ক্ষমতাসীন সরকারের সেন্সর ও ক্রমবর্ধমান রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তুরস্কে অসংখ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সঙ্গীতানুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় চাপের কারণে কিছু উৎসব আয়োজক এমনকি অনুষ্ঠান বাতিলের কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব ৭-১৪ অক্টোবরের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য আন্তালিয়া সোনালী-কমলা চলচ্চিত্র উৎসবের ক্ষেত্রে এটিই ঘটেছে৷ এই বছরের সংস্করণটি ছিল উৎসবটির ৬০তম বার্ষিকী উদযাপন৷ তুরস্কে চলা বেশিরভাগ জিনিসের মতো গল্পটি সেন্সর দিয়ে শুরু “কানুন হুকমু” (“ডিক্রি”) শিরোনামের একটি তথ্যচিত্র তার কাহিনী নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে। চলচ্চিত্রটি ২০১৬ সালের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পরে জরুরি অবস্থায় ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত অব্যাহত গোলাগুলিকে অন্বেষণ করে।
তথ্যচিত্রটি উৎসবে দেখানোর জন্যে নির্ধারিত হলেও সরকারি চাপে চলচ্চিত্রের একটি চরিত্র তখনো আইনি প্রক্রিয়াধীন থাকায় ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে উৎসবের আয়োজকরা এটি সরিয়ে দেয়। আয়োজকদের সিদ্ধান্তের পর চলচ্চিত্রের পরিচালক নেজলা ডেমিরসি ও অগণিত শিল্পী উৎসব আয়োজকদের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে। ডেমিরসি বলেছেন সিদ্ধান্তটি একটি “অজুহাত” ও “সরাসরি সেন্সর।”
Turkey’s Antalya film festival cancelled amid censorship battle – Documentary ‘The Decree’ (‘Kanun Hukmu’) is at the centre of the row https://t.co/AshTqzdlUY pic.twitter.com/8eRSNf5esX
— George Roussos (@baphometx) September 29, 2023
সেন্সর যুদ্ধের মধ্যে তুরস্কের আন্তালিয়া চলচ্চিত্র উৎসব বাতিল করা হয়েছে – বিরোধের কেন্দ্রে ‘ডিক্রি’ (‘কানুন হুকমু’) তথ্যচিত্র
Censorship at the #AltinPortakal film festival is a disgrace. “The Decree” a documentary exposing the mass firings by the government decree following the coup attempt in Turkey, was unfairly pulled from the best documentary category. https://t.co/sxFeWNa9SE
— İmdat Oner (@im_oner) September 22, 2023
#আলতিন_পোর্তাকাল চলচ্চিত্র উৎসবে অপমানজনক সেন্সর। তুরস্কে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর সরকারি ডিক্রির মাধ্যমে গণগোলাগুলির ঘটনা প্রকাশ করা তথ্যচিত্র “ডিক্রি”কে সেরা তথ্যচিত্র বিভাগ থেকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
উৎসবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্যান্য তথ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পরিচালক ও প্রযোজকরা ডেমিরসির সাথে তাদের সংহতি প্রকাশ করে অনুষ্ঠান থেকে তাদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে ২৭টি অন্তর্ভূক্তির প্রযোজক ও পরিচালক প্রত্যাহার ঘোষণার কথা জানিয়েছে।
একটি যৌথ বিবৃতিতে চলচ্চিত্র নির্মাতারা ২৭ সেপ্টেম্বর বলেছে: “আমরা চলচ্চিত্রটির অপসারণকে বাকস্বাধীনতার শৈল্পিক স্বাধীনতার জন্যে সরাসরি হুমকি বিবেচনা করি… আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি অন্তর্নিহিতভাবে সমাজের অন্তর্গত এসব উৎসবের সেন্সরের কাছে আত্মসমর্পণ করাটা অগ্রহণযোগ্য।”
