গ্যাবন কার্বন ব্যবহারে উদাহরণ স্থাপন করেছে

গ্যাবনের বনাঞ্চল। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ফ্রান্সের ইউটিউব চ্যানেলে ‘গ্যাবোনের ঘনবর্ষণ বনাঞ্চলে এক সপ্তাহ বেঁচে থাকা’-এর পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।

প্রাকৃতিক বন সুরক্ষা ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গ্যাবন আফ্রিকার অন্যান্য দেশ ও সারাবিশ্ব থেকে আলাদা হলেও দেশের অর্থনীতি কি এই অগ্রগতি ধরে রাখতে পারবে?

গ্যাবোন প্রজাতন্ত্র তার পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বের একটি অনন্য অবস্থানে রয়েছে। দেশের প্রায় ৮৮ শতাংশ বনভূমি মধ্য আফ্রিকার এই দেশটিকে আমাজনের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্বনের আধারে পরিণত করেছে।

বর্তমানে দেশটির বেশিরভাগ জমিতে বনভূমি দেশটির প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও অক্টোবর ২০০৯ থেকে ক্ষমতাসীন বর্তমান রাষ্ট্রপতি আলী বঙ্গো ওন্দিম্বার পিতা ওমর বঙ্গো ওন্দিম্বা (১৯৩৫-২০০৯) পরিচালিত একটি সযত্ন উদ্যোগের ফসল। সেই সময়ে ওমর বঙ্গো ওন্দিম্বা গ্যাবনকে পরিবেশ সুরক্ষায় অগ্রগামী করার উদ্যোগ নেন।

অগ্রগামী সবুজ গ্যাবন

স্টকহোমে ১৯৭২ সালের জুনে জাতিসংঘের প্রথম ধরিত্রী সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় গ্যাবন জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিরে আসে।

এরপর থেকে এই জাতীয় অঙ্গীকার সমুন্নত রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্প চালু করা হয়েছে। পরিবেশের সুরক্ষা ও উন্নতির ২৬ আগস্ট, ১৯৯৩ সালের ১৬ নং আইনে পরিবেশ সুরক্ষার এই প্রতিশ্রুতি ধারণ করে এবং এর লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি নির্ধারণ করে। জাতীয় উদ্যান তৈরির জন্যে ২০০৭ সালে আরেকটি আইন পাস করে এসব উদ্যানের জন্যে দেশের ১১ শতাংশ জমি বরাদ্দ করা হয়।

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ২০০৯ সালে মৃত্যুর পর গ্যাবনের কর্মকর্তারা একই পথে হেঁটে গ্যাবনকে প্রধান বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী ও দূষণকারীদের নজরে আনে। আলি বঙ্গো জলবায়ু বিষয়ে মহাদেশের অন্যান্য দেশকে একত্রিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি ২০১০ সাল থেকে এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি সম্মেলনে তার দেশকে জড়িত করেন

চমৎকার পরিবেশ নীতি দেশটিকে ২০২৩ সালের মার্চে গ্যাবোনের রাজধানী লিব্রেভিলে ফ্রান্সের সাথে প্রথম ‘এক বন সম্মেলন’ আয়োজনে অংশীদার হওয়ার সুযোগ করে দেয়।

গ্যাবনের মাল্টিমিডিয়া সংবাদ ম্যাগাজিন রিফলেটস গ্যাবোন এক্সে (পূর্বের টুইটারে) এই শীর্ষ সম্মেলনের বিষয়ে প্রতিবেদন করেছে:

[প্রতিবেদন]- ২০২৩ সালের মার্চের ১ থেকে ২ পর্যন্ত গ্যাবন ও ফ্রান্সের সহ-আয়োজনে এক বন সম্মেলেন গ্যাবনকে কাঠের খাতের শিল্পায়নের প্রভাব মূল্যায়নের সুযোগ করে দিয়েছে।

পাঠ্য: ওয়ারেন ওকোলো
কণ্ঠ: অ্যানি-পল এইউই এলা
সম্পাদনা: তাঙ্গুই এনজেডই #গ্যাবোন

তবে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি সুশীল সমাজের সকল ক্রিয়াশীলদের কাছে ভাল মনে হয়নি। পরিবেশবাদী ও বেসরকারি সংস্থা ব্রেইনফরেস্টের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক ওনা এসাঙ্গুই এটিকে টিভি৫মঁদে সামান্য কার্যকরী আরেকটি শীর্ষ সম্মেলন বলে সমালোচনা করেছেন। তার মতে সম্মেলন শেষে এর সুপারিশগুলি ফেলে রাখা হতে পারে:

মধ্য আফ্রিকা সফরের শুরুতে ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন সংরক্ষণের উপর #গ্যাবনে “এক বন সম্মেলনে” অংশ নেবেন। আমরা কী আশা করতে পারি? “ব্রেইনফরেস্ট” এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক ওনা এসসাঙ্গুইয়ের প্রতিক্রিয়া।

উল্লেখ করা দরকার গ্যাবনের বন উন্নয়ন এই বনাঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীদের সম্পত্তির অধিকার ও জীবনযাত্রাকে সম্মান করে। গ্যাবনের বনগুলিতে বেশিরভাগ বাকা জাতিসহ বিভিন্ন উপজাতি ও জনগণের বাসস্থান হলেও এই গোষ্ঠীগুলির জন্যে জলবায়ু বিবেচনা একটি গুরুতর হুমকি হতে পারে। বাস্তবে এই বনগুলিতে উপস্থিত বাস্তুতন্ত্র-রক্ষী আরোপিত বর্ধিত নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধগুলি শুধু প্রাকৃতিক বনসম্পদ ও উৎপাদের উপর নির্ভরশীল আদিবাসী জনগণের জীবনকে অস্থিতিশীল করতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী দ্বিধার মুখে গ্যাবন

গ্যাবন এখন তার বন সংরক্ষণ নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে। আসলে দেশটি তার বন সংরক্ষণের জন্যে অর্থ পেতে শুরু করেছে। এটি জাতিসংঘ-সমর্থিত ২০২১ সালে মধ্য আফ্রিকীয় বন উদ্যোগ (সিএএফআই) থেকে প্রায় ১৮৬.৭ কোটি টাকা পেয়েছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি) এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বিশ্বব্যাংকের সাথে অংশীদারিত্বে চালু এই কর্মসূচিটি কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, গ্যাবন, নিরক্ষীয় গিনি, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ক্যামেরুন ও মধ্য আফ্রিকীয় প্রজাতন্ত্র মিলে ছয়টি মধ্য আফ্রিকীয় দেশের একটি ফোরাম। সিএএফআই’র লক্ষ্য এই দেশগুলিকে বন উজাড়ের ফলে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে তাদের প্রচেষ্টা ভিত্তিক তহবিল প্রদানের মাধ্যমে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়তা করা।

তবে সিএএফআই থেকে পাওয়া তহবিল গ্যাবনের অর্থনীতি পুনর্গঠন বা যুব বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের জন্যে যথেষ্ট নয়।

সর্বোপরি এই পরিস্থিতিতে মূলত তেল আহরণের উপর নির্ভরশীল আফ্রিকার চতুর্থ বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী গ্যাবনের অর্থনীতি তখন খনি ও কাঠের মতো অন্যান্য খাতে পরিবেশগত প্রভাব ফেলবে। তবে তেলের মজুদ হ্রাসের সাথে সাথে গ্যাবোনের কর্মকর্তারা এখন বিবেচনা করছেতার বনের “বাদামী সোনা”র ভবিষ্যৎ ব্যাপক ব্যবহার। আফ্রিকীয় সংবাদপত্র তরুণ আফ্রিকা টুইট করেছে:

মহাদেশের শীর্ষস্থানীয় কাঠ রপ্তানিকারক হিসেবে #গ্যাবন তেল-পরবর্তী যুগের জন্যে প্রস্তুত হতে তার বন ব্যবহারের উপর নির্ভর করছে। লাভ ও পরিবেশগত সুরক্ষা একত্রিত করার কারণে খাতটির অর্থনৈতিক অংশীজনরা বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

গ্যাবনের বর্তমান আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ সরকারি কর্মকর্তাদের পরিবেশ সুরক্ষা ও বন সংরক্ষণের বিষয়ে তাদের নীতি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করতে পারে। আর্থিক সংবাদপত্রের আফ্রিকা ট্রিবিউনের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মেস মুইসি এই সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলির রূপরেখা দিয়েছেন:

(…) Le taux de croissance du PIB demeure faible, entre 2 et 3%. Le taux de chômage est passé de 28% à 32% au cours de ce septennat tandis que le taux de pauvreté est passé de 30% à 34%. En dépit des progrès réalisés dans le secteur bois dont la contribution au PIB est passée de 2,9% en 2016 à 3,9% en 2022, l'économie gabonaise qui demeure peu diversifiée est toujours fortement dépendante des revenus pétroliers. L'accès aux services de base comme l'eau et l'électricité s'est dégradé, y compris dans la capitale où il faut parfois attendre plus d'un an pour avoir un simple compteur d'électricité.

(…) জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ২ থেকে ৩ শতাংশে নেমে আছে। এই সাত বছরে বেকারত্বের হার ২৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩২ শতাংশে এবং দারিদ্র্যের হার ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কাঠের খাতে অগ্রগতি সত্ত্বেও জিডিপি অবদান ২০১৬ সালে ২.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৩.৯ শতাংশে হলেও গ্যাবনের বৈচিত্র্যহীন অর্থনীতি এখনোও অনেকাংশে তেলের রাজস্বের উপরই নির্ভরশীল। জল ও বিদ্যুতের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলিতে প্রবেশাধিকার খারাপ হয়েছে। এসবের মধ্যে রাজধানীতে মানসম্মত বিদ্যুতের মিটার পেতে কখনো কখনো এক বছরেরও বেশি অপেক্ষাও রয়েছে।

এই নিবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রপতি আলি বঙ্গো ওন্দিম্বা ক্ষমতাচ্যুত ও গৃহবন্দী

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .