সুদানে চলমান সংঘাতে তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল রূপান্তর প্রচেষ্টা প্রভাবিত

পশ্চিম দারফুরের এল জেনিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার ল্যাবে কাজ করছে। ফ্লিকার থেকে ইউনামিড-এর ছবি (সৃজনী সাধারণ অবাণিজ্যিক অপরিবর্তনযোগ্য ৪.০ অনুমতি)

সুদানের রাজধানী খার্তুমের জনগণ ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল খুব ভোরে ভারী গুলি ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দে জেগে ওঠে। সুদানি সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) ও ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপতি ওমর আল-বশিরের আমলে প্রতিষ্ঠিত একটি আধাসামরিক বাহিনী দ্রুত সহযোগী বাহিনী (আরএসএফ) এর মধ্যে সংঘর্ষের কারণে এসব ঘটে

এসএএফ প্রধান কমান্ডার আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও আরএসএফ প্রধান কমান্ডার মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেতির মধ্যে ক্ষমতার লড়াইকে কেন্দ্র করে বিরোধ শুরু হয়। সশস্ত্র সংঘাত এড়াতে সুদানের সশস্ত্র বাহিনীকে একটি পেশাদার সেনাবাহিনীতে একীভূত করার লক্ষ্যে কাঠামোগত চুক্তি প্রস্তুতকারী রাজনৈতিক শক্তিগুলির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। সশস্ত্র সংঘাতের অবস্থান ও ঘটনার ডেটা প্রকল্প (এসিএলইডি) অনুসারে, এই যুদ্ধের ফলে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৯,০০০ জন মারা গেছে

চলমান সংঘাত সরকারি কর্মীদের জন্যে নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরির ফলে খাদ্য, পানি, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগসহ মৌলিক পরিষেবা সরবরাহে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। সংকটের প্রভাবগুলি সুদানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (তথ্যপ্রযুক্তি) এবং ডিজিটাল রূপান্তর প্রচেষ্টাকেও প্রভাবিত করায় সুদানবাসী সম্পূর্ণ ইন্টারনেট পরিষেবা থেকে বঞ্চিত।

অবকাঠামো

ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জর্জরিত হওয়ার ফলে সুদানে যোগাযোগ অবকাঠামো বজায় রাখতে বৈদ্যুতিক জেনারেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বলেছেন জনসংখ্যার মাত্র ৪০ শতাংশ জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে সংযুক্ত।

সংঘর্ষের সময় বিদ্যুতের ঘাটতি এমনকি সাধারণভাবে কষ্টসহিষ্ণু জনগণের যোগাযোগ পরিষেবাগুলিতে অতিরিক্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলায় তা নেটওয়ার্ক বিঘ্নের একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। খার্তুমে জেনারেটরের জ্বালানি সরবরাহ করতে না পারায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে এমটিএন সুদান নেটওয়ার্ক ব্যাহত হয়। কর্তৃপক্ষ জাতীয় পরীক্ষা ও নাগরিক আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ রাখে বলে নেটওয়ার্ক বিঘ্ন সুদানি নাগরিকদের জন্যে নতুন কিছু নয়। একই কোম্পানি এমটিএন সুদান ১৬ এপ্রিল টেলিযোগাযোগ ও ডাক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (টিপিআরএ) থেকে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের আদেশ পেলেও তা কয়েক ঘন্টা পরে বাতিল করা হয়

এই অঞ্চলে সংঘর্ষের পরিস্থিতির কারণে নিয়ালা, জালিঙ্গিআল জেনিনাসহ সুদানের অন্যান্য অনেক অঞ্চলে কয়েক সপ্তাহ ধরে নেটওয়ার্ক বিঘ্নিত হয়েছে।

