
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি প্রার্থীরা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে একটি টেলিভিশন বিতর্কে মুখোমুখি। এনএসটি অনলাইনের ইউটিউব ভিডিও থেকে গৃহীত পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।
ইন্দোনেশিয়ার প্রার্থীদের ১৪ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের প্রাক্কালে মানবাধিকার উদ্বেগ সমাধানের আহ্বান জানানো হয়েছে৷
ভোট দানে যোগ্য প্রায় ২০.৫ কোটি জনগণ দেশটির পরবর্তী রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রতিনিধি কক্ষের সদস্য ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের বেছে নেবে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি জোকো “জোকোভি” উইদোদাকে সাংবিধানিকভাবে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচন করতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
দেশটির মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি জোরদার করতে নির্বাচনী প্রচারণা জোকোভির কর্মক্ষমতাকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে। বিশেষ করে ১৯৯৮ সালে বিদ্রোহে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া তিন দশক দেশ শাসন করা প্রাক্তন জেনারেল সুহার্তোর শাসনামলে ছিল নিরাপত্তা বাহিনী সংঘটিত নৃশংসতার দিকে নজর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তার ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির একটি অংশ এবং ২০১৯ সালে তার পুনঃনির্বাচনের সময় পুনরাবৃত্তি হয়েছিল।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখ করেছে অবশেষে ২০২৩ সালে জোকোভি অতীতে সরকারি বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন স্বীকার করলেও তিনি জবাবদিহিতা অনুসরণ করতে ব্যর্থ হন।
এই অগ্রগতি সত্ত্বেও ১২টি স্থূল মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা এবং সত্য, ন্যায়বিচার ও প্রতিকার প্রদানের জন্যে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট পথচিত্র নেই।
গোষ্ঠীটি জোকোভির মানবাধিকার উত্তরাধিকারের সংক্ষিপ্তসারও তুলে ধরেছে:
সঙ্কুচিত হতে থাকা নাগরিক স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের মতপ্রকাশের অধিকারের নিশ্চিয়তা প্রদানে ইন্দোনেশিয়ার ব্যর্থতা অব্যহত। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্যে দায়ী সন্দেহভাজন নিরাপত্তা বাহিনীর দায়মুক্তির অবসান ঘটাতে এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে স্থূল মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিকার প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে।
মানবাধিকার_পর্যবেক্ষক তার সর্বশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে পরবর্তী সরকার “অত্যন্ত সমস্যাযুক্ত নতুন ফৌজদারি বিধি, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অব্যাহত হয়রানি ও বৈষম্য এবং নারীদের বিরুদ্ধে গভীরভাবে অবমাননাসহ বিভিন্ন অধিকারের সমস্যাগুলির মুখোমুখি হবে।”
President @jokowi‘s term ends with a whimper on rights, making no real efforts to address discrimination and abuses against marginalized groups in Indonesia https://t.co/v4cH6QYyFM
— Andreas Harsono (@andreasharsono) January 11, 2024
ইন্দোনেশিয়ায় প্রান্তিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বৈষম্য ও দুর্ব্যবহার মোকাবেলার বাস্তব কোনো চেষ্টা না করেই অধিকারের হুঙ্কার দিয়ে রাষ্ট্রপতি @জোকোভির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে
মানবাধিকার_পর্যবেক্ষক উল্লিখিত নতুন ফৌজদারি বিধিটি ২০২৬ সালে কার্যকর হবে৷ আইনটির উদ্দেশ্যে ডাচ উপনিবেশকারীদের প্রবর্তিত ফৌজদারি বিধিটিকে “উপনিবেশমুক্ত” করা হলেও এটি অধিকার দমন করতে ব্যবহার করার মতো বিধানগুলিও বজায় রেখেছে৷ উদাহরণস্বরূপ, নতুন বিধি কর্তৃপক্ষকে রাষ্ট্রপতি, উপ- রাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সম্মান ও মর্যাদা অবমাননাকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার ক্ষমতা প্রদান করে। পদজাদজারান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের আদনান ইয়াজার জুলফিকার বাকস্বাধীনতার উপর এর গুরুতর প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছেন:
ইন্টারনেটের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়ার পরিবর্তে এই ধারাগুলি ডিজিটাল ক্ষেত্রের প্রতিটি কোণকে সরকারের প্রতি আকাঙ্ক্ষা বা সমালোচনা প্রকাশের জন্যে অনিরাপদ করে তুলেছে, কারণ যে কেউ হঠাৎ করে যেকোনো সময় ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হতে পারে।
জনস্বার্থ আইনজীবী শালেহ আল গিফারি তুলে ধরেছেন বেশ কয়েকটি ধারা আইনটিকে “দমনের হাতিয়ারে” পরিণত করতে পারে। লেখক দাঙ্গা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী মিথ্যা বর্ণনা ছড়ানোকে অপরাধী করা, বিশেষত “ভুয়া খবর” সম্পর্কিত ধারাগুলি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
খবরটি ভুয়া নাকি সত্য কে সিদ্ধান্ত নেবে? একটি খবর দাঙ্গা উসকে দিতে পারে কিনা তা কে পরিমাপ করবে? একজন দাঙ্গাবাজের কাছ থেকে একতরফা সাক্ষ্য দিয়ে কি দোষী সাব্যস্ত করা কি সম্ভব?
বিচারিক প্রক্রিয়ার সশস্ত্রীকরণের সাথে সম্পর্কিত দেশের ইলেক্ট্রনিক ও তথ্য লেনদেন (ইআইটি) আইন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সংশোধন করা হলেও মানহানির অপরাধমূলক বিধান বজায় রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সমালোচকদের হয়রানি ও সক্রিয় কর্মীদের আটক করতে ইআইটি আইন ব্যবহার করছে। উদাহরণস্বরূপ সক্রিয় কর্মী ফাতিয়া মৌলিদিয়ান্তি ও হারিস আজহারের বিরুদ্ধে বড় আকারের খনির কর্মকর্তাদের ভূমিকা উল্লেখ করা একটি ভিডিওর জন্যে মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে। দুজনকে ৮ জানুয়ারি খালাস দেওয়া হলেও প্রসিকিউটররা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা বলেছে। একটি সম্পাদকীয়তে টিইএমপিও মিডিয়া মামলার আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে:
এই মামলাটি আদালতে নিয়ে যাওয়ার কোনো জরুরি বা জাতীয় স্বার্থ না থাকলেও আপিলতি একক উদ্যোগ। আপিল করার জন্যে প্রসিকিউটরদের পদক্ষেপ, তারা যে শুধু ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজ করছে এই ধারণাকে শক্তিশালী করবে।
সীমান্তবিহীন_প্রতিবেদক প্রার্থীদের মানহানি আইনের অপব্যবহাওসহ গণমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে অপমানজনক কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেছে। এছাড়াও এটি সরকারকে পাপুয়া প্রদেশের উপর আরোপিত তথ্য বিধিনিষেধ তুলে নিতে বলেছে। আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সংক্ষুদ্ধ পাপুয়া ভারী সামরিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সাংবাদিকদের সেই প্রদেশটি কভার করার অনুমতি দেওয়া হয় না।
এদিকে, নাগরিক সমাজের দলগুলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নৌকা তাড়ানো বন্ধ করার জন্যে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছে। আচেহ প্রদেশে স্থানীয়রা ২৭ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উপর সহিংস হামলা চালায়। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নির্যাতিত সংখ্যালঘু আশ্রয়দাতা বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশ এবং মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো স্থানীয় সম্প্রদায়ের দেশে পালিয়ে গেছে। তবে নির্বাচনী প্রচারণার সময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে একটি ভুল তথ্য প্রচারণার লক্ষ্যবস্তু করা হয়। সুশীল সমাজের গোষ্ঠীলি কর্তৃপক্ষ ও প্রার্থীদের এই বিষয়টি দেখতে বলেছে:
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মতো দুর্বল গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বর্ণনার বিস্তার জটিলতার একটি নতুন স্তর যুক্ত করেছে। এই বিভ্রান্তিমূলক প্রচেষ্টাগুলি নির্বাচনী ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়, তারা ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে শরণার্থীদের অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষার বৃহত্তর ইস্যুকেও ছেদ করে।
মানবাধিকার প্রতিবেদন মানদণ্ডের ফাউন্ডেশন তার দায়িত্ব হিসেবে বলেছে নতুন সরকারকে তার ক্ষমতায় থাকা প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে “নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবেলা, আদিবাসী সম্প্রদায়কে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং প্রতিবন্ধী অধিকারের পরিপূর্ণতা নিশ্চিত করার” উপর মনোযোগ দিতে হবে।