বুরকিনা ফাসো: ইব্রাহিম ত্রাওরেকে ক্ষমতায় থাকার খোলা চেক দেওয়া হয়েছে

বুরকিনা ফাসোর রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম ত্রাওরের ছবি। বিএফ১ টেলিভিশনেইউটিউব চ্যানেলের পর্দাছবি।

গত ২৫ মে, ২০২৪ বুরকিনা ফাসোতে নতুন রাজনৈতিক এজেন্ডা প্রতিষ্ঠার জন্যে একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যাতে সামরিক স্থানান্তরের সময়সীমা পাঁচ বছর বাড়িয়ে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের আশাকে ধূলিসাৎ করা হয়েছে।

বুরকিনা ফাসোর ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ তারিখে সর্বশেষ অভ্যুত্থানের পর থেকে ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরে দেশ শাসনকারী অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অনেক বুরকিনাবে নাগরিকরা এই সরকার ২ জুলাই, ২০২৪ অন্তর্বর্তী মেয়াদ শেষে পদত্যাগ করবে বলে আশা করলেও কখনোই ত্রাওরের এই অন্তর্বর্তী মেয়াদ শেষ করে নির্বাচন করার অগ্রাধিকার ছিল না। তিনি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তার অগ্রাধিকারে দেশের নিরাপত্তা থাকার কথা বলেছিলেন,  যেমনটি ডিজিটাল চ্যানেল টিআরটি আফ্রিকা এই নিবন্ধে তুলে ধরেছে:

Les élections, ce n'est pas une priorité, ça je vous le dis clairement, c'est la sécurité qui est la priorité. Il n'y aura pas d'élection qui va se concentrer uniquement à Ouagadougou et à Bobo-Dioulasso (deux villes épargnées par les attaques terroristes fréquentes) et dans quelques villes autour, il faut que tous les Burkinabè choisissent leur président.t.

আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই: নির্বাচন নয়, নিরাপত্তা অগ্রাধিকার।  শুধু (ঘনঘন সন্ত্রাসী হামলা থেকে রক্ষা পাওয়া দুটি শহর) ওয়াগাডুগু, বোবো-ডায়োলাসো বা আশেপাশের কোনো শহরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। সকল বুরকিনাবে নাগরিকদের অবশ্যই তাদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে।

বুরকিনা ফাসোর নিরাপত্তা সমস্যা মূলত প্রায়শই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির আক্রমণের শিকার সাহেল অঞ্চলের সাথে সম্পর্কিত

পড়ুন: জিহাদি হামলার বিরুদ্ধে রণকৌশল পরিবর্তন করেছে বুরকিনা ফাসো

বুর্কিনা ফাসো ২৫ মে, ২০২৪ অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে একটি নতুন অন্তর্বর্তী সনদ পাস করে ত্রাওরেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় রেখেছে। জাতীয় সম্মেলন আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান কর্নেল মুসা ডায়ালো বলেছেন:

La durée de la transition est fixée à 60 mois à compter du 2 juillet 2024.

অন্তর্বর্তী মেয়াদ ২ জুলাই, ২০২৪ থেকে ৬০ মাস নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইব্রাহিম ত্রাওরে কি বুরকিনা ফাসোর আজীবন রাষ্ট্রপতি?

এই ক্ষমতার সম্প্রসারণে প্রধান এই জাতীয় সম্মেলন বর্জনকারী রাজনীতিবিদদের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। রাজনীতিবিদদের ইতোমধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ তারিখের অভ্যুত্থানের পরে সারাদেশে সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করতে হলেও, তাদের এখন অবশ্যই ভবিষ্যতে ত্রাওরে ও অন্তর্বর্তী সামরিকের অন্যান্য সদস্যদের নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার  দেওয়া সনদের ২২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত রায়গুলির মোকাবিলা করতে হবে। কর্নেল মুসা ডায়ালো আরো বলেছেন:

Selon l'article 22 de la charte, des élections peuvent toutefois être organisées “avant cette échéance si la situation sécuritaire le permet”. Le capitaine Traoré, dont le statut passe de “président de transition” à “président du Faso”, pourra par ailleurs se présenter aux “élections présidentielles, législatives et municipales”, qui doivent être organisées à l'issue de cette période.

