উত্তর আফ্রিকায় সাব-সাহারার অভিবাসীদের সহ্য করা অমানবিক আচরণের বিষয়ে আফ্রিকার আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলির বেশিরভাগই উদাসীন।
জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদের ২০২৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে একটি বৈঠকের সময় তিউনিসীয় প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি কাইস সাইদ ঘোষণা করেছিলেন সাব-সাহারার অভিবাসীরা তার দেশের ভেতর ‘সহিংসতা, অপরাধ ও অগ্রহণযোগ্য কাজের’ উৎস। এই বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে অভিবাসীরা ক্রমবর্ধমান বর্ণবাদী আচরণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়ে তাদের অধিকার লঙ্ঘনের সম্মুখীন হচ্ছে।
আফ্রিকীয় ইউনিয়নের (এইউ) সদস্য হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানে তিউনিসিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধিত্ব থাকলেও এটি অভিবাসন ও যাতায়াত বিষয়ে আফ্রিকীয় ইউনিয়্নের ঘোষণায় বর্ণিত নিয়ম-নীতিগুলিকে উপেক্ষা করে বলে মনে হয়। সমন্বিত অভিবাসন নীতির প্রচার ও অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা্র উদ্দেশ্যের এই ঘোষণায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটিকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তিউনিসিয়া।
এবং তবুও তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রপতি কাইস সাইদের মতে সাব-সাহারার নাগরিকদের গোপন অভিবাসনকে তার দেশকে দুর্বল করার লক্ষ্যে একটি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখা হয়। তিনি লে মঁদের একটি নিবন্ধে বলেছেন:
Il existe un plan criminel pour changer la composition du paysage démographique en Tunisie, et certains individus ont reçu de grosses sommes d’argent pour donner la résidence à des migrants subsahariens.
তিউনিসিয়ার জনসংখ্যার গঠন পরিবর্তনের একটি অপরাধমূলক চক্রান্ত হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি সাব-সাহারার অভিবাসীদের বাসস্থান দেওয়ার জন্যে প্রচুর অর্থ পেয়েছে।
প্রসঙ্গটি বোঝার জন্যে সংখ্যাগুলি ঘনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আফ্রিকানিউজের সাথে কথা বলার সময় পিএইচডি শিক্ষার্থী ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার ডেনিশ প্রতিষ্ঠানের (ডিআইআইএস) অভিবাসন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আহলাম চেমলালি পরামর্শ দিয়েছেন:
De nombreuses organisations qui travaillent dans le domaine de la migration situent ces chiffres [de migrants subsahariens] entre 20 000 et 50 000 migrants originaires d'Afrique subsaharienne.
অভিবাসন নিয়ে কর্মরত অসংখ্য সংস্থা্র অনুমান হিসেবে সাব-সাহারা আফ্রিকা থেকে আসা [অভিবাসীদের] এই পরিসংখ্যান ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ এর মধ্যে।
তবে তিউনিসিয়ারই জনসংখ্যা এক কোটি ১০ লক্ষেরও বেশি এবং তাদের ইউরোপে বিশেষ করে ইতালির দিকে অভিবাসন প্রবাহ রয়েছে। ইতালিতে বসবাসকারী তিউনিসীয়দের প্রতিনিধিত্বকারী প্রাক্তন সাংসদ ও সামাজিক-গণতান্ত্রিক পার্টি গণতান্ত্রিক_স্রোতের নেতা মাজদি কারবাই জিউন আফ্রিকের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেছেন:
Les chiffres suffisent tant ils sont éloquents : en 2022, 18 000 Tunisiens sont arrivés dans la péninsule, 15 000 en 2021, 13 000 en 2020. Faites les comptes, et comparez avec les 20 000 Subsahariens en situation irrégulière présents en Tunisie, selon le Forum tunisien pour les droits économiques et sociaux [FTDES]. Les Tunisiens sont les champions de la migration.
সংখ্যাগুলির বলা পরিমাণ অনুসারে: ২০২২ সালে ১৮,০০০ তিউনিসীয় উপদ্বীপে এসেছিল, ২০২১ সালে ১৫,০০০ এবং ২০২০ সালে ১৩,০০০৷ হিসেব করে এটিকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের জন্যে তিউনিসীয় ফোরামের [এফটিডিইএস] জানানো অনিয়মিত পরিস্থিতিতে তিউনিসিয়ায় আসা সাব-সাহারার ২০,০০০ অভিবাসীর সাথে তুলনা করুন। অভিবাসনে তিউনিসীয়রাই সেরা।
মহাদেশীয় ও আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলি কাজে ব্যর্থ
তিউনিসিয়ার আনুষ্ঠানিক বিবৃতির পরে আফ্রিকীয় ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়াটি দ্রুত ছিল। এইউ কমিশনের সভাপতি মুসা ফাকি মাহামত ২৪ ফেব্রুয়ারি বর্ণবাদী ও সাব-সাহারার আফ্রিকার অভিবাসীদের প্রতি ঘৃণাপূর্ণ বিবেচনায় তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রপতির মন্তব্যের নিন্দা করলেও এই নিন্দা ছাড়া তিউনিসিয়ার ভূখণ্ডে মর্যাদা ও অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় এইউ আর কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
একইভাবে মধ্য আফ্রিকার অর্থনৈতিক ও আর্থিক সম্প্রদায় (সিইএমএসি) এবং পশ্চিম আফ্রিকীয় রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের (ইকোওয়াস) মতো আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলি এই বিষয়ে স্পষ্টতই নীরব রয়েছে। তবুও এই প্রতিষ্ঠানগুলি অভিবাসী ব্যক্তিদের অবাধ বিচরণ, নাগরিকদের চলাচল সহজতর করা এবং অভিবাসী সুরক্ষার জন্যে কৌশল নিয়ে কাজ করে। এছাড়াও তারা উত্তর আফ্রিকা অতিক্রম করে অন্যান্য অঞ্চলে পৌঁছানোসহ অভিবাসীদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকিগুলি মোকাবেলা করে।
এখনো গিনি-বিসাউয়ের রাষ্ট্রপতি ও পশ্চিম আফ্রিকীয় রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের (ইকোওয়াস) প্রাক্তন প্রধান উমারো সিসোকো এমবালোর নেওয়া উদ্যোগের সরকারি উদ্যোগ রয়েছে। তিনি ৮ মার্চ, ২০২৩ তারিখে তিউনিসিয়া সফরের সময় তার টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন:
En tant que président de la CEDEAO, je rendis visite au Président Kais Saied pour m'enquérir de la situation des africains subsahariens en Tunisie. Evoquant la déformation de ses propos, il assura de croire aux valeurs africaines d'union, d'accueil et de respect et les préserver. pic.twitter.com/ps6dZKKCE8
— Umaro Sissoco Embaló (@USEmbalo) March 8, 2023
ইকোওয়াসের সভাপতি হিসেবে আমি তিউনিসিয়ার সাব-সাহারার আফ্রিকীয়দের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে রাষ্ট্রপতি কাইস সাইদের সঙ্গে দেখা করেছি। তার বিবৃতিগুলির ভুল ব্যাখ্যাকে মাথায় রেখে তিনি ঐক্য, আতিথেয়তা ও সম্মানের আফ্রিকীয় মূল্যবোধের প্রতি তার বিশ্বাস এবং সেগুলিকে সমুন্নত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তবে বাস্তবে অভিবাসীদের অবস্থা ও তাদের প্রতি আচরণের কিছুই পরিবর্তন হয়নি।
এই উচ্চকিত নীরবতা ইন্টারনেটে প্রচারিত পুরুষ, নারী ও শিশুদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্ত অমানবিক আচরণের চিত্রিত করা ভিডিওগুলির সাথে সহাবস্থান করে:
তবে অসংখ্য আবেদনও এইউর অবস্থানের উপর কোন প্রভাব ফেলেনি। ফ্রান্সের মিডিয়াপার্টের সভাপতি ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা এডউই প্লেনেল একটি টুইটে এই সমস্যাটিকে সম্বোধন করেছেন:
Entre Tunisie et Libye, le calvaire insoutenable des migrants subsahariens. Illustré tragiquement par le sort de Fati Dosso et sa fille Marie, retrouvées sans vie dans le désert. Elles seraient mortes de soif après avoir été abandonnées. Par @NejmaBrahim https://t.co/xxP95fyhqw
— Edwy Plenel (@edwyplenel) July 26, 2023
তিউনিসিয়া ও লিবিয়ার মধ্যে সাব-সাহারার অভিবাসীদের অসহনীয় অগ্নিপরীক্ষা। মরুভূমিতে নিষ্প্রাণ পাওয়া ফাতি ডোসো ও তার মেয়ে মেরির ভাগ্য দুঃখজনকভাবে চিত্রিত হয়েছে। পরিত্যক্ত হওয়ার পর পিপাসায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লিখেছেন @নেজমাব্রাহিম
সুশীল সমাজই উচ্চস্বরে স্পষ্টভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করা একমাত্র কণ্ঠস্বর
সাব-সাহারার আফ্রিকীয় দেশ ও আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের সরকারি কর্তৃপক্ষের নীরবতাকে কিছু সুশীল সমাজের কর্মীদের একটি বিভ্রান্তি ভাবা হয়। গবেষক, আন্তর্জাতিক অভিবাসন পরামর্শদাতা ও সেনেগাল-ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা সীমান্তহীন_দিগন্তের সভাপতি বুবাকার সেয়ে তার দেশের পরিস্থিতির মূল্যায়ন করেছেন। টিভি৫মঁদের সাথে একটি সাক্ষাৎকারের এই ভিডিও উদ্ধৃতিতে তিনি বলেছেন:
Totalement d’accord avec ce diagnostic de Boubacar Seye de l’ONG Horizons sans frontières #Immigration @Macky_Sall @SonkoOfficiel @drelhadjiAdiouf @AbdoulMBAYE2019 @PapeDjibrilFall @Bouganegueye @Boubacarcamou @maryteuwniane pic.twitter.com/T9xl3BtyKd
— Seydina Aliou SANE (@seydinaaliou_) July 25, 2023
আমি বেসরকারি সংস্থা সীমান্তহীন_দিগন্তের বুবাকার সেয়ের রোগ নির্ণয়ের সাথে সম্পূর্ণ একমত।
ফোনের মাধ্যমে গ্লোবাল ভয়েসেস যোগাযোগ করলে সেয়ে আফ্রিকীয় নেতাদের দোষী সাব্যস্ত করেন:
Nous sommes dans un monde globalisé mais l’Afrique brille par son absence et pour la plupart des dirigeants la migration est aujourd’hui une soupape pour le système économique. L’Union européenne vient injecter l’argent en Tunisie pour bloquer les migrants, et la Tunisie accepte de jouer le rôle de gendarme pour l’Europe. C’est triste. Ces dirigeants africains devraient être appelé à l’ordre.
আমরা একটি বিশ্বায়িত বিশ্বে বাস করলেও আফ্রিকার অনুপস্থিতি সুস্পষ্ট, এবং বেশিরভাগ নেতাদের কাছে অভিবাসন তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি নিরাপত্তা কপাটিকা হয়ে উঠেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভিবাসীদের আটকাতে তিউনিসিয়ায় অর্থ ঢোকানোতে তিউনিসিয়া ইউরোপের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে সম্মত হয়েছে। এটা দুঃখজনক। আফ্রিকীয় এই নেতাদের জবাবদিহি করতে হবে।
সেয়ের মতে আফ্রিকার জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের কম এবং বেকারত্বের হার উল্লেখযোগ্যভাবে ৩৫ শতাংশের উপরে। কোভিড-১৯-পরবর্তী যুগে অভিবাসন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টির ঝুঁকি রয়েছে। সেয়ে বিশ্বাস করেন তিউনিসিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি ছাড়াও চরম দারিদ্র্যের কারণে এই অভিবাসী প্রবাহ ব্যপকতা বাড়বে। তিনি একটি বিকল্প পরামর্শ দেন:
Il faudrait que les institutions continentales, régionales et les pouvoirs publics mettent cette question de migration au cœur de leurs préoccupations en Afrique. Toute la jeunesse est en train de périr et il est urgent que les dirigeants prennent leurs responsabilités. Il faut aussi convoquer les états généraux de la migration pour qu’ensemble le dossier soit analysé dans sa complexité pour que des solutions durables soient trouvées. L’Union européenne quant à elle devrait aussi discuter directement avec l’Union africaine.
মহাদেশীয়, আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কর্তৃপক্ষের আফ্রিকায় তাদের উদ্বেগের মূল জায়গায় অভিবাসনের বিষয়টি রাখা উচিত। পুরো তরুণ প্রজন্ম ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছে বলে নেতাদের দায়িত্ব পালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জটিলতাসহ সমস্যাটি বিশ্লেষণ করা এবং টেকসই সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্যে একটি প্রকাশ্য বিতর্ক আহ্বান করা উচিত। আফ্রিকীয় ইউনিয়নের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরাসরি আলোচনা করা উচিত।
তিউনিসিয়াতেও সাব-সাহারার অভিবাসীদের অধিকার রক্ষার একমাত্র কণ্ঠ সুশীল সমাজের। নৃবিজ্ঞানী স্টেফানি পুয়েসেলের এই টুইট যেমন প্রমাণ করে:
Appel d’urgence à la société civile en #tunisie : J’ai trouvé ces Ivoiriens qui dorment devant leur ambassade depuis 2 nuits, n’ont ni à manger ni à boire. Ont été cambriolés et virés de chez eux. Ils ont répondu à l’appel de leur ambassade pour être rapatriés. Honte absolue pic.twitter.com/YAHZP6aR4q
— Stéphanie Pouessel (@PouesselStef) February 26, 2023
#তিউনিসিয়ার সুশীল সমাজের কাছে জরুরি আবেদন: আমি এই আইভোরীয়দের তাদের দূতাবাসের বাইরে ২ রাত ধরে ঘুমাতে দেখেছি। তাদের কাছে কোনো খাবার বা পানি ছিল না। তাদের ছিনতাই করে বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তারা তাদের দূতাবাসের প্রত্যাবাসনের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। এটা একেবারেই লজ্জাজনক।