
দক্ষিণ আফ্রিকীয় উন্নয়ন সম্প্রদায় (এসএডিসি) সংহতি সম্মেলনে তার বক্তব্য প্রদান করছেন জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতি এমারসন ম্নাঙ্গাগওয়া। ফ্লিকারে জেডএসরকার-এর ছবি (সৃজনী সাধারণ অবিকৃত ৪.০ অনুমতি)।
জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতি এমারসন ম্নাঙ্গাগওয়া ২০২৩ সালের আগস্টে একটি বিতর্কিত রাষ্ট্রপতি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনঃনির্বাচিত হলে তা নির্বাচন-পরবর্তী উত্তেজনা ও কথিত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রতিশোধের অভিযোগের সূত্রপাত করে। এই নিবন্ধটি জিম্বাবুয়ের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতে জিম্বাবুয়ের সংবাদ জানতে গ্লোবাল ভয়েসেস সরবরাহকৃত তথ্যপূর্ণ উৎসসমূহের একটি সংকলিত সংগ্রহ প্রদান করে।
জিম্বাবুয়ের সংবিধান ১৬টি সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দিলেও ইংরেজি, শোনা ও নদেবেলে সবচেয়ে প্রচলিত। জিম্বাবুয়েতে গণমাধ্যম প্রকাশনা এবং সম্প্রচারগুলি বেশিরভাগই ইংরেজিতে এবং অল্প পরিমাণে শোনা এবং এনদেবেলেতে করা হয়। জানুয়ারি ২০২৩ অনুসারে, জিম্বাবুয়ের জনসংখ্যা ১.৬ কোটির বেশি অনুমিত। বিশ্ব অ্যাটলাস অনুসারে, জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের বেশি শোনা এবং প্রায় ২০ শতাংশ নদেবেলেতে কথা বললেও ঔপনিবেশিক মাতৃভাষা ইংরেজিতে মাত্র ২.৫ শতাংশ কথা বলে থাকে।
জিম্বাবুয়েতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দৈনিক হেরাল্ডের মতো আফ্রিকার প্রাচীনতম কিছু সংবাদপত্র রয়েছে। মুদ্রিত অন্যান্য রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মধ্যে রয়েছে ক্রনিকল, সানডে মেইল, ম্যানিকা পোস্ট, মিডল্যান্ডস অবজারভার, কোয়ায়েদজা এবং উমথুনিওয়া। কোয়ায়েদজা ও উমথুনিওয়া যথাক্রমে শোনা ও নদেবেলেতে জাতীয় সংবাদের ব্যাপক কভারেজ দেয়। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন গণমাধ্যম কেন্দ্রগুলির মধ্যে ফিনান্সিয়াল গেজেট, জিম্বাবুয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট, স্ট্যান্ডার্ড এবং জিম্বাবুয়ে দৈনিক সংবাদ রয়েছে।
পুরোপুরি ডিজিটাল সংবাদ হিসেবে জিম্বাবুয়ে দৈনিক সংবাদ, নতুন জিম্বাবুয়ে এবং স্টুডিও ৭ এর মতো মঞ্চগুলি রাজনীতি, বিনোদন, গণমাধ্যম, খেলাধুলা, জীবনধারা ও ব্যবসাসহ বিভিন্ন বিষয়ের বিস্তৃত মাত্রা কভার করে।
জিম্বাবুয়ে সম্প্রচার কর্পোরেশন দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় টিভি ও রেডিও সম্প্রচারকারী। এর ইউটিউব ও ফেসবুকেও যথাক্রমে ৭৩,০০০ ও ৩৬,০০০ এরও বেশি অনুসারীসহ উপস্থিতি রয়েছে। এই কেন্দ্রটি সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলি কভার করেছে:
যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা ভিত্তিক জিম্বাবুইয়ান জিম্বাবুয়ের প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করে এবং জিম্বাবুয়ের রাজনীতি, শিল্প ও সংস্কৃতি, ব্যবসা, খেলাধুলা, লিঙ্গ সমস্যা, সামাজিক বিষয় ও সংবাদ বিশ্লেষণের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। নতুন জিম্বাবুয়েও জিম্বাবুয়ে প্রবাসীদের সংবাদ দেয়।
আন্তর্জাতিকভাবে জিম্বাবুয়ের ভয়েস অব আমেরিকা, কথোপকথন, ওকেআফ্রিকা, আল জাজিরা, ফ্রান্স ২৪, রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল, এবং আফ্রিকানিউজ, বিবিসি আফ্রিকা, স্কাই নিউজের ইংরেজি বিভাগ ও আফ্রিকা ২৪ এর ফরাসি-ভাষী বিভাগসহ বেশ কয়েকটি ফরাসি ও ইংরেজিভাষী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কেন্দ্রে জিম্বাবুয়ের সংবাদ কভারেজ পায়। এছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা ভিত্তিক এসএবিসি সংবাদ নিয়মিত জিম্বাবুয়ের সংবাদ কভার করে। তাদের টেলিভিশন সংবাদে রাষ্ট্রপতি এমারসন ডি. ম্নাঙ্গাগওয়ার অভিষেক সম্প্রচারিত হয়:
জিম্বাবুয়েতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির ধারাবাহিক মনোযোগের বিষয়। জিম্বাবুয়ের রাজনৈতিক দৃশ্যপট কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্যে ক্ষমতাসীন দলের নিযুক্ত বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে একটি চলমান ক্ষমতার লড়াই। বিশেষভাবে রাজনীতিবিদরা তাদের নিজস্ব লাভের জন্যে সঙ্গীতশিল্পীদেরকে ব্যবহার করে যেমন ক্ষমতাসীন দলকে সমর্থনের জন্যে উইঙ্কি ডি সেন্সর বা জবরদস্তির মুখোমুখি হয়েছেন। সঙ্গীতকে রাজনৈতিক প্রভাবের বিশেষ করে যুব জনসংখ্যাকে আকর্ষনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার বিবেচনা করা হয়।
সীমান্তবিহীন প্রতিবেদকের মতে ২০২৩ সালে জিম্বাবুয়ের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১২৬তম। স্বাধীনতা সদন প্রতিবেদন সীমাবদ্ধ গণমাধ্যম আইন ও ইন্টারনেট ব্যবহার বিধিমালার কারণে জিম্বাবুয়েকে “আংশিক মুক্ত” শ্রেণীবদ্ধ করে ১০০ এর মধ্যে ২৮ নম্বর দিয়েছে। উল্লেখযোগ্য, ২০২০ সালে সরকারি নীতি সংস্কার ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক হোপওয়েল চিন'ওনোর মুক্তির জন্যে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ ও আহ্বান জানাতে গিয়ে সহকর্মী জুলি বার্নসসহ বিশিষ্ট লেখক ও সক্রিয় কর্মী সিৎসি ডাঙ্গারেম্বগা গ্রেপ্তার হন। চিন’ ওনো জিম্বাবুয়ের সরকারের বিরুদ্ধে তার সোচ্চার সমালোচনার জন্যে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগের মুখোমুখি।
গ্লোবাল ভয়েসেসের নাগরিক গণমাধ্যম মানমন্দিরের প্রতিবেদন অনুসারে এক্সে (আগের টুইটারে) নাগরিক বক্তৃতার বিশ্লেষণে “সরকার ও জানু পিএফের সমালোচনা করা দেশপ্রেমবিরোধী ও শাস্তিযোগ্য,” এবং ” জানু পিএফের অনুসরণ করা দলের আদর্শই দেশপ্রেমিক হওয়ার একমাত্র উপায়” এমন ধারণা প্রচারের পোস্ট পাওয়া গেছে।
এটি জিম্বাবুয়েতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও জনআলোচনার প্রখর মেরুকরণকে প্রতিফলিত করে।
ডেটারিপোর্টালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে জিম্বাবুয়েতে ইন্টারনেটের অনুপ্রবেশ তুলনামূলকভাবে কম ৩৪.৮ শতাংশ যা ২০২৩ সালের শুরুতে জনসংখ্যার প্রায় ৬৫.২ শতাংশ অফলাইনে বোঝায়। প্রায় ১৩ লক্ষ ফেসবুক এবং ৭ লক্ষ ৬০ হাজার লিংকেডইন ব্যবহারকারী সবচেয়ে ব্যাপক ব্যবহৃত মঞ্চ মিলে মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯.১ শতাংশ সক্রিয়ভাবে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করে। এদের পরেই রয়েছে ইনস্টাগ্রাম (৩৮১,৭০০), ফেসবুক মেসেঞ্জার (৩৩৪,৮০০) এবং টুইটার (৩২৩,২০০)।
জিম্বাবুয়েতে বিভিন্ন গণমাধ্যম কেন্দ্রের উপস্থিতি সত্ত্বেও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কিত ক্রমাগত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। সংক্ষেপে জিম্বাবুয়ের জটিল রাজনৈতিক ও সামাজিক গতিশীলতা বোঝার জন্যে অপরিহার্য বলে নির্ভুল ও নিরপেক্ষ তথ্য অর্জনের গুরুত্বকে বেশি কিছু বলা যাবে না। এটি একটি উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার সম্পন্ন একটি সমাজকে গড়ে তোলার জন্যে ক্রিয়াশীল টেকসই সতর্কতা ও প্রচারণার প্রয়োজনের উপর জোর দেয়।