এই সনদের ২২ অনুচ্ছেদ অনুসারে, “নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনুমতি দিলে এই সময়সীমার আগে” নির্বাচন হতে পারে৷ ক্যাপ্টেন ত্রাওরের ভূমিকা “অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতি” থেকে “বুর্কিনা ফাসোর রাষ্ট্রপতি”তে পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি অবশ্যই এই সময়সীমার শেষে অনুষ্ঠিত “রাষ্ট্রপতি, আইনসভা ও পৌরসভা নির্বাচনে” দাঁড়াতে পারবেন।

এই সনদটি সকল ক্ষেত্রে এবং সকল উপায়ে দেশের কৌশলগত পদ্ধতির রূপরেখা প্রণয়ন ও নিরীক্ষণ করতে পারার জন্যে কোরাগ নামের একটি নতুন সংস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে।

এই ফাসো টিভি ইউটিউব ভিডিওতে যেমন দেখাচ্ছে অনেক নাগরিক ত্রাওরের ক্ষমতায় থাকার ঘোষণাটি সেভাবে উদযাপন করেছে:

ফাসো টিভি ইউটিউবের অন্য একটি ভিডিওতে তুলে ধরা মন্তব্যগুলির মতো প্রতিবেশী দেশগুলিও তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছে:

ভিডিওটির সাথের প্রতিক্রিয়া ও সমর্থনমূলক মন্তব্য

আফ্রিকার ইতিহাসে এই প্রথম কোনো জাতি তার রাষ্ট্রপতিকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসে। আমি আপনাদের জন্যে খুব গর্বিত। আপনারা সম্মানিত মানুষ। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক, লড়াই চলবে।

গণতন্ত্র মৃত; গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক। আমার বুরকিনাবে ভাইয়েরা ধন্যবাদ। ক্যামেরুনের নাগরিকরা [ক্যামেরুনের রাষ্ট্রপতি] পল বিয়ার গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণে ভুগছে, আমি বুরকিনাবের গণতন্ত্র এবং ভালবাসা, সংকল্প ও সততাপূর্ণ স্বাধীনতা কামনা করি। অভিনন্দন, আসল কাজ চলছে। আপনারা অনেক ভাল করে ঐক্যবদ্ধ থাকতে জানেন। ধন্যবাদ।

সাবাস, ঝুঁকি বুঝতে পারা বুরকিনা ফাসোর জনগণ। আপনাদের ধন্যবাদ, ইব্রাহিম ত্রাওরে তার সঠিক অবস্থানে আছেন। বুরকিনা ফাসো ও আফ্রিকার যোগ্য সন্তান। ঈশ্বর বুরকিনা ফাসো ও ইব্রাহিম ত্রাওরেকে রক্ষা করুন।

এমনকি কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের এক্স (টুইটার) থেকে শিকাম্বা নাওয়েজ ক্লদেলসহ কিছু লোক বিশ্বাস করে বুরকিনা ফাসোর রাষ্ট্রপতিকে তার দেশ পুনর্গঠনের সুযোগ  দিতে সময়সীমা ১০ ​​বছর বাড়ানো উচিত:

বুরকিনা ফাসো 🇧🇫: অন্তর্বর্তী সামরিক পাঁচ বছরের জন্যে বাড়ানো হয়েছে। এটা কি যথেষ্ট দীর্ঘ নয়!

খবরটা চমৎকার হলেও আমি কিছুটা দুঃখিত কারণ বুরকিনা ফাসোকে পথে ফিরিয়ে আনতে, শান্তি পুনরুদ্ধার করতে, সাহেলে সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করতে এবং উপ-অঞ্চলের জন্যে একটি মডেল হতে ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরের কমপক্ষে দশ বছরের দরকার।

এই উৎসাহের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো জনগণের স্পষ্ট অভিপ্রায় তারা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত এর নেতাদের বিশ্বাস করে না। এর কারণদেশের বারবার অভ্যুত্থান এবং ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক শাসনের প্রতি জনগণের সমর্থনও। জরিপের ফলাফল দেখায় বুর্কিনাবে নাগরিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ এই সামরিক শাসনকে সমর্থন করে:

Deux tiers des citoyens burkinabè soutiennent les gouvernements militaires (66%) et affirment qu'il est légitime que les forces armées prennent contrôle du pays dans le cas hypothétique où les leaders élus abusent de leur pouvoir pour leurs propres intérêts (66%).

বুরকিনাবে নাগরিকদের দুই-তৃতীয়াংশ (৬৬ শতাংশ) সামরিক সরকারকে সমর্থন করে বলে যে নির্বাচিত নেতারা তাদের নিজস্ব স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন ধারণাবশতঃ কেবল সশস্ত্র বাহিনীই দেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার জন্যে উপযুক্ত (৬৬ শতাংশ)।

উপরন্তু বুর্কিনা ফাসোর ভূ-রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত স্বদেশ নিরাপত্তায় অগ্রাধিকার দেওয়া মালি ও নাইজারের গৃহীত নীতিমালার প্রতিফলন করে। এছাড়াও, এই তিনটি সাহেল রাষ্ট্র (এইএস) জোট গঠনের জন্যে পশ্চিম আফ্রিকীয় রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক সম্প্রদায় (সিইডিইএও) ত্যাগ করেছে।

সশস্ত্র মিলিশিয়ারা নিজেদের “স্বেচ্ছাসেবক” দাবি করছে

বুর্কিনা ফাসোর নতুন রাজনৈতিক আলোচ্য  এমন এক সময়ে এসেছে যখন স্বদেশ নিরাপত্তা স্বেচ্ছাসেবকদের (ভিডিপি) অস্ত্রত্যাগের হুমকি দিচ্ছে। জিহাদি বিদ্রোহ ২০১৫ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে সন্ত্রাসবাদ ও সশস্ত্র আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করার জন্যে ভিডিপি সামরিক শাসনের সাথে যোগ দিয়েছে। উইকিপিডিয়া যেমন ব্যাখ্যা করেছে:

খনির একটি কনভয়ে ৭ নভেম্বর, ২০১৯  তারিখে জিহাদি হামলার পর বুরকিনা ফাসোর রাষ্ট্রপতি একটি বেসামরিক আত্মরক্ষা বাহিনী গঠনের আহ্বান জানান। বুর্কিনা ফাসোর সংসদ ২১ জানুয়ারি, ২০২০ স্বদেশ প্রতিরক্ষার জন্যে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতিষ্ঠার একটি আইন পাস করে। আইনটিতে বলা হয়েছে জনগণ স্বেচ্ছায় ভিডিপিতে যোগদান করতে পারে যাদের ১৪ দিনের প্রশিক্ষণের পরে অস্ত্রসহ যোগাযোগ ও দেখার সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করা হবে।

বুর্কিনা ফাসোতে সরকার তার নিরাপত্তাহীনতা অবসানের জন্যে নতুন কৌশল গ্রহণের চেষ্টা করছে বলে ভিডিপির সমর্থন জরুরি। তবে মিশনগুলিতে সশস্ত্র বাহিনীর কাছ থেকে যথেষ্ট সমর্থন না পাওয়ার কারণে মাঠ পর্যায়ে ভিডিপিদের প্রতিদিনের কার্যক্রম উৎসাহব্যঞ্জক নয়

গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ফ্রান্স২৪ অনুসারে, যুবক ও প্রাপ্তবয়স্কসহ স্বেচ্ছাসেবকদের অবশ্যই কাজের খারাপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। ফ্রান্স২৪ তুলে ধরেছে:

(…) les VDP déplorent l'absence de tenues et d'équipements de protection. Ils se partagent un nombre limité d'armes automatiques individuelles (AK-47), dont la qualité n'est pas toujours bonne. Et alors que leur mission doit les amener à couvrir un territoire plus large, ils manquent de véhicules et de carburant.

(…) ভিডিপিরা সুরক্ষামূলক পোশাক ও সরঞ্জামের অভাবের অভিযোগ করেছে। তাদের প্রায়শই নিম্নমানের সীমিত সংখ্যক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র (একে-৪৭) ভাগাভাগি করে নিতে হয়। এছাড়াও মিশনে অনেক বিস্তৃত অঞ্চল কভার করার জন্যে তাদের যানবাহন ও জ্বালানীর অভাব রয়েছে।

তাছাড়া ভিডিপিরা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জিহাদি হামলার প্রাথমিক লক্ষ্যবস্তু

দীর্ঘ মেয়াদে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেসামরিক এই লোকদের উপর অনেক বেশি নির্ভর করা ইব্রাহিম ত্রাওরের জন্যে ভিডিপি’র বিচ্ছিন্নতা ও অভিযোগ একটি কঠিন ধাক্কা হতে পারে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .