পাকিস্তানি পাঞ্জাবি-উর্দু ছবি ‘জিন্দেগি তামাশা’ (জীবনের তামাশা) ২০২০ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবার কথা ছিল। তবে ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের হুমকির কারণে এটি মুক্তি পায়নি, এবং অবশেষে অনেক বিলম্বের পরে ৪ আগস্ট, ২০২৩ থেকে এটিকে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। পরিচালক সারমাদ খুসাত অনলাইনে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটির ভূমিকায় বলেছেন, “[পাকিস্তানের] স্বাধীনতার মাসে আমি আমার চলচ্চিত্রকে স্বাধীনতা ও মুক্তি দিচ্ছি।”
চলচ্চিত্রটি কেন বিতর্কিত?
২০১৯ সালে তৈরি পাকিস্তানি এই চলচ্চিত্রটির মূল নায়ক হচ্ছে নবী মুহাম্মদের প্রশস্তিমূলক কবিতা ও গান না'ত গাওয়া ও রেকর্ড করা একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। ‘জিন্দেগি তামাশা’ নামের একটি পাঞ্জাবি গানের সাথে তার নাচের ভিডিও ভাইরাল হলে তার জীবন একটি নাটকীয় মোড় নেয়।
চলচ্চিত্রটি ২০১৯ সালের অক্টোবরে ২৪তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথম প্রদর্শিত হয়। তবে ২০২১ সালে ৯৩তম একাডেমি পুরস্কারে (অস্কার) আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের হিসেবে জমা হলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পায়নি।
সেন্সর বোর্ডের অনুমোদনের পরে এটি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও অতি-ডান ইসলামি চরমপন্থী রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-লাবাইক পাকিস্তানের (টিএলপি) নেতৃত্বে ব্যাপক বিক্ষোভের কারণে এর মুক্তি স্থগিত করা হয়। টিএলপি’র একজন মুখপাত্র চলচ্চিত্রটিকে ধর্মদ্রোহী বিবেচনা করে দাবি করেন যে নাত-পাঠকের এমন চরিত্রায়ন জনগণকে ইসলাম থেকে বিচ্যুত করতে পারে। অন্য বিতর্কিত সমস্যাটি হলো চলচ্চিত্রটিতে আলেম ও বয়স্ক পুরুষদের অল্পবয়সী ছেলেদের যৌন নির্যাতন বিষয়ক বাচ্চাবাজির উল্লেখ। ইসলামি শরিয়া আইনকে পাকিস্তানের সরকারি আইন ঘোষণা করা রাজনৈতিক দল হিসেবে টিএলপি’র দাবি। পাকিস্তানে ২০২১ সালের শুরুর দিকে টিএলপি’কে নিষিদ্ধ করা হলেও ২০২১ সালের নভেম্বরে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
জিন্দেগি তামাশা'র মুক্তির লড়াই
পরিচালক সারমাদ খুসাত ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চলচ্চিত্রটির প্রদর্শন ও মুক্তিতে হস্তক্ষেপের জন্যে লাহোর আদালতে টিএলপি’র বিরুদ্ধে একটি আবেদন করেন। মানবাধিকার সংক্রান্ত সিনেট কমিটি ২০২০ সালের জুলাই মাসে বিরুদ্ধ সকল আপত্তি খারিজ করে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের অনুমোদন দেয়। তবে এর কিছুদিন পরেই লাহোর আদালতে চলচ্চিত্রটির উপর আজীবন নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি আবেদন দাখিল করা হয়।
সিনেমাটি ১৮ মার্চ, ২০২২ তারিখে মুক্তির জন্যে পুনঃনির্ধারণ করা হলেও প্রদর্শনী আবারো বন্ধ করা হয়।
চলচ্চিত্রটি শেষ পর্যন্ত ইউটিউবে ২০২৩ সালের আগস্টে প্রকাশিত হলে এটি সমালোচক ও সামাজিক গণমাধ্যমের ভক্তদের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছে, অনেকেই চলচ্চিত্রটির বিরুদ্ধে আপত্তির ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
লেখক ও টিভি উপস্থাপক জারার খুহরো এক্সে (পূর্বের টুইটার) পোস্ট করেছেন:
What a beautiful, sad and absolutely harrowing movie #zindagitamasha is. Fantastic work by sarkad khoosat. Watch it here https://t.co/iVArQSoGaR
— Zarrar Khuhro (@ZarrarKhuhro) August 13, 2023
কতো সুন্দর, দুঃখজনক ও পুরোপুরি মর্মস্পর্শী চলচ্চিত্র #জিন্দেগিতামাশা। সারমাদ খুসাতের চমৎকার কাজ। এখানে দেখুন
সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র সমালোচক উমাইর সান্ধু প্রশ্ন করেছেন:
Watched #ZindagiTamasha, a film banned in #Pakistan. The film truly depicts the religious-hypocritic standards of the typical Pakistani urban society. Wondering what the hell made the justification to ban the film?
Still feeling Goosebumps after watching it 🫣 pic.twitter.com/GmCL2fAbDD
— Umair Sandhu (@UmairSandu) August 4, 2023
#পাকিস্তানে নিষিদ্ধ চলচ্চিত্র #জিন্দেগিতামাশা দেখেছি। চলচ্চিত্রটি সত্যিকার অর্থে সাধারণ পাকিস্তানি শহুরে সমাজের ধর্মীয়-কপট মানগুলিকে চিত্রিত করে। চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ করার যৌক্তিকতা নিয়ে ভাবছি?
এটা দেখার পর এখনো শিহরণ অনুভব করছি 🫣
ভারতের একজন লেখক ও স্থপতি ঐশ্বরিয়া ঠাকুর অনলাইনে চলচ্চিত্রটি দেখার পর তার নিজের মন্তব্য ভাগাভাগি করেছেন:
Long awaited & controversial Pakistani film ‘Zindagi Tamasha’ leaves you with deep disgust for a society that always hovers above our heads with prying judgemental gaze.
What's wrong with a (religious) man dancing ? Why does one have to be ultra-righteous to fit societal norms? pic.twitter.com/pirNuUtj3Q
— Aeshvarya Thakur (@mayamatchstick) August 30, 2023
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ও বিতর্কিত পাকিস্তানি চলচ্চিত্র ‘জিন্দেগি তামাশা’ সারাক্ষণ আমাদের মাথার উপরে বিচারমূলক শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা একটি সমাজের প্রতি আপনারা মধ্যে গভীর ঘৃণা তৈরি করে।
একজন (ধর্মীয়) পুরুষ নাচলে দোষ কি? সামাজিক নিয়মের সাথে মানানসই হতে কেন একজনকে অতি-ধার্মিক হতে হবে?
পাকিস্তানের লাহোরের ছাত্র মিনহাল আওয়ান ফেসবুকে লিখেছেন:
এখনো আমাদের স্থির বিশ্বাস ধর্ম মূলত একটি সাম্প্রদায়িক কর্ম, আচরণ, ঈশ্বরের উপাসনা, একটি চর্চা। আমি অবশ্যই বলতে চাই আমরা উত্তর-আধুনিকোত্তর বিশ্বের জনগণ ভেতরে ভেতরে এখনো সমস্যাগুলিতে জড়িয়ে আছি। ডার্কহাইমের দৃষ্টিকোণ থেকে এখানে একজন ব্যক্তির নিজেকে ধর্মের পূর্বশর্তে থাকা ও এটিকে নিজের মতো ছাঁট না দেওয়া উচিত। আমরা একটা ধারণা পেতে পারি জীবন এবং বিশেষ করে ধর্ম ঐতিহ্য-নিয়ন্ত্রিত গির্জা-উপাসনালয়ের বাইরে বিদ্যমান। আল্লাহ আমাদের অসুস্থ চেতনা থেকে আমাদের মুক্তি দিন।
পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ১৪ আগস্ট, ২০২৩ তারিখে সারমাদ খুসাতকে পাকিস্তানের শিল্প ও সংস্কৃতির দৃশ্যপটে অবদানের জন্যে দেশের তৃতীয়-সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার সিতারা-ই-ইমতিয়াজ দিয়ে সম্মানিত করা হয়। সুপার-হিট টিভি নাটক হামসাফর (২০১১) এবং শেহর-ই-জাত (২০১২) পরিচালনার জন্যে সর্বাধিক পরিচিত খুসাত ২০২৩ সালের অস্কারে সেরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের জন্যে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত পাকিস্তানি চলচ্চিত্র জয়ল্যান্ডেরও সহ-প্রযোজক। একজন এক্স ব্যবহারকারী একটি পোস্টে পুরস্কারটির বিড়ম্বনা নির্দেশ করেছেন:
What a country. Sarmad Khoosat to get Sitara e Imtiaz for his contributions to the arts. But his art cannot be displayed in cinemas in Pakistan.
— Faisal Bari (@BariFaisal) August 16, 2023
কী দেশ! সারমাদ খুসাতশিল্পে অবদানের জন্যে সিতারা ই ইমতিয়াজ পেলেও তার শিল্প পাকিস্তানের সিনেমাহলে প্রদর্শিত হতে পারে না।
সারমাদ খুসাত ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বিবিসি উর্দুতে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন সেন্সর বোর্ডের অনুমোদন সত্ত্বেও চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেওয়া যায়নি এবং তিনি কখনোই চলচ্চিত্রটির মুক্তি নিষিদ্ধের কোনো লিখিত আনুষ্ঠানিক আদেশ পাননি।
অর্থের বিনিময়ে ভিমিওতে পরিচালকের পরিচালকের সম্পাদিত কপিটিতে ইউটিউব সংস্করণে অনুপস্থিত সেন্সর করা দৃশ্যগুলি রয়েছে। এটি সম্ভবত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষাগৃহে বিলম্বিত মুক্তির কারণে আর্থিক ক্ষতি পোষাতে সাহায্য করবে।