এই বিঘ্নগুলি জনগণকে ইন্টারনেটে প্রবেশের বিকল্প পদ্ধতি খোঁজার দিকে পরিচালিত করেছে। সূত্রগুলি উল্লেখ করেছে কিছু ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সুদানে স্টারলিঙ্ক ডিভাইস চালু এবং কিছু সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারকারী উপগ্রহ ইন্টারনেট পরিষেবার ব্যবহার দেখানো একটি ছবি প্রচার করেছে

অনলাইন পরিষেবাসমূহ

চলমান সংঘাতটি অনেক ডেটা কেন্দ্রের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। ডেটা কেন্দ্র অপারেটররা তাদের ডেটা ও সুবিধাগুলিতে প্রবেশাধিকার হারানোর ফলে বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যর্থ হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ভবনে আগুন লেগে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডাটা কেন্দ্র সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এছাড়াও পূর্ব খার্তুমের সরকারি ডেটা কেন্দ্রসহ অসংখ্য ডেটা কেন্দ্র হোস্ট করা জাতীয় তথ্য কেন্দ্রের (এনআইসি) টেলিযোগাযোগ টাওয়টি সংঘর্ষে প্রভাবিত হয়। সরকারের দাপ্তরিক মুখপাত্রের মঞ্চ আরএসএফ এর দখলকৃত টেলিযোগাযোগ টাওয়ারের ব্যর্থতার কারণে তাদের ওয়েবসাইট কাজ না করার কথা ফেসবুকে ঘোষণা করেছে। সূত্রটি নিশ্চিত করেছে জাতীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরীক্ষার সুদানি সনদের ডেটা ক্লাউডে সংরক্ষিত রয়েছে

এছাড়াও ব্যবস্থা চালু রাখতে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে সংঘাতপূর্ণ এলাকার ডেটা কেন্দ্রগুলিতে কর্মীরা যেতে না পারায় সুদানে ই-ব্যাংকিং পরিচালনাকারী সরকারি সংস্থা ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার (ইবিএস) পরিষেবাগুলি পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে না। সুদান সংবাদ সংস্থার (এসইউএনএ) মতে কিছু প্রতিষ্ঠানের তথ্য পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। সুদানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জুন মাসে ইবিএস পরিষেবা পুনরুদ্ধারের ঘোষণা করলেও বর্তমানে পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না।

ইন্টারনেট সমিতি সংগঠনের সুদান অধ্যায় জানিয়েছে ১৬ জুন পর্যন্ত সুদানি দেশীয় কোডের সর্বোচ্চ স্তরের ডোমেনের (সিসিটিএলডি) মাত্র ১২ শতাংশ – ডট এসডি- ওয়েবসাইট ও পরিষেবা কার্যকর ছিল৷

তা সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ পুনরায় শুরু করতে নতুন অনলাইন মঞ্চ ঘোষণা করেছে। সুদানি পুলিশ যুদ্ধের সময় চুরি, যৌন সহিংসতা এবং অন্যান্য অপরাধের অভিযোগের জন্যে একটি ওয়েবসাইট প্রস্তাব করেছে। এছাড়াও চিকিৎসকদের নিবন্ধন ও অনুমোদনকারী জাতীয় কর্তৃপক্ষ সুদানি চিকিৎসা পর্ষদ পরিষেবা প্রদানের জন্যে একটি নতুন অনলাইন মঞ্চ ঘোষণা করেছে। উপরন্তু, সরকারের তথ্য মঞ্চ তার অনুসারীদের পোস্টের জন্যে পুরানোটির পরিবর্তে একটি নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। তা সত্ত্বেও, এই নতুন ওয়েবসাইটগুলি সুদান সিসিটিএলডি’র সাথে যুক্ত নয় যা আন্তর্জাতিক সরকারি মানদণ্ডের বিপরীত।

জুন মাসে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় উচ্চতর প্রতিষ্ঠান, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালু করার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে ফিউচার বিশ্ববিদ্যালয়বায়ান বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দিয়েছে কীভাবে অনলাইন শ্রেণিকক্ষে যোগ দিতে হবে।

স্থানীয়করণ

সুদানের ডেটা স্থানীয়করণের কোনো আইন না থাকলেও গ্লোবাল ভয়েসেসের সাথে সুদানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন প্রাক্তন উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তা সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি একটি অঘোষিত ডেটা স্থানীয়করণ নীতির অধীনে কাজ করছে বলে নিশ্চিত করেছেন।

তবে একটি ডোমেন নেম সিস্টেম (ডিএনএস) লুকআপ থেকে জানা গেছে দাবিকৃত স্থানীয়করণ নীতির পরিবর্তে সুদানের বাইরে অনেক ওয়েবসাইট হোস্ট করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত কাজ না করা ওয়েবসাইটটি ফ্রান্সে হোস্ট করা একটি জর্দানি সিসিটিএলডি’র অধীনে নিবন্ধিত একটি সাবডোমেন ব্যবহার করছে। এছাড়াও, টেলিযোগাযোগ ও ডাক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও বিচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটগুলি যথাক্রমে নেদারল্যান্ডসজার্মানিতে হোস্ট করা হয়েছে। তাছাড়া, রাষ্ট্রপতির ওয়েবসাইট যুক্তরাষ্ট্রে হোস্ট করা হয়েছে

ডেটা সুরক্ষা

সুদানে তথ্য সুরক্ষার জন্যে কোনো সুনির্দিষ্ট আইন না থাকলেও ২০১৩ সালের পরিশোধ ব্যবস্থা সংগঠিত করার প্রবিধানের (২০-১) ধারা উল্লেখ করেছে পরিশোধ পরিষেবা প্রদানকারীদের ব্যবহারকারীদের ডেটা সংরক্ষণ ও সুরক্ষিত রাখতে হবে। ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং ক্লিয়ারিং পরিষেবা দিতে ইবিএসের অক্ষমতা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের তদারকির বাইরে ব্যাংক গ্রাহকদের মধ্যে লেনদেনের সুযোগ দেওয়া একটি অনিয়ন্ত্রিত বাজারের উত্থানের পথ তৈরি করেছে।

সুদানের ই-ব্যাংকিং পরিষেবা ব্যবহারকারীরা পর্যায়ক্রমিক বিভ্রাটের শিকার হয়েছে। ইন্টারনেট প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ই-ব্যাংকিং আবেদনের অবস্থা জানানোর জন্যে বাস্তব সময়ে হালনাগাদের একটি অনলাইন মঞ্চ তৈরি করেছে। একই ইন্টারনেট প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা পরিষেবার জন্যে কমিশন নিয়ে ব্যাংকিং পরিষেবার গ্রাহকদের আন্তঃব্যাংক লেনদেনে সাহায্য করে ইবিএস ব্যর্থতার সুযোগ নিতে আরেকটি অনলাইন মঞ্চ তৈরি করেছে। এই মঞ্চটি ব্যবহার করতে ব্যবহারকারীকে অবশ্যই তাদের বায়ো-ডেটা পৃষ্ঠা পরিচয়পত্রসহ ফোন নম্বর, পুরো নাম ও ফটো ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে হয়। মঞ্চটির কীভাবে এই ডেটা সংরক্ষণ করা হয় বা অন্য পক্ষের সাথে ভাগাভাগি করা যায় বা না যায় তা স্পষ্ট করা দরকার।

সুদানে যুদ্ধ নতুন কি না হলেও রাজধানী খার্তুমে যুদ্ধের আগমন  অস্বাভাবিক। এটি ইন্টারনেট ও প্রযুক্তিসহ সকল পরিষেবার প্রধান উৎসের আবাসস্থল বলে এই যুদ্ধটি স্পষ্টভাবে ডিজিটাল রূপান্তর ও অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টাকে প্রভাবিত করছে৷ তাই তথ্যপ্রযুক্তির অবকাঠামো ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীদের জন্যে সমাধান খোঁজা জরুরি।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .