মালয়েশীয় লেখক কিন ওংকে ১৬ অক্টোবর জাতীয় প্রতীক অসম্মানের দায়ে কর্তৃপক্ষ তিন বছরেরও বেশি আগে সম্পাদিত একটি নিষিদ্ধ বইয়ের জন্যে একটি পাসপোর্ট নবায়নের আবেদনের সময় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
প্রাক্তন ক্ষমতাসীন দল বারিসান ন্যাশনাল (বিএন) সমর্থকরা “পুনর্জন্ম: নতুন মালয়েশিয়ায় পুনর্গঠন, প্রতিরোধ ও প্রত্যাশা ” বইয়ের প্রচ্ছদটিকে অবমাননাকর ও রাষ্ট্রদ্রোহী মনে করায় ২০২০ সালের জুলাইয়ে নিষিদ্ধ করা হয়। বইটি ২০১৮ সালে ক্ষমতাচ্যুতি পর্যন্ত দেশের রাজনীতিতে আধিপত্যকারী ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতি ও শাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে তুলে ধরে।
বইয়ের প্রচ্ছদে একজন যুবতী, একটি কুমির ও দুটি বাঘের ছবি রয়েছে। এটি ২০১৪ সাল থেকে আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শিত একটি শিল্পকর্মের উপর ভিত্তিতে করা হয়েছে।
স্বাধীনতার পক্ষে আইনজীবীরা ২০২০ সালে বলেছেন আইনটি “জাতীয় প্রতীক থেকে অনুপ্রাণিত এই বইটির প্রচ্ছদে ব্যবহৃত কোনো শৈল্পিক উপস্থাপনাকে কোনো সুস্থ ব্যক্তি সত্যিকারের জাতীয় প্রতীক হিসেবে ভুল করবেন না বলে নিষিদ্ধ করে না” তাই এই নিষেধাজ্ঞার কোনো ভিত্তি নেই। তারা আরো বলেছে “এই তৈরি বিতর্কটি নাগরিকদের বাক স্বাধীনতা দমনের একটি সুস্পষ্ট প্রচেষ্টা।”
বইটিতে অবদান রাখা বেশ কয়েকজন লেখককে পুলিশ ডেকে পাঠায়। অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা কিন ওং সে সময় দেশে ছিলেন না।
বইটি সম্পাদনা ছাড়াও ওং বিবিসি, ইকোনমিস্ট পত্রিকা এবং এবিসি’র নিবন্ধে অবদান রেখেছেন। এছাড়াও তিনি মালয়েশীয়স্বাধীন সাংবাদিকতা কেন্দ্রের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
ওংয়ের গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক্সে (আগের টুইটার) বলেছে:
We condemn the arrest of & investigation into Kean Wong, editor of the book “Rebirth: Reformasi, Resistance, And Hope in New Malaysia”. The Malaysian gov't must cease the harassment, and stop crushing #FreedomOfExpression #AbolishTheSeditionAct
Read: https://t.co/OvUI5Rp7ku— Amnesty International Malaysia (@AmnestyMy) October 16, 2023
আমরা “পুনর্জন্ম: নতুন মালয়েশিয়ায় পুনর্গঠন, প্রতিরোধ ও প্রত্যাশা” বইয়ের সম্পাদক কিন ওংয়ের গ্রেপ্তার ও তদন্তের নিন্দা জানাই৷ মালয়েশীয় সরকারকে হয়রানি ও #মতপ্রকাশেরস্বাধীনতা দমন বন্ধ এবং #রাষ্ট্রদ্রোহীআইনবাতিল করতে হবে।
তার গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিত করে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ১৯৪৮, ছাপাখানা ও প্রকাশনা আইন ১৯৮৪ এবংযোগাযোগ ও মাল্টিমিডিয়া আইন ১৯৯৮ এর অধীনে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ একদিন পর তাকে ছেড়ে দিয়ে জল্পনা-কল্পনা করে চলমান তদন্তকে নস্যাৎ করা থেকে বিরত থাকতে জনগণকে সতর্ক করেছে।
নিষিদ্ধ বইয়ের প্রকাশক গেরাক বুদায়া গ্রেপ্তারটিকে “অনাকাঙ্ক্ষিত ও মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন” বলে বর্ণনা করেছেন। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের অস্ট্রেলিয়া সমিতি বলেছে তারা “কিনের আটকে ক্ষুব্ধ এবং তাদের সহকর্মীর সুস্থতার জন্যে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।” তারা কর্তৃপক্ষকে “কিনকে ভবিষ্যতে আটক না করার জন্যে অভিযোগটি প্রত্যাহার করে বিষয়টি বন্ধ করার দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছে।”
লেখকদের একটি গোষ্ঠী পেন মালয়েশিয়া রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের নিন্দা করেছে:
পেন মালয়েশিয়া কোনো লেখককে গ্রেপ্তার করে রাষ্ট্রদ্রোহের জন্যে তদন্ত করাকে মালয়েশিয়ায় সাহিত্য ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার হুমকি হিসেবে দেখে। আমাদের অনেক সেন্সর আইন থাকা যেন মালয়েশিয়ার গর্ব করার মতো কোনো রেকর্ড।
মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা সুয়ারা রাকয়াত মালয়েশিয়া (সুয়ারাম) এর নির্বাহী পরিচালক সেভান ডোরাইসামি বাকস্বাধীনতার উপর মারাত্মক প্রভাব নিয়ে গ্রেপ্তারটির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
গ্রেপ্তার ও আটকের নিবর্তনমূলক কৌশলের পুনঃপ্রয়োগের কারণে এটা উদ্বেগজনকভাবে স্পষ্ট যে আমাদের সামনে আমাদের মতপ্রকাশের মৌলিক স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে অনিশ্চিত প্রতিশ্রুতিশীল একটি সরকার ও পুলিশ বাহিনী রয়েছে, অথচ এই সম্পদগুলি আরো ভালভাবে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী গুরুতর অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হতে পারতো।
জনস্বার্থ ও শৈল্পিক অভিব্যক্তির ক্রমাগত অপরাধীকরণ ও সেন্সর বিশেষ করে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের মতো নিবর্তনমূলক আইন বহাল থাকার সমস্যাযুক্ত পরিবেশ নিয়ে সমালোচনামূলক বিতর্ক সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রায় ২২টি সুশীল সমাজের গোষ্ঠী ও ৪০জন সম্প্রদায়ের নেতা কিন ওয়াংকে অভিযুক্ত করতে ব্যবহৃত নিবর্তনমূলক আইনগুলি পর্যালোচনা ও বাতিলের আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে।
কিন ওংয়ের গ্রেপ্তার সেন্সরের ভয় ছাড়াই জনগণের তথ্য জানানো ও কথা বলার ক্ষমতাকে দমনের রাষ্ট্রীয় সমন্বিত প্রচেষ্টাকে প্রদর্শন করে।
বিস্তৃত বিধানসহ রাষ্ট্রদ্রোহ আইন এবং ছাপাখানা ও প্রকাশনা আইনের মতো পুরাতন আইনগুলি প্রায়শই নির্বিচারে সমালোচকদের নীরব করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই জাতীয় আইন বাতিল বা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ে আমরা একটি স্থগিতাদেশ আরোপের অনুরোধ করছি।
গ্লোবাল বেরসিহের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও একজন বেরসিহ সিডনি স্বেচ্ছাসেবক উইলিয়াম ডি ক্রুজ নাগরিকদের হয়রানি করতে দমনমূলক আইনের অব্যাহত ব্যবহার নিয়ে কর্তৃপক্ষের নীরবতা সম্পর্কে লিখেছেন।
মালয়েশীয়রা অনিয়ন্ত্রিত কর্তৃত্ববাদের একটি গভীর উদ্বেগজনক চিত্র স্পষ্ট ফুটে ওঠায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগে এই বিষয়ে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের অপেক্ষা করছে।
ওং ও তার সম্পাদিত বইটি নিয়ে একটি স্পষ্ট প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে: সরকার পরিবর্তন করতে অনিচ্ছুক রাজনৈতিক দল ও জোটগুলিই কি বিতর্কটি উস্কে দিয়েছে?
বাহাসা ভাষায় বেরসিহ মানে “পরিষ্কার”। এটি প্রাক্তন শাসক দলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকেও নির্দেশ করে। এর আগে নতুন সরকার প্রায়শই বৈধ সমালোচনাকে লক্ষ্যবস্তু ও অস্ত্র করতে ব্যবহৃত রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ও অন্যান্য পদক্ষেপ পর্যালোচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।