
ভারতের নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলনে উপস্থিত কিছু জি২০ সদস্য। ফ্লিকার থেকে সরকারজেডএ’র ছবি (সৃজনী সাধারণ অপরিবর্তনীয় ৪.০ অনুমতি)
শনিবার ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের সভাপতিত্বে জি২০ আফ্রিকীয় ইউনিয়নকে (এইউ) তার নতুন স্থায়ী সদস্য হিসেবে স্বাগত জানানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।
ডয়েচেভেলে সংবাদ দিল্লির ব্যুরো প্রধান অমৃতা চিমা যেমন তুলে ধরেছেন, সকল জি২০ দেশ জি২০’র মধ্যে উদীয়মান ও প্রতিষ্ঠিত উভয় অর্থনীতির প্রতিফলনের গুরুত্বের উপর জোর দিতে গিয়ে সর্বসম্মতভাবে প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর ভারতের নেতৃত্বাধীন এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছে। এইউ’র অন্তর্ভুক্তি জি২০’কে “জি২০ প্লাস ওয়ান”-এ রূপান্তরিত করেছে এবং এর সদস্যপদ ৫৫টি দেশ সমর্থিত।
এইউ’র সভাপতি আজালি আসুমানি জি২০-তে এইউ’র অন্তর্ভূক্তির অনুমোদন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
আসুমানি বলেছেন এইউ’র অন্তর্ভুক্তি জি২০’র মধ্যে বিশ্বব্যাপী সংখ্যাগরিষ্ঠদের কণ্ঠস্বরকে বাড়িয়ে তুলবে, আফ্রিকা মহাদেশকে বিশ্ব মঞ্চে তার এজেন্ডাগুলি এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেবে। আফ্রিকার অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলি মেনে নিয়ে তিনি এসব সমস্যা মোকাবেলা করতে অন্যান্য জি২০ দেশের সাথে বহুপাক্ষিকতা ও সহযোগিতার গুরুত্বের উপর জোর দেন।
জি২০ বা ২০ এর গোষ্ঠী বিশ্বের সবচেয়ে ধনী অর্থনীতির প্রতিনিধিত্বকারী একটি আন্তঃসরকারি ফোরাম। প্রাথমিকভাবে এই গোষ্ঠীটি ১৯টি সার্বভৌম দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নিয়ে গঠিত। সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত এই গোষ্ঠীর একমাত্র আফ্রিকীয় দেশ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
আফ্রিকীয় ইউনিয়নের ৫৫-সদস্যের জিডিপি ৩ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি।
এপি সংবাদের এই নিবন্ধে আফ্রিকীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রধানের মুখপাত্র এবা কালোন্দো বলেছেন এইউ সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে পূর্ণ সদস্যতার জন্যে অক্লান্তভাবে চেষ্টা করেছে। এই বছরের জুনে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জি২০ নেতাদের কাছে চিঠি লিখে সেপ্টেম্বরের শীর্ষ সম্মেলনে আফ্রিকীয় ইউনিয়নকে সদস্যপদ প্রদানের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেন।
এই গুরুত্বপূর্ণ খবরের প্রতিক্রিয়ায় ড. আয়োদে ওলাতুনবোসুন-আলাকিজা (ভারতের সরকারি সম্প্রচার চ্যানেল) ভারতীয় দূরদর্শনের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে আফ্রিকীয় কণ্ঠস্বরগুলিকে সামনে এনে নীরবতা ভঙ্গের তাৎপর্যের উপর জোর দিয়ে বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তিতে গভীর আবেগ ও আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, “বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে ভূমিকম্পের মতো পরিবর্তন ঘটছে।”
জি২০’র এই সিদ্ধান্তটিকে অনেক আফ্রিকীয় আফ্রিকায় তার প্রভাব জাহিরের একটি সুযোগ হিসেবে উদযাপন করলেও প্রকৃত প্রভাব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত ভিন্ন ভিন্ন। কিছু বিশেষজ্ঞ ইতিবাচক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সহযোগিতার প্রত্যাশা করলেও আফ্রিকার অনন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আফ্রিকীয় ইউনয়ন ও জি২০’র কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অন্যরা সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিবেদন অনুসারে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করে জি২০’র অংশ হওয়া অন্যান্য প্রধান অর্থনীতির সঙ্গে আফ্রিকাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও সহযোগিতার সুযোগ দেবে। তবে সংশয়বাদী অন্যরা এইউ’র আসনটিকে মূর্ত নয় বরং প্রতীকী হিসেবেই দেখছে। তাদের যুক্তি জি২০’র সামরিক অভ্যুত্থান ও অনিয়মিত নির্বাচনের মতো আফ্রিকার গণতান্ত্রিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্তকারী সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জগুলির প্রতি কার্যকরভাবে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতার অভাব রয়েছে এবং তারা মনে করে এইউ’র সদস্যপদ ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা পরিচালিত।
সিজিটিএন আফ্রিকার সাথে একটি সাক্ষাৎকারে জোহান্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আফ্রিকা-চীনা পাঠ কেন্দ্রের ড. সিজো এনকালা এইউ’র গঠন জি২০’র মধ্যে এর কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারা সম্পর্কে তার মতামত ভাগাভাগি করেছেন। ড. সিজোর মতে জি২০’তে আফ্রিকীয় সদস্যপদ নিয়ে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অতি-জাতীয় সংস্থাগুলির বিপরীত এইউ’র আন্তঃসরকারি প্রকৃতির মধ্যে নিহিত। আফ্রিকীয় সদস্য রাষ্ট্র নাইজেরিয়ার মতো বৃহৎ দেশ থেকে শুরু করে এসওয়াতিনির (সোয়াজিল্যান্ড) মতো ছোট দেশগুলির বৈচিত্র্যপূর্ণ স্বার্থ জি২০ প্রশ্নে ঐকমত্য-নির্মাণ কষ্টকর। তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের মতো উদাহরণ তুলে ধরেছেন যেখানে আফ্রিকীয় দেশগুলি ঐক্যবদ্ধ হতে লড়াই করছে। তিনি উপসংহার টেনেছেন:
জি২০ সদস্যপদ পরিভ্রমণ করে তাদের একটি সাধারণ অবস্থানে পৌঁছা্তে দেখা একটা আকর্ষণীয় বিষয় হবে। সম্ভবত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আগে কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে আফ্রিকীয় ইউনিয়ন সদস্য দেশগুলির সাথে পরামর্শের একটি প্রক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
আমানি আফ্রিকার একটি নিবন্ধ উল্লেখ করেছে জি২০’তে আফ্রিকীয় প্রতিনিধিত্বের অভাবে আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার মতো অদক্ষ, ধীরগতির ও ঋণদাতা দেশগুলির প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিবন্ধটি আরো বলেছে জি২০’তে এইউ’র সদস্যপদ আফ্রিকাকে অবৈধ আর্থিক প্রবাহ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো উদ্বেগ মোকাবেলার একটি মঞ্চ প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক নীতি-নির্ধারণে জাতিসংঘের ক্ষীয়মাণ ভূমিকার ক্ষতিপূরণ করবে। আরো তুলে ধরা হয়েছে এইউ’র মাধ্যমে জি২০ সদস্য হিসেবে আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তি পরোক্ষ থেকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটি সক্রিয় অবদানকারীর মর্যাদায় স্থানান্তরিত করবে, যা আগেই উল্লিখিত ভারতীয় দূরদর্শনের সাথে তার সাক্ষাৎকারে ড. আয়োদে ওলাতুনবোসুন-আলাকিজা তার আলোচনায় কিছুটা নিশ্চিত করেছিলেন।
এইউ জি২০’র (এখন জি২০ প্লাস ওয়ান) নতুন সদস্য হিসেবে তার ভূমিকা গ্রহণ করেছে বলে এই অন্তর্ভুক্তিটি বৈশ্বিক মঞ্চে মহাদেশটির জন্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনে অনুদিত হবে তা সময়ই প্রকাশ করবে।