লিখেছেন লিসা অ্যালেন-আগোস্টিনি
ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে প্রতিটি অপরাধ বিরোধী মিছিল ও মানবাধিকার দিবসের সমাবেশে আমাদের প্রতিবাদের ইতিহাস রচিত হবে। আমরা ১৯০৩ সালে জল দাঙ্গা, ১৯৩৫ সালে টিউবাল উরিয়া “বাজ” বাটলারের ক্ষুধা মিছিল এবং ১৯৭০ সালে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব করেছি। উন্নত জীবনযাত্রা, ভাল মজুরি, ভাল জীবনের জন্যে নির্দিষ্ট কোনো সোমবার আমরা টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করি, সরকারি দপ্তরে পিকেট করি বা হেডলাইট জ্বালিয়ে আমাদের গাড়ি চালাই।
এই কারণেই নরহত্যা ও সহিংস অপরাধের বিরুদ্ধে আরেকটি মিছিলের প্রতি কিছু ত্রিনবাগোনীয়র “কী ব্যাপার?” প্রতিক্রিয়া পরিহাসের মতো শোনায়।
আয়োজক গোষ্ঠী ত্রিনিদাদ ও টোবাগো পুলিশ বাহিনীর তথ্যমতে এই ছোট ক্যারিবীয় জাতিতে ২০২২ সালে ৫৯৯টি খুনের একটি ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান থেকে নাম নেওয়া প্রকল্প ৬০০। আমরা ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হয়তো সেই সংখ্যাটি ভালভাবেই ছাড়িয়ে যাবো। এই বিশেষ পদযাত্রাটি নিছক শঙ্কার প্রতিবাদ নয়; এটি একটি শোকের প্রকাশ। এই বছর সহিংসতার শিকার হয়ে আমাদের অনেক মানুষ, নাগরিক ও বাসিন্দা মারা গেছে। আমাদের ২০২৩-এর জাগরণে প্রবাহিত রক্তের নদীতে পা রেখে ২০২৪-এ অসাড়ভাবে হোঁচট খেতে আরেকটি মিছিলের দরকারটাই বা কী?
ক্যারিবীয় একটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক কেন্দ্র স্বাধীন প্রজাতন্ত্র ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর জনসংখ্যা ১২ লক্ষ। গ্যাস ও তেলের রাজস্ব চালিত এখনো একটি উন্নত বিবেচিত হয় সমৃদ্ধ দেশটির বিশ্বব্যাংকের হিসেবে মাথাপিছু জিডিপি ১৮,২২২ ডলার (প্রায় ২০ লক্ষ টাকা)।
গ্যাস ও তেলের রাজস্ব তো আমার রাস্তায় নেমে আসে না। আমাদের রাস্তা এতোটাই খানাখন্দে পূর্ণ যে গাড়ি চালনা প্রায় অসম্ভব। আমরা সপ্তাহে দুবার পাইপ দিয়ে পানি পাই। ট্রাক-বাহিত জল সরবরাহের মাধ্যমে বাকিটা সম্পূরক হওয়ার কথা থাকলেও জলের ট্রাকগুলি খাড়া ও বাঁকানো রাস্তায় বিচরণ করতে পছন্দ করে না, আর আমার অপরিকল্পিত, পাহাড়ি, শ্রমিক-শ্রেণীর সম্প্রদায়ের বন্দুক সহিংসতার ভয়ঙ্কর খ্যাতির কথা উল্লেখ না করাই ভালো। সরকারি কাজের কর্মসূচিগুলি এলাকার সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থান। মেয়েরা এখানে স্কুল শেষ করলেও ছেলেরা হয়তো করে না। এমনকি বৈধ অর্থনীতিতে চাকরির আবেদনের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরির আবেদনপত্রে আপনি হয়তো এই ঠিকানা দিতে চান না। ঝরে পড়া সকল ছেলেদের সকলেই না হলেও হয়তো অনেকেই শেষ পর্যন্ত গ্রাসমান ফুলে-ফেঁপে ওঠা মাদকের অবৈধ অর্থনীতিতে যুক্ত হয়।
এখানে আসার ১২ বছরে আমার আশেপাশের কিছু ছেলে ও পুরুষ অবৈধ মাদক ব্যবসার সাথে হয়তো স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসা বন্দুকধারী গ্যাংগুলির নৃশংস ব্যবসায়িক চর্চার শিকার হয়েছে। আমার সম্প্রদায় বহিরাগত না হলেও ক্রমেই আমার মতো শ্রমজীবী সম্প্রদায়গুলি অসম্ভব পছন্দের একই জোয়ারে ডুবে যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ত্রিনিদাদের চাগুয়ানাসের একজন প্রিন্টার ইসা মোহাম্মদ হত্যা ও সহিংস অপরাধের বিরুদ্ধে জনসাধারণের মিছিল করার ধারণা পাওয়ার পরপরই আমি নভেম্বরে প্রকল্প ৬০০ কমিটিতে যোগদান করি। তার চিন্তা পরিচালনের জন্যে তিনি ও তার স্ত্রী কারেন কয়েক ডজন লোককে জড়ো করেন। তাদের একজন আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু কার্ক ল্যাংটন, ২০০৫ সালে যিনি আরেকটি জাতীয় হত্যা বিরোধী মিছিল পরিচালনা করেন। সেই বছর ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে ৩৮৬টি খুনের ঘটনা ঘটে। তর্কাতীতভাবেই খুনের বিরুদ্ধে আরেকটি মিছিলে কেউ বিরক্ত হলে সেটা কার্কেরই হওয়া উচিত। কিন্তু তিনিই সবকিছু করছেন।
মানবাধিকার দিবস হওয়ায় আমরা এটি উপেক্ষা করতে পারি না। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা অনুসারে আমাদের জীবন, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে অপরাধ আমাদের এই অধিকারগুলি অস্বীকার করছে।
অনেকেই আমার থেকে ভালো রাস্তা, ভালো ঠিকানা ও এলাকায় অর্গল-বেষ্টিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসে বাস করে। বস্তি এলাকার বাইরে দেশের বাকি অংশে বন্দুক সহিংসতা দেখা গেছে। আর জনপ্রিয় পানশালাগুলির বাইরে হত্যা করা গ্যাং সদস্যরা নিষ্ঠুরভাবে পুলিশের ডাকা “কীটপতঙ্গ” বা “তেলাপোকা” নয়, বরং বৈধ অর্থনীতির মানুষ। নৃশংস ও মারাত্মক গৃহস্থালী আক্রমণ হচ্ছে। ব্যক্তির নিরাপত্তা? আর স্বাধীনতা? সেটা বরং বাড়ি থেকে বের হয়ে ভয়ে কাঁপতে থাকার স্বাধীনতা। একটি বিপথগামী বুলেট আপনাকে খুঁজে পেলে আপনার জীবন মূল্যহীন। সামগ্রিকভাবে সহিংসতা মহামারীর মতোই। বয়স্করা ব্যাংক থেকে বেরোনোর পর পিটিয়ে ডাকাতি করা হয়েছে, যুবতীকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে, তাদের পরিত্যক্ত লাশ পচে গেছে। স্কুলছাত্ররা পরস্পরকে হত্যা করছে। পরিস্থিতি বর্ণনাতীত খারাপ।
আমার এবং এমন আরো অনেক সম্প্রদায়ে্র মধ্যে পুলিশের প্রতি আস্থা কম। এটি বোঝার জন্যে একজনকে কেবল বিচারবহির্ভূত পুলিশি হত্যা ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শিরোনাম পড়তে হবে। যে বিষয়টি শিরোনাম করে না তা হলো, পুলিশের নিত্যদিনের ক্ষমতার অপব্যবহার যা নীতিগতভাবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর আমাদের রাস্তাগুলিতে কোনো শ্রমিক-শ্রেণির ছেলে বা পুরুষকে আটকে রাখে।
আমাদের আঘাত সম্পর্কে কথা বললে কি রক্তপাত বাড়বে? আমরা এই বছর পুলিশ, গ্যাং, ক্ষুব্ধ আত্মীয়, ঈর্ষান্বিত অংশীদারদের হাতে নিহতদের জন্যে দুঃখ প্রকাশ করলে কি সহিংস অপরাধ আরো বাড়বে? আমি মিছিলে পতাকা নিয়ে গেলে কি অপরাধ আরো বাড়বে? আমাদের বহন করা পতাকাগুলি্তে একটি সাদা জমিনে একটি কালো তির্যক ডোরা থাকবে। ত্রিনিদাদ ও টোবাগো জাতীয় পতাকার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও এগুলিতে কোন লাল নেই। লাল রক্ত বেরিয়ে গেছে। আমার কল্পনা এই নাটকীয় পতাকার একটি বহনকারী ৬০০ স্বেচ্ছাসেবকের দেশের রাজধানী পোর্ট অফ স্পেনের একটি বিশাল সবুজ স্থান কুইন্স পার্ক সাভানাকে ঘিরে রাখা বেশ দৃশ্যমান হবে। আমরা পরে সমাবেশ করে এই মহামারীটির আরো ভাল সমাধানের জন্যে কথা বলার আহ্বান জানাবো।
আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নই। আমার নিজের সক্রিয়তা মূলত নারী আন্দোলন, এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়, শিশুদের অধিকার ও শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে। প্রতি বছর এই অনেক লোককে হারানো অগ্রহণযোগ্য ও অচিন্তনীয় বলে আমি এর আগে কখনো এধরনের কিছুতে অংশ না নিলেও আমি এখন এটা করতে অনুপ্রাণিত হয়েছি। অধিকারের কারণে কমিটির অন্যান্য সদস্যদের রাজনৈতিক আনুগত্য থাকতেই পারে। তবে তা আমাদের দলগত আলোচনায় আসে না। এই পদযাত্রা ক্ষমতাসীন, বিরোধী বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল নিয়ে নয়। এটি মানুষ সম্পর্কিত।
নিঃসন্দেহে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সরকারের অপরাধ মোকাবেলার পরিকল্পনা রয়েছে। এপ্রিল মাসে পোর্ট অব স্পেনে একটি আঞ্চলিক শীর্ষ সম্মেলনের পর ত্রিনিদাদ ও টোবাগো বন্দুক ও গ্যাং সহিংসতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্যারিবীয় সম্প্রদায়ের (ক্যারিকম) ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে। সরকার তার ২০২৪ সালের জাতীয় বাজেটে জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে শত কোটি ডলারের ব্যয় এবং তিনগুণেরও বেশি পুলিশ নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে গণতন্ত্রে নাগরিকদের নিজেদের পক্ষে কথা বলা ও এই সমাধানগুলিতে অংশগ্রহণ করা কর্তব্য। এটা শুধু অধিকার নয়; একটা দায়িত্ব।