অভিনেতা ইউনিয়ন, চলচ্চিত্রকর্মী ইউনিয়ন (সাইন-সেন), চলচ্চিত্র লেখক সমিতি (এসআইওয়াডি) এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা ইউনিয়নও উৎসব থেকে তথ্যচিত্রটি বাদ দেওয়ার সমালোচনা করেছে।
উৎসবের ২০-সদস্যের জুরি ২৩ সেপ্টেম্বর সেন্সর সম্পর্কে “আঘাত” ও “দুঃখ” প্রকাশ করে একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে চলচ্চিত্রটি পুনর্বহাল করলেই তারা শুধু জুরি সদস্য হিসেবে থাকবে।
সমর্থনের বহিঃপ্রকাশে উৎসবের আয়োজকদের শেষ পর্যন্ত তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে বাধ্য করে। ছবিটি ২৮ সেপ্টেম্বর উৎসবের কর্মসূচিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরে আসে। উৎসবের পরিচালক আহমেত বয়াসিওলু বলেন, “তথ্যচিত্রতে থাকা ব্যক্তিকে নিয়ে বিচার প্রক্রিয়া চলছে না, তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে ছবিটি প্রতিযোগিতার নির্বাচনে অন্তর্ভুক্ত হবে।”
এটি উৎসবের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে সমর্থন প্রত্যাহারে প্ররোচিত করে। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিচার মন্ত্রী ইলমাজ তুঞ্ছ বলেছেন, “সোনালী কমলা চলচ্চিত্র উৎসবের মতো ঐতিহ্যবাহী উৎসবে সন্ত্রাসী সংগঠনের পক্ষে প্রচারণা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।” মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পর উৎসবের পৃষ্ঠপোষকরাও তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে।
আহমেত বয়াসিওলু ২৮ সেপ্টেম্বর টুইট করেন তথ্যচিত্র নিয়ে বিতর্কের ফলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে তিনি কর্মসূচি থেকে ছবিটি সরিয়ে নিচ্ছেন।
আন্তালিয়ার মেয়র মুহিতিন বোসেক ২৯ সেপ্টেম্বর উৎসবটি পুরো বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
২০১৬ সালের অভ্যুত্থান ও তার ফলাফল
তাহলে শাসক দল ছবিটি নিয়ে এতো ক্ষিপ্ত কেন?
ব্যর্থ অভ্যুত্থান ২০১৬-এর পর তুরস্কের কর্তৃপক্ষ ব্যাপকভাবে সুশীল সমাজের পেছনে লাগে। তুর্কি কর্মকর্তাদের ফেতো (ফেতুল্লাহ গুলেন সন্ত্রাসী সংগঠন) নামে উল্লিখিত গুলেন আন্দোলন সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ২,১৮,০০০ জনকে আটক করা হয়।
অভ্যুত্থানটি কর্তৃপক্ষকে অবক্ষয়ী গুলেনবাদী প্রভাব নির্মূল ছাড়াও তখন থেকে রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের বারবার উচ্চারিত একটি “নতুন তুরস্ক” তৈরির জন্যেও একটি কার্যকর অজুহাত প্রদান করেছে। এই “নতুন তুরস্ক” দেশের ভবিষ্যতের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির জন্যে খুব বেশি জায়গা ছাড়ে না।
ইতোমধ্যে গুলেন আন্দোলন রাষ্ট্রের কাছে সব ধরনের বিরোধিতা নির্মূলের একটি হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। সামরিক ও শিক্ষাখাত থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক বিশ্ব ও গণমাধ্যম পর্যন্ত এমনকি যারা আন্দোলনে প্রায় কিছুই করেনি তুরস্কের এমন হাজার হাজার লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজও এই গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পরের দুই বছরে অভ্যুত্থান পরবর্তী পতন এড়ানোর চেষ্টারত ব্যবসাগুলির অগণিত পেশাদার তাদের চাকরি হারিয়েছে।
এখন চলচ্চিত্র উৎসবটি তুরস্কের অসংখ্য বাতিল হওয়া সাংস্কৃতিক ও শিল্প অনুষ্ঠানের একটি।