মঙ্গলবার ৪ সেপ্টেম্বর কেনীয় সরকার ও আফ্রিকীয় ইউনিয়ন আয়োজিত নাইরোবির কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক সম্মেলেন কেন্দ্রে আফ্রিকা জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন (এসিএস) এর উদ্বোধন হয়। শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত আফ্রিকীয় নেতারা জলবায়ু সংকটের টেকসই সমাধান খোঁজার পথে নেতৃত্ব দিতে সম্মত হন।
শীর্ষ সম্মেলনে সামিয়া সুলুহু (তানজানিয়া), পল কাগামে (রুয়ান্ডা), এভারিসে এনদাইশিমিয়ে (বুরুন্ডি), ফিলিপে নুসি (মোজাম্বিক), সালভা কির (দক্ষিণ সুদান), সাসু এনগুয়েসো (কঙ্গো), মোস্তফা মাদবউলি (মিশর), নানা আকুফো-আদ্দো (ঘানা), মোহাম্মদ ইউনিস মেনফি (লিবিয়া), জুলিয়াস মাদা (সিয়েরা লিওন), সাহলে-ওয়ার্ক জিউদে (ইথিওপিয়া), ব্রাহিম ঘালি (সাহরাউই), আজালি আসুমানি (কোমোরোস), ইসমাইল ওমর গুয়েলেহ (জিবুতি), ইসায়াস আফোয়ার্কি (ইরিত্রিয়া) এবং ম্যাকি সাল (সেনেগাল) এর সাথে কেনিয়ার রাষ্ট্রপতি উইলিয়াম রুটো উপস্থিত ছিলেন।
আফ্রিকা জলবায়ু পরিবর্তনের বিধ্বংসী প্রভাবের সাথে অপরিচিত নয়। দীর্ঘস্থায়ী খরা থেকে শুরু করে অনিয়মিত আবহাওয়ার ধরন পর্যন্ত ২০ লক্ষ শিশুর স্থানচ্যুতি এবং বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তির মতো জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতিগুলি মহাদেশটিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। প্রকৃতপক্ষে শীর্ষসম্মেলনের সময় রাষ্ট্রপতি রুটো তার উদ্বোধনী বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন দূ ষণের মৃদু অবদানকারী হওয়া সত্ত্বেও আফ্রিকা বিশ্ব উষ্ণায়নের সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাবের সম্মুখীন। শীর্ষ সম্মেলনের সময় গবেষণা সংস্থা আফ্রোব্যারোমিটার ৩৬টি আফ্রিকীয় দেশে পরিচালিত সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করে, যা বেশিরভাগ নাগরিকের জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে জরুরি সরকারি পদক্ষেপ দাবি প্রকাশ করে। তবে সারাদেশে জরিপকৃত বিভিন্ন মাত্রার সচেতনতাসহ মাত্র ৫২ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন। যারা সচেতন তাদের মধ্যে বিশেষ করে মাদাগাস্কার, লেসোথো, মরিশাস, মালাউই ও বেনিনে বেশিরভাগ বিশ্বাস করে জলবায়ু পরিবর্তন তাদের জীবনকে আরো খারাপ করে তুলছে। পরিস্থিতির জরুরিতা অনস্বীকার্য এবং আফ্রিকা জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন এই সংকট মোকাবেলায় আফ্রিকীয় দেশগুলির প্রতিশ্রুতির একটি প্রমাণ।
শীর্ষসম্মেলনের মূল পদক্ষেপ
শীর্ষ সম্মেলনে আফ্রিকীয় নেতারা জলবায়ু সংকটের টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তারা জলবায়ু সমাধানের ক্ষেত্রে আফ্রিকার অগ্রভাগে থাকার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে সবুজ বৃদ্ধি ও কার্বন কমানো সমাধানের প্রস্তাব লুফে নেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রপতি রুটো বলেছেন:
আমরা সীমিত ও একক নীতির মাধ্যমে জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ নিতে পারবো না। আমাদের বিশ্বের ছোট ছোট জায়গা এবং কোণে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রশমিত করা যাবে না।
তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আফ্রিকার কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে দোষারোপ না করে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। আফ্রিকা নিউজরুমের এই নিবন্ধটি নেতাদের উল্লিখিত জলবায়ু পরিবর্তন ও মহাদেশের উন্নয়ন ঘনিষ্ঠ কিছু বিবৃতি তুলে ধরেছে।
