জাম্বিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি: প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এডগার লুঙ্গুর প্রত্যাবর্তনের প্রতিক্রিয়া

জাম্বিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি এডগার লুঙ্গু। ছবি: ফ্লিকারে চালো চাতু (সৃজনী সাধারণ পাবলিক ডোমেন মার্ক ১.০ অনুমতি)।

জাম্বিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এডগার লুঙ্গু একটি উল্লেখযোগ্য পরাজয়ের পরে ২০২১ সালে অবসর নেওয়ার পরে ২০২৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের লক্ষ্যে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন।

এডগার লুঙ্গু রাজনীতিতে ফিরে আসায় ইউপিএনডি’র শুভেচ্ছা

জানিয়েছেন ওয়েন্ডসন মাভোরো

সাবেক রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতি এডগার লুঙ্গু সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন।

তার আগের ছয় বছরের মেয়াদে দেশটি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লে তা জাম্বীয়দের জীবনে প্রভাব ফেলে

লুঙ্গু একটি বক্তৃতায় ২০১৪ সালে দায়িত্বরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা জাম্বিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও দেশপ্রেমিক ফ্রন্ট (পিএফ) প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা মাইকেল সাতাকে সম্মান জানিয়ে গণতন্ত্র রক্ষায় তার প্রস্তুতি ঘোষণা করেছেন। নিউজ সেন্ট্রাল টিভি অনুসারে লুঙ্গু বলেছেন:

আমি গণতন্ত্র রক্ষায় পিছন থেকে নয় সামনে থেকে লড়াই করতে প্রস্তুত যারা এই লড়াইয়ের জন্যে প্রস্তুত তারা দয়া করে আমার সাথে আসুন আমি যেকোনো কিছুর জন্যেই প্রস্তুত।

লুঙ্গু ২০২১ সালে তার পরাজয়ের আগ পর্যন্ত নেতৃত্ব দেওয়া দেশপ্রেমিক ফ্রন্টের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করলেও তিনি একটি নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। দলটি দুটি উপদলে বিভক্ত হয়েছে: একটি পার্টির সভাপতি ঘোষিত মাইলস সাম্পার নেতৃত্বাধহীন, আর অন্যটি লুঙ্গুকে পার্টির নেতৃত্বে চায়। সাম্পা রাষ্ট্রের মদদপুষ্ট বলে কথিত। আফ্রিকানিউজের রিপোর্ট অনুসারে, লুঙ্গুর নেতৃত্বে ফিরে আসা অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের বিরোধে সরকারি নিবন্ধন বাতিলের সম্মুখীন দলটিকে বাঁচাতে তার প্রতিশ্রুতির সাথে জড়িত।

লুঙ্গু রাষ্ট্রপতি হাকাইন্দে হিচিলেমাকে বিরোধীদের দমন ও তার অধিকার লঙ্ঘনের জন্যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি ব্যবহারের দায়ে অভিযুক্ত করছেন। লুঙ্গুকে বিদেশে চিকিৎসা সেবা চাওয়া এবং জগিং করা থেকে বিরত রাখাসহ পুলিশি পদক্ষেপ উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই বছরের মে মাসে দুর্নীতি তদন্তের নামে তল্লাশি করতে পুলিশ লুঙ্গুর বাড়ি ঘেরাও করে।

আফ্রিকানিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে লুঙ্গুকে ক্ষমতাসীন জাতীয় উন্নয়নের জন্যে ঐকবদ্ধ পার্টির (ইউপিএনডি) সমর্থকদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগের বিষয়টি সরকারের মুখপাত্র কর্নেলিয়াস মুইতওয়া ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

বর্তমান অর্থনৈতিক কষ্টের অসন্তোষকে পুঁজি করে, বিশেষ করে হিচিলেমার প্রশাসনের অধীনে মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ বিবেচনা করে লুঙ্গু বলেছেন তিনি সমর্থন পুনরুদ্ধার করতে চান।

সরকারের প্রতিক্রিয়া

লুঙ্গুর রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় জাম্বীয় সরকার তার অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধাদি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সরকারের মুখপাত্র কর্নেলিয়াস মুইতওয়া দেশের আইনের সঙ্গতি উল্লেখ করে বলেছেন একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাজনীতিতে পুনঃপ্রবেশ করলে এই ধরনের সুবিধাদি প্রত্যাহার বাধ্যতামূলক। এসবের মধ্যে নিরাপত্তা কর্মীদের অপসারণ, কূটনৈতিক পাসপোর্ট, রাষ্ট্রীয় গাড়ি, একটি সজ্জিত বাড়ি, চিকিৎসা বীমা ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খরচ রয়েছে।

মুইতওয়া জোর দিয়ে বলেন লুঙ্গুকে এখন আইনের চোখে সাধারণ বিবেচনা করা হবে, মামলা থেকে তার দায়মুক্তির সম্ভাব্য অপসারণের বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা হবে। উল্লেখ্য এর আগে জাম্বিয়ার সংসদ দুই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি: ২০০২ সালে ফ্রেডেরিক চিলুবা এবং ২০১৩ সালে রূপিয়া বান্দার দায়মুক্তি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

জাম্বীয় নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া

জাম্বীয়দের মধ্যে প্রতিক্রিয়া মিশ্র – কেউ কেউ লুঙ্গুর প্রত্যাবর্তনে উত্তেজনা প্রকাশ করলেও অন্যরা মনে করে সেটা হয়তো দেশের সর্বোত্তম স্বার্থের জন্যে নয়।

নিউজ সেন্ট্রালের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে ভূ-রাজনীতি বিশ্লেষক আওন গাম্বি বলেছেন:

কার্যকালে মৃত্যুবরণ করা মি. সাতা জনগণের ভালোবাসার এবং আসলেই সাধারণ জনগণের সম্পর্ক রাখার মতো মানুষ ছিলেন। দায়িত্বে থাকাকালীন অসুস্থ হয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করায় তিনি তার পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। উত্তরাধিকারী হিসেবে আসেন মি. লুঙ্গো। তারপর মি. লুঙ্গু ২০২১ সালের নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ বর্তমান রাষ্ট্রপতির কাছে হেরে যান। সুতরাং মি. লুঙ্গুর প্রত্যাবর্তনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া কারণ ভিডিওটিতে মি. লুঙ্গুর দলের লোকজনকে অবশ্যই উচ্ছ্বসিত দেখলেও এমন লোকও আছে যারা মনে করে মি. লুঙ্গুর ফিরে আসা ভাল পদক্ষেপ নয়। কারণ তিনিই একমাত্র অবশিষ্ট ও বেঁচে থাকা সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান।

গাম্বির মতে অনেক জাম্বীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে হিচিলেমার কর্মক্ষমতায় হতাশা প্রকাশ করে বর্তমান সরকারের প্রধান উদ্বেগ হিসেবে মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব ও উচ্চ দারিদ্র্যের কথা উল্লেখ করলেও এই ভিডিওতে কিছু মন্তব্য গাম্বির বিশ্লেষণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্যদের যুক্তি সরকার আন্তরিক চেষ্টা করছে। একজন ব্যক্তি যেমন উল্লেখ করেছেন:

ঋণ পুনর্গঠন, শিক্ষক নিয়োগ, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, প্রতিরক্ষা ও সংশোধনমূলক পরিষেবা কর্মীদের নিযুক্ত করা হয়েছে, বিনামূল্যে শিক্ষা, ও নির্বাচনী উন্নয়ন তহবিল (সিডিএফ) তৃণমূলে সমানভাবে কাজ করছে, যুব ও নারীদের ক্ষমতায়ন পরিস্থিতি বদল করছে, জনগণকে উদ্যোক্তাদের অধীনে কাজ করতে উৎসাহিত ও ক্ষমতায়িত করা হচ্ছে। একমাত্র পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিই কোন ইতিবাচক চেষ্টা দেখতে পাচ্ছে না। আমরা জাম্বিয়ায় থাকা জাম্বিয়াবাসী, সামাজিক গণমাধ্যমের মিথ্যা ক্লিপ নই। সরেজমিন যা নেই তা তৈরি করার জন্যে মানুষ চলচ্চিত্র তৈরি করতে পারে। আসুন বাস্তববাদী হই।

গাম্বি জোর দিয়ে বলেছেন বর্তমান সরকারের অনুভূত ত্রুটিগুলির কারণে ক্ষমতাসীন দলটি ধীরে ধীরে এমনকি ২০২১ সালে রাষ্ট্রপতি হিচিলেমাকে ভোটদাতাদের অনেকের সমর্থন হারাচ্ছে। ফলে হিচিলেমার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক স্থান সংকুচিত করে কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী পদক্ষেপ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।

গাম্বির মতে এডগার লুঙ্গুর রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন তার দলের মধ্যে ঐক্য পুনরুদ্ধারের ইচ্ছায় অনুপ্রাণিত:

রাষ্ট্রপতি হাকাইন্দে হিচিলেমা মি. লুঙ্গুর রাজনৈতিক বাড়ি দেশপ্রেমিক ফ্রন্ট ভেঙে দিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। একারণে মি. লুঙ্গু রাজনীতিতে পুনঃপ্রবেশের আবশ্যকতা বোধ করেন এবং বিশ্বাস করেন একমাত্র তিনিই ঐক্য গড়ে তুলে ২০২৬ সালের নির্বাচন পর্যন্ত দলের সংহতি রক্ষা করতে সক্ষম।

জাম্বিয়া এই রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিচরণ করায় আসন্ন ২০২৬ সালের নির্বাচন সম্ভবত দেশটির রাজনৈতিক দৃশ্যপট গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .