জাম্বিয়ার গণমাধ্যম দৃশ্যপটে বিচরণ

রাষ্ট্রপতি হাকাইন্দে হিচিলেমা, লুসাকা, ২০২৩। উইকিমিডিয়া সাধারণ থেকে থিওফিলাস মরিসের ছবি (সৃজনী সাধারণ একইরকম ভাগাভাগি ৪.০ অনুমতি)।

জাম্বিয়া মধ্য, দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকার সংযোগস্থলে একটি ভূ-সীমাবদ্ধ দেশ যার গণমাধ্যম দৃশ্যপটটি মোটামুটি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়। জাম্বিয়ার গণমাধ্যম ক্ষেত্রে টেলিভিশন, রেডিও, সিনেমা, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন ও ওয়েব-ভিত্তিক ইন্টারনেট সাইটসহ যোগাযোগের মঞ্চের বিস্তৃত সারি অন্তর্ভুক্ত। এই নিবন্ধটি আপনাকে জাম্বিয়ার খবরে হালনাগাদ থাকতে সাহায্য করতে তথ্যমূলক উৎসগুলির একটি সংকলিত তথ্য সরবরাহ করে।

নতুন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও গণমাধ্যম শিল্পের প্রবৃদ্ধি জাম্বিয়ার আরো বৈচিত্র্যময় ও প্রাণবন্ত গণমাধ্যম দৃশ্যপটে অবদান রেখেছে। পিটার ব্রুকের একটি গবেষণা নিবন্ধ অনুসারে ১৯৬০-এর দশকে জাম্বিয়ার উপনিবেশকরণ গণমাধ্যম খাতকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে, মতপ্রকাশের বৃহত্তর স্বাধীনতা ও নতুন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান স্থাপনকে উৎসাহিত করে। এছাড়াও নিবন্ধটি গণমাধ্যম শিল্পের বৃদ্ধিতে ত্বরান্বিত করায় নিন্ম-তরঙ্গের রেডিও সম্প্রচারে ভূমিকা ও জাম্বিয়াতে ট্রানজিস্টর রেডিওর ক্রমবর্ধমান প্রাপ্যতা ও সামর্থ্যকে তুলে ধরে। ট্রানজিস্টর রেডিওগুলি বিশেষ করে অন্যান্য ধরনের গণমাধ্যম সহজলভ্য না থাকা গ্রামীণ এলাকায় খবর ও তথ্যে আরো ভাল প্রবেশাধিকার দেয়। তাদের বিস্তারে বিষয়বস্তু পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ আরো কঠিন হয়ে ওঠায় সরকারের জন্যে গণমাধ্যম দৃশ্যপট নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

জাম্বিয়ার সরকারি ভাষা ইংরেজি বলে গণমাধ্যম প্রকাশনা ও সম্প্রচার বেশিরভাগই ইংরেজিতে তৈরি হয়। দেশটির জনসংখ্যা আনুমানিক ২ কোটির বেশি। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজিতে মাতৃভাষা হিসেবে জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ কথা বলে। সীমান্তবিহীন অনুবাদকের প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বাধিক ব্যাপকভাবে কথ্য ভাষাগুলি হলো বেম্বা (জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশের কথ্য), নানজা বা চেওয়া (২০ শতাংশ), টোঙ্গা (১২ শতাংশ) এবং লোজি (৬ শতাংশ)।

জাম্বিয়ার সরকার সরকারের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রচারের জন্যে একটি জনসংযোগ সংস্থা জাম্বিয়া সংবাদ ও তথ্য পরিষেবা (জেডএএনআইএস) পরিচালনা করে। এটি টাইমস অব জাম্বিয়াডেইলি মেইল নামে দুটি দৈনিক পত্রিকার মালিক ও পরিচালনা করে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদপত্র ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সংবাদপত্র রয়েছে যাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী নিউজ ডিগারস, মাস্ট, ডেইলি নেশন, লুসাকা টাইমস এবং লুসাকা ভয়েস

সম্পূর্ণ ডিজিটাল সংবাদের জন্যে ময়েবান্টু, জাম্বিয়া রিপোর্টারস এবং জাম্বীয় পর্যবেক্ষক-এর মতো মঞ্চগুলি রাজনীতি, বিনোদন, গণমাধ্যম, খেলাধুলা, জীবনধারা ও ব্যবসাসহ বিস্তৃত বিষয় কভার করে। এই সংবাদ সাইটগুলি তাদের নিজ নিজ ফেসবুক পৃষ্ঠায় যথাক্রমে ২৫ লক্ষ, ১৬ লক্ষ এবং ১৩ লক্ষ অনুসারী জড়ো করেছে।

জাতীয় সম্প্রচারকারী জাম্বিয়া জাতীয় সম্প্রচার কর্পোরেশন (জেডএনবিসি) তিনটি টিভি চ্যানেল ও তিনটি রেডিও কেন্দ্র পরিচালনা করে। জেডএনবিসি ফেসবুকইউটিউবেও উপস্থিতি বজায় রেখেছে যেখানে তাদের যথাক্রমে ৮,৫৮,০০০ এবং ৯৩,০০০ অনুসারী রয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্প্রচার মাধ্যম ছাড়াও ৪২টি ব্যক্তিগত মালিকানার টিভি চ্যানেল ও প্রায় ১২০টি রেডিও কেন্দ্র রয়েছে। প্রাইম টিভি, ডায়মন্ড টিভিমুভি টেলিভিশন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিগত মালিকানার টিভি চ্যানেল। এই বেসরকারি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলির বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং তারা সরকারের সমালোচনা করে থাকে।

আন্তর্জাতিকভাবে জাম্বিয়ার সংবাদগুলি ভয়েস অব আমেরিকা, কনভারসেশন, ইন্ডিপেনডেন্ট, নিউজ নাও, ওকেআফ্রিকা, আল জাজিরা, ফ্রান্স২৪, রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল, গার্ডিয়ানসহ বেশ কয়েকটি ফরাসি ও ইংরেজি-ভাষী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং  আফ্রিকানিউজ, বিবিসি আফ্রিকাস্কাই নিউজের ইংরেজি বিভাগের কভারেজ পায়।

জাম্বিয়ার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অবস্থা ক্রমাগত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে। প্রাক্তন ক্ষমতাসীন দল দেশপ্রেমিক ফ্রন্ট (পিএফ) রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন উভয় গণমাধ্যমের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার ফলে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও স্পষ্টভাষী সাংবাদিকদের বরখাস্ত করা হয়। তবে সীমান্তবিহীন প্রতিবেদকের প্রতিবেদন অনু্সারে, ২০২১ সালের আগস্টে নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে হস্তক্ষেপ হ্রাস ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। একটি আদালতের ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাম্বিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাধীন সংবাদপত্র দ্য পোস্টকে ২০১৫ সালে বন্ধ করাকে অবৈধ বলে রায় প্রদান একটি ইতিবাচক উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয়।

সীমান্তবিহীন প্রতিবেদক ২০২৩ সালে ১৮০টি দেশের মধ্যে জাম্বিয়াকে ৮৭তম স্থান দিয়েছে যা গত বছরের ১০৯ নম্বর থেকে উন্নতির ইঙ্গিত দেয়। ফ্রিডম ইন দা ওয়ার্ল্ড প্রতিবেদন রাজনৈতিক স্থান ও অনলাইন বক্তৃতা সীমাবদ্ধতার আইনের কারণে জাম্বিয়াকে ১০০-তে ৫৪ নম্বর দিয়ে “আংশিকভাবে মুক্ত” হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, বছরের পর বছর ধরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তথ্যে প্রবেশাধিকার আইন এখনো প্রণীত হয়নি। সরকারিভাবে জাম্বীয় নাগরিকদের অনলাইন দুর্ব্যবহারের হাত থেকে রক্ষার জন্যে ২০২১ সালের মার্চ মাসে গৃহীত সাইবার নিরাপত্তা ও সাইবার অপরাধ আইনকে অনেকেই অনলাইন সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের একটি হাতিয়ার হিসেবে দেখে বলে পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি নীতি সহযোগিতার (সিআইপিইএসএ) একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। সবশেষে, সরকার রাষ্ট্রপতির মানহানির অভিযোগে নাগরিক ও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করতে প্রায়শঃই মানহানি আইনটি ব্যবহার করে

ডেটা-রিপোর্টালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে জাম্বিয়ায় ইন্টারনেটের অনুপ্রবেশ তুলনামূলকভাবে কম ২১.২ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের শুরুতে জনসংখ্যার প্রায় ৭৮.৮ শতাংশ অফলাইনে থাকা বোঝায়। মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৩.৩ শতাংশ সক্রিয়ভাবে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করে, ২৬ লক্ষ ব্যবহারকারীর ফেসবুক এবং ৬,৪০,০০০ ব্যবহারকারীর লিকেডইন সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত মঞ্চ। তাদের পরে রয়েছে ফেসবুক মেসেঞ্জার (৩,৬৬,০০০), ইনস্টাগ্রাম (৩,৪৯,৮০০) এবং টুইটার (১,৫৪,৫০০)। জাম্বিয়ায় সামাজিক গণমাধ্যমের ব্যবহার সম্পর্কে একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে ৭১.৩ শতাংশ উত্তরদাতা সরকারি প্রচারণার বিরুদ্ধে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করছে।

জাম্বিয়ার গণমাধ্যম একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে উপনিবেশকরণের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি উভয় গণমাধ্যম সত্তার সহনশীলতার মাধ্যমে  আকৃতি পেয়েছে। এসব ইতিবাচক পরিবর্তন সত্ত্বেও সীমাবদ্ধ আইন ও সীমিত ইন্টারনেট প্রবেশাধিকারের মতো চ্যালেঞ্জগুলি বাধা সৃষ্টি করে চলছে। তবে প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নতি, কার্যকর নিয়মাবলী ও ইন্টারনেটের অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে জাম্বিয়ার গণমাধ্যম দৃশ্যপট আরো বিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে, তথ্য প্রচার ও জনসাধারণের সম্পৃক্ততার নতুন সম্ভাবনা উপস্থাপন করছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .