সিঙ্গাপুরে ফিলিস্তিনপন্থী ‘অবৈধ’ সমাবেশের দায়ে তিন নারী অভিযুক্ত

Procession to Istana

সরকারকে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি দিতে প্রায় ৭০ জন ব্যক্তি সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে মিছিল করেছে। অংশগ্রহণকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকার  মতো “তরমুজ” ছাতা বহন করেছে। ঙ্গ ই-শেঙের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া ছবি। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

গত ২ ফেব্রুয়ারি, প্রায় ৭০ জন লোক গাজায় ফিলিস্তিনের জনগণের উপর অব্যাহত হামলার জন্যে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্যে সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি দেওয়ার জন্যে সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতির প্রাসাদের দিকে মিছিল করলে ২৭ জুন পুলিশ অনুমতি ছাড়া অনুষ্ঠান আয়োজনের অভিযোগে তিন নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে

জনশৃঙ্খলা আইনে অপরাধযোগ্য  নিষিদ্ধ এলাকায় মিছিল সংগঠিত করার অভিযোগে আন্নামালাই কোকিলা পার্বতী, সিতি আমিরাহ মোহাম্মদ আসরোরি এবং মোসাম্মদ সোবিকুন নাহার —  এই তিন নারীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারী অন্যান্যরাও বিচারের মুখোমুখি হতে পারে।

পুলিশ জনগণকে অন্য দেশের বিক্ষোভকারীদের অনুকরণ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছে।

আমরা ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব নিয়ে কিছু লোকের দৃঢ় অনুভূতি বুঝতে পারলেও তাদের মতামত প্রকাশের আইন ভঙ্গ করা বা অন্যদেশের বিক্ষোভকারীদের অনুকরণ করা উচিত নয়। পরিবর্তে তারা এই বিষয়ে যথাযথভাবে সংগঠিত অনেক ফোরাম ও সংলাপ এবং অনুদান সংগ্রহে অংশ নিতে পারে।

অভিযুক্তদের একজন আন্নামালাই কোকিলা পার্বতীর সংগঠন রূপান্তরমূলক বিচার সম্মিলন দূঃখ করে বলেছে “সরকার ফৌজদারি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে প্রতিশোধমূলক প্রতিক্রিয়া বেছে নিয়েছে।” এটি আরো বলেছে:

এই তিনজনের বিরুদ্ধে এধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ সিঙ্গাপুরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি শান্তিপূর্ণ সমর্থনকে ভয় দেখানোর ধারাবাহিকতা।

আমাদের অন্যদের সাথে একাত্ম হয়ে দাঁড়ানো, অবিচার দেখলে পদক্ষেপের আহ্বান জানানো, সরকারি অনুমতি ছাড়াই নৈতিক নীতি অনুসারে কাজ করার স্বাধীনতা একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধিশীল গণতান্ত্রিক সমাজের জন্যে মৌলিক।

আমরা অভিযোগ প্রত্যাহার করে ফিলিস্তিনের প্রতি শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপের অন্যান্য সমস্ত তদন্ত এবং ভয় দেখানো অবসানের আহ্বান জানাই।

বিরোধীদলীয় সিঙ্গাপুর গণতান্ত্রিক দল (এসডিপি) তরুণ কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের নিন্দা জানিয়েছে

একটি চিঠি পৌঁছে দেওয়ার জন্যে আবেদনকারীরা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে হেঁটেছিলেন। তারা আর কতোটা শ্রদ্ধাশীল হতে পারতো? তারপরও সরকার এই তরুণ ও বিবেকবান সিঙ্গাপুরবাসীদের চেতনাকে চূর্ণ করা ঠিক মনে করেছে।

স্বাধীনভাবে কথা বলা ও চিন্তা করার স্বাধীনতা না থাকলে সিঙ্গাপুর দৃঢ়ভাবে অতীতে আটকে থাকবে। আমাদের জাতির একটি পরিপক্ক ও পরিশীলিত সমাজ হিসেবে গড়ে ওঠার সময়ে মৌলিক অধিকার প্রয়োগের জন্যে আমাদের নাগরিকদের বিচার করা অলীক, অবিবেচনাপ্রসূত ও বিপরীত ফলদায়ক।

তবে সিঙ্গাপুর সরকার স্পষ্ট করেছে বেআইনিভাবে একত্রিত হওয়ার কারণে তিন নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে —ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশের জন্যে নয়।

ফিলিস্তিনি জনগণের জন্যে সমর্থন সংগঠনের জন্যে তাদের অভিযুক্ত করা হয়নি। ফিলিস্তিনের পক্ষে সমর্থন সংগঠিত করা কোনো ফৌজদারি অপরাধ নয়। সরকার নিজেই ফিলিস্তিনের সমর্থনে অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

এটি নাগরিকদের সিঙ্গাপুরে স্থিতিশীলতা ও সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখার কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

আমরা সিঙ্গাপুরবাসীদের কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত ও আজ উপভোগ্য শান্তি, জনশৃঙ্খলা ও সামাজিক সম্প্রীতির প্রতি ক্ষতিকর কোনো কার্যকলাপে জড়িত না হওয়ার জন্যে জনসাধারণকে অনুরোধ করতে চাই। এমনকি যৌক্তিক হলেও ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের আইন ভাঙ্গা উচিত নয় কারণ সেটা করলে শেষ পর্যন্ত আমরা একটি অনাচারী, অস্থির ও উচ্ছৃঙ্খল সমাজে পরিণত হবো।

অনলাইন মিথ্যা ও অপব্যবহার আইনে (পিওএফএমএ) সুরক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে সরকার এসডিপির পোস্টে একটি “মিথ্যা তথ্য” নোটিশ পাঠালে এসডিপি নাগরিকদের বাকস্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি জোর দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এটি জোর দিয়ে বলেছে “সমাবেশটি শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক প্রকৃতির হওয়ার কারণে এর বিচার করা অযৌক্তিক।”

সিঙ্গাপুরবাসী তরুণ ও বয়স্কদের অবশ্যই বর্তমান পদক্ষেপটিকে গভীর উদ্বেগের সাথে দেখতে হবে। আমরা অবশ্যই [পিপলস অ্যাকশন পার্টি বা পিএপি]-কে আমাদের নাগরিকত্বের সমার্থক আমাদের অধিকার কেঁড়ে নেওয়ার সুযোগ দেবো না। সমালোচকদের নীরব করতে পিওএফএমএ’র ব্যবহার সিঙ্গাপুরের নাগরিক হওয়াকে আরো অর্থহীন করে তোলে।

সিঙ্গাপুরবাসীদের শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে চিঠি পাঠানোর সহজ কাজটিকে অবশ্যই সম্মান ও রক্ষা করতে হবে।

লেখক কার্স্টেন হ্যান ক্ষমতাসীন দলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন

আমি মনে করি না পিএপি সরকার এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যা ঘটছে তা নিয়ে সিঙ্গাপুরবাসী-বিশেষ করে তরুণ সিঙ্গাপুরবাসীর- মতো ততোটা পরিপূর্ণভাবে অনুভব করে, এবং এই সহিংসতার সাথে সিঙ্গাপুরের সংযোগ নিয়ে তারা ততোটা বিচলিত ও বিরক্ত।

… অতিরিক্ত বিস্তৃত, অধিকার লঙ্ঘনকারী আইনের কারণে শুধু রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ দাবি করা ঘটনা ও ক্রিয়াকলাপের বিষয়ে পুলিশ যতো বেশি অর্থহীন ও দায়সারা তদন্ত করে, ততোটাই তারা পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের ধারণাকে স্বাভাবিক করে তোলে।

শান্তির জন্যে সিঙ্গাপুরের যুবসম্প্রদায় ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।

ফিলিস্তিন বিশ্ব মানবতার একটি লিটমাস পরীক্ষা হলে এটি সিঙ্গাপুরের নীতিরও একটি পরীক্ষা। আর আমরা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি কিনা তার প্রথম সূচক হলো আমাদের কর্মী ও সুশীল সমাজের সাথে আমাদের আচরণ। কোন অপরাধের জন্যে এই তিনজন আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে?

দোষী প্রমাণিত হলে তিন নারীর ১০,০০০ সিঙ্গাপুরী ডলার (প্রায় ৮.৭৩ লক্ষ টাকা) পর্যন্ত জরিমানা বা ছয় মাস পর্যন্ত জেল হতে পারে। সিঙ্গাপুরের বাইরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী নেতাকর্মীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে

সিঙ্গাপুর সরকার ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতে নিরপেক্ষতা দাবি করেছে। ইসরায়েলের সাথে যৌথ কর্মসূচি থাকলেও এটি গাজার বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .