সাতটি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় গণমাধ্যম সংস্থা সমগ্র অঞ্চল জুড়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ করার জন্যে একটি যৌথ মঞ্চ পিএফএমসী.অর্গ চালু করেছে।
সংগঠনগুলো হলো ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীন সাংবাদিক জোট (এজেআই), পূর্ব তিমুর সাংবাদিক সমিতি, কম্বোডীয় সাংবাদিক জোটের সমিতি, মালয়েশিয়ার স্বাধীন সাংবাদিক কেন্দ্র, মালয়েশিয়ার মারদেকা গণমাধ্যম আন্দোলন, ফিলিপাইনের জাতীয় সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং থাইল্যান্ডের প্রচাতাই।
২৯ মে, ২০২৩ তারিখে চালু ওয়েবসাইটটি ছয়টি দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিস্থিতি, যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিসহ বাস্তব-সময়ে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমর বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনাবলীর ডেটা ভাগাভাগি করা ও জনসাধারণকে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা জানানোর সুবিধা দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া।
গ্লোবাল ভয়েসেস ইমেলের মাধ্যমে নতুন উদ্যোগটি সম্পর্কে এজেআইয়ের মহাসচিব ইকা নিংটিয়াসের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তিনি মঞ্চটি চালুর সময় কীভাবে আঞ্চলিক গণমাধ্যম গ্রুপগুলো সমন্বয় করা হয়েছে তা ভাগাভাগি করেছেন।
আঞ্চলিক সংগঠনগুলি দুর্ভাগ্যবশত যথেষ্ট দীর্ঘস্থায়ী না হলেও এদের সাথে আমাদের বেশিরভাগই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্রমবর্ধমানভাবে হুমকির মুখে থাকায় নতুন করে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার আবশ্যকতা আমরা বুঝতে পারি। অবশেষে গত এক বছর ধরে আমরা একটি নতুন পথে সহযোগিতা পুনর্নির্মাণের জন্যে বেশ তীব্র আলোচনা করেছি।
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন কী গ্রুপগুলিকে একটি মঞ্চ চালুর দিকে পরিচালিত করেছে। তিনি আশা করেন নেটওয়ার্কটি বজায় রাখা সহজ হবে।
কীভাবে সহজে ও কম খরচে করা যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমাদের বর্তমান কৌশল আগের মতো স্থায়ী সংগঠন গড়ে তোলা নয়। পরিবর্তে এই সহযোগিতা আরো নমনীয়। আমরা পালাক্রমে এক একটি সংস্থাকে প্রতিটি সভা, অর্থ ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য প্রশাসন আয়োজনে দায়বদ্ধ হিসেবে বেছে নিয়েছি। এই প্রথম বছরে এজেআই আয়োজনের সহায়তাকারী নির্বাচিত হয়েছে।
তারপরে আমরা কাজের কর্মসুচি নিয়ে আলোচনা করেছি। সেখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণের মঞ্চ তৈরি করার মতো বেশ কয়েকটি ধারণার উদ্ভব হয়। আমরা ভেবেছি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সংস্থাগুলির নিরাপত্তা দেখানো তথ্য বাস্তব-সময়ে পাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রচারে কীভাবে পর্যবেক্ষণের ডেটা ব্যবহার করা হবে জানতে চাইলে তিনি নেটওয়ার্কটির প্রচারণা কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রচারের জন্যে নির্ভরযোগ্য তথ্যের প্রয়োজন। বাস্তব-সময়ে পাওয়া ডেটা বাস্তব পরিস্থিতি, অপরাধীদের, হুমকির ধরন সম্পর্কে দেখাতে পারে এবং প্রবণতাটি বছরের পর বছর ধরে কেমন চলছে, এটির উন্নতি বা অবনতি হচ্ছে কিনা তা দেখা যায়। আমরা বা প্রতিটি সংস্থা ডেটা থেকে কোন হস্তক্ষেপের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, প্রচারণার কৌশলটি কী এবং কীভাবে এটা করা উচিত তা নির্ধারণ করতে পারি। এই পর্যবেক্ষণের ডেটার মাধ্যমে সরকারগুলির ব্যবহৃত ডিজিটাল আক্রমণ বৃদ্ধি, সাংবাদিক ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে বিভ্রান্তিমূলক নিয়মের ব্যবহারের মতো কিছু সদৃশ প্রবণতা পাওয়ার কারণে আমরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে আরো বিস্তৃতভাবে একসাথে প্রচারণা চালাতে পারি।
তাদের গোষ্ঠীগুলি ২০২২ সালে এই অঞ্চল জুড়ে ১৮৫টি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘন পর্যবেক্ষণ করেছে। এই বছর তারা ৭৩টি ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। এই বছরের প্রায় ৬০ শতাংশ গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে শারীরিক আক্রমণ এবং ২৩ শতাংশ ডিজিটাল আক্রমণ সম্পর্কিত। প্রায় ৩৬.৫ শতাংশ ঘটনা রাষ্ট্রীয় ক্রিয়াশীলদের দ্বারা সংঘটিত। কম্বোডিয়ায় স্বাধীন গণমাধ্যম সংস্থাগুলি জোরপূর্বক বন্ধ, ইন্দোনেশিয়ায় নিপীড়নমূলক গণমাধ্যম আইন প্রয়োগ এবং ফিলিপাইনে সাংবাদিকদের লাঞ্ছনার মতো কিছু প্রধান সমস্যা তারা উল্লেখ করেছে।
সবশেষে ইকা নিংটিয়াস পর্যবেক্ষণের মঞ্চের উন্নয়নে কিছু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন।
প্রাথমিক চ্যালেঞ্জটি ছিল সূচক, কাজের পদ্ধতি ও প্রতিবেদন ছকের জন্যে একটি সাধারণ মান নির্ধারণ করা। কারণ আমরা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ করা বেশ কয়েকটি সংস্থার বিভিন্ন রকম সূচক দেখেছি। তারপর আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) নং ১৬.১০.১ অনুসারে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা অন্যতম সূচকের মতো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মান ব্যবহার করতে সম্মত হয়েছি। এসডিজির এই সূচকটি ব্যবহার করে প্রতিটি সংস্থা সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দিক নিয়ে এসডিজি সম্পর্কিত ছায়া প্রতিবেদন তৈরি করলে এটি আরো সহজ হবে।
দ্বিতীয়ত যোগদান করা ছয়টি সংস্থার মধ্যে তিনটি নিয়মিত ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলেও বিশেষ সংস্থান না থাকায় পূর্ব তিমুর, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে আমাদের সদস্যরা পর্যবেক্ষণে খুব বেশি গভীর নয়। তাই চ্যালেঞ্জটি হলো কিভাবে বিশেষ করে সংস্থান না থাকা সংস্থাগুলিকে সহায়তা প্রদান এবং যারা করছে তাদের শক্তিশালী করা যায়। কারণ পর্যবেক্ষণ শুধু তথ্য সন্নিবেশ করা ছাড়াও প্রতিবেদন হাতে নেওয়া, প্রতিটি ঘটনা যাচাই করা, প্রতিবেদন লেখা ও বিশ্লেষণ করার মতো একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
নেটওয়ার্কটি প্রকল্পের কভারেজ বাড়ানোর পরিকল্পনায় মিয়ানমার ও ভিয়েতনামে সম্ভাব্য অংশীদার খুঁজছে।