একতরফা নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে রুয়ান্ডা

Launch of Rwandan Patriotic Front Legislative Election - Kamonyi, 26 August 2013. Image by Paul Kagame from Flickr(

রুয়ান্ডার দেশপ্রেমিক ফ্রন্টের সংসদ নির্বাচনের সূচনা – কামোনি, ২৬ আগস্ট ২০১৩। ফ্লিকার থেকে নেওয়া পল কাগামেছবি (সৃজনী সাধারণ অবাণিজ্যিক অপরিবর্তনযোগ্য ৪.০ অনুমতি)।

রুয়ান্ডাবাসী সোমবার, ১৫ জুলাই দেশটির রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিতে যাবে৷ সেখানে ৫০০ জনেরও বেশি প্রার্থী ৮০ সদস্যের সংসদে জায়গা নিতে নির্বাচনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

মানবাধিকার পর্যবেক্ষককথোপকথনসহ সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, জনমতের কারসাজি, বিরোধী প্রার্থীদের বহিষ্কার, সাংবাদিকদের হয়রানি ও সমালোচকদের হত্যার অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচনের ফলাফল স্পষ্ট।

বিবিসি সংবাদ অনুসারে, নির্বাচনী সংস্থা শুধু দুই প্রার্থী গণতান্ত্রিক সবুজ দলের নেতা ফ্রাঙ্ক হাবিনেজা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিলিপ এমপাইমানাকে ছাড়পত্র দিয়েছে।

টিআরটি আফ্রিকার মতে, ৪৭ বছর বয়সী হাবিনেজা ভূমি কর অপসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় প্রবেশাধিকার উন্নত করা এবং সন্দেহভাজনদের ৩০ দিনের প্রাক-বিচার আটক প্রত্যাহার করে কারাগারগুলিকে ফাঁকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অন্যদিকে এমপাইমান রুয়ান্ডায় সংসদ সদস্যদের দক্ষতা উন্নত করতে সংখ্যা ৮০ থেকে ৬৫-তে হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।  এই ৫৪ বছর বয়সী ব্যক্তি শিক্ষা খাতের উন্নতি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে, রুয়ান্ডার দেশপ্রেমিক ফ্রন্টের (আরএফপি) নেতা হিসেবে ৬৬ বছর বয়সী রাষ্ট্রপতি পল কাগামে স্থিতিশীল ও উন্নয়নমুখী নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতিসহ রুয়ান্ডায় ঐক্যের প্রচার চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি কাগামে ১৯৯০ সালে রুয়ান্ডা আক্রমণ ও রুয়ান্ডার গৃহযুদ্ধে প্রধান ভূমিকা পালন করে শেষ পর্যন্ত গণহত্যার অবসান ঘটানো বিদ্রোহী বাহিনী আরপিএফের একজন অধিনায়ক ছিলেন। তাকে ১৯৯৪ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত, রাষ্ট্রপতি পাস্তুর বিজিমুঙ্গুর উপ-রাষ্ট্রপতি ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় রুয়ান্ডার কার্যকর নেতা হিসেবে দেখা হয়। আরপিএফের সাথে ২০০০ সালে বিবাদের পর বিজিমুঙ্গু পদত্যাগ করেন। কাগামে তার স্থলাভিষিক্ত হলে উপ-রাষ্ট্রপতি পদটি বিলুপ্ত করা হয়।

এই নির্বাচনে চতুর্থ মেয়াদ চাওয়া রাষ্ট্রপতি কাগামে ২০১৫সালের সাংবিধানিক সংশোধনীতে আরো তিন মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুমতি পেয়ে এখন পুনরায় নির্বাচনের যোগ্য।, তিনি ২০১৭ সালে তৃতীয় মেয়াদে সাত বছরের জন্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ২০২৪ সাল থেকে মেয়াদের সীমা পাঁচ বছরে নামিয়ে আনেন। টিআরটি আফ্রিকার মতে, রুয়ান্ডায় রাষ্ট্রপতির যোগ্যতার মধ্যে রয়েছে “অটুট নৈতিকতা”, ছয় মাস বা তার বেশি কারাবাস না করা এবং কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স হওয়া।

