ক্ষুদ্র গণমাধ্যম ফাউন্ডেশনের সাথে অ্যাডভক্সের অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে এই লেখাটি জাতিসংঘের সার্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা দেশগুলিতে ডিজিটাল অধিকারের চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরে একটি প্রবন্ধের সংগ্রহ – আপরোর উদ্যোগের জন্যে লেখা।
ঘানার উত্তরে দাগবন এফএমের সাথে কর্মরত সাংবাদিক আবুবকারি সাদিক গারিবাকে ৩ মে তার সাপ্তাহিক টক শো “পানপানতুয়া”-তে সরাসরি হামলা ও হুমকি দিয়েছে স্থানীয় রাজনীতিবিদ ইদ্রিসু হার্দি ও স্থানীয় বাসিন্দা মুমুনি ওসমান। সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি (সিপিজে) জানিয়েছে কর্তৃপক্ষকে জাতীয় গণতান্ত্রিক কংগ্রেস পার্টির প্রাক্তন আঞ্চলিক উপ-যোগাযোগ কর্মকর্তা হার্দি এবং ওসমানকে কৃতকর্মের জন্যে বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হলে এক সপ্তাহ পরে দুই অপরাধীর প্রত্যেককে ৩৬০০ সেদি (প্রায় ৩৩,৫০০ টাকা) জরিমানা করা হয়।
বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দিবসে হামলাটি সংঘটনের দিনে ঘানা সীমান্তবিহীন প্রতিবেদকের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুচকে দুই স্থানে নেমে গেছে বলে জানা গেছে।
ঘানা এর আগে তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তার মতো স্বাধীনতা ও অধিকারকে আইনভূক্ত করে আফ্রিকা ও বিশ্বের অন্যতম গণমাধ্যম-বান্ধব দেশ হিসেবে খ্যাতি তৈরি করে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে মোট ১৮০টি দেশের মধ্যে সামগ্রিক স্কোর ৬৫.৯/১০০ নিয়ে ৬২তম স্থানে থাকা ঘানার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সুচক সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা ও ক্রমাগত হুমকির কারণে গত দুই বছরে নিম্নমুখী প্রবণতাকে প্রতিফলিত করে।
গণমাধ্যম জনসাধারণকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ, নাগরিক ব্যস্ততাকে সহজতর এবং কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে তাদের প্রকাশ অন্যায়কারীদের চ্যালেঞ্জ করলে তখন এই মিশনের পদাতিক সৈনিক সাংবাদিকরা প্রায়শই বিপদে পড়ে।
ঘানার সাংবাদিকরা ক্রমাগত হুমকি, সহিংসতা ও অবিচারের ক্রমবর্ধমান জোয়ারের মুখোমুখি, যা তাদের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিবেদনের ক্ষমতাকে ক্ষুন্ন করছে। শারীরিক ক্ষতির স্পষ্ট হুমকিসহ ঘানার সাংবাদিকদের উপর আক্রমণের ব্যাপ্তি ও তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সীমান্তবিহীন প্রতিবেদক ১১ অক্টোবর ক্ষমতাসীন নয়া দেশপ্রেমিক পার্টির ২০ জন সমর্থক একটি জনপ্রিয় সরাসরি টিভি শো “ইউনাইটেড শোবিজ”-এ বাধাদানের মাধ্যমে একটি স্থানীয় টিভি কেন্দ্রে হামলার খবর দিয়েছে। শোতে অন্যান্যদের মধ্যে থাকা হামলার লক্ষ্যবস্তু বিনোদনের একজন স্থানীয় উদ্যোক্তা ও রাজনৈতিক কর্মী কোয়ামে আসারে-ওবেং সেদিন রেডিও কেন্দ্রে ছিলেন না।
সীমান্তবিহীন প্রতিবেদকের সাব-সাহারা আফ্রিকা ব্যুরোর পরিচালক সাদিবউ মারং বলেছেন: “একটি টিভি চ্যানেল প্রাঙ্গণে এই সহিংস অনুপ্রবেশ গণমাধ্যম ও সম্পাদকীয় স্বাধীনতার উপর আক্রমণ। গণমাধ্যমকে ভয়ভীতি বা হুমকির ভয় ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। আমরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা এবং কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের তদন্তের আহ্বান জানাই।”
ঘানার কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ ২০১৯ সালের দিক থেকে সাংবাদিক হয়রানি ও অবৈধভাবে আটকে রাখার ঘটনা বাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এপ্রিল ২০১৯-এ, আধুনিক ঘানার সম্পাদক ইমানুয়েল আজারফর আবুগ্রি এবং প্রতিবেদক ইমানুয়েল ইয়েবোহ ব্রিতউমকে নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন ও বন্দীর অভিযোগ করা হয়েছিল বলে সিপিজে প্রতিবেদন করেছে। কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের আধুনিক ঘানার জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী অ্যালবার্ট কান দাপাহের কভারেজ সম্পর্কে প্রশ্ন করে তাদের একটি ইমেল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে কান দাপাহ সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার অভিযোগ করে। রাষ্ট্রপতি নানা আকুফো-আডো ২০১৭ সালের শুরুর দিকে কান দাপাহকে ঘানার নবপ্রতিষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে নাম করেন। সেসময়ের গণমাধ্যম প্রতিবেদন অনুসারে, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল নিরাপত্তা পরিষেবাগুলির জনসাধারণের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করা৷
পশ্চিম আফ্রিকার গণমাধ্যম ফাউন্ডেশনের মতে, বিগত ১০ বছরে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে ১৪টি হামলা হয়েছে। এই আক্রমণগুলির মধ্যে শুধু দাগবন এফএমের আবুবকারি গারিবার মামলাটি আইনি প্রতিকার পেয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত নিবিড় পর্যবেক্ষণে অনুপ্রবেশের উদ্বেগজনক ধরনে গণমাধ্যম স্থাপনাগুলিতে প্রায়শই সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারীরা ভাংচুর, সম্প্রচারে জোরপূর্বক হস্তক্ষেপ এবং উপস্থাপক ও অতিথিদের ভীতিপ্রদর্শন ও আক্রমণ করতে দেখা গেছে। তিনটি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা জড়িত ছিল বলে জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়, জাতীয় গোয়েন্দা ব্যুরো ও দমকল বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এই পাঁচটি ঘটনার জন্যে দায়ী। একটি শীতল বিচারসহ বাকি ছয়টি ঘটনা এখনো তদন্তাধীন।
দায়মুক্তি চ্যালেঞ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে আক্রার একটি আদালত ১৩ জানুয়ারি একটি রায়ে ঘানার জাতীয় নিরাপত্তা সমন্বয়কারী, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে অধিকার লঙ্ঘনের জন্যে আবুগ্রির কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। এছাড়াও মানবাধিকার বিভাগীয় আদালত ২ এই কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ ও সাংবাদিকের আইনি খরচ মেটানোর নির্দেশ দিয়েছে। সাংবাদিককে বিবাদীদের একটি ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ফোন ও জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্টদের নেওয়া একটি ট্যাবলেটসহ বাজেয়াপ্ত সকল সরঞ্জাম ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। দুঃখজনকভাবে দায়িত্বশীল পক্ষগুলি এখনো পর্যন্ত এই যুগান্তকারী রায় মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় তারপর থেকে প্রাথমিক আশাবাদ ক্ষীণ হয়ে গেছে।
ঘানা সম্প্রচার কর্পোরেশনের মহাপরিচালক অধ্যাপক আমিন আলহাসান ঘানার গণমাধ্যম দৃশ্যপটের মুখোমুখি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির উপর জোর দিয়েছেন। এই চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি বিস্তৃত নিয়ন্ত্রক কাঠামোর অভাব, গণমাধ্যম পেশাদারদের জন্যে নিন্মমানের কাজের পরিস্থিতি ও বর্তমান যুগে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ রয়েছে। ঘানা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ শিক্ষা বিভাগের “ঘানার গণমাধ্যম পরিস্থিতি প্রতিবেদন ২০২৩” প্রকাশের সময়টা এমন ছিল।
প্রতিবেদনের মূল অনুসন্ধানগুলি উল্লেখ করেছে ঘানায় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতা বোধ এবং আক্রমণের ঝুঁকিসহ নারীদের তুলনায় পুরুষ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা লঙ্ঘন বেশি। আরো উদ্বেগের বিষয় অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি আক্রমণের শিকার এবং রাজনৈতিকভাবে নিযুক্ত ও পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় কুশীলবরা সাংবাদিকদের উপর হামলায় সবচেয়ে বেশি চড়াও। সাংবাদিকরাও মনে করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগ খুব কমই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
প্রতিবেদনে আক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রতি সাহায্যের উল্লেখযোগ্যভাবে অভাবের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- আঘাত পরবর্তী পরামর্শ পরিষেবার দুষ্প্রাপ্যতা
- বিপজ্জনক দায়িত্ব কভার করা সাংবাদিকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহের আংশিক অভাব
- আক্রমণের শিকার সাংবাদিকদের গণমাধ্যম সংস্থাগুলি থেকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও আইনি সহায়তার অভাব
ঘানার সরকার ২০২১ সালে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্যে সমন্বিত ব্যবস্থার জন্যে দপ্তর নিযুক্ত করে। উদ্দেশ্য ছিল সাংবাদিকদের উপর হামলার অভিযোগ দায়ের, কথিত হামলার বৈধতা, তদন্ত ও নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রতিবেদনের জন্যে একটি সরকারি সংস্থান স্থাপন। উপরে ঘানার গণমাধ্যম প্রতিবেদনে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে তবুও ২০২৩ সাল পর্যন্ত দপ্তরটি তার দায়িত্ব পালন ও সাংবাদিকদের উদ্বেগ সমাধানের ক্ষেত্রে ধীরগতিতে এগিয়েছে।
শক্তিশালী গণতন্ত্রগুলি স্থিতিস্থাপক, স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর নির্ভর করে যা জনগণকে গুরুত্ব দিয়ে উৎপাদনশীল বক্তৃতা তৈরি ও সরকারি দপ্তরের ব্যক্তিদের যাচাই করে। বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও স্বাধীন গণমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর চাপ বাড়ছে। সাংবাদিকরা তাদের কাজের সময় হুমকি, হয়রানি ও সহিংসতার মুখে পড়ছে। এসব আক্রমণ প্ররোচিত আত্ম-সেন্সরের ভূত অদম্য, স্বাধীন সাংবাদিকতা, তথা গণতন্ত্রের জন্যে একটি হতাশাজনক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।