি পরিচিত নিরাপত্তা সহযোগিতার পশ্চিম গোলার্ধ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের একজন প্রাক্তন ছাত্র, একটি সংবাদপত্রের “দারিয়েনের জার” অভিহিত, আব্রেগোর মুলিনোর সরকারে যোগদান পানামার সরকার ও সামরিক সংস্থার সাধারণ অভিবাসন বিরোধী অবস্থানের উদাহরণ মাত্র।
বাস্তবিক মুলিনোর সরকারের দারিয়েনকে “বন্ধ” করার পরিকল্পনাটি বিতর্কিত হলেও নতুন সরকার ইতোমধ্যে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি চিহ্নিত পথ আটকে দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক একটি বিবৃতিতে সেনাফ্রন্ট নির্দিষ্ট পথে প্রবেশ ঠেকাতে কাঁটাতারের ঘের ব্যবহার করে অভিবাসীদের ফাঁদের দিকে পরিচালিত করে নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে তাদের আটকে ফেলার বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে।
কেউ কেউ মুলিনোর পরিকল্পনার সম্ভাব্য গুরুতর মানবিক পরিণতির সমালোচনা করে অভিবাসী সংকট ব্যবস্থাপনার বিকল্প পদ্ধতি প্রস্তাব করেছে। একজন বিশিষ্ট সমালোচক কলম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি গুস্তাভো পেত্রো ৯ জুন টুইট করেছেন:
Los alambres de púas en la selva somo traerán ahogados en el mar.
La migración se frena quitando bloqueos económicos y mejorando la economía del sur https://t.co/1EFya16cn0
— Gustavo Petro (@petrogustavo) July 9, 2024
জঙ্গলে কাঁটাতার মানুষকে সাগরে ডোবাবে।
অর্থনৈতিক অবরোধ সরিয়ে দক্ষিণের অর্থনীতির উন্নতির মাধ্যমে অভিবাসন বন্ধ করা যেতে পারে।
কলম্বিয়ার ন্যায়পাল দপ্তরও মুলিনোর পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। ন্যায়পাল হুলিও লুইস বালান্তা বলেছেন:
Hemos reiterado a las autoridades nacionales y locales, la necesidad de tomar medidas urgentes y activar mesas de gestión migratoria con un enfoque humanitario. La materialización de las restricciones en el Tapón del Darién podrían desencadenar un crisis de salud pública.
আমরা জাতীয় ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিসহ জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনা টেবিল কার্যকরের প্রয়োজনীয়তার কথা বারবার বলেছি। দারিয়েন বিজনভূমিতে বিধিনিষেধ বাস্তবায়িত হলে জনস্বাস্থ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
কলম্বীয় কর্তৃপক্ষ মুলিনোর পরিকল্পনার সমালোচনার একটি কারণ হলো মুলিনো দারিয়েন বিজনভূমির মাধ্যমে পানামায় প্রবেশে বাধা দিতে সফল হলে কলম্বীয় দিকের সীমান্তে অভিবাসীদের একটি সঞ্চিতি তৈরি হতে পারে, যা স্থানীয় নিরাপত্তার জন্যে হুমকি।
মুলিনোর দারিয়েনের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি অভিবাসন পথে প্রবেশ বন্ধ করার সাম্প্রতিক পদক্ষেপ সত্ত্বেও কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন তার দারিয়েনকে “বন্ধ” করার পরিকল্পনা একেবারেই অসম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয়দের অভিবাসন নীতি প্রতিষ্ঠানের দিয়েগো শ্যাভেজ-গঞ্জালেজ উল্লেখ করেছেন “বন্ধ প্রতিটি বিভাগের ক্ষেত্রে এখন নীরব অতিরিক্ত তিনটি হাজির হতে পারে।”
কলম্বীয় কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক সংযম ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের উদ্বেগসহ দারিয়েন বিজনভূমির মাধ্যমে অভিবাসনের ক্রমবর্ধমান হারের পরিপ্রেক্ষিতে মুলিনোর উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনায় সফল হওয়াটা অনুমান মাত্র। তবে এটা নিশ্চিত কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই এমন অভিবাসীরা আসতেই থাকবে।