ইয়িঙ্কা ওলাইতোর লেখা
গণমাধ্যম রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য বিধান এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে বিস্তৃত করে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও নাইজেরিয়ায় সরকার ধারাবাহিকভাবে অসংখ্য রাজনীতিবিদকে হয়রানিসহ গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদনের ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে।
নাইজেরিয়ার অনলাইন সংবাদ সাইট কেবলের একটি এক্স (পূর্বে টুইটার) পোস্ট অনুসারে বেশ কিছু নাইজেরীয় সাংবাদিক ও তিনটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি হামলার সম্মুখীন হয়েছে:
IPC: 66 Nigerian journalists, three media houses attacked in 2022 | TheCable https://t.co/MNstyob3xA pic.twitter.com/5e700GtOjA
— TheCable (@thecableng) May 5, 2023
আইপিসি: ২০২২ সালে নাইজেরিয়ার ৬৬ সাংবাদিক ও তিনটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে হামলা|
বিবিসি নাইজেরিয়ার গণমাধ্যম স্থানকে আফ্রিকার সবচেয়ে প্রাণবন্ত বলে বর্ণনা করলেও তার মানে এই নয় গণমাধ্যমটি সেন্সর বা হয়রানি থেকে মুক্ত। প্রতিবেদনের জন্যে সাংবাদিকরা প্রায়শই হুমকি, গ্রেপ্তার বা এমনকি হত্যার সম্মুখীন এবং কখনো কখনো গণমাধ্যম কেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এটি আশ্চর্যজনক নয়, বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুচকে নাইজেরিয়ার অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ২০২১ সালে ১২০তম থেকে ২০২৩ সালে ১২৩তম স্থানে নেমে এসেছে৷ নাইজেরিয়ার সরকার এই অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেও বাস্তবতা একই থেকে গেছে৷ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নাইজেরিয়ার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হ্রাস পেয়েছে এবং সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে৷
উদাহরণস্বরূপ, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সম্মুখসারির একজন সাংবাদিক ল্যানরে অ্যারোগুন্দাদেওনকে গাম্বিয়ার বানজুল থেকে লাগোসে ফেরার পথে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী রাষ্ট্রীয় পরিষেবা বিভাগ (ডিএসএস) গ্রেপ্তার করে। তার মুক্তির পরে ডিএসএস একটি ভুল পরিচয়ের ঘটনা দাবি করে। কিন্তু সাহারা রিপোর্টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তাকে রাষ্ট্রপতি মুহাম্মাদু বুহারি প্রশাসন বিরোধী সাংবাদিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে অত্যাচারের আরেকটি উদাহরণ দেখান জামফারা রাজ্যের প্রাক্তন গভর্নর বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেলো মাতাওয়ালে। তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে বিরোধীদলের করা একটি সমাবেশ কভারেজের জন্যে ছয়টি গণমাধ্যম কেন্দ্র বন্ধের নির্দেশ দেন, যাকে স্পষ্টতই বিরোধীদলকে দমনের চেষ্টা হিসেবে দেখা হয়।
এছাড়াও, নাইজেরিয়া সম্প্রচার কমিশন (এনবিসি) এর মতে “দস্যুদের কার্যকলাপকে মহিমান্বিত করা”র গল্প সম্প্রচারের জন্যে ডিএসটিভিসহ আনুমানিক পাঁচটি গণমাধ্যম কেন্দ্রের প্রতিটিকে ৫০ লক্ষ নায়ারা (প্রায় ৭০.৭১ কোটি টাকা) করে জরিমানার পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে জন ও মানবাধিকার বিষয়ক আফ্রিকীয় কমিশন (এসিএইচপিআর)। নাইজেরিয়ার ২০২৩ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে লেবার পার্টির উপ-রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ইউসুফ দাত্তির মতামত সম্প্রচারের জন্যে চ্যানেলটির টেলিভিশনকে তার মন্তব্য জনশৃঙ্খলা ব্যাহত করতে পারে এমন দাবি করে একই ধরনের জরিমানা আরোপ করে। ঘৃণাত্মক বক্তৃতা ও জ্বালাময়ী মন্তব্যকে নিরুৎসাহিত করা অপরিহার্য হলেও এনবিসির চিঠি বিশেষভাবে এই উদ্বেগগুলিকে আমলে নেয়নি। অধিকন্তু, যথাযথ প্রক্রিয়ায় জরিমানা আরোপের আগে ন্যায্য শুনানির নীতিও পালন করা হয়নি।
সম্প্রতি নাইজেরীয় কেন্দ্রীয় সরকার সারাদেশে কিছু বিলবোর্ডে “বিচার বিভাগের উপর সবার নজর” বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্যে নাইজেরিয়ার বিজ্ঞাপনী মানদণ্ডের প্যানেল (এপিএল) ভেঙে দিয়েছে। এই ঘটনাটি বিচার বিভাগের নজরদারির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। নাইজেরিয়া বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রক পর্ষদ (এআরসিওএন) বোর্ডের বিলুপ্তি একটি উদ্বেগজনক ঘটনা। এটি সরকার যে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে সমালোচকদের চুপ করিয়ে দিতে ইচ্ছুক তা দেখায়। এটি বিজ্ঞাপন শিল্পের স্বাধীনতাকেও ক্ষুন্ন করে।
বর্তমান কঠিন খনিজ মন্ত্রী ডেল আলাকের কঠোর সামাজিক গণমাধ্যম প্রবিধানের আহ্বানও উদ্বেগজনক। সামাজিক গণমাধ্যম যোগাযোগ ও মতপ্রকাশের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এটি মানুষকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত অবাধে ভাগাভাগির সুযোগ দেয়। ভিন্নমত নীরব ও বাকস্বাধীনতা সীমিত করতে কঠোর প্রবিধান ব্যবহার করা হতে পারে। সরকার কীভাবে গণমাধ্যমকে নীরব করার জন্যে তার ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে ২০২১ সালে রাষ্ট্রপতি বুহারি প্রশাসনের টুইটার নিষেধাজ্ঞা তার আরেকটি উদাহরণ। প্রায় সাত মাস ধরে জারি থাকা এই নিষেধাজ্ঞা নাইজেরিয়ায় বাকস্বাধীনতার উপর একটি শীতল প্রভাব ফেলে।
নাইজেরীয় নেতৃবৃন্দ, রাজনীতিবিদ ও সংস্থা প্রধানদের বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের উপকরণ হিসেবে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা দেয়া নাইজেরীয় সংবিধানের ৩৯ (১) (২) ধারায় মনোযোগ দেওয়া উচিত। নাইজেরীয় নেতৃবৃন্দকে অবশ্যই এসিএইচপিআর এর ১৬ ও ১৭ ধারায় বর্ণিত নীতি অনুসারে গণমাধ্যম শিল্পের যথাযথ কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে। এই নীতিগুলি সরকার ও তার সংস্থাসমূহের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক বোর্ডগুলির অখণ্ডতা বজায় রাখা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
গণতন্ত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই এটি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। সরকার, বিচার বিভাগ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিকে অবশ্যই গণমাধ্যমকে সমর্থন করে সংবাদ প্রতিবেদন ও সরকারকে জবাবদিহি করানোর ক্ষেত্রে এর স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে অবশ্যই সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার, গণমাধ্যম কেন্দ্র বন্ধ বা সাংবাদিকদের সহিংসতার হুমকি দেওয়াসহ গণমাধ্যমকে হয়রানি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। গণমাধ্যমকে সরকারের হয়রানি, গণতন্ত্রের জন্যে সরাসরি হুমকি।