দক্ষিণ সুদানের রাষ্ট্রপতি কির বলেছেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রতিহত করতে আফ্রিকাকে অবশ্যই তার বিশাল নবায়নযোগ্য শক্তির সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। ইরিত্রিয়ার রাষ্ট্রপতি আফওয়ারকি তাকে সমর্থন করে বলেন দানছত্রের উপর নির্ভর না করে আফ্রিকার নিজস্ব সংস্থানগুলি একত্রিত করার সময় এসেছে। নেতৃবৃন্দ জলবায়ু পরিবর্তন ও আফ্রিকার উন্নয়নের আন্তঃসংযোগ এবং উন্নত দেশগুলির সাথে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
তারা মৌলিক পদক্ষেপ, আফ্রিকার নিজস্ব সম্পদ একত্রীকরণ এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়নে সুবিন্যস্ত প্রবেশাধিকারের আহ্বান জানিয়েছে। রাষ্ট্রপতি রুটো আফ্রিকার ঋণের বোঝা মোকাবেলায় আরো ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার আহ্বান জানান। উপস্থিতরা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের বরাদ্দ ও কেনিয়ার জন্যে সবুজ হাইড্রোজেন কৌশল ও পথচিত্র চালুর ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন।
শীর্ষসম্মেলনকে ঘিরে বিতর্ক
ইউরোসংবাদের প্রতিবেদনে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্প্রতি কেনিয়ার বাণিজ্যিক কাঠ সংগ্রহের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানীর উদ্যোগ এবং একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও কেনিয়ায় জলবায়ু-বান্ধব অভিযোজনের চ্যালেঞ্জগুলি রয়েই গেছে।
বিবিসির একটি প্রতিবেদন অনুসারে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কেনিয়ার বারিংগো হ্রদে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে জলহস্তী ও কুমিরের আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবিকা ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। বারিংগো হ্রদের বাসিন্দারা জলবায়ু সংকটে সাড়া দিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্যে কেনিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে জমি, খামারের ক্ষতি ও জলবাহিত রোগের সংস্পর্শে আসার জন্যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করছে।
উপরন্তু, আফ্রিকাফিডসের একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে অনেক আফ্রিকীয় প্রচারক জলবায়ু অর্থায়নের জন্যে শীর্ষসম্মেলনের পদ্ধতির বিরোধিতা করে বলেছে এটি মহাদেশের ব্যয়ে পশ্চিমা অগ্রাধিকারগুলিকে অগ্রসর করছে। পাওয়ার শিফট আফ্রিকা চিন্তাবিদ শক্তি পরিচালক মোহাম্মদ আদো এক্স (পূর্বের টুইটার) পোস্টে বলেছেন:
David is right that Africa is blessed with a youthful population, amazing renewable resources and rich biodiversity.
But trying to shackle Africa with failed carbon markets is just a false solution imposed by the Global North who are the real beneficiaries
— Mohamed Adow (@mohadow) September 5,
ডেভিড ঠিক বলেছেন আফ্রিকা তরুণ জনসংখ্যা, আশ্চর্যজনক নবায়ণযোগ্য সম্পদ ও সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যে আশীর্বাদপুষ্ট।
কিন্তু ব্যর্থ কার্বন বাজারের সাথে আফ্রিকাকে বেঁধে ফেলার চেষ্টা প্রকৃত সুবিধাভোগী বৈশ্বিক উত্তর আরোপিত একটি মিথ্যা সমাধান
প্রথম আফ্রিকীয় জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনটি জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আফ্রিকীয় দেশগুলির সম্মিলিত সংকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চিহ্নিত করে৷ বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আফ্রিকীয় নেতারা টেকসই সমাধান খোঁজার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার একটি প্রতিশ্রুতিতে ঐক্যবদ্ধ বলেই মনে হচ্ছে। সামনের পথ বাধা-বিপত্তিতে ভরপুর হলেও এই শীর্ষসম্মেলনের মূল পদক্ষেপগুলি আশা করে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় আফ্রিকা হয়তো এবং অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।