এদিকে রাষ্ট্রপতি কাগামের কট্টর সমালোচক ডায়ান রুইগারাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেওয়া হয়েছেবিবিসি অনুসারে, নির্বাচন কমিশন বলেছে যে রুইগারা তার কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই প্রমাণের প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিতে এবং প্রার্থী হিসেবে যোগ্যতা অর্জনের জন্যে দেশব্যাপী পর্যাপ্ত সমর্থন প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

তবে রুইগারা মনে করেন তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, যেমনটি তিনি এক্সে (পূর্বের টুইটারে) বলেছেন:

এতো সময় দেওয়া, কাজ ও চেষ্টার পরে রাষ্ট্রপতি প্রার্থীদের তালিকায় আমার না থাকা শুনে খুব হতাশ হয়েছি। @পলকাগামে আপনি আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেবেন না কেন?
এই নিয়ে দ্বিতীয়বার আপনি আমার প্রচারণার অধিকার ফাঁকি দিয়েছেন।

আমি দুঃখ পেয়েছি।

তাকে ২০১৭ সালের আগস্টেও সেইবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল।

এই টিকটক ভিডিওটিতে টিআরটি আফ্রিকার প্রতিবেদনে তাকে তার অনুমোদনের তালিকায় মৃত ব্যক্তিদের নাম ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সদস্যদের পরিচয় ব্যবহারে অভিযুক্ত করা হয়। তবে রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালির উচ্চ আদালত তিনি ও তার মাকে উস্কানি দেওয়া ও সমর্থকদের স্বাক্ষর জালের অভিযোগ থেকে খালাস দিলেও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি এক বছরেরও বেশি সময় হেফাজতে কাটান।

চল্লিশের গোড়ার দিকে থাকা এই নির্বাচন প্রত্যাশী বিবিসি সংবাদকে বলেছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ রুয়ান্ডাবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করলেও তিনি নিজের দেশে স্বাধীনতার অভাবে ভয়ের মধ্যে থাকেন। তিনি আরো বলেছেন যে রুয়ান্ডাকে একটি ক্রমবর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে চিত্রিত করা হলেওকিন্তু বাস্তবতা হলো অনেক লোকের খাদ্য, জল এবং আশ্রয়ের মতো মৌলিক প্রয়োজনীয়তার অভাব রয়েছে।

নির্বাচনের আরেক প্রার্থী ভিক্টোয়ার ইঙ্গাবিরকেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। পরাষ্ট্রনীতি ওয়েবসাইটে তিনি মানবাধিকার পর্যবেক্ষক, ইউরোপীয় সংসদমার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কর্তৃক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বর্ণিত তার উপর রুয়ান্ডা সরকারের দমন-পীড়নের অগ্নিপরীক্ষা বর্ণনা করে তার গ্রেপ্তার, বিচার, দোষী সাব্যস্ত হওয়া ও ১৫বছরের কারাদণ্ডের আট বছরের সাজা ভোগের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।

ইঙ্গাবিরে রুয়ান্ডার সরকারকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে নাগরিকদের বাদ দিয়ে এর অধিবাসীদের স্বার্থের চেয়ে আরপিএফ আদর্শকে অগ্রাধিকার দানে অভিযুক্ত করেছেন। রুয়ান্ডার আকর্ষনীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাংক স্বীকার করলেও তার মতে এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নয় এবং প্রকৃত আর্থ-সামাজিক রূপান্তরের প্রয়োজনীয় খাতগুলিতে যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ।

কথোপকথনের উল্লেখ অনুসারে, রুয়ান্ডা সরকার সমালোচকদের নীরব করার জন্যেও অভিযুক্ত। নিষিদ্ধ গল্পের সাংবাদিক নেটওয়ার্কের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের মে মাসের শেষের দিকে রুয়ান্ডার সাংবাদিক ও সরকার সমালোচক জন উইলিয়ামস এনতওয়ালির সন্দেহজনক মৃত্যু সম্পর্কে প্রমাণ উপস্থাপন করে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলি “শ্রেণিকৃত রুয়ান্ডা” নামে একটি ধারাবাহিক প্রকাশ করে।

অনলাইন আলোচনাগুলিকে ব্যাহত করে রুয়ান্ডার সরকারের বর্ণনা প্রচারের জন্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সরঞ্জামাদি ব্যবহারের অভিযোগ করা হচ্ছে, কথোপকথন যাকে “আফ্রিকার একটি বিপজ্জনক নতুন প্রবণতা” বলে মনে করছে।

শ্রেণীকৃত রুয়ান্ডা প্রকাশের পর মিডিয়া ফরেনসিক হাবের অনুসন্ধান পল কাগামে শাসকগোষ্ঠীর সমর্থক বিষয়বস্তুসহ প্রতিবেদনের অনলাইন আলোচনা প্লাবিত করা প্রায় ৪৬৪টি অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করেছে। একই নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত অনেক অ্যাকাউন্ট ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এক্সে সক্রিয় ছিল যেসময়ে এই নেটওয়ার্কটি ৬.০ লক্ষেরও বেশি বার্তা তৈরি করে।

মঙ্গলবার ২ জুলাই পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের কিরেহে শহরে তার সমাবেশে জনসমাগমের জন্যে জনগণকে প্রভাবিত করার অভিযোগকারীদের চ্যালেঞ্জ করে রাষ্ট্রপতি কাগামে বলেছেন, “তারা যেমন আমাকে কর্তৃত্ববাদী নেতা বলে ডাকে, তারা এখানে এইরকম একটি বড় খুশি জনতার নিশ্চয়তা দিতে পারলে, আমি তাদের দেশে এরকম চেষ্টা করে ফলাফলের জন্যে অপেক্ষা করতে বলবো।” কাগামের যুক্তি সমালোচকরা রুয়ান্ডার স্বতন্ত্রতা বুঝতে ব্যর্থ।

কাগামের তার ভিড়-টানার ক্ষমতা ও ক্যারিশমার পক্ষাবলম্বন সত্ত্বেও, বিপরীত চিত্রগুলি প্রকাশ করে এই মাসের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অন্য দুই প্রার্থী কাগামের সমাবেশে উপস্থিতদের একাংশকে আকর্ষণ করতে লড়াই করছে৷

এমপাইমানা এবং হাবিনেজা তাদের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী হলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা কাগামেকে গোলিয়াথ ধরে নিয়ে তাদের চেষ্টাকে ডেভিড বনাম গলিয়াথ যুদ্ধের সাথে তুলনা করেছে। রাষ্ট্রপতি ও তার আরপিএফ দল ক্ষমতা ও ভাল আর্থিক সম্পদের সুবিধায় রয়েছে।

ইএনসিএ সংবাদের প্রতিবেদন অনুসারে, “তোরা কাগামে পল” (“পল কাগামেকে ভোট দিন”) এবং “পিকে২৪” (“পল কাগামে ২০২৪ এর জন্যে”) স্লোগানসহ সর্বত্র শাসক দলের লাল, সাদা ও নীল রং সমন্বিত গাড়ি, পতাকা, পোস্টার ও ব্যানার বিশেষভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে। নীচের এক্স পোস্টটিতে যেমন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীদের পরিবেশনাসহ কাগামের সমাবেশগুলি দেখানো হচ্ছে:

দেখুন: ব্রুস মেলোডির পাশাপাশি আরপিএফ ইনকোটানি প্রচারাভিযানের জন্যে ‘ওগেরা’ হিট গান তৈরি করা বুইজা গাহাঙ্গা, কিকুকিরো, কিগালিতে দলের চূড়ান্ত প্রচার সমাবেশে পরিবেশন করছেন৷

রাষ্ট্রপতি প্রার্থী #কাগামের জন্যে সমর্থকদের একটি বিশাল ভিড় অপেক্ষা করছে।

একই প্রার্থীরা ক্ষমতার জন্যে ২০১৭ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। কাগামে ৯৮.৭৯ শতাংশ বা ৬৭ লক্ষ ভোট পেয়ে জিতলেও এমপাইমানা ০.৭ শতাংশ বা ৪৯,০৩১ এবং হাবিনেজা ০.৫ শতাংশ বা ৩৩,০০০ ভোট পেয়েছিল।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .