জুলাই মাসে রুয়ান্ডাবাসী নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্যে নির্বাচনে অংশ নেবে। রুয়ান্ডার বর্তমান রাজনৈতিক দৃশ্যপট বুঝতে সাহায্য করার জন্যে এই নিবন্ধটি আপনাকে আসন্ন নির্বাচন ও রুয়ান্ডার সংবাদ সম্পর্কে অবগত রাখতে তথ্যপূর্ণ উৎসগুলির একটি সংকলিত সংগ্রহ প্রদান করে।
আফ্রিকীয় বিশাল হ্রদ অঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকা যেখানে মিলেছে সেই মধ্য আফ্রিকার গ্রেট রিফ্ট উপত্যকায় অবস্থিত রুয়ান্ডার জনসংখ্যা ১.৪ কোটিরও বেশি। রুয়ান্ডার ৯৯ শতাংশের বেশি কিনিয়ারওয়ান্ডায় কথা বললেও দেশটিতে অন্য তিনটি ভাষা: ফরাসি, ইংরেজি ও সোয়াহিলি সরকারি হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। রুয়ান্ডায় গণমাধ্যম প্রকাশনা ও সম্প্রচার প্রধানত ইংরেজি ও কিনিয়ারওয়ান্ডাতে হয়।
বিভিন্ন সংবাদপত্র, টেলিভিশন নেটওয়ার্ক, রেডিও কেন্দ্র ও সামাজিক গণমাধ্যমে জনগণের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রচার করা হয়। এই গণমাধ্যম সংস্থাগুলির তত্ত্বাবধান করে গণমাধ্যম উচ্চ পর্ষদ নামের একটি স্ব-নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
নিউ টাইমস দেশের প্রাচীন ও বৃহত্তম ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্র। ইতিমধ্যে, আইজিআইএইচই এবং উমুসেকে, যা সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল নিউজ সাইট যা কিনিয়ারওয়ান্ডায় কভারেজ প্রদান করে, উল্লেখযোগ্য প্রাধান্য রাখে।
ফেসবুকে ৩,৯৬,০০০-এর বেশি অনুসরণকারী নিয়ে আইজিআইএইচই, ডিজিটাল দৃশ্যপটের নেতৃত্বে, পরবর্তীতে থাকা উমুসেকে ও নিউ টাইমসের অনুসরণকারী যথাক্রমে ১,২১,১০০ ও ৭০,০০০। এক্সে (আগের টুইটার) ৫,৯৬,৭০০ অনুসরণকারী নিয়ে আইজিআইএইচই গর্ব করে, ৪,৮২,৮০০ অনুসরণকারী নিয়ে তারপরে নিউ টাইমস এবং ৪২,০০০ অনুসরণকারী নিয়ে রয়েছে উমুসেকে। তাদের নিজ নিজ ইউটিউব চ্যানেলে এই সংবাদ সাইটগুলি ৪,৭৫,০০০, ৭০,১০০ ও ৮৫,০০০ অনুসারী সংগ্রহ করেছে৷ ইনস্টাগ্রামে আইজিআইএইচই এর ৪,২৩,০০০-রও বেশি অনুসরণকারী, যেখানে উমুসেকে ও নিউ টাইমসের রয়েছে যথাক্রমে ২,৫০০ ও ৭৮.৪০০ অনুসারী।
ছাপা ও অনলাইন সংবাদপত্র নিউ টাইমস ক্ষমতাসীন দলের প্রতি “খুব বেশি অনুগত” ও খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার জন্যে সমালোচিত। অন্যান্য ব্যক্তিগত মালিকানাধীন অনলাইন ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্রের মধ্যে রয়েছে রুয়ান্ডান, কেটি প্রেস, রুয়ান্ডা টুডে ও জাম্বো নিউজ।
রুয়ান্ডা সম্প্রচার সংস্থা (আরবিএ) পরিচালিত আরটিভি রুয়ান্ডার একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টিভি কেন্দ্র। এটি বেশিরভাগ তথ্য কিনিয়ারওয়ান্ডাতে সম্প্রচার করে। আরটিভি রুয়ান্ডার জনসাধারণের কাছে ইংরেজি, রুয়ান্ডা ও কিনিয়ারওয়ান্দা এই তিনটি ভাষায় দৈনিক সংবাদ ও বিনোদন অনুষ্ঠান প্রচার করে। আরটিভি সক্রিয়ভাবে ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও এক্সের মাধ্যমে তার দর্শকদের সাথে জড়িত যেখানে তার যথাক্রমে ৫,৫২,০০০, ৩,০৭,০০০ এবং ১,৪৪,৩০০ অনুসারী রয়েছে। রুয়ান্ডায় মোট ১২টি টিভি কেন্দ্র রয়েছে যার বেশিরভাগই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। ব্যক্তিগত কেন্দ্রের মধ্যে টিভি ওয়ান, ফ্ল্যাশ টিভি, বিগ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (বিটিএন) টিভি, অথেনটিক টিভি, ইসাঙ্গো স্টার টিভি, টিভি ১০, ভিক্টোরি টিভি, প্রাইম টিভি, বুরিওহে টিভি, ইসিবো টিভি ও প্যাসিস টিভি রয়েছে।
এফএম ১০০.৭-এ কিনিয়ারওয়ান্দা, ফরাসি, কিসোয়ালি ও ইংরেজিতে সম্প্রচারকারী আরবিএ’র সহায়ক সংস্থা রেডিও রুয়ান্ডা রুয়ান্ডার অন্যান্য গণমাধ্যম সংস্থাগুলির সাথে একটি বৈচিত্র্যময় ভাষাগত সম্প্রচার করে যা মূলত ইংরেজি ও কিনয়ারওয়ান্দায় প্রচারিত। সিটি রেডিও, ইসাঙ্গো স্টার, কে-এফএম, হুগুকা রেডিও, রেডিও ওয়ান, অথেনটিক রেডিও, কনসিল প্রোটেস্ট্যান্ট দু রুয়ান্ডা, ভয়েস অব আফ্রিকা, ভয়েস অ্ব হোপ, কিস এফএম, রয়্যালসহ বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন রেডিওকেন্দ্র রুয়ান্ডার গণমাধ্যম দৃশ্যপটে অবদান রাখে এফএম, হট এফএম, ভয়েস অফ আমেরিকা, ফাইন এফএম, ভিশন রেডিও, এডিইপিআর রেডিও, সানা রেডিও এবং আরএফআই। বেশ কিছু ব্যক্তিগত মালিকানাধীন রেডিওকেন্দ্র মাঝে মাঝে সরকারি নীতির সমালোচনামূলক মতামত প্রকাশ করে।
বৈশ্বিক মঞ্চে ভয়েস অব আমেরিকা, কথোপকথন, ইন্ডিপেনডেন্ট, নিউজ নাউ, ওকেআফ্রিকা, আল জাজিরা, ফ্রান্স ২৪, রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল, গার্ডিয়ান, আফ্রিকানিউজ এবং বিবিসি আফ্রিকাসহ বেশ কয়েকটি ফরাসি ও ইংরেজি-ভাষী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংস্থায় রুয়ান্ডার সংবাদ কভারেজ পায়।
রুয়ান্ডায় ইন্টারনেটের প্রবেশ ২০২২ সালের ২৩.৩ শতাংশ থেকে খুব একটা না বেড়ে ডেটারিপোর্টালের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুসারে ৩০.৫ শতাংশে রয়ে গেছে, যার মানে ২০২৩ সালের শুরুতে প্রায় ৬৯.৫ শতাংশ জনগণ অফলাইনে ছিল। মোটের মাত্র ৫.৭ শতাংশ জনসংখ্যা সক্রিয়ভাবে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করে, সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত মঞ্চ ফেসবুকে (৬,৪৪,৬০০ ব্যবহারকারী) এবং লিঙ্কডইন (২,৯০,০০০ ব্যবহারকারী) । তাদের পরেই রয়েছে ইনস্টাগ্রাম (২,৬৪,৭০০), টুইটার (২,১৮,৪০০), এবং ফেসবুক মেসেঞ্জার (১,০১,৩০০)।
রুয়ান্ডায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অবস্থা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির ক্রমাগত মনোযোগ আকর্ষণ করেছে৷ বর্তমান রাষ্ট্রপতি পল কাগামে ১৯৯৪ সাল থেকে দেশ শাসন করেছেন এবং এই বছর জুলাইয়ের নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচন করতে চান। স্বাধীনতা_সদনের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, রাষ্ট্রপতি কাগামের শাসন স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখলেও এটি ব্যাপক নজরদারি, ভয়ভীতি, নির্বিচারে আটক, নির্যাতন ও নির্বাসিত ভিন্নমতাবলম্বীদের উপস্থাপন বা সন্দেহভাজন গুপ্তহত্যার মাধ্যমে রাজনৈতিক ভিন্নমতকেও দমন করেছে। ফলে প্রতিবেদনটি রুয়ান্ডাকে “মুক্ত নয়” শ্রেণীবদ্ধ করে ১০০ এর মধ্যে ২৩ নম্বর দিয়েছে।
সীমান্তবিহীন প্রতিবেদক ১৮০টি দেশের মধ্যে রুয়ান্ডাকে ১৩১তম স্থান দিয়েছে ২০২৩ সালে, যা আগের বছরের ১৩৬তম স্থান থেকে উন্নতি দেখায়। তা সত্ত্বেও রুয়ান্ডার গণমাধ্যম দৃশ্যপটকে প্রায়ই আফ্রিকার দরিদ্রতমদের অন্যতম বিবেচনা করা হয়। সীমান্তবিহীন প্রতিবেদক রুয়ান্ডার নিম্ন র্যাঙ্কিংকে গণমাধ্যমের মুখোমুখি কর্তৃত্ববাদ ও সেন্সরের জন্যে দায়ী করে, যেখানে সাংবাদিকরা সরকারের প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার এবং দেশপ্রেমের কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাধ্য হয়।
১৯৯৪ সালের গণহত্যার স্মৃতির উল্লেখ ও ঘৃণামূলক গণমাধ্যম ব্যবহারের মাধ্যমে ভিন্নমত ও সমালোচনা দমন করা হয়। গণহত্যার আগে রুয়ান্ডায় প্রভাবশালী দলগুলো রেডিও তেলিভিশিওঁ লিব্রে দেস মিল কোলিন ( আরটিএলএম) প্রতিষ্ঠা করে, যা তুতসি-বিরোধী প্রচার প্রচারের মাধ্যমে একটি অশুভ ভূমিকা পালন করেছিল, গণহত্যার প্রায় ১০ শতাংশ সহিংসতায় অবদান রেখেছে।
তথ্য প্রচারের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে গিয়ে রুয়ান্ডার সরকার, মাঝে মাঝে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংস্থাগুলিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। উদাহরণস্বরূপ, সরকার গণহত্যার উপর একটি তথ্যচিত্রের কারণে বিবিসি সম্প্রচার নিষিদ্ধ করেছিল।
এই পদক্ষেপগুলি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ ও বৈশ্বিক অন্তর্দৃষ্টিতে প্রবেশাধিকার সীমিত করে তথ্যের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ও তার রাজনৈতিক এজেন্ডার সাথে মিল রেখে বর্ণনা সাজাতে সরকারের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।