
মালয়েশিয়াতে সংবাদ ওয়েবসাইট পৃথিবী টিভি, মালয়েশিয়াএখন এবং উতুসানটিভি’র লোগো অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
গত দুই মাস ধরে বেশ কয়েকটি সংবাদ ওয়েবসাইট অবরোধের পর গণমাধ্যম গোষ্ঠীগুলো মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষকে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।
মালয়েশিয়াএখন সংবাদ ওয়েবসাইট জুন মাসে দুই দিন প্রবেশযোগ্য ছিল না। রাজ্য নির্বাচনের কয়েকদিন আগে ৭ আগস্ট উতুসানটিভি’র ওয়েবসাইট অবরোধ করা হয়। মালয়েশিয়া টুডে ও প্রাক্তন সাংসদ উই চু কিয়ং পরিচালিত একটি ব্লগও আগস্ট মাসে অবরোধ করা হয়। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অনুপযুক্ত চিহ্নিত বেশ কয়েকটি ভিডিও অপসারণ করতে না চাওয়ায় সংবাদ ওয়েবসাইট পৃথিবী টিভি ব্লক করা হয়।
এই ওয়েবসাইটগুলির অবরোধ মালয়েশীয় যোগাযোগ ও মাল্টিমিডিয়া কমিশন (এমসিএমসি) জারিকৃত নির্দেশের সাথে যুক্ত। কমিশন রাজ্য নির্বাচনের আগে জাতি, ধর্ম ও রাজকীয়তার জন্যে উস্কনিমূলক বিষয়বস্তু নিষিদ্ধ করবে বলে আগে সতর্ক করেছিল।
#Malaysia🇲🇾: As state elections are scheduled for Saturday 12/08, the online news site @UtusanTV has been blocked in the country for several days. RSF urges the communications commission @MCMC_RASMI to shed light on this restriction and to lift its blockage without delay. pic.twitter.com/6zOcGET1HO
— RSF (@RSF_inter) August 11, 2023
মালয়েশিয়াআমার: রাজ্য নির্বাচন ১২/০৮ শনিবার তারিখে নির্ধারিত হওয়ায় কয়েকদিন ধরে দেশে অনলাইন সংবাদ সাইট @উতুসানটিভি অবরুদ্ধ করা হয়েছে। আরএসএফ যোগাযোগ কমিশনের @এমসিএমসি_রাস্মি-কে এই বিধিনিষেধের উপর আলোকপাত করে অবিলম্বে এর অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেছে।
পৃথিবী টিভি বলেছে এমসিএমসি অপসারণের জন্যে তাদের চিহ্নিত ভিডিওগুলিতে থাকা আপত্তিকর বিষয়বস্তু উল্লেখ করতে না পারায় তারা সংস্থাটির আদেশ মেনে চলতে অস্বীকার করেছে।
পৃথিবী টিভি বিশ্বাস করে কোনো পক্ষপাতমূলক রাজনৈতিক প্রবণতার সাথে আবদ্ধ না হয়ে জনসাধারণের ভারসাম্যপূর্ণ, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য এবং সমাজ ও দেশের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে সংবাদ পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
উপরন্তু, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতামত বা ভিন্নমত প্রকাশকে মানবাধিকারের মৌলিক উপাদান এবং শিক্ষিত নাগরিকত্বের প্রগতিশীল পথে গণতান্ত্রিক চর্চার একটি বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করা উচিত।
বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ্য সম্পাদক ২৯ আগস্ট একটি যৌথ বিবৃতিতে সরকারকে গণমাধ্যমের উপর “দাদাগিরি” বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
আরো উদ্বেগের বিষয় হলো তথাকথিত ‘আপত্তিকর’ বিষয়বস্তুর বেশিরভাগই সরকারের সমালোচনামূলক প্রতিবেদন ও মতামতের অংশ মাত্র।
বর্তমান সরকার তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও একটি প্রাণবন্ত মুক্ত সংবাদমাধ্যমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে।
গণমাধ্যম চর্চাকারীদের অভিযোগ তাদের সাইটগুলি অবরোধের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। অবিলম্বে এই অস্বাস্থ্যকর প্রবণতাটি বন্ধ করা উচিত।
আমরা মনে করি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অন্যান্য অগ্রাধিকার থাকলেও, এভাবে ওয়েবসাইট অবরোধ করা তার মধ্যে নেই।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা গেরাকান গণমাধ্যম মারদেকা জোর দিয়ে বলেছে “স্পষ্টভাবেই কোনো ধরনের অনলাইন সংবাদ বা বৈধ মতামত এই ধরনের সেন্সরের শিকার হওয়া উচিত নয়।” সুশীল সমাজের নেটওয়ার্ক বার্সিহ তথ্য দমনের বিপদ চিহ্নিত করেছে।
পক্ষপাতমূলকভাবে দমনাভিযান চালানো হলে চাপা কণ্ঠস্বরগুলি কেবল তলে তলে শক্তিশালী হয়ে উঠে অন্তর্ভুক্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যে আরো বড় বিপদ তৈরি করবে।
প্রকাশ্য গণমাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দলকে অবাধ ও ন্যায্য প্রবেশাধিকার গণতন্ত্রের একটি মূল ভিত্তি হলেও দুঃখজনকভাবে মালয়েশিয়ায় আমাদের নির্বাচনগুলি কখনো এমন ন্যায্যতা দেখেনি।
জবাবে এমসিএমসি জোর দিয়ে বলেছে কিছু ওয়েবসাইট অবরোধ “সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করা নয় বরং তা (করা হয়েছে) দায়িত্বশীলভাবে ও অপবাদ বা বিভ্রান্তির বিস্তার ছাড়া তথ্যের প্রচার নিশ্চিত করার জন্যেই।” কমিশন আরো বলেছে:
কিছু সংবাদ প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ায় বা ভুল বিষয়বস্তু প্রকাশ করে, যা সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির ক্ষতি করতে পারে।
অনলাইনে প্রচুর পরিমাণে তথ্য পাওয়া যাওয়ায় সত্য ও কল্পকাহিনীর মধ্যে পার্থক্য করাটা চ্যালেঞ্জের। বিভ্রান্তিকর তথ্য সহজেই প্রচার ও মিথ্যা বর্ণনা তৈরি করা যায় বলে এটি সামাজিক সম্প্রীতির জন্যে একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি সৃষ্টি করে।
এমসিএমসি গণমাধ্যমকে আশ্বস্ত করেছে তারা “মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কিত উদ্বেগ ও সমস্যাগুলি সমাধানে” সংলাপে আগ্রহী।
স্বাধীনতার জন্যে আইনজীবীর পরিচালক জায়েদ মালেক এমসিএমসি’র সংবাদ ওয়েবসাইট অবরোধ ন্যায়সঙ্গত দাবির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন:
বক্তৃতা ও সংবাদকে “ভুয়া খবর” হিসেবে সেন্সর করা বিচারের ভয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে কথাবলায় বাধা দেবে, বাক স্বাধীনতার অধিকারকে ক্ষুন্ন করবে। সরকারকে “সত্য” নির্দেশের সুযোগ দিলে তারা রাজনৈতিকভাবে প্রতিকূল বিবেচিত যেকোনো সংবাদকে দমন করবে।